১৯৯৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ

১৯৯৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ

একদিবসীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রতিযোগিতার সর্বশ্রেষ্ঠ আসর হল বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা যা ক্রিকেট বিশ্বকাপ নামে পরিচিত। ১৯৯৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ (1999 Cricket World Cup) ছিল ক্রিকেট বিশ্বকাপের সপ্তম আসর। এই বিশ্বকাপের আসর ১৪ মে থেকে ২০ জুন পর্যন্ত  ইংল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডের বাইরে নেদারল্যান্ডস, ওয়েলস, আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হয়। এই বিশ্বকাপে সর্বমোট ১২টি দল অংশগ্রহণ করেছিল। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া জয় লাভ করে তাদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ ট্রফি অর্জন করেছিল। স্বাভাবিকভাবে চার বছরের ব্যবধানে ক্রিকেট বিশ্বকাপের আয়োজন করা হয়ে থাকে, কিন্তু ১৯৯৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ পূর্ববর্তী বিশ্বকাপের (১৯৯৬) তিন বছর পর অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

১৯৯৯ সালের এই বিশ্বকাপ অন্য কোনো বাণিজ্যিক সংস্থার স্পনসরশিপে আয়োজিত হয়নি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল বা আইসিসিই এই বিশ্বকাপটি স্পনশর করেছিল। এই বিশ্বকাপ প্রথমবার নতুন ধরনের সাদা ডিউক ক্রিকেট বলে খেলা হয়েছিল।

ইংল্যান্ড এবং সেই সঙ্গে আরও আটটি টেস্ট দল তো বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার জন্য যোগ্য ছিলই, তবে বাকি যে তিনটি দল ১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রফির মাধ্যমে যোগ্যতা অর্জন করে তারা হল, কেনিয়া, বাংলাদেশ এবং স্কটল্যান্ড। আইসিসি ট্রফির ফাইনালে পৌঁছে কেনিয়া ও বাংলাদেশ বিশ্বকাপের জন্য কোয়ালিফাই করে এবং স্কটল্যান্ড তৃতীয় স্থানের প্লে অফে আয়ারল্যান্ডকে হারিয়ে যোগ্যতা অর্জন করেছিল।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের খেলার ফরম্যাটে একটু বদল ঘটেছিল৷ বারোটি দলকে দুটি গ্রুপে ছয়টি করে দলে ভাগ করে দেওয়া হয়। গ্রুপ ‘এ’-তে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, জিম্বাবুয়ে, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও কেনিয়া। অন্যদিকে গ্রুপ ‘বি’-তে ছিল পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, বাংলাদেশ এবং স্কটল্যান্ড। গ্রুপ পর্বে প্রত্যেকটি দল তার গ্রুপের অন্যান্য দলের সঙ্গে একটি করে ম্যাচ অর্থাৎ প্রত্যেক দল পাঁচটি করে ম্যাচ খেলেছিল। একেকটি ম্যাচ জিতলে ২ পয়েন্ট করে ধার্য ছিল। দুটি গ্রুপ থেকে তিনটি করে দল পরবর্তী সুপার সিক্স রাউন্ডের জন্য কোয়ালিফাই করেছিল। এই সুপার সিক্স রাউন্ডটি ১৯৯৯ বিশ্বকাপের নতুন সংযোজন। এই পর্বে প্রতিটি দল তাদের প্রতিপক্ষ গ্রুপ থেকে কোয়ালিফাই করা তিনটি দলের সঙ্গে খেলেছিল। অর্থাৎ গ্রপ ‘এ’-দলের কোনো টিম গ্রুপ ‘বি’ দল থেকে সুপার সিক্সে কোয়ালিফাই করা তিনটি দলের সঙ্গে খেলেছিল এবং পুরো রাউন্ডটি এভাবেই খেলা হয়েছিল৷ কিন্তু পয়েন্টের ব্যাপারটি ছিল অন্যরকম। গ্রুপ পর্বের ম্যাচের ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে সুপার সিক্স রাউন্ডের খেলার আগেই দলগুলিকে কিছু পয়েন্ট দিয়ে দেওয়া হয়। সুপার সিক্সে যাওয়া কোনো একটি দল তার নিজের গ্রুপ থেকে কোয়ালিফাই করা অন্য দুটি দলের সঙ্গে গ্রুপপর্বে জিতে থাকলে সেই দুটি ম্যাচের জয়ের পয়েন্ট সুপার সিক্সে গণ্য করা হয়েছিল। যদি একটা ম্যাচ জিতে থাকে তবে কেবল ২ পয়েন্টই সেই দলের সুপার সিক্সে অর্জিত পয়েন্টের সঙ্গে যুক্ত হবে, এই ছিল নিয়ম। যেমন গ্রুপ ‘এ’-র জিম্বাবুয়ে গ্রুপ পর্বে তৃতীয় অবস্থানে থেকে সুপার সিক্সে কোয়ালিফাই করলেও, সেই গ্রুপ থেকে কোয়ালিফাই করা ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে গ্রুপপর্বে জিম্বাবুয়ে জিতেছিল বলে, সেই চার পয়েন্ট নিয়েই জিম্বাবুয়ে সুপার সিক্স রাউন্ড শুরু করেছিল। অপরদিকে গ্রুপপর্বে দ্বিতীয় স্থানে থেকেও ভারত যেহেতু তার গ্রুপ থেকে সুপার সিক্সে কোয়ালিফাই করা জিম্বাবুয়ে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে গ্রুপপর্বে হেরেছিল, তাই সুপার সিক্সে তারা শূন্য পয়েন্ট নিয়ে শুরু করেছিল৷

