ম্যাক্সিমিলিয়েন রোবসপিয়ের

ম্যাক্সিমিলিয়েন রোবসপিয়ের

ম্যাক্সিমিলিয়েন ফ্রাঁসোয়া মারি ইসিডোর ডি রোবসপিয়ের (Maximilien François Marie Isidore de Robespierre) বা সংক্ষেপে ম্যাক্সিমিলিয়েন রোবসপিয়ের (Maximilien Robespierre) একজন ফরাসী আইনজীবী, রাষ্ট্রনায়ক তথা ফরাসী বিপ্লবের বিতর্কিত এক ব্যক্তি যাঁর শাসনকালকে ইতিহাসে ‘সন্ত্রাসের রাজত্ব’ নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। তিনি এস্টেট জেনারেল, গণপরিষদ এবং ইতিহাসখ্যাত জ্যাকোবিন ক্লাবেরও সদস্য ছিলেন। ফরাসি রাজতন্ত্রের পতনের মাধ্যমে একটি অবিভক্ত ফ্রান্স তৈরি করবার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। এই কারণে তিনি তৎকালীন ফ্রান্সে প্রচলিত ‘বিশেষ অধিকার’ বাতিল করে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের নীতিগুলি রক্ষার সপক্ষে কথা বলেছিলেন। আবার ফরাসি কনভেনশনের ডেপুটি হিসেবে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবার জন্য সমালোচিতও হয়েছেন  তিনি। 

১৭৫৮ সালের ৬ মে ফ্রান্সের আরটয়েস প্রদেশের অন্তর্গত আরাসে ম্যাক্সমিলিয়েন রোবসপিয়েরের জন্ম হয়। তাঁর পিতামহ ম্যাক্সিমিলিয়েন দে রোবসপিয়ের আরাসের একজন প্রথিতযশা আইনজীবী ছিলেন। রোবসপিয়েরের বাবা ফ্রাঁসোয়া ম্যাক্সিমিলিয়েন বার্থেলেমি দে রোবসপিয়ের নিজেও ছিলেন কনসিল ডি’আর্টয়েসের একজন আইনজীবী। রোবসপিয়েরের মা জ্যাকলিন মার্গুরাইট ছিলেন একজন সুরা-প্রস্তুতকারীর কন্যা। এই দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে রোবসপিয়ের ছিলেন বড়। তাঁর অন্যান্য ভাইবোনের নাম, শার্লট, হেনরিয়েট এবং অগাস্টিন।

১৭৬৪ সালে যখন রোবসপিয়েরের বয়স মাত্র ছয় বছর তখন তাঁর মা একটি মৃতকন্যার জন্ম দিয়ে বারোদিন পরে মাত্র ঊনত্রিশ বছর বয়সে মারা যান। স্ত্রীর মৃত্যুতে এতটাই বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন রোবসপিয়েরের বাবা, যে তিনি ১৭৬৭ সালের দিকে আরাস ছেড়ে চলে যান তাঁর সন্তানদের রেখেই। 

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

ইতিমধ্যেই আটবছর বয়সী ম্যাক্সিমিলিয়েন রোবসপিয়ের আরাসের মিডল স্কুলে ভর্তি হন পড়াশুনার জন্য। ১৭৬৯ সালের অক্টোবর মাসে এক বিশপের সুপারিশে তিনি প্যারিসের কলেজ লুই-লে-গ্র্যান্ডে বৃত্তি লাভ করেন। স্কুলে থাকাকালীনই তিনি আদর্শ রোমান প্রজাতন্ত্রের প্রশংসা করতে শিখেছিলেন। ১৭৭৬ সালে অলঙ্কারাশাস্ত্রে প্রথম পুরস্কার লাভ করেন তিনি। সেসময় রুশোর দর্শনের প্রতিও ভীষণভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন ম্যাক্সিমিলিয়েন রোবসপিয়ের । স্নাতক হওয়ার পর তিন বছর সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন অধ্যয়ন করেন এবং আইনজীবী হওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত হন তিনি।

