প্রতিবছর প্রতিমাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে কিছু দিবস পালিত হয়। নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরী করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। বিশ্বে পালনীয় সেই সমস্ত দিবসগুলি মধ্যে একটি হলো ‘বিশ্ব ব্যাঘ্র দিবস’ (International Tiger Day)।
সারা বিশ্বে ২৯ জুলাই বিশ্ব ব্যাঘ্র দিবস পালন করা হয়ে থাকে বাঘের প্রাকৃতিক বাসস্থান রক্ষা করা এবং বাঘ সংরক্ষণের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে।
২০১০ সালে প্রথম ‘বিশ্ব ব্যাঘ্র দিবস’ পালন করা হয়েছিল। সেই বছর রাশিয়ার ‘সেন্ট পিটার্সবার্গ টাইগার সামিট’ (Saint Petersburg Tiger Summit)-এ প্রথম ব্যাঘ্র সচেতনতার বিষয়টির ওপর আলোকপাত করা হয়। এই সম্মেলনে ২০২০ সাল অর্থাৎ দশ বছরের মধ্যে পৃথিবীতে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার কথা বলা হয়। এই সময় থেকেই বাঘ সংরক্ষণ ও বাঘের সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছরের ২৯ জুলাই পালিত হয় ‘বিশ্ব ব্যাঘ্র দিবস’ বা ‘আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবস’।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডের (World Wildlife Fund) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী একশো বছর আগে পৃথিবীতে বাঘের সংখ্যা ছিল এক লাখেরও বেশি। কিন্তু বর্তমানে সেই সংখ্যাটা ৯৫ শতাংশ কমে গেছে। সারা পৃথিবীতে মাত্র ১৩ টি দেশে বাঘের অস্তিত্ব বজায় আছে। এই ১৩ টি দেশকে বলা হয় ‘টাইগার্ রেন্জ কান্ট্রি’ (Tiger Range Country)। এই১৩ টি দেশ হলো- ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, ভুটান, নেপাল ও রাশিয়া।
বাঘের ৮টি উপ-প্রজাতির মধ্যে বালিনীজ টাইগার, জাভানীজ টাইগার ও কাস্পিয়ান টাইগার বর্তমানে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত। বাঘের ৫টি উপ-প্রজাতি (sub-species) এখনও পৃথিবীর বুকে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রেখেছে। এই পাঁচটি উপ-প্রজাতি হল- বেঙ্গল টাইগার, সাইবেরিয়ান টাইগার, সুমাত্রান টাইগার, সাউথ চায়না টাইগার এবং ইন্দো-চায়না টাইগার।
চোরাশিকারি, পরিবেশের প্রভাব, জঙ্গলের পরিমাণ কমে আসা, আবহাওয়ার পরিবর্তন ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় পৃথিবীতে বাঘের সংখ্যা কমিয়ে আনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
সাধারণত ক্যামেরা ট্র্যাপিং ও ট্রেইলিং পদ্ধতিতে ভারতে বাঘ গণনা করা হয়ে থাকে। যেসব পয়েন্টে বাঘের আনাগোনা বেশি, সেখানে গাছের সঙ্গে ক্যামেরা লাগিয়ে রাখা হয়। যখন বাঘ চলাচল করে তখন ওই ক্যামেরায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ছবি উঠতে থাকে। প্রতিটি বাঘের ডোরাকাটা দাগের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে, ছবি দেখে তা আলাদা করা হয়। প্রতিটি পয়েন্টে বাঘের ছবি নিয়ে সংখ্যা গোনা হয়। গাণিতিক পদ্ধতিতে এলাকার পুরো আয়তনের ওপর ভিত্তি করে সেই সংখ্যা থেকে মোট বাঘের একটা আনুমানিক হিসাব তৈরি করা হয়।ট্রেইলিং পদ্ধতিতে বাঘের হাঁটাচলার পথে পায়ের ছাপ দেখে বাঘের সংখ্যা গণনা করা হয়। বাঘের গায়ে ডোরাকাটা দাগের মতো, বাঘের পায়ের ছাপেও পার্থক্য রয়েছে। ছাপের নমুনা সংগ্রহ করে বাঘের মোট সংখ্যার হিসাব করা হয়।
প্রতিবছর এই দিনটি পালনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন আলোচনা সভা, তথ্যচিত্র সম্প্রচার ও এই নির্দিষ্ট বিষয়টির ওপর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এমনকি যে সমস্ত দেশে বাঘ নেই, সেই সমস্ত দেশগুলোও এই দিবসটি পালনে অংশগ্রহণ করে। বিভিন্ন সংস্থাও এই দিনটিতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য উদ্যোগী হয়। বর্তমানে বিশ্বের ৭৫ শতাংশ বাঘ রয়েছে ভারতে।
তথ্যসূত্র
- https://en.wikipedia.org/
- https://www.daysoftheyear.com/
- https://www.jagranjosh.com/
- https://bangla.dhakatribune.com/
