ভারতীয় বিচারব্যবস্থার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে কয়েকটি এমন মামলার সন্ধান মিলবে যেগুলি প্রকৃতপক্ষেই জাতীয় জীবনে এক আলোড়ন তৈরি করেছিল এবং একইসঙ্গে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে। আফজল গুরু ও অন্যান্য বনাম ভারত মামলা সেই গোত্রেরই অন্তর্ভুক্ত। এই মামলাটি সাধারণত সংসদ আক্রমণ মামলা নামেও পরিচিত। ভারতীয় সংসদ আক্রমণের মত ঘটনা ভারতবর্ষের ইতিহাসে বেশ বিরল। ২০০১ সালে পার্লামেন্ট অধিবেশন চলাকালীন পাঁচজন দুষ্কৃতি অস্ত্রশস্ত্র সহযোগে সংসদ চত্বরে ঢুকে আক্রমণ চালায় এবং নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধে নিহত হয়। এই হামলার পিছনে জৈশ-ঈ-মহম্মদ নামক সন্ত্রাসী সংগঠনের যোগসূত্র রয়েছে বলে সন্দেহ করা হয় এবং সেই সংগঠনের সদস্য ও উক্ত আক্রমণের নেপথ্যে থাকার কারণে আফজল গুরু সহ আরও তিনজনকে বন্দী করা হয়। প্রায় বারো বছর ধরে দীর্ঘ বিচার, সওয়াল-জবাব, বিতর্ক এবং বিশেষ আদালত থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ানো এই মামলার অন্তিমে আফজল গুরুকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। এই বিলম্বিত মামলার প্রতি পদে ছিল নানা সন্দেহ, বিতর্ক এমনকি আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়েও দেখা দিয়েছিল সংশয়। নিঃসন্দেহে আফজল গুরু ও অন্যান্য বনাম ভারত মামলা (State vs Mohd. Afzal And Ors) ভারতীয় বিচারালয়ের ইতিহাসে এক ব্যতিক্রম।
ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল ২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর। সেদিন পার্লামেন্টে অধিবেশন চলাকালীন পাঁচজন সশস্ত্র দুষ্কৃতি ঢুকে পড়ে পার্লামেন্ট চত্বরে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নকল স্টিকার লাগানো গাড়িতে করে প্রবেশ করেছিল তারা। প্রথমে সেই চত্বরে রাখা তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি কৃষ্ণকান্তের গাড়ি লক্ষ করে গুলি চালাতে থাকে। যদিও উপরাষ্ট্রপতি সৌভাগ্যবশত গাড়িতে ছিলেন না কিন্তু তিনি পার্লামেন্টের ভেতরেই ছিলেন। এরপর নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে প্রায় ত্রিশ মিনিট বন্দুকযুদ্ধ চলতে থাকে দুষ্কৃতিদের। এই হামলায় আটজন নিরাপত্তাকর্মী এবং একজন মালীসহ মোট নয়জন প্রাণ হারান এবং অপরদিকে পাঁচ দুষ্কৃতিই নিহত হয়। এছাড়াও তেরো জন নিরাপত্তাকর্মীসহ মোট ষোলোজন আহত হয়েছিলেন। ডিসেম্বরের শেষদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফ এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর কাছে টেলিফোনের মাধ্যমে সংসদে এই হামলাকে যুদ্ধে পরিণত করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন।
প্রাথমিকভাবে, ১৯৬৭ সালের বেআইনী কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনের ৩৫ নম্বর ধারার অধীনে নিষিদ্ধ জৈশ -ঈ-মহম্মদ নামক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনকে এই হামলার নেপথ্যের মূল কান্ডারি বলে মনে করা হয়। সন্ত্রাস প্রতিরোধ আইনের অধীনে এই সংগঠন এবং হামলার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, তাঁরা হলেন আফজল গুরু, শওকত হুসেন গুরু, এসএআর গিলানি এবং আফসান গুরু। ১৫ ডিসেম্বর জম্মু ও কাশ্মীর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আফজলকে। