১৯৮৭ ক্রিকেট বিশ্বকাপ

১৯৮৭ ক্রিকেট বিশ্বকাপ

একদিবসীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রতিযোগিতার সর্বশ্রেষ্ঠ আসর হল বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা যা ক্রিকেট বিশ্বকাপ নামে পরিচিত। ১৯৮৭ ক্রিকেট বিশ্বকাপ (1987 Cricket World Cup) ছিল ক্রিকেট বিশ্বকাপের চতুর্থতম আসর। এই বিশ্বকাপের আসর ৮ অক্টোবর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত  ভারত ও পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হয়। এটিই ছিল প্রথম বিশ্বকাপ যেটি ইংল্যান্ডের বাইরে আয়োজিত। সর্বমোট ৮টি দেশ এই খেলায় অংশগ্রহণ করেছিল। এই বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া বিজয়ী হয়েছিল।

১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত ৬০ ওভারে ম্যাচ খেলা হত, কিন্তু ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ থেকে প্রথমবার ওভারের সংখ্যা হ্রাস করে ৫০-এ নামিয়ে আনা হয়। এই সিদ্ধান্তটি কিন্তু আজ পর্যন্ত বহাল রয়েছে। আরেকটি যে বদল প্রথম ঘটেছিল এই ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপে, তা হল স্পনসরশিপের পরিবর্তন। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত বিশ্বকাপের স্পনসর ছিল প্রুডেন্সিয়াল অ্যাসিওরেন্স কোম্পানি, কিন্তু ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপটি স্পনসর করেছিল রিলায়েন্স। সেই কারণে ১৯৮৭ সালের এই বিশ্বকাপ রিলায়েন্স কাপ ১৯৮৭ নামে পরিচিত হয়েছিল।

১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপে খেলার জন্য যোগ্যতা অর্জনের মাপকাঠি হিসেবে আইসিসি ঘোষণা করেছিল – যে সাতটি দেশ টেস্ট স্ট্যাটাসের অধিকারী তারা সরাসরি বিশ্বকাপ খেলতে পারবে এবং যে দেশ ১৯৮৬ সালের আইসিসি ট্রফির বিজেতা হবে সেই দেশ বিশ্বকাপে প্রবেশ করতে পারবে। জিম্বাবুয়ে সেই আইসিসি ট্রফিতে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য বিশ্বকাপে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছিল।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

চারটে করে টিমকে মোট দুটি গ্রুপে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। গ্রুপ ‘এ’-তে ছিল ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ে এবং গ্রুপ ‘বি’-তে ছিল পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কা। গ্রুপপর্বে প্রতিটি টিম তাদের গ্রুপের প্রত্যেকের সঙ্গে দুটি করে ম্যাচ অর্থাৎ ৬টি করে ম্যাচ খেলেছিল। গ্রুপপর্বে একটি ম্যাচ জিতলে পাওয়া যেত চার পয়েন্ট। প্রত্যেক গ্রুপ থেকে বেশি পয়েন্ট পাওয়া দুটি করে টিম পৌঁছেছিল সেমিফাইনালে এবং সবশেষে সেমিফাইনালে বিজেতা দুই টিমের মধ্যে ফাইনাল হয়। এই ফরম্যাটেই ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ খেলা হয়েছিল।

ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশেরই নির্দিষ্ট কিছু স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলি অনুষ্ঠিত হয়। ভারতের যে স্টেডিয়ামগুলিতে খেলা হয়েছিল সেগুলি হল, ইডেন গার্ডেনস (কলকাতা), ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম (মুম্বাই), এম.এ চিদাম্বরাম স্টেডিয়াম (চেন্নাই), লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়াম (হায়দ্রাবাদ), এম. চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম (ব্যাঙ্গালোর), জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়াম (ইন্দোর), অরুণ জেটলি গ্রাউন্ড (দিল্লি), সর্দার প্যাটেল স্টেডিয়াম (আহমেদাবাদ), সেক্টর ১৬ স্টেডিয়াম (চন্ডীগড়), বরাবতী স্টেডিয়াম (কটক), বিদর্ভ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন গ্রাউন্ড (নাগপুর), গ্রীনপার্ক (কানপুর), সাওয়াই মানসিং স্টেডিয়াম (জয়পুর) এবং নেহেরু স্টেডিয়াম (পুণে)।  পাকিস্তানের যে স্টেডিয়ামগুলিতে বিশ্বকাপের আয়োজন করা হয়েছিল সেগুলি হল, ইকবাল স্টেডিয়াম (ফয়সালাবাদ), মিউনিসিপ্যাল স্টেডিয়াম (গুজরানওয়ালা), নিয়াজ স্টেডিয়াম (হায়দ্রাবাদ, সিন্ধ), ন্যাশানাল স্টেডিয়াম (করাচী), গদ্দাফি স্টেডিয়াম (লাহোর), আরবাব নিয়াজ স্টেডিয়াম (পেশোয়ার) এবং পিন্ডি ক্লাব গ্রাউন্ড (রাওয়ালপিন্ডি)।

