ফিওদর দস্তভয়েস্কি

ফিওদর দস্তয়েভস্কি

বিশ্ব সাহিত্যের ভাণ্ডার যাঁদের জাদুকলমের স্পর্শে সমৃদ্ধ হয়েছে এবং আগামী প্রজন্মকে প্রভাবিত করেছে, রুশ কথাসাহিত্যিক ফিওদর দস্তয়েভস্কি (Fyodor Dostoyevsky) ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। মূলত উপন্যাস রচনার জন্য পরিচিত হলেও ছোটগল্প এবং প্রবন্ধ রচনাতেও নিজের দক্ষতা প্রদর্শন করেছিলেন তিনি। উনিশ শতকের রাশিয়ার অস্থির সমাজ-রাজনৈতিক পরিবেশের জীবন্ত চিত্র তাঁর সাহিত্যে ফুটে উঠেছে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে। তাঁর লেখায় খুঁজে পাওয়া যায় এক আধ্যাত্মিক এবং ধর্মীয় বাতাবরণ। মানব হৃদয়ের অন্ধকারতম তলদেশে দস্তয়েভস্কির গভীর এবং তীক্ষ্ণ দৃষ্টি পৌঁছে গিয়েছিল অনায়াসে। চরিত্রদের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, মানুষের মনের গতিপ্রকৃতির অনুপুঙ্খ পর্যবেক্ষণ তাঁর লেখায় যেভাবে পাওয়া যায়, আগামী প্রজন্মের কাছে তা অনুসরণযোগ্য বলে মনে হয়েছিল। অনেকে তাঁকে অস্তিবাদী সাহিত্যের প্রথম লেখক বলেও মনে করেন। ‘ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট’, ‘দ্য ব্রাদার্স কারমাজোভ’, ‘দ্য গ্যাম্বলার’ ইত্যাদি তাঁর লেখা কালজয়ী উপন্যাসগুলির মধ্যে অন্যতম।

১৮২১ সালের ১১ নভেম্বর রাশিয়ার মস্কো শহরে এক শিক্ষিত পরিবারে ফিওদর দস্তয়েভস্কির জন্ম হয়। তাঁর বাবা মিখাইল আন্দ্রেভিচ দস্তয়েভস্কি (Mikhail Andreevich Dostoevsky) পেশায় ছিলেন একজন ডাক্তার এবং তাঁর মায়ের নাম ছিল মারিয়া দস্তয়েভস্কায়া (Maria Dostoevskaya)। ফিওদর ছিলেন তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান। মস্কোয় দরিদ্রদের জন্য তৈরি মেরিনস্কি হাসপাতালে একজন ডাক্তার হিসেবে কাজ করতেন দস্তয়েভস্কি’র বাবা। পাশাপাশি একটি দাতব্য চিকিৎসালয়ও চালাতেন তিনি। ফিওদরের শৈশব এবং বড় হয়ে ওঠা মস্কোর সেই মেরিনস্কি হাসপাতালের প্রাঙ্গণে অবস্থিত তাঁদের পারিবারিক বাড়িতে। হাসপাতালের বাগানে খেলাধুলা করার সময় যেসব রোগীদের মুখোমুখি হতেন তিনি, তাঁরা অধিকাংশই ছিলেন সমাজের নীচু তলার মানুষ। খুব ছোট থেকেই এইসব মানুষদের সংস্পর্শে এসেছিলেন বলে রাশিয়ার সামাজিক অবস্থার এত বিশ্বাসযোগ্য এবং জীবন্ত ছবি উঠে এসেছিল তাঁর লেখায়। 