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকির হুসেন কলেজ থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তুলে আনা হয় এসএআর গিলানিকে এবং পরে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে শওকত হুসেন গুরু ও তাঁর স্ত্রী আফসানকে বন্দী করে পুলিশ। ১৩ ডিসেম্বর পুলিশ এফআইআর দায়ের করে এবং গ্রেপ্তারের পর সন্ত্রাস প্রতিরোধ আইন (২০০২) (POTA)-এর বিধান-সহ যুদ্ধ, ষড়যন্ত্র, খুন, খুনের চেষ্টা ইত্যাদি অভিযোগে বিচারের আওতায় আনা হয় অভিযুক্ত চারজনকে। ২৯ ডিসেম্বর আফজলকে দশ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়। আদালত সীমা গুলাটিকে আফজলের আইনজীবী হিসেবে নিযুক্ত করলেও পঁয়তাল্লিশ দিন পর সীমা মামলা সংক্রান্ত অতিরিক্ত চাপের কারণে আফজল গুরুর মামলাটি ছেড়ে দেন। ২০০২ সালের জুন মাসে উক্ত চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়।
সিআরপিসি (CRPC) ১৭৩ ধারার অধীনে চার অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থার একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছিল। ভারতীয় দণ্ডবিধি (১৮৬০)-এর ১২০বি ধারা, সন্ত্রাস প্রতিরোধ আইন ২০০২-এর ধারা ৩(২) এবং বিস্ফোরক পদার্থ আইনের ৩০২ ধারার অধীনে বিশেষ আদালতে তাদের বিচারের ব্যবস্থা হয়। ২০০২ সালের ১৮ ডিসেম্বর বিশেষ আদালত এসএন ধিঙ্গরার নেতৃত্বে চার অভিযুক্তের মধ্যে তিনজনকে অর্থাৎ আফজল গুরু, শওকত হুসেন এবং এসএআর গিলানিকে ভারতীয় দন্ডবিধির ১২১, ১২১এ, ১২২ ধারা ও ৩০২, ৩০৭ এবং ১২০বি ধারা এবং সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনের অধীনে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করে। কিন্তু আইপিসি ১২৩ ধারার অধীনে আফসান গুরুকে (নভজ্যোত সাঁধু) মৃত্যুর সাজা না দিয়ে পাঁচবছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এই মৃত্যুদন্ড নিশ্চিত করবার জন্য মামলাটি দিল্লি হাইকোর্টে পেশ করা হয়েছিল। অভিযুক্ত চারজনই পূর্ববর্তী বিচারকের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে। কিন্তু ২০০৩ সালের ২৯ অক্টোবর মামলায় আফজল গুরু এবং শওকত হুসেনের মৃত্যুদন্ড বহাল থাকলেও এসএআর গিলানি এবং আফসান গুরুর আপিল মঞ্জুর করে আদালত এবং তাঁদের খালাস দেয়। হামলার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থেকে কোন অংশগ্রহণমূলক কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া যায়নি গিলানির। সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা ব্যবহৃত রাসায়নিক এবং অন্যান্য অপরাধমূলক জিনিসপত্র সংগ্রহের সাথে তিনি কোনভাবেই যুক্ত ছিলেন না। এইসব কারণেই পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে আদালত গিলানিকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারেনি।
এরপর এই মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যায়। ভারতের সর্বোচ্চ আদালত ২০০৫ সালের ৪ আগস্ট কেবলমাত্র আফজল গুরুর মৃত্যুদন্ড বহাল রাখে। শওকত হুসেন গুরুর সাজা মৃত্যুদন্ড থেকে কমিয়ে এনে দশ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং পঁচিশ হাজার টাকা জরিমানার কথাও বলা হয়। ফলে আফজল পুনরায় তাঁর রায়ের পুনর্বিবেচনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে একটি পিটিশন দাখিল করেন। কিন্তু সেই পিটিশনটিও সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দেয়। সুপ্রিম কোর্ট জানায় সংসদ ভবনে হামলার লক্ষ অর্জনের জন্য দুষ্কৃতিদের দ্বারা করা প্রায় প্রতিটি কাজের সাথেই গুরু জড়িত ছিলেন। যদিও সেবছর ৫ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট এও জানিয়েছিল যে আফজল গুরুর বিরুদ্ধে কেবল পরিস্থিতিগত প্রমাণই রয়েছে কিন্তু কোনো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে তাঁর যোগসূত্রের তেমন কিছু প্রমাণ মেলেনি। তবুও সুপ্রিম কোর্ট আফজলের মৃত্যুদন্ড বহাল রেখেছিল। অবশেষে ২০০৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর দিল্লি আদালত আফজল গুরুর ফাঁসির আদেশ দেয়। সুপ্রিম কোর্টের এহেন রায়ের বিরোধিতা করে সেসময়ে সরব হয়ে উঠেছিল দেশের অনেকেই।
আফজল তাঁর আইনজীবী সুশীলকুমারকে একটি চিঠি লেখেন। সেই চিঠিতে এমন কিছু চাঞ্চল্যকর কথা লিখেছিলেন আফজল যা কিনা সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে বিতর্কের অবকাশ তৈরি করে। আফজল জানান এই মামলার শুরু থেকেই তাঁকে কোনো আইনজীবী দেওয়া হয়নি এমনকি সত্য প্রকাশের সুযোগও দেওয়া হয়নি। এমনকি এও জানান তিনি পুলিশি হুমকি এবং চাপের মুখে অপরাধ স্বীকারে বাধ্য হয়েছিলেন। আফজল জানান তিনি স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের ফাঁদে পড়েছিলেন। শ্রীনগরের পারোমপোরা থানায় নাকি তাঁকে নির্যাতন করা হয় এবং সত্য প্রকাশে নিষেধ করা হয় নচেৎ পরিবারের পরিণতি ভয়ানক হবে বলে হুমকি দেয় পুলিশ। আফজল ইনস্পেকটর দ্রাবিন্দর সিং নামে একজনের কথা লেখেন চিঠিতে। দ্রাবিন্দরের কার্যকলাপের যে ইঙ্গিত চিঠিতে দিয়েছিলেন আফজল, তাতে সেই পুলিশকে হামলাকারীদের সঙ্গে জড়িত বলে মনে হতে পারে। যদিও সরাসরি এই অভিযোগ করেননি আফজল। এই চিঠি শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের রায়কে প্রভাবিত করতে পারেনি। তবে এই রায় যে তর্কাতীত নয় এবং প্রভূত সন্দেহ এবং সংশয়ের জন্ম দিয়েছিল তা বলাই বাহুল্য। আফজলের ক্ষেত্রে আদতেই ন্যায়বিচার হল কিনা তা নিয়ে দ্বিধা থেকে যায়। কোনো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে যোগসূত্রের প্রমাণ না পাওয়া গেলেও আফজলকে মৃত্যুদন্ড দেওয়াটা বিতর্কিত নিঃসন্দেহে। এমনকি সুপ্রিম কোর্ট রায়দানের সময় জানায়, যে আক্রমণ ভারতের একতা, অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করে, তার সঙ্গে জড়িত অপরাধীকে মৃত্যুদন্ড দিলে সমাজের সম্মিলিত বিবেক সন্তুষ্ট হবে। রাষ্ট্রদ্রোহিতা, সমাজের জন্য হুমকি ইত্যাদি বিলুপ্ত হওয়া উচিত বলেই আদালত মৃত্যুদন্ড বহাল রাখার কথা জানায়। কিন্তু উপযুক্ত আত্মরক্ষার অনুমতি না দিয়ে, যথাযথ ও নিশ্চিত প্রমাণ ছাড়াই কেবল সামাজিক বিবেকের সন্তুষ্টি সাধনের জন্য একজনকে মৃত্যুদন্ড দান কতখানি সঙ্গত তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
২০০৬ সালের ৩ অক্টোবর আফজলের স্ত্রী তাবাসসুম গুরু ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামের কাছে আফজলের জন্য করুণা ভিক্ষা চেয়ে আবেদন করেছিলেন। ২০০৭ সালের জুন মাসে পুনরায় আফজলের মৃত্যুদন্ডের পুনর্বিবেচনার আপিল ‘দেয়ার ইজ নো মেরিট’ বলে খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে শওকত হুসেন গুরু ভালো আচরণের জন্য তিহার জেল থেকে মুক্তি পায়।
কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলগুলি সহ বিভিন্ন মানবাধিকার গোষ্ঠী থেকে আফজলকে ক্ষমা করার আবেদন জানানো হয়েছিল, যারা বিশ্বাস করত যে আফজল গুরু ন্যায্য বিচার পাননি এবং দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ এবং অদক্ষ পুলিশের দুর্নীতিগ্রস্ত কাজের শিকার হয়েছিলেন তিনি। অরুন্ধতী রায় এবং প্রফুল বিদওয়াইয়ের মতো মানুষও আদালতের বিচারকে নিন্দা করেছিলেন। জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মোহাম্মদ সাঈদ এবং স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলি আফজল গুরুকে ক্ষমার সমর্থনে সোচ্চার হয়েছিল। ২০০৬ সালে কাশ্মীরে এই মৃত্যুদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়, ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর পাথর বর্ষণও করা হয়। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী), কংগ্রেস এবং বিজেপি উভয়েই এর সমালোচনা করেছিল। রাম জেঠমালানি বলেন, মৃত্যুদন্ড নাকচ করে দেওয়া রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার এক্তিয়ারের মধ্যেই পড়ে। জম্মু ও কাশ্মীর পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি এবং সাংসদ মেহবুবা মুফতি মন্তব্য করেন যে পাকিস্তান যদি সরবজিত সিংয়ের জন্য ক্ষমার আবেদন গ্রহণ করে তবে কেন্দ্রের উচিত আফজলকে ক্ষমা করা।
তবে অনেকেই এই মৃত্যুদন্ডকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। সর্বভারতীয় সন্ত্রাসবিরোধী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মনিন্দরজিৎ সিং বিট্টা ভারতের রাষ্ট্রপতিকে আফজলের পক্ষ থেকে কোন ক্ষমার আবেদন গ্রহণ না করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ২০০৬ সালের একটি সমীক্ষায় জানা যায়, ভারতের ৭৮ শতাংশ মানুষ আফজলের ফাঁসির পক্ষে মত দিয়েছেন।
২০১০ সালের ২৩ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রাষ্ট্রপতির কার্যালয়কে করুণার আবেদন খারিজ করার সুপারিশ করে। ২০১১ সালের ১০ আগস্ট ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক করুণার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে এবং মৃত্যুদণ্ডের সুপারিশ করে ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে একটি চিঠি পাঠায়। ২০১২ সালে নতুন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্ডেকে তাঁর পূর্বসূরি পি চিদাম্বরমের মতামত পর্যালোচনা করার অনুরোধ করেন। ১০ ডিসেম্বর শিন্ডে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে তিনি ২০ ডিসেম্বর সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শেষ হওয়ার পরে ফাইলটি দেখবেন। ২০১৩ সালের ২৩ জানুয়ারি শিন্ডে আফজল গুরুর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য তাঁর চূড়ান্ত সুপারিশ করেন। ৩ ফেব্রুয়ারি প্রণব মুখার্জী আফজল গুরুর ক্ষমা ভিক্ষার আবেদন খারিজ করে দেন। অবশেষে ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সকাল আটটায় তিহার জেলে আফজল গুরুকে ফাঁসি দেওয়া হয়। এই ফাঁসির খবর দুদিন পরে তাঁর পরিবারের কাছে গিয়ে পৌঁছয়। এই যে পরিবারের অজান্তেই এবং কোন জনঘোষণা ছাড়াই একরকম গোপনেই আফজলের ফাঁসি সম্পন্ন হল, এটিও বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল ফের। মৃত্যুর খবর রাষ্ট্র হয়ে গেলে বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি জায়গায় বিক্ষোভ শুরু হয়। পরবর্তীকালে এসএআর গিলানি এই ফাঁসিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত সিদ্ধান্ত বলে নিন্দা করেছিলেন। আবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মতো সংস্থা এই ফাঁসিকে উদযাপন করেছিল। এমনই মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মধ্যেও সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে, ন্যায়বিচার নিয়ে সংশয় থেকে যায়।