কর্ণাটকী শাস্ত্রীয় সংগীতের এক প্রবাদ প্রতিম শিল্পী হলেন এম. এস. সুব্বুলক্ষ্মী (M. S. Subbulakshmi)। সঙ্গীত জগৎ থেকে তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি ভারতরত্ন সম্মানে ভূষিত হন। সুব্বুলক্ষ্মীই প্রথম ভারতীয় যিনি রামন ম্যাগসেসে পুরস্কারে ভূষিত হন। তিনিই প্রথম ভারতীয় সঙ্গীতশিল্পী যিনি রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সম্মেলনে সঙ্গীত পরিবেশনা করেছিলেন। কাঞ্জিভরম সিল্ক শাড়ীর একটি বিশেষ নীল রঙের শেড এম এস ব্লু নামে পরিচিত যা এম. এস. সুব্বুলক্ষ্মীকে সম্মান জানিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
১৯১৬ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির মাদুরাইতে এক সঙ্গীতপ্রেমী পরিবারে এম. এস. সুব্বুলক্ষ্মীর জন্ম হয়। তাঁর সম্পূর্ন নাম মাদুরাই সন্মুখাভাদিভু সুব্বুলক্ষ্মী। তাঁর বাবার নাম সুব্রহ্মনিয়া আইয়ার। মা সন্মুখাভাদিভার আম্মল ছিলেন একজন বীণা বাদক। দিদিমা আক্কম্মাল ছিলেন বেহালা বাদক। চব্বিশ বছর বয়সে শুভলক্ষ্মী সেহ. টি. সদাশিবমের সাথে বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হন।
খুব অল্প বয়স থেকেই এম. এস. সুব্বুলক্ষ্মী কর্ণাটকী শাস্ত্রীয় সংগীত এবং হিন্দুস্থানী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ শুরু করেন। প্রধানত তাঁর মায়ের দ্বারাই শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রতি সুব্বুলক্ষ্মীর অকৃত্রিম আগ্রহ জন্মায়। তাঁর মা নিয়মিতভাবে বিভিন্ন সঙ্গীতানুষ্ঠানে সঙ্গীত সঙ্গীত পরিবেশন করতেন। মায়ের সাথে সাথে সুব্বুলক্ষ্মীও খুব অল্প বয়স থেকেই মঞ্চে সঙ্গীত পরিবেশন শুরু করেন।
১৯২৯ সালে তেরো বছর বয়সে সুব্বুলক্ষ্মী মাদ্রাজ মিউজিক একাডেমিতে প্রথম একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এখানে তিনি ভজন গেয়েছিলেন। সেদিনের তাঁর ভজন পরিবেশনা এতটাই উচ্চমার্গের ছিল যে সেই রাত থেকেই তিনি কর্ণাটকী শাস্ত্রীয় সংগীত জগতের এক অত্যন্ত প্রভাবশালী মুখ হয়ে ওঠেন। সতেরো বছর বয়স থেকেই সুব্বুলক্ষ্মী মাদ্রাজ মিউজিক একাডেমিতে নিজস্ব কনসার্ট করতে শুরু করেন।
শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে প্রায় সারা পৃথিবী ঘুরে সঙ্গীত পরিবেশনা করেছেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত রয়াল আলবার্ট হল থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সম্মেলন সর্বত্রই তিনি তাঁর অসামান্য প্রতিভার নজির রেখেছেন।
১৯৩৮ সালে সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে বাণিজ্যিক সিনেমার জগতে তাঁর হাতেখড়ি হয়। তাঁর অভিনীত প্রথম ছবি সেবাসদানম। ১৯৪১ সালে প্রকাশিত ‘সাবিত্রী’ নামক একটি ছবিতে নারদের ভূমিকাতেও অভিনয় করেন তিনি। ১৯৪৫ সালে মীরাবাঈ ছবিতে নামভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি।
শাস্ত্রীয় সঙ্গীত এবং চলচ্চিত্র জগতে তাঁর অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন সারা জীবন।
১৯৯৭ সালে তাঁর স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে তিনি আর কোন জন সমাবেশে সঙ্গীত পরিবেশন করেননি।
২০০৪ সালের ১১ ডিসেম্বর এম. এস. সুব্বুলক্ষ্মীর মৃত্যু হয়।