খুব ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন ফিওদর দস্তয়েভস্কি। তাঁদের বাড়ির আয়া আলেনা ফ্রেলোভনার মাধ্যমেই গল্প-কাহিনীর প্রতি ভালোবাসা এবং উৎসাহ জন্মেছিল ফিওদরের। যখন তাঁর মাত্র তিন বছর বয়স তখন থেকেই আলেনার সাহায্যে রূপকথা এবং বিভিন্ন কিংবদন্তির সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন ফিওদর। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষায় মায়ের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। মাত্র চার বছর বয়সে তাঁর মা তাঁকে লিখতে এবং পড়তে শেখানোর জন্য বাইবেল ব্যবহার করতেন। ছোটবেলা থেকেই তাঁদের পরিবারে একটি ধর্মীয় বাতাবরণ বিরাজ করত এবং তার মধ্যেই বেড়ে উঠেছিলেন তিনি। দস্তয়েভস্কি’র মা-বাবা তাঁকে পুশকিন, কারামজিন, দেরজাভিন প্রমুখ রুশ লেখকদের পাশাপাশি বিশ্বসাহিত্যের আরও নানা সাহিত্যিকের রচনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে সার্বিয়ায় থাকাকালীন একজন পরিচিতের স্ত্রী মারিয়া দিমিত্রিভনা ইসায়েভার (Maria Dmitrievna Isayeva) সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তাঁর। তাঁর স্বামীর মৃত্যু হলে ১৮৫৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মারিয়ার সঙ্গে ফিওদর দস্তয়েভস্কি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু তাঁদের বিবাহিত জীবন সুখের ছিল না।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

১৮৩৩ সালে দস্তয়েভস্কি’র বাবা তাঁকে প্রথমে এক ফরাসি বোর্ডিং স্কুলে পড়াশোনার জন্য ভর্তি করেন। পরবর্তীকালে চেরমার্ক বোর্ডিং স্কুলে অধ্যয়নের জন্য ভর্তি হন ফিওদর দস্তয়েভস্কি। সেখানে অভিজাত সহপাঠীদের মধ্যে নিজেকে বেমানান বলে মনে হত তাঁর। ১৮৩৭ সালের মে মাসে দস্তয়েভস্কি’র বাবা-মা তাঁকে এবং তাঁর ভাই মিখাইলকে পিটার্সবার্গের নিকোলায়েভ মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে পড়াশোনার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। সেবছরই ২৭ সেপ্টেম্বর যক্ষ্মা রোগে ফিওদরের মায়ের মৃত্যু হয় এবং তার দুই বছর পর ১৮৩৯ সালে তাঁর বাবাও মারা যান। কথিত আছে নিজের দাসদের হাতেই ফিওদরের বাবা খুন হয়েছিলেন। ১৮৩৮ সালের জানুয়ারি মাসে অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন ফিওদর। সেই মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাকাডেমিতে দস্তয়েভস্কিকে গণিত, প্রাথমিক বিজ্ঞান এবং সামরিক বিভিন্ন প্রকৌশলের পাঠ দেওয়া হয়েছিল বটে, কিন্তু এগুলি তিনি পছন্দ করতেন না এবং বিদ্যায়তনিক পড়াশোনার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল না একেবারেই। বরং সেখানে অঙ্কন এবং স্থাপত্যশৈলীর ক্লাসগুলিতে তিনি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তবে সেখানে শেক্সপিয়ার, প্যাসকেল, ভিক্টর হুগো, ইটিএ হফম্যানদের সাহিত্যও অধ্যয়ন করেছিলেন ফিওদর দস্তয়েভস্কি। শোনা যায় ১৮৪১ সালে সেখানে পড়াকালীন  তিনি জার্মান কবি ও নাট্যকার ফ্রেডরিক শিলার এবং বরিস গডুনভের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দুটি রোম্যান্টিক নাটক রচনা করেছিলেন, যদিও সেই রচনাদুটি সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। সেই প্রতিষ্ঠানে তাঁর চেয়ে কম সামরিক দক্ষতার ছাত্র কেউ ছিল না। এখানে পড়াশোনা চলাকালীনই বাবার মৃত্যুর খবরে তাঁর মৃগীরোগের লক্ষণ প্রথম দেখা দেয়। বাবার মৃত্যুর পরেও পড়াশোনা চালিয়ে যান তিনি। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, প্রকৌশলী ক্যাডেটের পদও লাভ করেন ফিওদর দস্তয়েভস্কি।

