বিশ্ব পোলিও দিবস

২৪ অক্টোবর ।। বিশ্ব পোলিও দিবস

প্রতি বছর প্রতিমাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশে কিছু দিবস পালিত হয়। ওই নির্দিষ্ট দিনে অতীতের  কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। পালনীয় সেই সমস্ত দিবস গুলির মধ্যে একটি হল বিশ্ব পোলিও দিবস (World Polio Day)।

প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ২৪ অক্টোবর বিশ্ব পোলিও দিবস পালন করা হয়ে থাকে। বিশ্বজুড়ে পোলিও রোগ সম্পর্কে ও তা নিরাময়ের জন্য যে বিপুল কর্মকাণ্ড ঘটে চলেছে সেটি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তোলবার জন্য এবং এই রোগ নিরাময়ের জন্য তহবিলে অর্থবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। যেসব সংস্থা পোলিওমুক্ত বিশ্বগঠনের কাজে অনেকদূর অগ্রসর হয়েছে তাদের কাজকে সম্মান জানানো এবং এখনও এই রোগ নিরাময়ের জন্য যেসব কাজ অবশিষ্ট সেগুলিকে মানুষের সামনে তুলে ধরাও এই দিবস পালনের একটি উদ্দেশ্য।

পোলিওমাইলিটিস (Poliomyelitis) একটি ভাইরাসঘটিত রোগ, সর্বসাধারণের কাছে যেটি পোলিও নামে পরিচিত। এই ভাইরাস দ্বারা  মূলত শিশুরাই বিশেষত পাঁচ বছরের কম শিশুরাই আক্রান্ত হয় বেশি। এই ভাইরাসের আক্রমণের ফলে শরীরে পক্ষাঘাত ঘটে এবং মূলত পায়ের দিকটিই আক্রান্ত হয়। এই ভাইরাস অন্ত্রের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে থাকে। বিশ্বজুড়ে এই রোগের প্রকোপ বর্তমানে কমলেও তা সম্পূর্ণ নির্মূল হয়নি এখনও। প্রতিবছর আমেরিকান বিজ্ঞানী জোনাস সালকের  (Jonas Salk) জন্ম দিবস স্মরণে এই দিনটি পালিত হয়ে থাকে। জোনাস সালকই সর্বপ্রথম এই পোলিও ভাইরাস নিরাময়ের ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে সহায়তা করেছিল।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

১৯৮৮ সালে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল (Rotary International) ২৪ অক্টোবর বিশ্ব পোলিও দিবস হিসেবে ঘোষণা ও পালন করে। সেই সময় সারাবিশ্বে ১২৫টি দেশকে চিহ্নিত করা হয়েছিল যেখানে প্রতিবছর তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার মানুষ পোলিও আক্রান্ত হয়। বিশ শতকের পাঁচের দশকে জোনাস সালকের নেতৃত্বে তৈরি পোলিও নিরাময়ের ভ্যাকসিনের আরও একটু বিকাশ ঘটিয়ে অ্যালবার্ট সাবিন (Albert Sabin) দুর্বল পোলিও ভাইরাসের নিরাময়ে দ্বিতীয় আরেকটি টিকা তৈরি করেন ১৯৫৭ সালে যেটি মূলত খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। এই দুটি আবিষ্কারের ব্যাপক ব্যবহার ও সাফল্যের ওপর ভিত্তি করেই পোলিও মুক্ত বিশ্ব গঠনের জন্য ১৯৮৮ সালে তৈরি হয়েছিল  গ্লোবাল পোলিও ইরাডিকেশন ইনিশিয়েটিভ (Global Polio Eradication Initiative বা GPEI)। এই সংস্থাটির পাঁচটি মূল অংশীদার যারা পোলিও নিরাময়ে বিশ্বব্যাপী কাজ করছে এবং এই বিশেষ দিনটি পালনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে তারা হল- রোটারি ইন্টারন্যাশনাল , বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organisation বা WHO), রাষ্ট্রপুঞ্জের শিশু তহবিল বা ইউনিসেফ (United Nations Children’s Fund বা, UNICEF), ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (US Centers for Disease Control and Prevention বা CDC), এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন (Bill and Melinda Gates Foundation)।

বিভিন্ন দেশে বিবিধপ্রকার আয়োজন করা হয় বিশ্ব পোলিও দিবস উদযাপন করবার জন্য। এইসব আয়োজন মূলত মানুষকে সচেতন করবার জন্য করা হয়ে থাকে। পোলিওমুক্ত বিশ্বগঠনের যে অঙ্গীকার নেওয়া হয়েছে তার প্রচারও করা হয়ে থাকে নানাবিধ  অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। কোথাও এই নির্দিষ্ট দিনে বিরাট বড়ো র‍্যালি বের করা হয় রাস্তায়। নানারকম পোস্টার,ব্যানার এই বিরাট পদযাত্রায় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এমনকি বাইক বা সাইকেল নিয়ে মিছিলও দেখা যায়। আন্তর্জাতিক রোটারি বিভিন্ন দেশকে এই দিনটিতে নানারকম ইভেন্ট আয়োজন করবার আহ্বান জানায়৷ বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন তো প্রতিবছর বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এবং সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত তাদের সদর দফতর থেকে সরাসরি সম্প্রচার করবার ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে৷ জার্মানির এক রোটারি ক্লাবকে এই বিশেষ দিনে পোলিও নিরাময়ের প্রচারের উদ্দেশ্যে বিভিন্নরকম স্যুপ বিলি করতেও দেখা গেছে। কোথাও বা সাঙ্গীতিক সম্মেলনের আয়োজনও করা হয়ে থাকে যেমনটা করবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ইংল্যান্ডে। এছাড়াও বিভিন্ন সেমিনার এবং অন্যান্য মাধ্যমে বিশেষজ্ঞরা পোলিও রোগ এবং তার নিরাময় প্রসঙ্গে মূল্যবান বক্তৃতা দেন৷ সর্বোপরি এই দিনে বিভিন্ন দেশের ক্লাবে ক্লাবে পোলিও খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে৷ এছাড়া আরও অনেকরকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এই দিনটিকে বিশেষ মর্যাদা সহকারে পালন করা হয়।

প্রতিবছর এই দিনটি পালনের জন্য কিছু বিষয় বা থিম নির্ধারণ করা হয়। ২০১৭ সালের থিম ছিল- পোলিও নিরাময় কার্যের অখ্যাত নায়কদের উদযাপন (A Celebration of the Unsung Heroes of Polio Eradication)। ২০১৮ সালের বিষয় ছিল এখনই পোলিও শেষ করুন (End Polio Now)। ২০১৯ সালের থিম, অগ্রগতির গল্প: অতীত ও বর্তমান (Stories of Progress: Past and Present)। ২০২০ সালের থিম হল – অগ্রগতির কাহিনিঃ অতীত ও বর্তমান (Stories of Progress: Past and Present)।

আপনার মতামত জানান