এই সুপার সিক্স থেকে চারটি দল গিয়েছিল সেমিফাইনালে তারপর প্রথা অনুযায়ী সেমিফাইনালে বিজয়ী দুটি দলের মধ্যে হয়েছিল ফাইনাল।

ইংল্যান্ডের যে ক্রিকেট গ্রাউন্ডগুলিতে বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়েছিল সেগুলি হল: এজবাস্টন ক্রিকেট গ্রাউন্ড, কাউন্টি ক্রিকেট গ্রাউন্ড (ব্রিস্টল), সেন্ট লরেন্স গ্রাউন্ড, কাউন্টি ক্রিকেট গ্রাউন্ড (চেমসফোর্ড), রিভারসাইড গ্রাউন্ড, কাউন্টি ক্রিকেট গ্রাউন্ড (ডার্বি), কাউন্টি ক্রিকেট গ্রাউন্ড (হোভ), গ্রেস রোড, লর্ডস, ওভাল,  ওল্ড ট্র্যাফোর্ড, কাউন্টি ক্রিকেট গ্রাউন্ড (নর্দাম্পটন), ট্রেন্ট ব্রিজ, কাউন্টি ক্রিকেট গ্রাউন্ড (সাউদাম্পটন), কাউন্টি ক্রিকেট গ্রাউন্ড (টনটন) এবং নিউ রোড। ইংল্যান্ডের বাইরে নেদারল্যান্ডসের ভিআরএ ক্রিকেট গ্রাউন্ডে, ওয়েলসের সোফিয়া গার্ডেনে, আয়ারল্যান্ডের ক্লোনটার্ফ ক্রিকেট ক্লাব গ্রাউন্ডে এবং স্কটল্যান্ডের গ্র্যাঞ্জ ক্লাবে ১৯৯৯ বিশ্বকাপের কিছু খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। উদ্বোধনী ম্যাচটি ইংল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যে লর্ডসের মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। ইংল্যান্ড ৮ উইকেটে ম্যাচটি জিতেছিল। এই বিশ্বকাপের ফাইনালও হয়েছিল লর্ডসে, যেখানে পাকিস্তানের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়াও ৮ উইকেটে জিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।

১৯৯৯ সালের এই ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনেকগুলি রোমাঞ্চকর ম্যাচের সাক্ষী থেকেছে। তবে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচটির একটি আলাদা বিশেষত্ব ছিল। এজবাস্টন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে টসে জিতে ফিল্ডিং-এর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক হ্যান্সি ক্রনিয়ে। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভ ওয়া (৭৬ বলে ৫৬ রান) এবং মাইকেল বিভানের (১০১ বলে ৬৫ রান) দুর্দান্ত ব্যাটিং সত্ত্বেও দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি বোলার শন পোলক (৩৬ রান দিয়ে ৫ উইকেট) এবং অ্যালান ডোনাল্ডের (৩২ রান দিয়ে ৪ উইকেট) ঝোড়ো বোলিং-এ ধসে যায় অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটাররা। অবশেষে ২১৩ রানে অলআউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। অপরদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার হার্শাল গিভস (৩৬ বলে ৩০ রান), জ্যাকস ক্যালিস (৯২ বলে ৫২ রান) এবং জন্টি রোডসের (৫৫ বলে ৪৩ রান) চমৎকার ব্যাটিং দলকে লড়াই করতে সাহায্য করলেও অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি স্পিনার শেন ওয়ার্ন একাই ২৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোরও অবশেষে ২১৩ রানে গিয়ে থমকে যায়। ফলে ম্যাচ হয়ে যায় টাই। অবশেষে সুপার সিক্সের টেবিলে শীর্ষে থাকা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার থেকে গড় রানরেটে এগিয়ে থাকার কারণে অস্ট্রেলিয়া ফাইনালের জন্য কোয়ালিফাই করেছিল। সুপার সিক্স রাউন্ডটি এই বিশ্বকাপের জন্য কি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল, এই ম্যাচটিই তার প্রমাণ।