১৮৪২ সালে ফিওদর দস্তয়েভস্কি লেফটেন্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারের চাকরিতে যোগ দেন এবং পরের বছর ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাকাডেমি ছেড়ে দেন। তবে সাহিত্যচর্চাও পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। পরের বছরই অর্থাৎ ১৮৪৩ সালে দস্তয়েভস্কি বিখ্যাত ঔপন্যাসিক বালজাকের ‘ইউজেনি গ্র্যান্ডেট’ নামক উপন্যাসটি রুশ ভাষায় অনুবাদ করেন। এটিই তাঁর প্রথম সম্পূর্ণ কাজ যা প্রকাশিত হয়েছিল ‘রিপার্টয়ার অ্যান্ড প্যানথেওন’ পত্রিকার ১৮৪৩ সালের জুন ও জুলাইয়ের ষষ্ঠ এবং সপ্তম খন্ডে। এরপর আরও কয়েকটি অনুবাদ করেছিলেন তিনি তবে কোনোটাই তেমন সফলতা পায়নি। ১৮৪৪ সালের শেষ দিকে সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করে নিজস্ব মৌলিক কথাসাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন ফিওদর দস্তয়েভস্কি। ১৮৪৪ থেকে ১৮৪৫ সালের মধ্যে নয় মাস জুড়ে ‘দ্য কনটেম্পোরারি’ সাময়িকীতে ধারাবাহিকভাবে তিনি লেখেন তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘পুওর ফোক’। ১৮৪৬ সালের জানুয়ারি মাসে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এই রচনাটি বাণিজ্যিকভাবে প্রভূত সফলতা এবং সকলের প্রশংসা লাভ করেছিল। এই উপন্যাসে রাশিয়ার দরিদ্র মানুষের জীবনকে তুলে ধরেছেন লেখক। মানুষের অভ্যন্তরীণ অনুভূতির মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা এই উপন্যাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এরপর ১৮৪৬ সালে তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস ‘দ্য ডাবল’ প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসে আমলাদের মনস্তাত্ত্বিক অধ্যয়ন লক্ষ্য করা যায়, ফলে নেতিবাচক সমালোচনা এমনকি হুমকিরও মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাঁকে। 

১৮৪৬ থেকে ১৮৪৮ সাল পর্যন্ত দস্তয়েভস্কি ‘অ্যানালস অব দ্য ফাদারল্যান্ড’ পত্রিকার জন্য অনেকগুলি ছোটগল্প রচনা করেছিলেন। এই গল্পগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘মিস্টার প্রোখার্চিন’, ‘দ্য ল্যান্ড লেডি’, ‘এ উইক হার্ট’, ‘হোয়াইট নাইটস’ ইত্যাদি। তবে এগুলিও তেমন সাফল্য অর্জন করতে পারেনি, ফলে এই সময় তিনি আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হন। প্রথমে ইউটোপিয়ান সমাজতান্ত্রিক বেতেকভ সার্কেলে এবং পরে ১৮৪৬ সালে তিনি পেট্রাশেভস্কি সার্কেলে যোগ দেন। পেট্রাশেভস্কি সার্কেল এমন একটি সাহিত্য আলোচনা গোষ্ঠী যারা জারবাদী স্বৈরাচারের বিরোধিতা, দাসত্বের বিলুপ্তি এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। জার নিকোলাস এই বিপ্লবীদের অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে মনে করেছিল। ১৮৪৯ সালে প্রথম নিকোলাস এই গোষ্ঠীর সদস্যদের গ্রেপ্তার করে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করেছিলেন। যদিও একেবারে শেষ মুহূর্তে মৃত্যুদন্ড খারিজ করে দস্তয়েভস্কিকে সাইবেরিয়ায় নির্বাসনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সাইবেরিয়ার কারাগারে শ্রম শিবিরে চার বছর বন্দি অবস্থায় কাটিয়েছিলেন তিনি। এই কারাবাসের অভিজ্ঞতা তাঁর জীবন ও তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিতে আমূল বদল ঘটায়। পূর্বের রোম্যান্টিসিজম কেটে গিয়েছিল তাঁর লেখা থেকে। ১৮৬১ সালে ‘ভ্রেম্যা’ জার্নালে এই জেল-জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি রচনা করেছিলেন ‘দ্য হাউস অব দ্য ডেড’ উপন্যাসটি। এটি রাশিয়ার কারাগার নিয়ে লেখা প্রথম উপন্যাস।

