বিবস্বৎ সপ্তমী ব্রত

বিবস্বৎ সপ্তমী ব্রত

আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের সপ্তমীতে বিবস্বৎ সপ্তমী ব্রত পালন করা হয়ে থাকে। বলা হয় যিনি এই ব্রত পালন করেন সূর্যদেব তাঁকে রক্ষা করে থাকেন। জেনে নেওয়া যাক এই ব্রতের পেছনে প্রচলিত কাহিনী।

এক গ্রামে অলকা নামে এক পতিব্রতা নারী বাস করতেন। তাঁর স্বামী কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ছিলেন। অলকা তাঁর স্বামীকে ভালো করার জন্য কত ডাক্তার বদ্যি করেছেন, কত দেব দেবীর মন্দিরে পুজো দিয়েছেন, কিন্তু তাঁর স্বামীর রোগ সারাতে পারেননি। এই ভাবে দেখতে দেখতে বারো বছর কেটে গেল। অলকা মাধব নামে একটি গ্রাম দিয়ে একদিন যাচ্ছিলেন। তিনি দেখলেন দূরে সূর্য দেবের মন্দিরে ঢাক বাজছে। তা দেখে তিনি তাড়াতাড়ি সেখানে উপস্থিত হলেন। অলকা তাঁর স্বামীর কুষ্ঠ ভালো হয়ে যাবার প্রার্থনা করে সূর্য দেবের মন্দিরে পুজো দিলেন। পুজো শেষে দুপুরের কাঠফাটা রোদে তাঁর খুব জোরে পিপাসা পায়। তিনি কাছের এক পুকুর থেকে জল খেয়ে গাছ তলায় বিশ্রাম করতে বসলেন। তারপর ক্লান্তিতে তিনি শাড়ির আঁচল পেতে গাছ তলায় ঘুমিয়ে পড়লেন। ঘুমের মধ্যে তিনি স্বপ্ন দেখলেন স্বর্ণমুকুটধারী এক সুপুরুষ তাঁর মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আছেন। সেই পুরুষ তাঁকে বলছেন “ওঠো! আজ বিবস্বৎ সপ্তমী ,তুমি আমার পুজো দিয়েছ। তোমার মনোকামনা পূর্ণ হবে,তোমার স্বামী ভালো হয়ে উঠবে।”
পরদিন সকালে অলকা দেখেন তাঁর স্বামী কুষ্ঠরোগ মুক্ত হয়ে গেছেন। তারপর থেকে অলকা ও তাঁর স্বামী দুজনে এই বিবস্বৎ সপ্তমী ব্রত পালন করতে থাকেন এবং এইভাবেই এই ব্রত পৃথিবীতে প্রচার পায়।

অন্য একটি কাহিনী অনুসারে এক দেশের রাজকুমার ছিলেন পবন কুমার। তাঁর সাথে দেশের মন্ত্রীর মেয়ে কনকমালার বিয়ে হয়েছিল। রাজকুমার কুষ্ঠরোগে ভুগছিলেন। অনেক বদ্যি দেখিয়েও কোন ফল হচ্ছিল না। কনকমালা দুঃখে সারাদিন কান্নাকাটি করতেন এবং রাজবাড়ির সূর্যমন্দিরে পুজো দিতেন। একদিন পুজো শেষে ক্লান্ত হয়ে তিনি মন্দিরের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লেন। ঘুমের মধ্যে তিনি স্বপ্ন দেখলেন স্বর্ণমুকুটধারী এক সুপুরুষ তাঁর মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আছেন। সেই পুরুষ তাঁকে বলছেন “ওঠো! আজ বিবস্বৎ সপ্তমী ,তুমি আমার পুজো দিয়েছ। আমি যা করতে বলছি তা মন দিয়ে শোনো তাহলেই তোমার স্বামী ভালো হয়ে উঠবে। কয়েক জন্ম আগে তোমার স্বামী এক ব্রাহ্মণের চাকর ছিল। তখন ও খুব বদরাগী ছিল। একদিন দুজনের ঝগড়া হওয়ার পর ও ব্রাহ্মণকে লাথি মেরেছিল। সেই ব্রাহ্মণ আমার কাছে প্রার্থনা করে ওঁকে সাত জন্মের কুষ্ঠ রোগ দিতে বলেন। সেই থেকে ছয় জন্ম ধরে ও কুষ্ঠ রোগে ভুগছে। তোমায় আমি সেই ব্রাহ্মণের ঠিকানা দিচ্ছি। তাঁদের আমার পুজো করতে বোলো। তারপর তাঁদের পা ধোয়া জল খেয়ে তাঁদের অনেক ধনরত্ন দিও। তাহলেই তোমার স্বামী সুস্থ হয়ে উঠবে।”

কনকমালা কথামত ব্রাহ্মণের ঘরে এসে উপস্থিত হল। সেই ব্রাহ্মণ এখন সাত জন্ম আগের কথা ভুলে দারিদ্রতার সাথে দিন কাটাচ্ছিলেন। কনকমালা সূর্যদেবের কথামত তাঁদের পা ধোয়া জল খেয়ে তাঁদের অনেক ধনরত্ন উপহার দিলেন। তাঁরা সূর্যদেবের ইচ্ছেয় সব কিছু জানতে পারলেন। কনকমালা রাজপ্রাসাদে ফিরে দেখলেন পবন কুমার সুস্থ হয়ে গেছেন। তারপর ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণীর সাথে তাঁরা আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের সপ্তমীতে বিবস্বৎ সপ্তমী ব্রত পালন করলেন। এরপর এই ব্রত পৃথিবীতে প্রচার পেল।

তথ্যসূত্র


  1. মেয়েদের ব্রত কথা -লেখক গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য সম্পাদিত ও রমাদেবী কর্তৃক সংশোধিত,পৃষ্ঠা-৭৫
  2. মেয়েদের ব্রতকথা- লেখকঃ শ্রীকালীকিশোর বিদ্যাবিনোদ সংকলিত ও শ্রীসুরেশ চৌধুরী কর্তৃক সংশোধিত প্রকাশকঃ অক্ষয় লাইব্রেরী, পৃষ্ঠা ৭১

আপনার মতামত জানান