ভিনসেন্ট ভ্যান গখ

ভিনসেন্ট ভ্যান গখ

বিশ্বের চিত্রশিল্পের ইতিহাস লক্ষ্য করলে দেখা যায় একেকজন শিল্পী এসে তাঁদের প্রতিভার জাদুতে পুরাতনের ছাঁচ ভেঙে নতুন এক শিল্পভাষার উদ্ভাবন ঘটিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বাঁক বদল ঘটিয়ে দিয়েছিলেন। সেইসব শিল্পীর তালিকায় ডাচ চিত্রশিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গখ (Vincent van Gogh)-এর নাম নিঃসন্দেহে উপরদিকে স্থান পাবে। একজন পোস্ট-ইমপ্রেশনিস্ট যুগের শিল্পী ছিলেন তিনি। এক দশকে প্রায় ২১০০টি শিল্পকর্ম নির্মাণ করেছিলেন ভ্যান গখ। তাতে ল্যান্ডস্কেপ, প্রতিকৃতি, আত্মপ্রতিকৃতি, স্টিল লাইফ ইত্যাদি নানা ধরনের চিত্রকর্ম লক্ষ করা যায়। প্যারিস, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস ইত্যাদি নানা স্থানে ঘুরেছেন তিনি, তাঁর ছবিতে সাধারণ মানুষের জীবন বিশেষত কৃষকদের জীবন জীবন্ত হয়ে উঠেছে। ভিনসেন্টের ল্যান্ডস্কেপগুলিও নয়নাভিরাম। বাগানের ছবি, বাড়ির ভিতরকার দৃশ্য কিংবা কোনও প্রতিকৃতি যাই হোক না কেন, ভ্যান গখের ক্যানভাস জুড়ে আকর্ষণীয় রঙের ব্যবহার, আবেগপ্রবণ ও অভিব্যক্তিপূর্ণ তুলির টান লক্ষণীয়। চিত্রশিল্পের প্রথাগত ধরণ থেকে প্রাণপনে বেরিয়ে এসে একটি স্বতঃস্ফূর্ত শৈলীর সন্ধান করেছিলেন তিনি এবং সফলও হয়েছিলেন তাতে। প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মপ্রচারক হিসেবেও কাজ করেছিলেন তিনি একসময়।

১৮৫৩ সালের ৩০ মার্চ নেদারল্যান্ডসের উত্তর ব্রাবান্টের প্রধানত ক্যাথলিক প্রদেশের গ্রুট জুন্ডার্টে একটি উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারে ভিনসেন্ট ভ্যান গখের জন্ম হয়। তাঁর বাবা থিওডোরাস ভ্যান গখ ছিলেন একটি ডাচ রিফর্মড চার্চের যাজক। ভিনসেন্টের মায়ের নাম ছিল আনা কর্নেলিয়া কার্বেন্টাস তিনি ছিলেন হেগের একটি সমৃদ্ধ পরিবারের কন্যা৷ তাঁদের মোট ছয় সন্তানের মধ্যে ভিনসেন্ট ছিলেন জ্যেষ্ঠপুত্র। তাঁর জন্মের ঠিক একবছর আগে আনা কর্নেলিয়ার প্রথম সন্তানের মৃত্যু হয় যার নামও ছিল ভিনসেন্ট। সেই মৃত সন্তানটির নামেই ভ্যান গখের নাম রাখা হয়েছিল৷ ভিনসেন্টের পরে তাঁর দুই ভাই থিও এবং কোর ও তিন বোন এলিজাবেথ, আনা এবং উইলেমিনা ছিল। পরবর্তী জীবনে ভ্যান গখ কেবল থিও এবং উইলেমিনার সঙ্গেই পরিচয় রেখেছিলেন। থিওর সঙ্গে তাঁর পত্রালাপ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যেহেতু বাবার সঙ্গে চার্চের একটি সম্পর্ক ছিল এবং তাঁর মা আনা কর্নেলিয়াও ছিলেন একজন ধার্মিক মহিলা, সেহেতু এক ধর্মীয় বাতাবরণের মধ্যেই বেড়ে উঠেছিলেন ভিনসেন্ট। ছোটবেলা থেকেই ভ্যান গখ চিন্তাশীল, গম্ভীর এবং শান্ত প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। খুব অল্প বয়স থেকেই তিনি ছবি আঁকা শুরু করেছিলেন। ভিনসেন্টের পরিবারের সঙ্গেও অবশ্য শিল্পের যোগাযোগ ছিল। তাঁর দুই কাকা কর্নেলিস (আঙ্কেল কোর) এবং ভিনসেন্ট (আঙ্কেল সেন্ট) ছিলেন শিল্প-ব্যবসায়ী।