১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচটি শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানের মধ্যে হয়েছিল। খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৮ অক্টোবর পাকিস্তানের সিন্ধের অন্তর্গত হায়দ্রাবাদের নিয়াজ স্টেডিয়ামে। পাকিস্তান সেই ম্যাচটি ১৫ রানে জিতেছিল। ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচটিতে ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়ার এবং সেই ম্যাচটি ৮ নভেম্বর কলকাতার ইডেন গার্ডেনস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়া মাত্র সাত রানে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের জন্য বিশ্বসেরার খেতাব অর্জন করেছিল।

১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বের একটি ম্যাচ ছিল মনে রাখবার মত। খেলাটি হয়েছিল চেন্নাইতে এবং ভারতের প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচটি মাত্র এক রানে হেরে গিয়েছিল ভারত। টানটান উত্তেজনাপূর্ণ সেই ম্যাচ স্মৃতিতে রয়ে যাওয়ারই কথা। প্রথম ব্যাট করতে নেমে ৬টি উইকেট হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া ২৭০ রান তুলেছিল। এই ম্যাচে একটি বিশেষ ঘটনা ঘটেছিল। অস্ট্রেলিয়ার ডিন জোনস ব্যাটিং করছিলেন, বোলিং-এ ছিলেন ভারতের বিখ্যাত স্পিনার মনিন্দর সিং। ডিন জোনস মনিন্দরকে লং অনে তুলে মারলে সেখানে দাঁড়ানো রবি শাস্ত্রী ক্যাচটি মিস করেন এবং বল বাউন্ডারি পেরিয়ে যায়। সেখানে দাঁড়ানো শাস্ত্রীর কথা মতো আম্পায়ার চার রানের ইশারা করেছিলেন। ভারতের উইকেট কিপার কিরণ মোরেও মনে করেন যে সেটি চার হয়েছিল কিন্তু অপরদিকে ডিন জোনস সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত ছিলেন চার নয়, সেটা ছিল ছয়। ব্যাটিং শেষে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর দাঁড়াল ২৬৮। পরের ইনিংস শুরু হওয়ার আগে মাঝখানের ব্রেকে অস্ট্রেলিয়ার ম্যানেজার বেরিয়ে ওই ঘটনাটা নিয়ে নিজের অসন্তোষ প্রকাশ করেন। আম্পায়ার তাদের টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কথা বলার পর ভারতীয় অধিনায়ক কপিল দেবের কাছে গিয়ে গোটা ঘটনাটির কথা জানালে কপিল দেব ডিন জোনসের সেই শটটিকে খুব সহজ ভঙ্গীতেই ছয় রান হিসেবে মেনে নেন এবং অস্ট্রেলিয়ার স্কোর তার ফলে ২৬৮ থেকে গিয়ে দাঁড়ায় ২৭০-এ। ভারত ব্যাট করতে নেমে ২৬৯-এ এসে অল আউট হয়ে যায়। ২ উইকেটে ২০৭ রান থেকে ৯ উইকেটে ২৬৫ রানে গিয়ে দাঁড়ায় ভারত এবং ২৬৯ রানে তাদের ইনিংস শেষ হয়ে যায়। বলা বাহুল্য ডিন জোনসের শটটিকে চারের বদলে যদি ছয় হিসেবে মান্যতা না দেওয়া হত, তবে সেই ম্যাচটি ভারত জিতে নিতে পারত।

