শ্মশানভূমিতে দুর্গাপূজা

 দেবী দুর্গার আরাধনা প্রায় সর্বত্র হলেও শ্মশানে দুর্গাপূজা হয় বলে কোথাও শোনা যায় না। বোধ হয় গোটা বিশ্বে এরকম উদাহরণ একটি আছে। হুগলী জেলার জনাইয়ের মুখোপাধ্যায় রাজবাড়ীর দুর্গাপুজায়  মা দুর্গা পূজিত হন শ্মশানের ভূমিতে। চন্ডিতলা ২ নং ব্লক, শ্রীরামপুর সাবডিভিশন, চন্ডিতলা থানা। 

জনাইয়ের মুখোপাধ্যায় পরিবারে শারদীয়া দুর্গাপূজার প্রথম প্রবর্ত্তন হয় শ্রী কালীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আমলে, আনুমানিক ১৮১৬ বা ১৮১৭ খ্ৰীস্টাব্দে। তিনি দেবী কর্ত্তৃক স্বপ্নাদেশ প্রাপ্ত হন এবং তারপর থেকেই শুরু হয় জনাইয়ের মুখোপাধ্যায় রাজবাড়ীর দুর্গাপূজা। জনাই রাজবাড়ীর দু’মহলা প্রাসাদবাড়ীর বাহিরমহলে হত দুর্গাপূজা। কথিত আছে সেখানে নাকি শ্মশান ছিল। স্বর্গীয় শ্রী কালীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশ ছিল, যে দেবী মা যখন চেয়েছেন তখন শ্মশানেই পূজো নেবেন। তাই আজও ঠাকুরদালান পাকা হলেও ঘরের মেঝে পাকা করা হয়নি, মাটিরই আছে। মুখোপাধ্যায় বংশের সপ্তম প্রজন্ম তাই রীতি মেনে আজও সেই পবিত্র শ্মশানের মাটিতেই মায়ের আরাধনা করে আসছেন। বঙ্গে শ্মশান ভূমিতে কালী আরাধনা বহুল প্রচলিত। কিন্তু দুর্গা! তাঁর আরাধনা হয় শ্মশান ভূমিতে, এটি কেবল ব্যতিক্রমী নয়, অসম্ভব বিরল ঘটনা। বঙ্গে শ্মশানে দুর্গাপূজা অন্য কোনও দ্বিতীয় উদাহরণ নেই।

উল্টোরথের দিন কাঠামোপূজার মাধ্যমে সূচিত হয় দুর্গাপূজা প্রস্তুতি এবং শারদীয়া দুর্গোৎসবের শুভসূচনা। সাতখিলানের ঠাকুরদালানে সাবেক একচালা শৈলীর প্রতিমা নির্মাণের কাজও শুরু হয়ে যায় সেই দিন থেকেই। ষষ্ঠ্যাদি কল্পে হয় দেবীর বোধন। আগে সপ্তমীতে একটি, অষ্টমীতে তিনটি এবং নবমীতে পাঁচটি — মোট ন’টি ছাগ বলির রীতি ছিল। কিন্তু এখন আর পশুবলি হয় না, তার বদলে ফল বলি করা হয়। বিজয়া দশমীতে  সিঁদুর খেলার মাধ্যমে সমাপ্তি হয় দুর্গাপূজার। দেবীর প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয় মুখোপাধ্যায় পরিবারের বাড়ীর পিছনে প্রবাহিত সরস্বতী নদীর ঘাটে।

 

তথ্যসূত্র


  1. সুখী গৃহকোণ পত্রিকা, সেপ্টেম্বর ২০১৪ সাল
  2. https://www.anandabazar.com/
 

আপনার মতামত জানান