বিশ্ব গর্ভনিরোধ দিবস

২৬ সেপ্টেম্বর।। বিশ্ব গর্ভনিরোধ দিবস

প্রতি বছর প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশে কিছু দিবস পালিত হয়। ওই নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। পালনীয় সেই সমস্ত দিবস গুলির মধ্যে একটি হল বিশ্ব গর্ভনিরোধ দিবস (World Contraception Day)।

প্রতি বছর সারা বিশ্ব জুড়ে ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ব গর্ভনিরোধ দিবস পালিত হয়। এই দিনটি পালনের মাধ্যমে সারা পৃথিবী জুড়ে গর্ভনিরোধ পদ্ধতি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করা হয়।

২০০৭ সালে  দশটি আন্তর্জাতিক পরিবার পরিকল্পনা সংস্থা (International Family Planning Organization) মিলে প্রথম এই দিনটি পালন করে। তারপর থেকেই এই দিনটি উদযাপন বহুল প্রচলিত হয়ে পড়ে এবং প্রতি বছর এই দিনটিতে পালিত হয়।

সারা পৃথিবী জুড়ে ক্রম বর্ধমান জন সংখ্যা বিজ্ঞানীদের প্রকৃতই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূলত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতেই জনসংখ্যার বৃদ্ধি বেশি হচ্ছে। এর ফলে বসতির তাগিদে শুধু যে প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ কমে আসার সাথে সাথে অর্থনৈতিক সামাজিক এবং আরো নানান ধরণের ক্ষতি হচ্ছে। তাই প্রতিটা দেশের সরকারই গর্ভনিরোধক ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়। এই অভ্যেসকে আরো মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এবং সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিশ্ব গর্ভনিরোধ দিবস পালিত হয়। তাছাড়া অল্প বয়সে সন্তান ধারনের অনেক সমস্যার দিক রয়েছে। অল্প বয়সে গর্ভধারণ করতে গেলে মায়ের প্রাণহানির সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও অল্প বয়সে গর্ভধারণে ভবিষ্যতে সন্তানের অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে। আগে গর্ভনিরোধ করার সুযোগ-সুবিধা অনেক কম ছিল কিন্তু বর্তমান সময়ে অনেক পন্থা আবিষ্কৃত হয়েছে গর্ভনিরোধ করার জন্য। এই পন্থাগুলি ঠিক ভাবে যাতে ব্যবহার করা হয় সেই দিকেই দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য এই দিনটি বিশেষ করে পালিত হয়ে থাকে। এছাড়াও নতুন নতুন পন্থা আবিষ্কার করার চেষ্টা করা হচ্ছে নানান বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে যাতে সাম্প্রতিক জন্ম হার বৃদ্ধি কমানো যেতে পারে। 

সারা পৃথিবী জুড়ে নানান ভাবে এই দিনটি পালিত হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় (social media) প্রচার, টিভিতে নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা, বক্তৃতা সভা, আলোচনা সভা, বিতর্ক সভা, সেমিনার (seminar), ওয়ার্কশপ (workshop), সচেতনতা মূলক প্রচার, চিত্র প্রদর্শনী, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ইত্যাদি মাধ্যমে জনসচেতনতা গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। বিশেষত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষদের গর্ভ পরীক্ষা, গর্ভ নিরোধক পিল ব্যবহার ও বিভিন্ন গর্ভ নিরোধক পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন করা হয় এবং তাদের পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করা হয়। অপ্রাপ্তবয়স্কদের গর্ভধারণের ফলে দারিদ্রতা বৃদ্ধির ও স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকি থাকে। যৌন শিক্ষা এবং জন্ম নিয়ন্ত্রক ব্যবহার করার সুযোগের কারণে খুব অল্প বয়সীদের মধ্যে অবাঞ্ছিত গর্ভধারণের হার কম করা যায়। সমীক্ষা করে দেখা গেছে যে সব ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অপ্রাপ্তবয়স্কদের দ্বারাই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। শিশু প্রসবের পর সঠিকভাবে স্তন্যপান করানো না হলে চার থেকে ছয় সপ্তাহ পরে আবার গর্ভবতী হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই গর্ভনিরোধ করা খুবই প্রয়োজনীয়। এইসব ধরনের নানান শিক্ষা মূলক প্রচার করা হয়। উন্নয়নশীল দেশের প্রায় ২২২ মিলিয়নেরও বেশি মহিলারা গর্ভাবস্থা এড়াতে কোনো আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে না। আবার এইসব দেশে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে ৪০ শতাংশ  প্রসবকালীন মৃত্যু হ্রাস পেয়েছে এমনটাও দেখা গেছে। জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণ করা হলে প্রায় ৭০ শতাংশ মৃত্যুহার প্রতিরোধ করতে পারা যাবে বলে মনে করা হয়। অনেক সময় অবাঞ্ছিত গর্ভধারণের ফলে মানুষকে বাধ্য হয়ে গর্ভপাত (abortion) করাতে হয় সে ক্ষেত্রে মায়ের প্রাণ সংশয়ের সম্ভাবনা থাকে এবং অনেক জায়গাতেই গর্ভপাত করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকে না। সারা ভারতবর্ষ জুড়ে প্রায় পাঁচশ’র বেশি যুবতী এবং মহিলা  অল্প বয়সে  গর্ভধারণের ফলে  মারা যান। একাধিক গর্ভধারণের মধ্যে সময় দীর্ঘায়িত হলে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা যাবে এবং সেই শিশুদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করা হয়। জন্ম নিয়ন্ত্রণ পরিবার পরিকল্পনার একটি অন্যতম দিক। শুধু অপ্রয়োজনীয় গর্ভধারণ রোধ করা নয় গর্ভনিরোধক ব্যবহারের মাধ্যমে নানান অসুখ যেমন এইচ আই ভি (HIV) রোধ করা যায়। এই সচেতনতা মুলক প্রকল্পের সাথে বিশ্বের নানান দেশের নানান এনজিও (NGO) এবং আরো অন্যান্য সংস্থা ও জড়িত আছে। এছাড়া সরকারিভাবে এবং ডাক্তারদের তরফ থেকেও এই সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

আশা করা হচ্ছে ভবিষ্যতেও এই দিনটি পালনের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আত্ম সচেতনতা বাড়িয়ে তোলা যাবে এবং বিশ্বের জনসংখ্যা অনেকটাই কমিয়ে আনা যাবে।

One comment

আপনার মতামত জানান