ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে পেশোয়ার ষড়যন্ত্র মামলা (Peshawar Conspiracy Case) এক অনালোচিত অধ্যায়। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অনেক আগেই তাসখন্দে কমিউনিস্ট পার্টি স্থাপন করেছিলেন বিপ্লবী মানবেন্দ্রনাথ রায় আর সেই পার্টির সদস্য ছিলেন প্রায় শতাধিক মুহাজির। এই মুহাজিরদের বিরুদ্ধেই ব্রিটিশ সরকার দায়ের করেছিল পেশোয়ার ষড়যন্ত্র মামলা। পাঁচটি আলাদা আলাদা মামলায় বহু কমিউনিস্ট পার্টি কর্মীকে অভিযুক্ত করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশ বিরোধী তথা ইউরোপীয় শক্তির প্রতিপক্ষ হিসেবে কীভাবে বিশ্বের সকল মুসলিম একজোট হয়ে একটি পৃথক শক্তিরূপে প্রতিবাদ জানাতে চাইছিল আর কীভাবেই বা এই মুসলিম জোটের উত্থান রাশিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে ব্রিটিশ বিরোধী শক্তির রূপ নিল তার বৃহৎ ইতিহাস লুকিয়ে আছে এই মামলার আড়ালেই। আর পেশোয়ার ষড়যন্ত্র মামলায় বিচার হয় রাশিয়ায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বেশ কয়েকজন মুহাজিরের আর এই কারণেই ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠার পিছনে যে দীর্ঘ আন্দোলন তার ইতিহাসে পেশোয়ার ষড়যন্ত্র মামলা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য ঘটনা।
১৯২১ সাল থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত টানা আট বছর ধরে চলেছিল পেশোয়ার ষড়যন্ত্র মামলা। পাঁচটি পৃথক পৃথক ষড়যন্ত্র মামলা এই সময়পর্বে রুজু করেছিল ব্রিটিশ সরকার যেখানে অভিযুক্ত ছিলেন মহম্মদ আকবর, তাঁর ভৃত্য বাহাদুর এবং তাঁর বাবা হাফিজুল্লাহ্ খান, বেলুচিস্তানের মহম্মদ হাসান এবং পেশোয়ারের গুলাম মেহবুব, আকবর শাহ্, গৌহর রহমান, ফিরোজ উদ্দিন, আব্দুল মজিদ, হাবিব আহ্মেদ, সুলতান মহম্মদ এবং রফিক আহ্মেদ, ফিদা আলি, আবদুল কদর, মহম্মদ শফিক, ফৈজল ইলাহী কুরবান। এদের মধ্যে প্রথম পর্বের মামলায় মুখ্য অভিযুক্ত হন মহম্মদ আকবর, বাহাদুর শাহ এবং হাফিজুল্লাহ খান। পরে দ্বিতীয় পর্বের মামলায় অভিযুক্ত হন মহম্মদ হাসান এবং গুলাম মেহবুব আর তৃতীয় মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন অনেকেই যাদের মধ্যে ফিদা আলি এবং আবদুল কদরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। চতুর্থ মামলাটি শুরু হয় মহম্মদ শফিকের বিচারকে কেন্দ্র করে এবং একেবারে অন্তিম মামলা কেন্দ্রীভূত ছিল ফৈজল ইলাহী কুরবানকে ঘিরে। মোট ১৪ জন অভিযুক্তকে নিয়ে পাঁচ পর্বের এই বিরাট পেশোয়ার ষড়যন্ত্র মামলায় মুখ্য বিচারপতি ছিলেন জে. এইচ. ফ্রেজার। ব্রিটিশ সরকারের ভীতি ছিল রাশিয়ার সঙ্গে মিলিত হয়ে বলশেভিক বিপ্লবের ধারায় মুহাজির মুসলমানরা ব্রিটিশ বিরোধিতা করতে পারে বড়ো আকারে আর সেই জন্যেই এই মামলা দায়ের করা হয় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে।