প্রাথমিকভাবে মায়ের কাছে এবং এক পরিচারিকার কাছে ভ্যান গখের শিক্ষা শুরু হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৮৬০ সালে জুন্ডার্ট গ্রামেরই একটি গ্রামার স্কুলে ভর্তি করে দেওয়া হয় তাঁকে। তারপর এগারো বছর বয়সে গ্রামের সেই স্কুল থেকে জোভেনবার্গের জান প্রোভিলির বোর্ডিং স্কুলে স্থানান্তরিত হন তিনি। যদিও সেই বোর্ডিং স্কুলের দিনগুলিতে তাঁর মনে শান্তি ছিল না, তবে তা সত্ত্বেও প্রাথমিক স্তরের পড়াশোনা শেষ করতে পেরেছিলেন তিনি। সেইসময় তিনি ছবিও আঁকতেন পড়াশোনার পাশাপাশি, কিন্তু সেসব ছবি তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না। ভিনসেন্টের মা তাঁকে ছবি আঁকায় প্রভূত উৎসাহ জোগাতেন। এর দুবছর পর তেরো বছর বয়সে ১৮৬৬ সালে ভিনসেন্টকে তাঁর বাবা-মা ভর্তি করে দেন টিলবার্গের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ১৮৬৮ সালে হঠাৎই তিনি স্কুল ছেড়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

১৮৬৯ সালের জুলাই মাসে ভ্যান গখের কাকা ‘আঙ্কেল সেন্ট’ দ্য হেগ শহরের আর্ট ডিলার গৌপিল অ্যান্ড সি-তে তাঁর জন্য একটি কাজের সুযোগ করে দেন। ১৮৭৩ সালে প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পরে তাঁকে গৌপিলের লন্ডন শাখায় সাউদাম্পটন স্ট্রিটে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে স্টকওয়েলে ৮৭, হ্যাকফোর্ড রোডে তাঁর থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল। এই সময়টা ভ্যান গখের ভীষণ আনন্দে কেটেছিল। তখন তাঁর ২০ বছর বয়স মাত্র এবং তিনি নিজের বাবার চেয়েও বেশি উপার্জন করতেন সেই সময়। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন ১৮৭২ সালে ভাই থিওর সঙ্গে ভিনসেন্টের পত্রালাপের সূচনা হয়েছিল। তাঁর এই চাকরি শিল্পকর্মের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ স্থাপনের একটি সুযোগ করে দিয়েছিল তাঁকে। শীঘ্রই তিনি রেমব্রান্ট, ফ্রান্স হালস প্রমুখ বিখ্যাত সব ডাচ চিত্রশিল্পীদের কাজের সঙ্গে পরিচিত হন এবং তাঁর মধ্যে এক অন্য ধরনের শিল্পস্বাদ জেগে ওঠে। যদিও তাঁর পছন্দের ছিল দুই সমসাময়িক ফরাসি শিল্পী জিন-ফ্রাঁসোয়া মিলেট এবং ক্যামিল কোরোট। ইতিমধ্যে লন্ডনে বাড়িওয়ালার মেয়ে ইউজেনি লয়েরের প্রতি মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েন ভিনসেন্ট ভ্যান গখ। যদিও নিজের মনের ভাব প্রকাশ করার পর তিনি প্রত্যাখাত হয়েছিলেন। সেই কষ্ট তাঁকে বিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দেয় এবং তখন তিনি ধর্মের প্রতি খুব উৎসাহী হয়ে ওঠেন। সেসময় ১৮৭৫ সালে তাঁর বাবা এবং কাকা প্যারিসে তাঁকে স্থানান্তরিত করার ব্যবস্থা করেন। ১৮৭৬ সালে গৌপিল কোম্পানির সঙ্গে তাঁর বন্ধন ছিন্ন হয়ে যায়।

