সতীপীঠ শ্রীপর্বত

সতীপীঠ শ্রীপর্বত

সতীপীঠ শ্রীপর্বত এর অবস্থান নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক আছে। একটি মত অনুসারে এই সতীপীঠটি জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের লেহ জেলার লাদাখে অবস্থিত। অন্য একটি মত বলে যে, এই সতীপীঠটি অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নুল জেলায় অবস্থিত। তবে সবথেকে বিশ্বাসযোগ্য মতটি হল লাদাখেই আছে সতীপীঠ শ্রীপর্বত । সতীপীঠ শ্রীপর্বত -এ সতীর ডান পায়ের নূপুর পড়েছিল। এখানে অধিষ্ঠিত দেবী হলেন শ্রীসুন্দরী এবং ভৈরব সুন্দরানন্দ।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে মাতা সতী নিজের বাপের বাড়িতে বাবার কাছে স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে সেখানেই দেহত্যাগ করেছিলেন। মাতা সতীর দেহত্যাগের খবর মহাদেবের কাছে পৌঁছতেই মহাদেব সেখানে উপস্থিত হন। সতীর মৃতদেহ দেখে ক্রোধে উন্মত্ত মহাদেব সেই দেহ কাঁধে নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য চালু করেন। মহাদেবের তাণ্ডব নৃত্যে পৃথিবী ধ্বংসের আশঙ্কায় শ্রীবিষ্ণু তাঁর সুদর্শন চক্র দ্বারা মাতা সতীর দেহ একান্নটি খণ্ডে খণ্ডিত করেন। সেই দেহখন্ডগুলোই যে যে স্থানে পড়েছিল সেখানে একটি করে সতীপীঠ প্রতিষ্ঠা হয়, বলা হয় সতীর ডান পায়ের নূপুর পড়ে শ্রীপর্বত সতীপীঠটি গড়ে উঠেছে। 

সতীপীঠ শ্রীপর্বত নিয়ে তেমন কোনো নির্ভরযোগ্য পৌরাণিক বা ঐতিহাসিক কাহিনী পাওয়া যায় না। এই মন্দিরের দেবী শ্রীসুন্দরী ‘শ্রী কুল’এর অন্তর্গত। তিনি ভক্তদের ভোগ এবং মোক্ষ দুটিই প্রদান করেন। একটি শ্বেতপাথরের বেদীর উপর দেবীর মূর্তি অধিষ্ঠিতা। এই মূর্তিটি কালো পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। মায়ের পরনে লাল শাড়ি। গলায় ফুলের মালা এবং একাধিক সোনার হার। মাথায় কালো পাথর দিয়েই বানানো মুকুট। মূর্তিটির চারপাশে ঘিরে আছে একটি সোনার বলয়, যা মূর্তিটির তিনভাগের দুই ভাগ আবৃত করে রেখেছে। বলয়টির মাঝখানে অর্থাৎ দেবীর মাথার ঠিক উপরে একটি সিংহের মুখ খোদাই করা আছে।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

এই সতীপীঠের নামের সঙ্গে যুক্ত ‘শ্রী’ শব্দটিই বলে দেয় এখানকার অতুলনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের কথা। এছাড়াও দেবী শ্রীসুন্দরীর মন্দিরের স্থাপত্যশৈলীও প্রশংসনীয়। মন্দিরের চূড়াটি অনেক উঁচু, যা বেশ কিছুটা দূর থেকেই দেখতে পাওয়া যায়। মন্দিরটির ভিতরের ও বাইরের দেওয়ালে অনেক দেবতা ও দেবীর মূর্তি খোদাই করা আছে। 

প্রতিটি সতীপীঠেই দেবীর সঙ্গে ভৈরব অধিষ্ঠিত থাকেন। দেবী হলেন সতীর রূপ। ভৈরব হলেন দেবীর স্বামী। শ্রীপর্বত সতীপীঠে দেবীর নাম ‘শ্রীসুন্দরী’ এবং ভৈরব হলেন ‘সুন্দরানন্দ’। 

এই মন্দিরে নিত্যপুজোর বন্দোবস্ত আছে। প্রতিদিনই এখানে দেবীকে দর্শন করতে ও দেবীর কাছে পুজো দিতে অনেক ভক্তেরা আসেন। তবে বছরের কয়েকটি সময় এখানে বিশেষভাবে উৎসব পালিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে বছরের দুই বারের নবরাত্রি অর্থাৎ চৈত্র মাস ও আশ্বিন মাসের নবরাত্রি উৎসব এবং ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীতে মহাশিবরাত্রি উৎসব। এই দিনগুলিতে মন্দিরটি ফুলের মালা ও নানা রকমের আলো দিয়ে সাজানো হয়। অনেক ভক্ত আসেন মায়ের বিশেষ পুজো দেখতে ও মায়ের কাছে নিজেদের মনের ইচ্ছা পূরণ করার আর্জি জানাতে। এছাড়াও কার্তিক মাসের অমাবস্যায় দীপাবলী উৎসবও এখানে ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয়। এখানে তখন বিরাট মেলা বসে।

আপনার মতামত জানান