১৮৫৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কারাগার থেকে মুক্তি পান ফিওদর দস্তভয়েস্কি। সেই সময় মিখাইলের কাছে আর্থিক সাহায্য চান তিনি এবং ভিকো, গুইজোট, হেগেল, কান্ট প্রমুখ দার্শনিক ও লেখকদের বই পাঠিয়ে দিতে বলেন। সেবছরই তাঁকে বাকি শাস্তি পূরণের জন্য সার্বিয়ার সামরিক বাহিনীতে কাজ করবার জন্য সেমিপালাটিনস্কে চলে যেতে হয়েছিল। পরবর্তী পাঁচ বছর সাইবেরিয়ান রেজিমেন্টের সেভেনথ লাইন ব্যাটেলিয়নে প্রথমে প্রাইভেট এবং পরে লেফটেন্যান্ট হিসেবে কাজ করতে হয়েছিল ফিওদরকে। সেখানে বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষাদান করতেন তিনি।

১৮৫৯ সালে স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে সামরিক চাকরি থেকে মুক্তি পেয়ে সেন্ট পিটার্সবার্গে ফিরে আসেন ফিওদর দস্তয়েভস্কি। সেখানে ফিরে নিজের বড় ভাই মিখাইলের সঙ্গে ‘টাইম’ নামক একটি সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করতে শুরু করেন তিনি। বিতর্কিত প্রবন্ধ ছাপার কারণে সরকার কর্তৃক এই কাগজ বন্ধ করে দেওয়া হলে তাঁরা ‘ইপোক’ নামে আরেকটি সাময়িকী শুরু করেন, কিন্তু ১৮৬৪ সালে মিখাইলের মৃত্যু হলে তা ব্যর্থ হয়ে যায়। ১৮৫৯ সালে দস্তয়েভস্কি’র দুটি নভেলা ‘আঙ্কেল’স ড্রিম’ এবং ‘দ্য ভিলেজ অফ স্টেপানচিকোভো’ প্রকাশিত হয়। ১৮৬১ সালে ‘ভ্রেম্যা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর অন্যতম উপন্যাস ‘দ্য ইনসাল্টেড অ্যান্ড দ্য ইনজিউরড’। 

১৮৬২ সালের ৭ জুন প্রথমবার পশ্চিম ইউরোপ ভ্রমণে যান ফিওদর দস্তভয়েস্কি। বার্লিন, বেলজিয়াম, প্যারিস, সুইজারল্যান্ড, ফ্লোরেন্স সহ আরও নানা জায়গার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তিনি ‘উইন্টার নোটস অন সামার ইম্প্রেশনস’ প্রবন্ধ-গ্রন্থে তুলে ধরেছেন। সেই গ্রন্থে তিনি পুঁজিবাদ, সামাজিক আধুনিকীকরণ, বস্তুবাদ, ক্যাথলিকবাদ এবং প্রোটেস্ট্যান্টিজমের সমালোচনা করেছিলেন। ১৮৬৪ সালে দস্তয়েভস্কি’র স্ত্রী মারিয়ার এবং তাঁর ভাইয়ের মৃত্যু হয়। সেবছরই তাঁর গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাস ‘নোটস ফ্রম দ্য আন্ডারগ্রাউন্ড’ প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসটি থেকেই অস্তিত্ববাদের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল বলা যায়। দস্তয়েভস্কি’র অন্যতম বিখ্যাত কাজ ‘ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট’ উপন্যাসের প্রথম দুটি অংশ ১৮৬৬ সালের জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারিতে ‘দ্য রাশিয়ান মেসেঞ্জার’ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছিল। এই দুই কিস্তিই বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। বছরের শেষ দিকে তিনি ‘দ্য গ্যাম্বলার’ নামক ছোট উপন্যাসটিও লেখা শেষ করেছিলেন। ‘দ্য গ্যাম্বলার’ সময়মতো শেষ করতে দস্তয়েভস্কি একজন স্টেনোগ্রাফার আনা গ্রিগরিভনা স্নিটকিনারকে (Anna Grigoryevna Snitkina) নিযুক্ত করেছিলেন যিনি তাঁর থেকে ২৫ বছরের ছোট ছিলেন। ১৮৬৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী পিটার্সবার্গের ট্রিনিটি ক্যাথিড্রালে দস্তয়েভস্কির সঙ্গে আনা গ্রিগরিভনার বিবাহ হয়। ১৮৬৮ সালে তাঁদের প্রথম সন্তান সোফিয়া জন্মায় কিন্তু তার ঠিক তিন মাস পরেই মারা গিয়েছিল সোফিয়া। ১৮৬৭তে ‘দ্য ইডিয়ট’ লেখা শুরু করেন ফিওদর দস্তয়েভস্কি এবং ১৮৬৮-৬৯ সময়কালে ‘রাশিয়ান মেসেঞ্জার’-এ ধারাবাহিকভাবে তা ছাপা হয়। ১৮৬৯ সালে তাঁদের দ্বিতীয় কন্যা লিউবভের জন্ম হয়। এই দম্পতি জেনেভা, মিলান, বার্লিনসহ আরও নানাস্থানে ভ্রমণ করেছিলেন। ১৮৭১ সালে রাশিয়ায় ফিরে আর্থিক সমস্যায় পড়েন তাঁরা। সেবছর তাঁদের পুত্র ফিওদরের জন্ম হয়। 