১৮৭৬ সালেরই এপ্রিল মাসে রামসগেটের ছোট বোর্ডিং স্কুলে সরবরাহ শিক্ষক হিসেবে একটি অবৈতনিক কাজ নিতে ভিনসেন্ট ভ্যান গখ ফিরে আসেন ইংল্যান্ডে। ১৮৭৬ সালের ক্রিসমাসে ছয় মাসের জন্য বাড়ি আসেন এবং ডরড্রেখটের একটি বইয়ের দোকানে কাজ নেন। কিন্তু সেটা তাঁর সুখের সময় ছিল না, ফলত তিনি ইংরেজি, জার্মান এবং ফরাসি ভাষায় বাইবেলের নানা অনুচ্ছেদ অনুবাদ করতে থাকেন। ধর্ম-কর্মে নিমগ্ন হয়ে প্রায় সন্ন্যাসী হয়ে ওঠেন তিনি এসময়ে। তাঁর যাজক হওয়ার ইচ্ছেকে সমর্থন করে তাঁর পরিবার তাঁকে ১৮৭৭ সালে আমস্টারডামে ধর্মতত্ত্ববিদ এক কাকা জোহানেস স্ট্রিকারের সঙ্গে বসবাসের জন্য পাঠিয়ে দেয়৷ সেই সময় ভ্যান গখ আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত্বের প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েও পরীক্ষায় ব্যর্থ হন। এরপর ব্রাসেলসের কাছে লেকেনের একটি প্রোটেস্ট্যান্ট মিশনারি স্কুলে তিন মাসের কোর্সে অংশ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছিলেন। ১৮৭৯ সালে বেলজিয়ামের বোরিনেজ নামক কয়লাখনি অঞ্চলের পেটিট-ওয়াসমেসে একজন ধর্মপ্রচারকের পদ নিয়ে চলে যান ভ্যান গখ। সেখানকার দরিদ্র মানুষের দিনযাপন দেখে আরামদায়ক বাসস্থান ছেড়ে একটি ছোট্ট কুঁড়েঘরে বসবাস করতেন তিনি। তবে তাঁর এই আচরণ চার্চ কর্তৃপক্ষ খুব একটা সুনজরে দেখেনি, তাঁদের বক্তব্য ছিল, ভিনসেন্ট যাজকত্বের মর্যাদা ক্ষুন্ন করছেন। এরপর ৭৫ কিমি হেঁটে তিনি যান ব্রাসেলসে, সেখান থেকে অল্প সময়ের জন্য আবার বোরিনেজের কুয়েসমেসে ফেরেন। তবে বাবা-মায়ের জোরাজুরিতে এটেনে বাড়িতে ফিরে আসেন ভিনসেন্ট ভ্যান গখ এবং ১৮৮০ সালের মার্চ পর্যন্ত সেখানেই থাকেন তিনি। সেবছরই আগস্ট মাসে কুয়েসমেসে ফিরে একজন কয়লাখনির শ্রমিকের কাছে থাকতে শুরু করেন তিনি।

ভাই থিওর পরামর্শ অনুযায়ী এই কুয়েসমেসের আশেপাশের মানুষ, তাঁদের দারিদ্র্য, দৈনন্দিন জীবনযাপনের ছবি ভিনসেন্ট আঁকতে শুরু করেন। থিওর কথা মেনেই তিনি ব্রাসেলসে রওনা দেন ও ডাচশিল্পী উইলেম রোয়েলফসের সঙ্গে শিল্প অধ্যয়ন করেন। যদিও ভিনসেন্ট শিল্পের আনুষ্ঠানিক স্কুলগুলিকে অপছন্দ করতেন, তবুও উইলেম তাঁকে ‘অ্যাকাডেমি রয়্যালে দেস বেউক্স-আর্টস’-এ যোগ দেওয়ার জন্য জোরাজুরি করতে থাকেন। ১৮৮০ সালের নভেম্বরে সেই অ্যাকাডেমিতে যোগ দিয়ে হিউম্যান অ্যানাটমি মডেলিং এবং দৃষ্টিভঙ্গির আদর্শ নিয়ম-কানুন অধ্যয়ন করেন তিনি।