১৯৮৩ সালে ভারত বিশ্বকাপ জিতেছিল এবং ১৯৮৭ সালেও ভারতের সেই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। সবচেয়ে বড় কথা সেমিফাইনালে ভারত ও পাকিস্তান দুটি দলই উঠেছিল এবং ইডেন গার্ডেনসে অনুষ্ঠিত ফাইনালে ভারত-পাকিস্তানের মুখোমুখি হওয়ারও একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার কাছে পাকিস্তান হেরে যাওয়ায় এবং ইংল্যান্ডের কাছে ভারতের পরাজয় সেই সম্ভাবনাকে এবং ভারতের পরপর দু’বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্নকেও শেষ করে দিয়েছিল।

৮ নভেম্বর কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া একে অপরের বিরুদ্ধে ১৯৮৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছিল। দুই দলের কাছেই প্রথমবার বিশ্বকাপ জেতবার সুযোগ ছিল সেটা। টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। জিওফ মার্শ এবং ডেভিড বুন অসাধারণভাবে শুরু করেছিলেন ইনিংস। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম উইকেট পড়েছিল ৭৫ রানে। ডেভিড বুন ১২৫ বলে করেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ৭৫ রান, যা দলের মধ্যে সর্বোচ্চ রান ছিল সেই ম্যাচে। পরেরদিকে মাইক ভেলেটা দুর্দান্ত ব্যাটিং করে ৩১ বলে ৪৫ রান তুলে দলকে বেশ লড়াকু একটা স্কোরের দিকে এগিয়ে দিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়া ৫ উইকেটে করেছিল মোট ২৫৩ রান। ইংল্যান্ডের বোলার এডি হেমিংস ১০ ওভারে ৪৮ রান দিয়ে ২টি উইকেট নিয়েছিলেন এবং নেইল ফস্টার ও গ্রাহাম গুচ নিয়েছিলেন একটি করে উইকেট। অস্ট্রেলিয়ার ক্যাপ্টেন অ্যালান বর্ডার রান আউট হয়েছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডের হয়ে ওপেন করতে নেমেছিলেন গ্রাহাম গুচ এবং টিম রবিনসন। ইনিংসের শুরুতেই বিপত্তি ঘটে ইংল্যান্ডের। টিম রবিনসন প্রথম বলেই এলবিডব্লুতে আউট হয়ে যান, ইংল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে তখন ১ রানে ১ উইকেট। অবশ্য এরপর বিল অ্যাথে নেমে খেলাটাকে একটু সামলান। এই বিল অ্যাথে সেই ম্যাচে ১০৩ বলে ৫৮ রান করেন, যা দলের অন্যদের তুলনায় সবচেয়ে বেশি ছিল। গ্রাহাম গুচও ৩৫ রান করে স্কোরবোর্ডকে কিছুটা এগিয়ে দিয়ে আউট হয়ে যান, স্কোর দাঁড়ায় ৬৬ রানে ২ উইকেট। এরপরই ইংল্যান্ডের ক্যাপ্টেন মাইক গ্যাটিং এবং বিল অ্যাথে মিলে এক দুর্দান্ত পার্টনারশিপ জমিয়ে তোলেন। মাইক গ্যাটিং ৪৫ বলে ৪১ রান করে অস্ট্রেলিয়ার ক্যাপ্টেন অ্যালেন বর্ডারের বলে একটি রিভার সুইপ মারতে গিয়ে ডায়ারের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে আউট হয়ে যান। এরপর অ্যালান ল্যাম্ব এসে খেলেন আরও একটি দুর্দান্ত ইনিংস। ৫৫ বলে ৪৫ রান করে স্টিভ ওয়াহ-র বলে আউট হয়ে যান। অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা ইংল্যান্ডের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। সাইমন ওডোনেলের মতো বোলার ১০ ওভারে মাত্র ৩৫ রান দিয়ে, স্টিভ ওয়াহ ৯ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে ইংল্যান্ডের প্রয়োজনীয় রানরেট বাড়িয়ে দিতে থাকেন। অবশেষে শেষ ওভারে ১৭ রান তুলতে ব্যর্থ হয় ইংল্যান্ড। ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৪৬ রান করেছিল ইংল্যান্ড। মাত্র সাত রানে অস্ট্রেলিয়া ফাইনাল জিতে প্রথমবার বিশ্বকাপের শিরোপা অর্জন করেছিল।

ফাইনাল ম্যাচে সর্বোচ্চ রান করে অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড বুন প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ-এর খেতাব পেয়েছিলেন।