ফিওদর দস্তয়েভস্কি এবং তাঁর স্ত্রী এক প্রকাশনা সংস্থাও খুলেছিলেন যার নাম ‘দস্তয়েভস্কি পাবলিশিং’। সেখান থেকে তাঁর লেখা ‘ডেমনস’ প্রকাশিত হয়। তাঁরা ‘আ রাইটার্স ডায়েরি’ নামে এক সাময়িকীর পরিকল্পনা করলেও অর্থের জন্য তা বাস্তবায়িত হয়নি। পরে ১৮৭৩ সালে ‘দ্য সিটিজেন’ পত্রিকার সম্পাদক হন দস্তয়েভস্কি এবং তাতে ‘আ রাইটার্স ডায়েরি’ নামে একটি কলাম লিখতেন তিনি নিয়মিতভাবে। সিটিজেনে থাকাকালীন দুবার আদালতে দাঁড়াতে হয়েছিল তাঁকে। পরে রাশিয়ান আমলাতান্ত্রের হস্তক্ষেপের কারণে তিনি এই পত্রিকাগোষ্ঠীর সংসর্গ ত্যাগ করেন। ১৮৭৫ সালে তাঁর পুত্র আলেক্সির জন্ম হয়। সেবছরের শেষ উপন্যাস ‘দ্য অ্যাডোলেসেন্ট’ লেখা শেষ করেন তিনি। 

‘রাশিয়ান অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস’-এর সম্মানসূচক সদস্য নিযুক্ত হন ফিওদর দস্তয়েভস্কি যেখান থেকে তিনি ১৮৭৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি সম্মানসূচক শংসাপত্র পান। তিনি ‘লিটারেয়ার অ্যাট আর্টিস্টিক ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর কমিটিতেও নিযুক্ত হন। ১৮৮০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ফিওদর দস্তয়েভস্কি ‘স্লাভিক বেনেভোলেন্ট সোসাইটি’র সহ সভাপতি নির্বাচিত হন। পুশকিন স্মৃতিসৌধের মোড়ক উন্মোচনের বক্তৃতায় প্রভূত প্রশংসা লাভ করেন তিনি। ১৮৭৯-৮০ সময়কালে তাঁর সর্ববৃহৎ এবং সর্বশেষ উপন্যাস ‘ব্রাদার্স কারমাজভ’ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় ‘রাশিয়ান মেসেঞ্জার’-এ। 

তিনবার ফুসফুসের রক্তক্ষরণে আক্রান্ত হয়ে অবশেষে ১৮৮১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি সেন্ট পিটার্সবার্গে ৫৯ বছর বয়সে ফিওদর দস্তয়েভস্কি’র মৃত্যু হয়। 

আপনার মতামত জানান