আইন অধ্যয়ন সমাপ্ত করে তিনি ১৭৮১ সালের ১৫ মে আরাসের বারে (উকিলসভা) প্রবেশ করেন এবং ১৭৮২ সালের মার্চ মাসে ফৌজদারি বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হন। যদিও শীঘ্রই সেখান থেকে পদত্যাগ করেন এবং ১৭৮৩ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি আরাসের সাহিত্য আকাদেমির সদস্য নির্বাচিত হন। একজন অভিযুক্ত এবং শাস্তিপ্রাপ্ত অপরাধীর অসম্মানের সাজা তাঁর আত্মীয় পরিজন কিংবা সমজাত বা সমধর্মের মানুষরাও ভোগ করবে কিনা, এই বিষয়ক একটি অসাধারণ যুক্তিযুক্ত প্রবন্ধ লেখবার জন্য ১৭৮৪ সালে একাডেমি অফ মেটজ তাঁকে পদক প্রদানের মাধ্যমে সম্মানিত করে।

আইনের বৈষম্যতা, বিবাহ বহিৰ্ভূত সন্তান ধারণ, বিনা বিচারে কারারুদ্ধ করা এবং শিক্ষাগত জীবন থেকে নারীদের দূরে সরিয়ে রাখার তীব্র বিরোধিতা করেন রোবসপিয়ের । ১৭৮৯ সাল নাগাদ আরাসের ন্যায়বিচারের প্রধান রক্ষকদের একজন হিসেবে বেশ পরিচিত হয়েছিলেন রোবসপিয়ের । এই সময়ে রাজা ষোড়শ লুই ফ্রান্সের সমস্ত প্রদেশে নির্বাচন করার লক্ষ্যে সমস্ত এস্টেট জেনারেলদের নিয়ে একটি সম্মেলন আহ্বান করেন ফ্রান্সের তৎকালীন অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে আলোচনার জন্য। রোবসপিয়ের এস্টেট জেনারেল হিসেবে আরাসের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ১৭৮৯ সালে নিজের নির্বাচনী এলাকা আর্টোয়সে ‘নোটিস টু দ্য রেসিডেন্টস অব দ্য কানট্রিসাইড’ নামক ভাষণের মাধ্যমে রাজনীতিতে নিজের চিহ্ন রাখতে শুরু করেন তিনি। তাঁর এই বক্তব্যে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে আক্রমণ করেন তিনি। ১৭৮৯ সালের ২৬ এপ্রিল রোবসপিয়ের এস্টেট-জেনারেলের পাস-ডি-ক্যালাইসের ষোলো জন ডেপুটিদের একজন হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। 

১৭৮৯ সালের অক্টোবর থেকে, রোবসপিয়ের তুলনামূলকভাবে ধনী বাসিন্দাদের সাথে লে মারাইস জেলার ৩০ রুয়ে দে সেন্টঞ্জে বসবাস করতে শুরু করেন। রোবসপিয়ের ক্রমে নতুন সোসাইটি অফ দ্য ফ্রেন্ডস অফ দ্য কনস্টিটিউশনের সঙ্গে যুক্ত হন যেটি সাধারণত জ্যাকোবিন ক্লাব নামে পরিচিত ছিল। এই ক্লাব ফরাসি বিপ্লবের ধারণা প্রচার করত। মূলত ব্রিটেনের রাজতন্ত্র বিরোধী ডেপুটিদের নিয়ে এই ক্লাব গঠিত ছিল। থার্ড এস্টেটের প্রতিনিধি হিসেবে এই দলের সঙ্গেও দ্রুত জুড়ে যান রোবসপিয়ের। আইনের সমতা প্রতিষ্ঠা ছিল জ্যাকোবিনদের আদর্শের মূল ভিত্তি। নানারকম বিষয়ে বক্তৃতার মাধ্যমে রোবসপিয়ের দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকেন এবং ১৭৯০ সালের ৩১ মার্চ রোবসপিয়ের জ্যাকোবিন দলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২৮ এপ্রিল রোবসপিয়ের তাঁর গণতান্ত্রিক নীতির ভিত্তিতে কোর্ট মার্শালে সমান সংখ্যক অফিসার ও সেনার উপস্থিত থাকার প্রস্তাব করেন। ১৯ জুন জাতীয় পরিষদের সচিব নির্বাচিত হন রোবসপিয়ের।