১৮৮১-তে এটেনে বাবা-মার সঙ্গে বসবাস করতে থাকেন ভিনসেন্ট ভ্যান গখ এবং প্রতিবেশীদেরকে নিজের ছবির বিষয় হিসেবে ব্যবহার করতে থাকেন। ১৮৮১তেই বিধবা এবং সাত বছরের বড়ো মাসতুতো ভগিনীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে প্রত্যাখাত হন তিনি। ১৮৮২-তে সিয়েন নাম্নী এক নারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভিনসেন্ট। সিয়েন তখন গর্ভবতী এবং পাঁচ বছরের এক কন্যার জননী। এই সম্পর্কের কথা জানতে পেরে বাবা তাঁকে সেখান থেকে সরে আসার জন্য জোর করতে থাকলেও প্রথমে অস্বীকার করেন ভিনসেন্ট। ১৮৮৩-এর শেষের দিকে তিনি সিয়েন ও তাঁর শিশুদের ছেড়ে চলে আসেন। ভিনসেন্টের শিল্পীজীবন ধরা হয় ১৮৮০ থেকে ১৮৯০ সাল পর্যন্ত প্রায় দশ বছর। ১৮৮১-তে ডাচ ল্যান্ডস্কেপ শিল্পী আন্তন মাউভের সঙ্গে কাজের জন্য হেগ শহরে বসতি স্থাপন করেন তিনি। মাউভ তাঁকে জলরঙ এবং পরে তেলরঙে ছবি আঁকার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তিনি সেখানে জাদুঘর পরিদর্শন করেন, অন্যান্য শিল্পীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, এভাবে প্রযুক্তিগত জ্ঞান বাড়ান নিজের। ১৮৮২-তে গ্রীষ্মকালে ভিনসেন্ট ভ্যান গখ তেলরঙ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। ১৮৮৩ সালে উত্তর নেদারল্যান্ডসের ড্রেন্থে চলে যান তিনি প্রকৃতির সঙ্গে একা সময় কাটাতে। বাড়ি ফেরার আগে ব্রাবান্টের নুয়েনেন গ্রামে যান এবং সেখানে থাকাকালীন তাঁতিদের জীবন এবং বাসস্থানকে বিষয় করে ছবির একটি সিরিজ অঙ্কন করেন তিনি। সেখানে কৃষকদের জীবনকে কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেন এবং ক্যানভাস ভরিয়ে তোলেন তাদের জীবনযাপনের চিত্রে। কয়লাখনির অঞ্চল নিয়ে এমিল জোলার উপন্যাস ‘জার্মিনাল’ তাঁকে খুব প্রভাবিত করে। ১৮৮৪ সালে নুয়েনেনেতেই তেলরঙে ভিনসেন্ট আঁকেন ‘দ্য পার্সোনেজ গার্ডেন অ্যাট নুয়েনেন’। সেখানে দুবছর থেকে প্রায় ২০০টি তৈলচিত্র আঁকেন ভিনসেন্ট। ১৮৮৪-তে প্রতিবেশীর মেয়ে মার্গট বেগেম্যানকে তাঁর প্রেমে পড়ে, বিবাহে তাঁরা উৎসাহী হলেও পরিবারের বাধায় তা সম্ভব হয়নি। ১৮৮৫ সালে স্টিল লাইফ অনেকগুলি আঁকেন ভিনসেন্ট। সেবছরই তাঁর প্রথম উল্লেখযোগ্য কাজ ‘দ্য পটেটো ইটার্স’ এবং ‘কৃষকচরিত্র অঙ্কন’-এর সিরিজ দারুণ সাড়া ফেলে। আগস্ট মাসে তাঁর কাজ হেগের ডিলার লিউরসের দোকানে প্রথম প্রদর্শিত হয়।

