pankaj-kumar-mullick

পঙ্কজ কুমার মল্লিক

কণ্ঠশিল্পী ও সংগীত পরিচালক পঙ্কজ কুমার মল্লিক (জন্মঃ- ১০ মে, ১৯০৫ – মৃত্যুঃ- ১৯ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৮)।

মাত্র আঠারো বছর বয়সে তিনি “নেমেছে আজ প্রথম বাদল” গানটি ভিয়েলোফোন কোম্পানি থেকে রেকর্ড করেন। ১৯৩২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রলয়নাচন নাচলে যখন ও তোমার আসন শূন্য আজি তাঁর প্রথম রবীন্দ্রসংগীতের রেকর্ড। রবীন্দ্রসংগীতকে জনপ্রিয় করে তোলার কাজেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি রবীন্দ্রনাথের খেয়া কাব্যগ্রন্থের শেষ খেয়া কবিতাটিতে (দিনের শেষে ঘুমের দেশে) সুরসংযোজন করে গেয়েছিলেন। ১৯২৭ সাল থেকে তিনি কলকাতার ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনে কাজ শুরু করেন। এই সংস্থা পরে অল ইন্ডিয়া রেডিও (এআইআর) (বর্তমানে আকাশবাণী কলকাতা) নামে পরিচিত হয়। এখানে তাঁর সহকর্মী ছিলেন রাইচাঁদ বড়াল। প্রায় পঞ্চাশ বছর তিনি আকাশবাণীকে সংগীতশিল্পী ও সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন।

১৯৩১ সাল থেকে দীর্ঘ ৩৮ বছর পঙ্কজ কুমার বাংলা, হিন্দি, উর্দু ও তামিল চলচ্চিত্রে অবদান রাখেন। তিনি কুন্দনলাল সায়গল, শচীন দেব বর্মণ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, গীতা দত্ত, আশা ভোসলে প্রমুখ সংগীত পরিচালক ও শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেছেন। চলচ্চিত্রে তিনি কুন্দনলাল সায়গল, প্রমথেশ বড়ুয়া ও কানন দেবীর মতো শিল্পীদের সঙ্গে অভিনয়ও করেন। নীতিন বসু ও রাইচাঁদ বড়ালের সঙ্গে তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রে নেপথ্য কণ্ঠসংগীতের প্রবর্তন করেছিলেন। ভারতের প্রথম যুগের ফিল্ম স্টুডিও নিউ থিয়েটার্সের সঙ্গে তিনি ২৫ বছর যুক্ত ছিলেন।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

রবীন্দ্রসংগীতকে জনপ্রিয় করে তোলার কাজেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ১৯২৯ সালের শেষের দিকে পঙ্কজ মল্লিক কলকাতা বেতারে সঙ্গীত শিক্ষার আসর নামে একটি অনুষ্ঠান পরিচালনা শুরু করেছিলেন। সঙ্গীত শিক্ষার আসরে তার সুর করা প্রথম গানটির গীতিকার ছিলেন অলক গঙ্গোপাধ্যায়। আর দ্বিতীয় গানটি ছিল কাজী নজরুল ইসলামের মোর ঘুম ঘোরে এলে মনোহর/নমো নম, নমো নম, নমো নম। সেই আসরে নজরুল, রবীন্দ্র সঙ্গীতসহ অতুল প্রসাদ, রজনীকানত্ম এবং দ্বিজেন্দ্র লালের গান শেখানো হতো। এছাড়াও তাঁর শিক্ষার সহস্রাধিক গানের তালিকায় ছিল পদকীর্তন, শ্যামাসঙ্গীত, পল্লীসঙ্গীত, দেশাত্মবোধক সঙ্গীত, আনুষ্ঠানিক গান, তুলসীদাস, সুর দাস, গুরুনানক, মীরাবাঈ প্রমুখের হিন্দী ভজন। তিনি রবীন্দ্রনাথের খেয়া কাব্যগ্রন্থের শেষ খেয়া কবিতাটিতে (দিনের শেষে ঘুমের দেশে) সুরসংযোজন করে গেয়েছিলেন।

সম্মাননা
১৯৭০ সালে তিনি পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হয়েছিল। ১৯৭২ সালে তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ভারত সরকার তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে সম্মানিত করে। ভারতীয় ডাকবিভাগ পঙ্কজ মল্লিকের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে ২০০৬ সালে একটি স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করে।
ভারতের রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন চ্যানেল দূরদর্শনও একই বছরের ১০ মে তদুপলক্ষ্যে বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান প্রচার করে।

জন্ম
কলকাতায় পঙ্কজ কুমার মল্লিকের জন্ম। তাঁর পিতার নাম মণিমোহন মল্লিক ও মায়ের নাম মনোমোহিনী দেবী। মণিমোহনের সংগীতের প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল। পঙ্কজ কুমার দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নেন। স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে তিনি পড়াশোনা শেষ করেন। এরপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র দ্বিপেন্দ্রনাথ ঠাকুরের পুত্র দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। এর ফলে তিনি রবীন্দ্রসংগীতের প্রতি আকৃষ্ট হন। পরে রবীন্দ্রনাথের স্নেহের পাত্রে পরিণত হন। অল্পকালের মধ্যেই পঙ্কজ কুমার রবীন্দ্রসংগীতের এক অগ্রণী শিল্পীর খ্যাতি অর্জন করেন।

তথ্যসূত্র


  1. https://en.m.wikipedia.org/wiki/Pankaj_Mullick

 

2 comments

আপনার মতামত জানান