১৭৯১ সালের ২৭ এবং ২৮ এপ্রিল, রোবসপিয়ের ন্যাশনাল গার্ডকে পুনর্গঠন করার এবং সক্রিয় নাগরিকদের মধ্যে সদস্যপদ সীমিত করার পরিকল্পনার বিরোধিতা করেন৷ তিনি গণতান্ত্রিক ভিত্তিতে ন্যাশনাল গার্ড পুনর্গঠনের দাবি জানান। তিনি অনুভব করেছিলেন যে ন্যাশনাল গার্ডকে স্বাধীনতা রক্ষার হাতিয়ার হয়ে উঠতে হবে। ১৭৯১ সালে ফরাসি সংবিধান গৃহীত হয় এবং গণপরিষদ ভেঙে দেওয়া হয়। রোবসপিয়ের এও প্রস্তাব করেছিলেন যে, গণ পরিষদে বসে থাকা কোনও ডেপুটি পরবর্তী আইনসভায় বসতে পারবেন না। ২৮ মে রোবসপিয়ের প্রস্তাব করেন যে দেশের সকল ফরাসি নাগরিককে সক্রিয় নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করা উচিত। 

ডিসেম্বরের মধ্যে ফ্রান্সের আইনসভা গিরোন্ডিন নামক একটি নতুন উপদলের আধিপত্যে পরিণত হয়, যারা অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করে। জ্যাক-পিয়েরে ব্রিসোটের নেতৃত্বে গিরোন্ডিনরা বিশ্বাস করত যুদ্ধই বিপ্লবকে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করার একমাত্র উপায়। রোবসপিয়ের এর তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি  বিশ্বাস করতেন যে যুদ্ধ শুধুমাত্র বিপ্লবের বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে যার ফলে সামরিক একনায়কত্বের সৃষ্টি হয়। ব্রিসোটের সঙ্গে রোবসপিয়েরের মতপার্থক্য ব্যক্তিগত বিদ্বেষের দিকে গড়ায়। যেসমস্ত জ্যাকোবিনরা রোবসপিয়েরকে সমর্থন করেন তারা পরবর্তীতে ‘দ্য মাউন্টেন’ নামে পরিচিত হন। এই মাউন্টেনরা আসলে জ্যাকোবিন ক্লাবের সর্বোচ্চ সারির মানুষ এবং এদের সঙ্গে গিরোন্ডিনদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়। ১৭৯২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রোবসপিয়ের কীভাবে রাষ্ট্র ও স্বাধীনতা রক্ষা করা সম্ভব সে বিষয়ে একটি ভাষণ দেন। শ্রোতাদের আশ্বাস দেন যে তিনি যা কিছু প্রস্তাব করেছিলেন তা কঠোরভাবে সাংবিধানিক। যুদ্ধের বিরোধী হওয়ার কারণে তিনি অস্ট্রিয়ান কমিটির গোপন এজেন্ট হিসেবে কাজ করার অভিযোগেও অভিযুক্ত হন। ২৯ মার্চ রোবসপিয়ের একটি অ-বিপ্লবী সরকার গঠনের দাবি জানান। যদিও ১৭৯২ সালের ২০ এপ্রিল ফ্রান্স অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

১৭৯২ সালের ১৭ মে রোবসপিয়ের তাঁর সাপ্তাহিক সাময়িকী ‘লে ডিফেনস্যুর দে লা কনস্টিটিউশন’ প্রকাশ করেন। এতে ব্রিসোটকে আক্রমণ করা, যুদ্ধে সংশয় প্রকাশ করা, জননীতিতে রাজদরবারের প্রভাবের মোকাবেলা করা ইত্যাদি বিষয়গুলিই প্রকাশিত হত। ১৭৯২ সালের জুনের প্রথম দিকে, রোবসপিয়ের রাজতন্ত্রের অবসান এবং সাধারণ মানুষের ইচ্ছার অধীনস্থ বিধানসভার প্রস্তাব করেন।