মামলার প্রেক্ষাপট জানতে গেলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে। ব্রিটিশ শক্তি তখনও আমাদের ভারতকে শাসন করে চলেছে আর ভারতের দিকে দিকে নানা সময় ব্রিটিশ বিরোধিতার ঝড় উঠেছে। স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছিল সেই সময় থেকেই। ইতিমধ্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলে আসায় ব্রিটিশ বিরোধিতার এক অন্যতর মাত্রা উন্মোচিত হয়। ভারতের বাইরে ব্রিটিশ-বিরোধী কার্যকলাপ এবং ভারতের মধ্যে ক্রমান্বয়ে শ্রমিক ধর্মঘট, ব্রিটিশ-বিরোধী কর্মকাণ্ড দানা বাঁধতে থাকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ইউরোপ আর রাশিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ‘বলশেভিক ট্রেড এগ্রিমেন্ট’। তখন সমগ্র বিশ্বে দুটিই মহাশক্তি বিবদমান ছিল – এক ইউরোপ আর দুই রাশিয়া। বলশেভিক বিপ্লবের বাতাবরণ সমগ্র মধ্য এশিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে আর রাশিয়াই হয়ে ওঠে সমগ্র বিশ্বের ইউরোপ-বিরোধিতার কেন্দ্র। আর এই বলশেভিক আন্দোলনকে দমন করতে গিয়ে ঔপনিবেশিক ক্ষমতা দখলের লড়াইতে যুদ্ধ বাধে ইউরোপের সঙ্গে আফগানিস্তান, তুর্কি, পার্সিয়ার মতো ছোটো ছোটো মধ্য-প্রাচ্যের দেশের। এই সময়পর্বেই তাসখন্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পরে পরেই ১৯২০ সালের ১৭ অক্টোবর মুহাজিরদের নিয়ে গড়ে ওঠে কমিউনিস্ট পার্টি, সংগঠনের নেতৃত্ব দেন বিপ্লবী মানবেন্দ্রনাথ রায়। ১৯১০ সাল নাগাদ বলকান যুদ্ধ চলাকালীন ঔপনিবেশিক শক্তির প্রভূত চাপ সহ্য করছিল তুর্কি সহ অন্যান্য মধ্য-প্রাচ্যের মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলি। ফলে তারা অটোমান সাম্রাজ্যের দূর্দিনে এমন একটা জোট খুঁজছিল যা কিনা ব্রিটিশ-বিরোধিতায় শক্তিশালী হবে। আর সেই থেকেই অখণ্ড বিশ্বের মুসলিমদের একজোট করে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনে সামিল হওয়ার প্রকল্প উঠে আসে। ব্রিটিশ বিরোধিতার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হিজরত পালনের নামে ১৯১৫ সালেই লাহোরের কয়েকজন শিক্ষিত যুবক তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অভিবাসী হয়ে লাহোর থেকে ব্রিটিশ-শাসনের বেড়াজাল টপকে আফগানিস্তানে যাত্রা করে। এই অভিবাসী মুসলিমদেরই মুহাজির বলে। মূলত হিজরত পালনের উদ্দেশে যে সমস্ত মুসলিম নিজের দেশ ছেড়ে চলে আসে তারাই মুহাজির। পরবর্তীকালে এই মুহাজিররাই ব্রিটিশ-বিরোধিতার কেন্দ্র হয়ে উঠবেন। আফগানিস্তানে পৌঁছেও সেই মুহাজিরদের শান্তি ছিল না কারণ উপনিবেশ দখলের লড়াইতে বারবারই ‘অ্যাংলো-আফগান যুদ্ধ’ লেগেই থাকতো আর সেই কারণেই তারা আরো বড়ো কোনো ব্রিটিশ-বিরোধী শক্তির সন্ধান করতে থাকে। আর ১৯১৭ সাল রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লব ঘটে যাওয়ায় তারা রাশিয়ার কাছ থেকেই ব্রিটিশ-বিরোধিতার ইন্ধন লাভ করতে শুরু করে। তুর্কিস্তানের তাসখন্দ তখন বলশেভিক শক্তির অন্যতম কেন্দ্র। ব্রিটেনের সঙ্গে রাশিয়ার বিশ্বযুদ্ধ চলছে তখন। সকল মুহাজিররা কাবুলে এসে উপনীত হয়েছিলেন সেই সময় যাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন খুশি মহম্মদ। এই খুশি মহম্মদের সঙ্গে দেখা হয় এম.