সশস্ত্র বাহিনী দিবস

২১ নভেম্বর।। সশস্ত্র বাহিনী দিবস (বাংলাদেশ)

প্রতি বছর প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশে কিছু দিবস পালিত হয়। ওই নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। পালনীয় সেই সমস্ত দিবস গুলির মধ্যে একটি হল বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী দিবস (Armed Force Day)।

প্রতি বছর ২১ নভেম্বর সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন করা হয়। ১৯৭১ সালে এই দিনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানি সেনা ভারতীয় সেনার সাহায্য নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আলাদা করে বাংলাদেশ গড়ে তোলার পেছনে এই দিনটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সেই দিনটিকে স্মরণে রেখেই ১৯৮৬ সালে প্রথম ২১শে নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালন করা হয়। তারপর থেকে প্রতি বছর এই দিনে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানি সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পর বাংলাদেশ ভারতের সাহায্য নেয়। ভারতের সাহায্য নেওয়ার পর বাংলাদেশের সেনাবাহিনী আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং খুব তাড়াতাড়ি ভারত ও বাংলাদেশের সম্মিলিত সেনাবাহিনী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়। এই দিনটি পালন করার মাধ্যমে সেইসব মানুষদের স্মরণ করা হয় যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন।

১৯৭১ সালের মার্চ মাসে ঢাকা শহরে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বীজ বপন হয়। ধীরে ধীরে সেটি সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলার মানুষ পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে। স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার এই মুক্তিযুদ্ধে অগণিত মানুষ তাঁদের প্রাণ বিসর্জন দেন দেশকে পাকিস্তান থেকে মুক্ত করার জন্য। বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতা নেত্রী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সকল শ্রেণীর মানুষের প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। এই স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। বায়ুসেনা, স্থল সেনা এবং নৌসেনা একত্রিত হয়ে পাকিস্তানি সেনাদের প্রতিরোধ করে। যেসব বাংলাদেশী আগে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে তাঁরাও বিদ্রোহ করে এবং বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সাথে হাত মেলায়। পাকিস্তানি সেনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বাংলাদেশী সেনাবাহিনীকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছিল, সেগুলি হল কর্নেল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে জেড ফোর্স (‘Z’ Force), কর্নেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে কে ফোর্স (‘K’ Force) এবং মেজর কে এম শফিউল্লাহর নেতৃত্বে এস ফোর্স (‘S’ Force)।

স্থল সেনার পাশাপাশি নৌসেনাকেও শক্তিশালী করে তুলেছিল বাংলাদেশ। তাদের বি এন এস পদ্মা (BNS Padma) এবং পলাশ নামক দুটি যুদ্ধজাহাজ ছিল। এই দুটি যুদ্ধজাহাজের মাধ্যমে তারা পাকিস্তান থেকে সেনাদের জন্য আসা অস্ত্র এবং  রেশন আটকাতে এবং চট্টগ্রাম ও মঙ্গলার প্রধান দুটি বন্দর কব্জা করতে সক্ষম হয়েছিল। ১৯৭১ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের বায়ুসেনা বাহিনী (Bangladesh Air Force, BAF) গড়ে তোলা হয়। যেসব বাঙালি সেনারা যুদ্ধের আগে পাকিস্তানি বায়ুসেনার সাথে যুক্ত ছিল তাঁদেরকে এই সেনাবাহিনীতে যুক্ত করা হয়।

প্রতি বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের শিখা অনির্বাণে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে এই দিনটির শুভ সূচনা করেন। এরপরে ঢাকার সেনাকুঞ্জে একটি সভার আয়োজন করা হয় যেখানে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর সাথে যুক্ত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা মানুষেরা যোগদান করেন। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে এই দিনটি উপলক্ষে নানান অনুষ্ঠান দেখানো হয়। তার মধ্যে ‘অনির্বাণ’ নামক অনুষ্ঠানটি খুবই জনপ্রিয়। তা ছাড়াও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এই দিনটিকে কেন্দ্র করে নানান লেখা ছাপা হয়। আর্মড ফোর্স ডিভিশন (Armed Force Division) থেকে একটি পত্রিকা প্রকাশ করা হয় যার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত নানান লেখা থাকে।

আশা করা হয় এই দিনটি পালনের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আরও তথ্য জানানো যাবে এবং তাদেরকে শহীদ সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলা যাবে।

One comment

আপনার মতামত জানান