১১ আগস্ট রাতে রোবসপিয়ের প্যারিস কমিউনে সেকশন ডি পিকস-এর একজন প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৬ আগস্ট, রোবসপিয়ের প্যারিস কমিউন থেকে আইনসভায় একটি অস্থায়ী বিপ্লবী ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার দাবিতে একটি পিটিশন পেশ করেন। পরের দিন রোবসপিয়ের আট বিচারকের একজন হিসেবে নিযুক্ত হন।

১৭৯২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সহকর্মী ড্যান্টনের নেতৃত্বে রোবসপিয়ের ন্যাশনাল কনভেনশনে ডেপুটি নির্বাচিত হন যারা রাজাহীন ফ্রান্সের জন্য একটি সংবিধান লেখার উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়েছিল। সেখানকার সমস্ত সদস্যরাই প্রায় আইনজীবী ছিলেন। ১৭৯২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ফরাসিরা ভালমির যুদ্ধে প্রুশিয়ানদের পরাজিত করে এবং পরদিন ফরাসি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। রোবসপিয়ের এবং তাঁর সমর্থকরা, অর্থাৎ মাউন্টেনরা বিশ্বাস করতেন একটি প্রজাতন্ত্রে রাজার কোন স্থান নেই। তাঁরা অবিলম্বে ষোড়শ লুইয়ের কোনো বিচার ছাড়াই মৃত্যুদন্ডের পক্ষে নিজেদের সমর্থন দেন যদিও গিরোন্ডিনরা সেইসময় রোবসপিয়েরের বিরোধিতা করেছিল। তাদের আশঙ্কা ছিল এই ঘটনা গৃহযুদ্ধের কারণ হতে পারে। ২৬ ডিসেম্বর ছিল রাজার শেষ শুনানির দিন। ১৭৯৩ সালের ১৪ জানুয়ারি রাজা সর্বসম্মতিক্রমে জননিরাপত্তার উপর ষড়যন্ত্র এবং আক্রমণের জন্য দোষী সাব্যস্ত হন। ১৬ জানুয়ারি রাজার সাজা নির্ধারণের জন্য ভোট শুরু হয়। রাজার মৃত্যুদন্ড নিশ্চিত করার জন্য রোবসপিয়ের উদগ্রীবভাবে কাজ করেছিলেন। ২০ জানুয়ারি ডেপুটিদের অর্ধেক অবিলম্বে মৃত্যুর পক্ষে ভোট দেয়। পরের দিন ২১ জানুয়ারি ষোড়শ লুইকে গিলোটিনে হত্যা করা হয়।

এই ঘটনার পর রোবসপিয়ের, ড্যান্টনদের রাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৭৯৩ সালের প্রথমার্ধ জুড়ে গিরোন্ডিনদের অপসারণের জন্য ষড়যন্ত্র করতে থাকেন রোবসপিয়ের। ১৭৯৩ সালের বসন্তে রোবসপিয়ের এই লড়াইটিকে জ্যাকোবিন ক্লাবে নিয়ে যান যেখানে তিনি জনগণকে জ্যাক ব্রিসোট এবং তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। এই উসকানির ফলেই জুন মাসে ন্যাশনাল গার্ড এবং সান কুলোটের একটি বিদ্রোহের ফলে ঊনত্রিশজন গিরোন্ডিন ডেপুটিকে কনভেনশন থেকে বহিষ্কার করা হয়। গিরোন্ডিস্টদের প্রভাব চলে যাওয়ার পর রোবসপিয়েরের প্রভাব বাড়তে থাকে এবং তিনি ১৭৯৩ সালের জুলাইয়ের শেষের দিকে, জননিরাপত্তা কমিটির (সিপিএস) নির্বাচনে জয়লাভ করেন ও কনভেনশনের ফ্লোরে কমিটির মুখপাত্র নির্বাচিত হন রোবসপিয়ের।