এন রায়ের এবং তার ফলেই কমিউনিস্ট ভাবাদর্শের প্রতি প্রাণিত হয়ে পড়েন সকল মুহাজিররা আর তাদের নিয়েই ১৯২০ সালের অক্টোবর মাসে মানবেন্দ্রনাথ রায় তাসখন্দে গড়ে তোলেন প্রথম কমিউনিস্ট পার্টি। ভারতে তখন শুরু হয়ে গেছে খিলাফত আন্দোলন। ফলে একটা বিশাল মুসলিমের মিছিল এসে উপনীত হয় আফগানিস্তানে এবং মুহাজিরদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রায় চল্লিশ হাজার অভিবাসী সেদিন জড়ো হয়েছিল আফগানিস্তানে কারণ খিলাফত সমস্যার কারণে তারা ভেবেছিল ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণহীন এই আফগানিস্তানই হয়ে উঠবে মুসলিমদের স্বর্গরাজ্য-শান্তির আশ্রয়স্থল। এদিকে ব্রিটিশ বিরোধী যুদ্ধে যাওয়ার জন্য অনেক মুহাজিরকে পাঠানো হয় তুর্কিতে যেখানে সোফিয়া কামালের নেতৃত্বে যুদ্ধ চালাচ্ছিল তুর্কি। এরই মধ্যে আফগান সীমান্তে নিরস্ত্র অভিবাসীদের উপর নির্বিচারে গুলি চালালে ব্রিটিশদের উপর মুসলিমদের ক্ষোভ আরো বেড়ে যায়। কাবুল ছেয়ে যায় মৃত অভিবাসীদের কবরে। আর এই উন্মত্ত মুহাজিরদের মধ্যেই কয়েকজন চলে আসে রাশিয়া-কেন্দ্রিক মধ্য এশিয়ায়। ভারতের বাইরে সেইসব ভারতীয় অভিবাসীদের নিয়েই এম.এন রায় গড়ে তোলেন অভিবাসী কমিউনিস্ট পার্টি যার পরে নাম হয় ‘ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি’। দিনটা ছিল ১৯২০ সালের ১৭ অক্টোবর। পার্টির তৎকালীন সম্পাদক হন মহম্মদ শফিক। ক্রমেই ভারতীয় মুহাজিরদের মধ্যে থেকে আব্দুল হামিদ, গৌহর রহমান, আকবর শাহ প্রমুখরা যোগ দিতে শুরু করেন। সকল সদস্যদের মস্কোর ‘ইউনিভার্সিটি অফ দ্য টয়লারস অফ দ্য ইস্ট’-এ মার্ক্সবাদে দীক্ষিত করে তোলা হতো এবং বিশেষ মিলিটারি প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। ইতিমধ্যে শিক্ষা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই যে মুহাজিররা ১৯২০ সালে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন তারা ফিরে আসতে চাইলেন ভারতে। তাসখন্দে ১৯২০ সালের অক্টোর মাস থেকে ১৯২১ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত শিক্ষালাভ করেছিল মুহাজিররা। বলশেভিক কর্তৃপক্ষ তাদের কাবুলে আসতে সবরকম সাহায্য করেছিল কিন্তু তুর্কিতে আসতে চাইলে তুর্কি সরকার ভিসার অনুমোদন দেয়নি। ফলে তারা কাবুল থেকে ভারতে চলে আসে ১৯২২ সালে। ভারতে তখনও ব্রিটিশ শাসন চলছে। যদিও ৪০ জন মুহাজির রয়ে গিয়েছিলেন মানবেন্দ্রনাথ রায়ের সঙ্গেই। অনুমোদন না পাওয়ায় গোপনে আফগানিস্তানের মধ্য দিয়ে, কখনো আবার পামীর মালভূমি টপকে তারা সকলে ভারতে আসে। রেড মিলিটারি কমাণ্ডারেরা ভারতের সীমানা পর্যন্ত তাদের পথ দেখিয়ে নিরাপদে নিয়ে আসে। কিন্তু ভারতে আসা মাত্রই চিত্রালে ব্রিটিশ সরকারের পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে এবং বিচারের জন্য পাঠিয়ে দেয় পেশোয়ারে। পেশোয়ারে ব্রিটিশ গোয়েন্দা বিভাগের অফিসার এওয়ার্ট তাদের জেরা করতে শুরু করেন। আফগানিস্তান আর ভারতের সীমানায় ধরা পড়েন বহু মুহাজির যাদের মধ্যে লাহোরের মীর আবদুল মজিদ, শেখপুরার ফিরোজউদ্দিন মনসুর, ভোপালের রফিক আহমেদ, শাহজাহানপুরের হাবিব আহমেদ, হাজারার সুলতান মাহমুদ, পেশোয়ারের আবদুল কাদির শেহরি এবং ফিদা আলী সর্বাগ্রগণ্য। যুদ্ধের সময়ে এদের প্রায় সকলেই মাঝপথেই পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। কমরেড গোল্ডবার্গকে লেখা আব্দুল মজিদের চিঠি থেকে জানা যায় যে, তারা বিভিন্ন ছোটো ছোটো দলে ভাগ হয়ে গিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। কিন্তু ভারতে আসার রাস্তা মোটেই সুখকর ছিল না। দশটি ঘোড়ার মধ্যে ছয়টি ঘোড়াই প্রবল শীতে মারা যায়। ফলে হেঁটে হেঁটেই আসতে হয় তাদের। কাবুল থেকে আটদিন লেগে যায় তাদের ভারতের চিত্রালে আসতে। মুহাজির আকবর খান লাহোরে তাঁর বাবা হাফিজুল্লাহ্ খানের সঙ্গে গোপনে দেখা করেন। ইতিমধ্যেই আকবর খানের সঙ্গে সঙ্গে ১৯২১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর আকবরের এক ভৃত্য বাহাদুরও গ্রেপ্তার হন পেশোয়ার সীমান্ত এলাকায়। আকবর খানের বাবা হাফিজুল্লাহ্ ব্রিটিশ সরকারের বেতনভুক গোয়েন্দা-কর্মচারী ছিলেন কিন্তু তিনিও পুত্রের ব্যাপারে কোনো তথ্য প্রকাশ করতে অসম্মত হওয়ায় তাঁকেও গ্রেপ্তার করে ব্রিটিশ পুলিশ। ১৯২২ সালের ১০ অক্টোবর এই তিনজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় প্রথম পেশোয়ার ষড়যন্ত্র মামলা। এরপরে আকবর খানকে দ্বিতীয়বার অভিযুক্ত করা হয় ১৯২৩ সালের ৭ মার্চ তারিখে এবং তাঁর সঙ্গে সেবারে আরো দুই জন কমরেড অভিযুক্ত হন – মহম্মদ হাসান এবং গুলাম মেহবুব। ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে বলশেভিক দলের থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাত জন মুসলিমকে এরপরে গ্রেপ্তার করে ব্রিটিশ পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে চলে দ্বিতীয় পেশোয়ার বলশেভিক ষড়যন্ত্র মামলা। এভাবে আরো তিনটি মামলা চলে।
প্রথম পেশোয়ার ষড়যন্ত্র মামলায় ১৯২২ সালের ৩১ মে তারিখে ২৬ বছর বয়সী আকবর খানকে মোট তিন বছরের কারাদণ্ড এবং তাঁর ভৃত্য বাহাদুরকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আকবর খানের বাবা ৫২ বছর বয়সী হাফিজুল্লাহ্কে প্রমাণ না থাকায় নির্দোষ হিসেবে ছেড়ে দেওয়া হয়। দ্বিতীয়বার পেশোয়ার বলশেভিক ষড়যন্ত্র মামলায় ভারতীয় কমরেডদের সঙ্গে বিপজ্জনক বার্তা আদানপ্রদানের জন্য, চিঠি বিনিময়ের অপরাধে পুনরায় অভিযুক্ত করা হয় আকবর খানকে এবং তাঁকে আরো সাত বছরের কারাদণ্ডের দণ্ডাদেশ দেওয়া হয় ১৯২৩ সালের ২৭ এপ্রিল এবং একইসঙ্গে তিন মাসের একাকী নির্জন কারাবাসের দণ্ড দেওয়া হয়। বলশেভিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অপরাধে