সেবছর নভেম্বরে ভিনসেন্ট চলে যান এন্টওয়ার্পে ও ঘরভাড়া করে থাকেন৷ সেখানে রঙের তত্ত্ব অধ্যয়নে মনোনিবেশ করেন তিনি। ডকল্যান্ডে জাপানি উকিও-ই উডকাট কেনেন এবং পরে সেই শৈলীর উপাদানগুলিকে নিজের ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে ব্যবহার করেন।এন্টওয়ার্পের অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে উচ্চস্তরের ভর্তি-পরীক্ষা দেন তিনি এবং ১৮৮৬-তে চিত্রাঙ্কনে ম্যাট্রিকুলেশন উত্তীর্ণ হন। সেখানে প্লাস্টার মডেলের পর ভিনসেন্ট ভ্যান গখ ড্রয়িং ক্লাসে যোগ দেন। তাঁর গতানুগতিকতা-বিরোধী অপ্রচলিত চিত্রশৈলীর কারণে সেখানকার শিক্ষকদের সঙ্গে মতবিরোধ তৈরি হয়। ১৮৮৬-তেই ভ্যান গখ চলে যান প্যারিসে। থিওর সঙ্গে একত্রে থাকতেন সেখানে। প্যারিসে দুটি প্রদর্শনীতে পয়েন্টিলিজম অর্থাৎ ছোট ছোট বিন্দু সহযোগে চিত্রনির্মাণ এবং নিও-ইম্প্রেশনিজমের সঙ্গে পরিচিত হন তিনি এবং জর্জেস সেউরাত ও পল সিগন্যাক সম্পর্কে জানেন। পরে সিগন্যাকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পয়েন্টিলিজমের কৌশল আয়ত্ত করেন তিনি যা ‘কোর্টেসান’ বা পোর্ট্রেট অফ পেরে ট্যাঙ্গাই’-এর মতো ছবিতে লক্ষণীয়। প্যারিসে দু’বছরে ২০০টিরও বেশি ছবি আঁকেন তিনি। এরপর আর্লেসে থাকাকালীন সেখানকার গ্রামাঞ্চল ও উজ্জ্বল আলো দ্বারা মোহিত হন তিনি। এইসময় থেকে তাঁর ক্যানভাসে হলুদ, আল্ট্রামেরিন এবং মভ রঙের ছড়াছড়ি দেখা যায়। ফসল কাটা মাঠ, গমক্ষেত, সাধারণ গ্রামীণ জীবন এসময়ের ছবিতে লক্ষণীয়। ‘দ্য ওল্ড মিল’, ‘দ্য ইয়েলো হাউজ’ ইত্যাদি তাঁর আঁকা এই সময়ের উল্লেখযোগ্য ছবি। এছাড়াও ‘দ্য নাইট ক্যাফে’, ‘বেডরুম ইন আর্লেস’, ‘ক্যাফে টেরেস অ্যাট নাইট’ ‘সানফ্লাওয়ার’ সিরিজ এই পর্বের গুরুত্বপূর্ণ কিছু চিত্রকর্ম। শিল্পী পল গঁগ্যার সঙ্গেও একত্রে ছবি এঁকেছিলেন তিনি।

মানসিক অসুস্থতার জন্য ১৮৮৯-তে সেন্ট রেমি-ডি প্রভেন্সের হাসপাতালে ভর্তি হন ভ্যান গখ। সে বছর ‘দ্য স্টারি নাইট’, ‘সাইপ্রেসস’, ‘কান্ট্রি রোড ইন প্রোভেন্স বাই নাইট’-এর মতো ছবি আঁকেন তিনি। ১৮৯০-তে অ্যাসাইলাম ছেড়ে ডাক্তার পল গ্যাচেটের কাছে চলে যান তিনি এবং তাঁর পোর্ট্রেটও এঁকেছিলেন। ভিনসেন্টের শেষ ছবি ‘কর্নফিল্ড উইথ ক্রো’।

একাকিত্ব কাটাতে না পেরে হতাশা থেকে ১৮৯০ সালের ২৭ জুলাই গমের ক্ষেতে নিজের বুকে গুলি করেন তিনি এবং এর ৩০ ঘন্টা পর ২৯ জুলাই ৩৭ বছর বয়সে ভিনসেন্ট ভ্যান গখের মৃত্যু হয়।

One comment

আপনার মতামত জানান