জননিরাপত্তা কমিটির মুখপাত্র হিসেবে রোবসপিয়েরের ধারণা, কর্মপদ্ধতি এবং নেতৃত্ব সন্ত্রাসের রাজত্বের সূচনা করে। রোবসপিয়ের ছদ্মবেশী দেশপ্রেমিকদের প্রজাতন্ত্র থেকে নির্মূল করতে চেয়েছিলেন। ধ্বংস করতে চেয়েছিলেন প্রতিবিপ্লবীদের। ১৭৯৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি সন্দেহভাজনদের জন্য একটি আইন প্রণয়ন করেন, যাতে বলা হয়, কাজে বা লেখায় কাউকে প্রতিবিপ্লবী হিসেবে সন্দেহজনক মনে হলে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। প্রায় তিন লক্ষ এমন মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয় যার মধ্যে ১৬৫৯৪ জনকে গিলোটিনে হত্যা করা হয়। এছাড়াও হাজার হাজার মানুষ কারাগারে বা গণহত্যায় মারা যায়। রোবসপিয়ের এইভাবেই সন্ত্রাসের সাহায্যে নিখুঁত প্রজাতন্ত্র নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন।

এই লাগামছাড়া সন্ত্রাসই ছিল রোবসপিয়েরের পতনের মূল কারণ। ৪ জুন রোবসপিয়ের প্রায় সর্বসম্মতিক্রমে জাতীয় সম্মেলনের সভাপতি নির্বাচিত হন। ছয় দিন পরে, ২২ প্রেইরিয়াল আইন পাস করা হয়েছিল যা একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তির গণ বিচার এবং আইনি সহায়তার অধিকার স্থগিত করে। এর ফলে বহু নির্দোষ ব্যক্তিকেও গিলোটিনে হত্যা করা হয়। ন্যাশনাল কনভেনশন রোবসপিয়েরের কর্মকান্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে। এই অনিয়ন্ত্রিত সন্ত্রাসের কারণে ডান এবং বাম মধ্যপন্থী ও বিপ্লবীরা রোবসপিয়ের ও তাঁর অনুসরণকারীদের বিরুদ্ধে একটি জোট গঠন করে। এমনকি মাউন্টেনের লোকেরাও রোবসপিয়েরের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করে। রোবসপিয়ের একটি বক্তৃতার সময় নিজের দলের অভ্যন্তরীন কিছু সদস্যদের জন্যও মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পরিকল্পনার কথা জানান ইঙ্গিতে। তখনই তাঁর গ্রেপ্তারির জন্য সকলে একজোট হতে শুরু করে।

১৭৯৪ সালের ২৭ জুলাই ম্যাক্সিমিলিয়েন রোবসপিয়ের এবং তাঁর সহযোগীদের জাতীয় পরিষদ দ্বারা গ্রেপ্তার করা হয়। রোবসপিয়েরকে প্যারিসের লুক্সেমবার্গ কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু তিনি হোটেল ডি ভিলে পালিয়ে যান। যখন জানতে পারেন ন্যাশানাল কনভেনশন তাঁকে বেআইনি ঘোষণা করেছে তখন একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করলেও গুলি চোয়ালে আঘাত করে ফলে মৃত্যু হয়নি তাঁর। এর কিছুক্ষণ পরেই, ন্যাশনাল কনভেনশনের সৈন্যরা হোটেল ডি ভিল আক্রমণ করে এবং ম্যাক্সিমিলিয়েন রোবসপিয়ের এবং তার সহযোগীদের আটক করে। পরদিন অর্থাৎ ২৮ জুলাই ম্যাক্সিমিলিয়েন রোবসপিয়ের এবং তাঁর ২১ জন সহচরকে প্লেস দে লা রেভোল্যুশনে গিলোটিনে হত্যা করা হয়।

2 comments

আপনার মতামত জানান