মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম কমান্ডার এবং লেখক কাজী নূরুজ্জামান ( জন্মঃ- ২৪ মার্চ, ১৯২৫ – মৃত্যুঃ- ৬ মে, ২০১১) জন্মগ্রহণ করেন যশোর জেলায়। পিতার নাম কাজী সদরুলওলা এবং মাতার নাম রতুবুন্নেসা। তাঁর পড়াশোনা কলকাতায়। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে রসায়নে পড়ার সময় ১৯৪৩ সনে ব্রিটিশ ভারতীয় নৌবাহিনীতে যোগ দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি বার্মার উপকূল ও সুমাত্রায় যুদ্ধ করেন। ১৯৪৬ সালে পণ্ডিত জহরলাল নেহেরুর আহ্বানে নৌবাহিনী থেকে ভারতীয় সেনবাহিনীতে চলে আসে। প্রশিক্ষণের জন্য কাজী নূরুজ্জামান দেরাদুনে রয়্যাল ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমিতে চলে যান। ১৯৪৭ সালে তিনি এই একাডেমি থেকে কমিশন লাভ করেন। ১৯৪৭ আগস্টের পর কাজী নুরুজ্জামানের পরিবার বাংলাদেশে আসার পর নুরুজ্জামান সেনাবাহিনীতে নবীন অফিসার হিসাবে যোগ দেন।
১৯৬২ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশের প্রগতিশীল লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তিনি ড. আহমদ শরীফ প্রতিষ্ঠিত স্বদেশ চিন্তা সঙ্ঘের সঙ্গে ওতপ্রতোভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি ছিলেন লেখক শিবির ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ফ্রন্টের সদস্য।
নব্বইয়ের দশকে কর্ণেল নূরুজ্জামান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলনে অংশ নেন। তিনি গণআদালতের অন্যতম বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাতে হানাদার বাহিনী বাঙ্গালীদের উপর নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করলে কাজী নূরুজ্জামান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ৭নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর নাজমুল হক সড়ক দুর্ঘটনা মারা যাওয়ার পর কর্ণেল নূরুজ্জামানকে এই সেক্টরের অধিনায়ক করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ পরিচালনার জন্যে তাকে বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়; কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি দেয়া হয়নি বলে কাজী নূরুজ্জামান তা নিজের নামের শেষে ব্যবহার করতেন না।
গ্রন্থনা
একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায় গ্রন্থের অন্যতম সম্পাদক ছিলেন কাজী নূরুজ্জামান। তার রচিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছেঃ
‘একাত্তর ও মুক্তিযুদ্ধ: একজন সেক্টর কমান্ডারের স্মৃতিকথা’,
‘মুক্তিযুদ্ধ ও রাজনীতি’,
বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতি’,
‘স্বদেশ চিন্তা’।
One comment