সাতজন মুসলিমকে অভিযুক্ত করা হয় যাদের মধ্যে অধিকাংশের বক্তব্য ছিল যে তারা স্বঘোষিত কমিউনিস্ট নয়, বরং ব্রিটিশ-বিরোধিতাই তাঁদের মূল লক্ষ্য ছিল। ১৯২৩ সালের ১৮ মে তাঁদের মধ্যে ফিদা আলি আর গুলাম মহম্মদ রাজসাক্ষী হয়ে যান। ২৩ বছর বয়সী মহম্মদ আকবর শাহ এবং ২৭ বছর বয়সী গৌহর রহমানকে দুই বছরের কারাবাসের দণ্ড দেওয়া হয়। অন্যদিকে হাবিব আহমেদ, রফিক আহমেদ (২৪), ফিরোজউদ্দিন মনসুর (২১), আবদুল মজিদ (২১) এবং সুলতান মাহমুদকে (২৪) এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পেশোয়ারের আবদুল কাদির গোপনে ইংরেজদের সাহায্য করায় তিনি ছাড়া পেয়ে যান। মহম্মদ শফিকের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ সরকার চতুর্থ পেশোয়ার ষড়যন্ত্র মামলা রুজু করে এবং তাতে ১৯২৪ সালের ৪ এপ্রিল মহম্মদ শফিকের তিন বছরের কারাদণ্ড হয়। সবশেষে ১৯২৭ সালে ফৈজি ইলাহী কুরবানের বিরুদ্ধে রুজু হওয়া পঞ্চম পেশোয়ার ষড়যন্ত্র মামলায় তিন বছরের কারাবাসের সাজা দেওয়া হয় তাঁকে। এই সমগ্র পেশোয়ার বলশেভিক ষড়যন্ত্র মামলাটি সম্পূর্ণ গোপনে পর্বে পর্বে করা চলেছিল যাতে কোনোভাবেই ভারত জুড়ে বলশেভিজম ছড়িয়ে না পড়ে এবং এই মামলার ব্যাপারে কোনো ভারতীয়ই যাতে কিছু জানতে না পারে। তবুও গোপন সূত্রে এই মামলার সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ পায় অমৃতবাজার পত্রিকায়। তাতে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয় যে, ব্রিটিশ সরকার একেবারেই কোনো আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলেই এই গোপনীয়তা। কিছুদিন পরে ‘দ্য স্টেটসম্যান’ পত্রিকাতেও মামলা সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ পায়। ভারতের ইতিহাসে একইসঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা এবং ব্রিটিশ বিরোধিতা দুই ক্ষেত্রেই অগ্রণী অবদান রেখেছে এই মামলা।
কারাবাস থেকে মুক্ত হয়ে আবদুল মজিদ, ফিরোজউদ্দিন মনসুর এবং গৌহর রহমান ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। যদিও পরে ১৯২৯ সাল নাগাদ আবার মীরাট ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত হয়েছিলেন আবদুল মজিদ।দিল্লির কমিউনিস্ট পার্টির শাখার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন হাবিব আহমেদ। মহম্মদ আকবর শাহ কমিউনিস্ট দলে যোগ না দিয়ে আইনজীবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন যিনি পরে সুভাষ বসুর সমর্থনে ফরোয়ার্ড ব্লকে যোগ দেন। সবশেষে সুলতান মাহমুদ একেবারেই রাজনীতির জগত থেকে অন্তর্হিত হন।
তথ্যসূত্র
- ‘Towards Communism: 1917 and the Muhajirs from India Adrift in Central Asia’, Suchetana Chattopadhyay (Social Scientist), Vol. 47, No. 7/8 (554-555), July-August 2019, pp. 3-27 (JSTOR)
- http://cpiml.org/
- https://web.a.ebscohost.com/
- https://en.wikipedia.org/
2 comments