ইংল্যান্ডের লর্ডসে অনুষ্ঠিত ১৯৯৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া এবং পাকিস্তান। টসে জিতে পাকিস্তানের অধিনায়ক ওয়াসিম আক্রম ব্যাটিং করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সঈদ আনওয়ার এবং ওয়াজাহ্তুল্লাহ ওয়াস্তি পাকিস্তানের হয়ে ওপেন করতে নেমেছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানের শুরুটা ভাল হয়নি মোটেই। ২১ রানে দুজন ওপেনার আউট হয়ে যান। এরপর আব্দুল রজ্জাক ও ইজাজ আহমেদ ইনিংসটিকে কিছুদূর টেনে নিয়ে যেতে সক্ষম হলেও ৬৮ রানে পৌঁছে পাকিস্তানের আরও একটি উইকেটের পতন হয়। এরপর পাকিস্তানের মিডিল অর্ডারকে একপ্রকার ধসিয়ে দিয়েছিলেন সেই অস্ট্রেলিয়ান স্পিনার শেন ওয়ার্ন। ৯ ওভার বল করে মাত্র ৩৩ রান দিয়ে ওয়াসিম আক্রমের উইকেট-সহ মোট ৪টি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। শেন ওয়ার্নের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ডেমিয়েন ফ্লেমিং। ফ্লেমিং নিজেও ৩০ রান দিয়ে ৪টি উইকেট নেন। তবে অবশ্যই বলতে হবে অস্ট্রেলিয়ার বোলার পল রিফিল এবং গ্লেন ম্যাগ্রাথের কথা। ১টি মাত্র উইকেট নিলেও পল ১০ ওভার বল করে একটি মেইডেন ওভার-সহ মাত্র ২৯ রান দিয়েছিলেন এবং ম্যাগ্রাথ ৯ ওভার বল করে তিনটে মেইডেন ওভার-সহ মাত্র ১৩ রান দিয়ে ২টি উইকেট নিয়েছিলেন। পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনকে অস্ট্রেলিয়ার এই চারজন বোলার লড়াই করবার অবকাশই দেননি। অবশেষে ৩৯ ওভারে ১৩২ রানে অলআউট হয়ে গিয়ে পাকিস্তানের ইনিংস স্তব্ধ হয়ে যায়।

অপরদিকে দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওপেন করতে নামেন মার্ক ওয়া এবং অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। ভীষণ আক্রমণাত্মকভাবে সূচনা করেন তাঁরা। মার্ক ওয়া ৫২ বলে ৩৭ রান করে অপরাজিত থাকেন এবং অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ৩৬ বলে ৫৪ রান করেছিলেন। পরে রিকি পয়েন্টিং (২৭ বলে ২৪ রান করেন) এবং ড্যারেন লেহম্যান (৯ বলে ১৩ রান করে অপরাজিত) অপরাজিত মার্ক ওয়ার সঙ্গে ম্যাচটিকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান। মাত্র ২০.১ ওভারে ২টি উইকেট হারিয়ে ৮ উইকেটে অনায়াসে অস্ট্রেলিয়া ফাইনাল ম্যাচটি জিতে নিয়ে তাদের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ ট্রফিটি অর্জন করেছিল।

পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ ৪টি উইকেট নিয়ে প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচের খেতাব পেয়েছিলেন শেন ওয়ার্ন। এই ফাইনালে একক সর্বোচ্চ রান করেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট।

১৯৯৯ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান করেছিলেন ভারতীয় কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান রাহুল দ্রাবিড়। ৪৬১ রান করে তিনি সর্বোচ্চ রানের তালিকায় শীর্ষে ছিলেন। সেই তালিকায় ৩৭৯ রান করে তৃতীয় স্থানে ছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি। অন্যদিকে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় প্রথমে নিউজিল্যান্ডের জিওফ অ্যালটের উল্লেখ থাকলেও দ্বিতীয় স্থানে থাকা অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়ার্ন, এই দুজনেই ২০টি করে উইকেট নিয়েছিলেন। এই উইকেট শিকারিদের তালিকায় প্রথম পাঁচে কোন ভারতীয় বোলার স্থান পায়নি। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ খেতাব পেয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি অলরাউন্ডার ল্যান্স ক্লুসনার। ব্যাটিং এবং বোলিং দুটিতেই তিনি যে সমান সিদ্ধহস্ত এই ১৯৯৯ বিশ্বকাপের অনেকগুলি ম্যাচেই তার প্রমাণ দিয়েছেন তিনি। এই বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিকাংশ ম্যাচের সেরা প্লেয়ার হয়েছিলেন তিনি। কখনও ৫টি উইকেট নিয়েছেন বল হাতে, কখনও আবার শেষের দিকে ব্যাট করতে নেমে হাফ সেঞ্চুরি করে দলকে একটা লড়াকু স্কোরের দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। গোটা বিশ্বকাপ জুড়েই অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্যই ল্যান্স ক্লুসনারকে প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল।