১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান করেছিলেন ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যান গ্রাহাম গুচ। মোট ৪৭১ রান করেছিলেন তিনি গোটা টুর্নামেন্টে। ৪৪৭ রান করে অস্ট্রেলিয়ার ডেভিড বুন ছিলেন দ্বিতীয় স্থানে। অন্যদিকে এই বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির খেতাব পেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রেগ ম্যাকডারমট। গোটা টুর্নামেন্টে সর্বমোট ১৮টি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। উইকেট শিকারি হিসেবে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন পাকিস্তানের ইমরান খান। তিনি মোট ১৭টি উইকেট নিয়েছিলেন। সর্বোচ্চ রানের তালিকায় প্রথম পাঁচজনের মধ্যে ভারতীয়,দলের কেউ না থাকলেও সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিদের প্রথম পাঁচের তালিকায় স্থান করে নিয়েছিলেন বিখ্যাত ভারতীয় স্পিনার মনিন্দর সিং। মোট ১৪টি উইকেট নিয়ে তিনি চতুর্থ স্থানে ছিলেন।

১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপ প্রসঙ্গে ভারতীয় দলের যে দুজন খেলোয়াড়ের কথা বিশেষভাবে বলা প্রয়োজন, তাঁরা হলেন ভারতীয় পেসার চেতন শর্মা এবং বিখ্যাত ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাস্কার

ভারতীয় পেসার চেতন শর্মার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করবার কারণ হল, ক্রিকেট বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বপ্রথম হ্যাটট্রিক করেছিলেন তিনি। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ড দলের বিপক্ষে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন। ৪২তম ওভারের শেষ তিন বলে পরপর নিউজিল্যান্ডের কেন রাদারফোর্ড, ইয়ান স্মিথ এবং ইওয়েন চ্যাটফিল্ডকে বোল্ড করে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠিয়েছিলেন চেতন শর্মা।

অন্যদিকে সুনীল গাভাস্কার সেই একই ম্যাচেই তাঁর জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক একদিবসীয় সেঞ্চুরি করেছিলেন। নিউজিল্যান্ড প্রথম ব্যাট করে ২২১ রান করেছিল এবং ভারত মাত্র একটি উইকেট হারিয়ে ৯ উইকেটে ম্যাচটি জিতে নিয়েছিল। সুনীল গাভাস্কার সেই ম্যাচে ৮৮ বলে ১০৩ রান করে প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পেয়েছিলেন। সেই ম্যাচে চেতন শর্মাও পেয়েছিলেন এই পুরস্কার। সুনীল গাভাস্কারের জীবনের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচটি কিন্তু ছিল ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপেরই সেমিফাইনালটি, যেখানে প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড। অতএব গ্রুপ পর্বের ম্যাচটিতে সেঞ্চুরি না করতে পারলে সুনীল গাভাস্কারের কেরিয়ারে কোনো ওয়ান-ডে সেঞ্চুরিই থাকত না।

১৯৮৭ সালের এই বিশ্বকাপে অ্যালান বর্ডারের অস্ট্রেলিয়া বিজয়ী হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার কাছে এই বিশ্বকাপটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে কারণ এটাই তাদের প্রথম বিশ্বকাপ জয়। তবে ভারতীয় দলের ইতিহাসেও এই ১৯৮৭ বিশ্বকাপটি গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায় হয়ে থাকবে। পরপর দুবার বিশ্বকাপ জেতবার সম্ভাবনা এই বিশ্বকাপেই তৈরি হয়েছিল। ১৯৮৭ সালের এই গোটা বিশ্বকাপেই ভারতের পারফরম্যান্স কিন্তু বেশ আশাপ্রদ ছিল প্রথম থেকেই। গ্রুপ পর্বে ছয়টির মধ্যে পাঁচটি ম্যাচ জিতে ২০ পয়েন্ট নিয়ে তারা সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল। তবে সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের গ্রাহাম গুচের সেঞ্চুরি ছিল ভারতের কাছে প্রথম ধাক্কা এবং শেষ দশ ওভারে হাতে পাঁচ উইকেট নিয়ে ভারতকে পঞ্চাশ রান তুলতে হত, কিন্তু মাত্র ১৫ রানে বাকি পাঁচ উইকেট পড়ে গিয়েছিল ভারতের৷ এই বিপর্যয় ঘটায় পরপর দুবার বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন অধরা রয়ে গিয়েছিল ভারতের।

আপনার মতামত জানান