১৯৯৯ বিশ্বকাপের কথা উঠলে শেন ওয়ার্ন, গ্লেন ম্যাগ্রাথ বা ল্যান্স ক্লুসনার পাশাপাশি ভারতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির কথাও বিশেষভাবে মনে পড়ে। সৌরভ গাঙ্গুলির সমগ্র কেরিয়ারের একদিবসীয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ স্কোর যে ১৮৩ রান, তা এই ১৯৯৯ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে করেছিলেন তিনি। প্রথম ব্যাটিং করতে নেমে শ্রীলঙ্কাকে ৩৭৪ রানের যে কঠিন লক্ষ্যটি ভারত দিয়েছিল, তাতে যে দুজনের অবদান ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাঁরা হলেন সৌরভ গাঙ্গুলি ও রাহুল দ্রাবিড়। সৌরভ ১৫৮ বলে করেন ১৮৩ রান এবং রাহুল দ্রাবিড় ১২৯ বলে ১৪৫ রান করেন। সৌরভ সেই ম্যাচে প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ খেতাব পেয়েছিলেন।

১৯৯৯ সালে বিশ্বকাপের পাশাপাশি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটছিল এবং বিশ্বকাপের খেলার মাঠেও সেই আঁচ এসে পৌঁছেছিল। ১৯৯৯ সালে কার্গিল সীমান্তে তখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সেই রক্তাক্ত যুদ্ধ চলছিল। তারই মধ্যে ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে সুপার সিক্স রাউন্ডের খেলায় মুখোমুখি হয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান। ওয়াঘা সীমান্তের মতো সেদিন ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের বাইরেও ক্রিকেট ভক্তরা উত্তেজিত। নিরাপত্তাও খুব জোরদার ছিল। পরিস্থিতি অবশ্য খুব ভীষণ খারাপের দিকে যায়নি, তবে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, একটি ভারতীয় পতাকা পোড়ানোর দৃশ্যও দেখা গিয়েছিল এবং নয়জনকে বহিষ্কার করে দেওয়া হয়েছিল। তবে মাঠের মধ্যে আসল ম্যাচটি চলাকালীন কোনো খারাপ ঘটনা ঘটেনি। ভারত ও পাকিস্তান দুটি দলই কার্গিল যুদ্ধকে যেন একপাশে সরিয়ে রেখেই স্পোর্টসম্যানের মতো গোটা ম্যাচটি খেলেছিল৷ ভারত সেই ম্যাচে ২২৭ রান করেছিল ৫০ ওভারে, কিন্তু  ভারতের ভেঙ্কটেশ প্রসাদের (২৭ রান দিয়ে ৫ উইকেট) দুর্দান্ত বোলিং-এ পাকিস্তানের ইনিংস নড়বড়ে হয়ে যায় এবং শেষমেশ ১৮০ রানে অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান। ভারত ৪৭ রানে সেই ম্যাচটি জিতে নিয়ে বিশ্বকাপে তৃতীয়বার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অপরাজিত থেকে যায়।

ভারতীয় দল ১৯৯৯ বিশ্বকাপে খুব আশাপ্রদ খেলতে পারেনি। অবশ্য রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গাঙ্গুলি বা ভেঙ্কটেশ প্রসাদের মতো ভারতীয় দলের বিশেষ কিছু খেলোয়াড় দারুণ পারফর্ম করলেও সুপার সিক্সের তিনটির মধ্যে দুটি ম্যাচ হেরে সেমিফাইনালে পৌঁছতে ব্যর্থ হয় তারা।

অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া সুপার সিক্স রাউন্ডে শূণ্য পয়েন্ট নিয়ে শুরু করেও ধার্য তিনটি ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে পৌঁছয় এবং ফাইনালে দুর্দান্ত টিম গেম খেলে পাকিস্তানকে অনায়াসে হারিয়ে দিয়ে দ্বিতীয়বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়।

আপনার মতামত জানান