জগন্নাথদেবের মহাপ্রসাদ

পুরীর জগন্নাথ দর্শনের পর যেটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ একজন ভক্তের তা হল মহাপ্রসাদ গ্রহণ। জগন্নাথের এই মহাপ্রসাদ নিয়ে আসুন বিস্তারিত জানা যাক।

কথিত আছে ‘মহাপ্রসাদ’ শব্দটি প্রথম প্রচলন করেন মহাপ্রভু।দেবতার ভোগ শেষে যা গ্রহন করা হয় তাই প্রসাদ।মহোৎসব শেষে যে প্রসাদ বিতরন করা হয় তাই মহাপ্রসাদ। সাধারনত অনেকে মিলে একসাথে বসে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের প্রসাদ গ্রহন হল মহাপ্রসাদ। চৈতন্য চরিতামৃতে আছে, যা কৃষ্ণের অধরামৃত তার নাম প্রসাদ আর যা ভক্তভুক্ত অবশেষ তার নাম মহাপ্রসাদ।মহাপ্রসাদের উপর নিবেদনকারী ব্যক্তির আর কোন অধিকার থাকে না। বরং তা হয় ভগবানের সৃষ্ট সকল প্রানীর।

মহাপ্রসাদ দুই ধরনের। ‘সংকুরি মহাপ্রসাদ’ এবং ‘সুখিলা মহাপ্রসাদ’। সংকুরি মহাপ্রসাদ  এর মধ্যে পড়ে- সাদা ভাত, ঘি ভাত, জিরে হিং আদা ও নুন মিশ্রিত ভাত, মিষ্টি ডাল, সবজি ডাল, শাক ভাজা, যব ইত্যাদি। সুখিলা মহাপ্রসাদ  বলতে শুকনো মিষ্টি বোঝায়।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

দিনে ৬ বার ভোগ দেওয়া হয় জগন্নাথকে। সময় সূচি নীচে দেওয়া হল-

সকাল ৮.৩০ টায়-  গোপাল ভোগ (জল খাবার)

বেলা ১০টায় –  সকাল ধূপ ( সকালের আহার)

বেলা ১১ টায়-  ভোগ মণ্ডপ (এটি বিনামুল্যে দেওয়া হয়)

দুপুর ১২.৩০টায়- মধ্যাহ্ন ধূপ ( দ্বি প্রাহরিক আহার) 

সন্ধ্যে ৭টায়- সন্ধ্যা ধূপ (সান্ধ্যকালীন আহার)

রাত ১১টায়- বড় সিঙ্ঘারা ভোগ (রাত্রিকালীন আহার)

এইভাবে সারাদিনে সবমিলিয়ে ৫৬ রকম ভোগ নীলমাধবের প্রতি নিবেদন করা হয়।এই ৫৬ রকম ভোগের তালিকা নীচে দেওয়া হলঃ

১) উকখুড়া অর্থাৎ মুড়ি, ২) নাড়িয়া কোড়া অর্থাৎ নারকেল নাড়ু, ৩) খুয়া অর্থাৎ খোয়া ক্ষীর, ৪) দই, ৫) পাচিলা কাঁদালি অর্থাৎ টুকরো টুকরো কলা, ৬) কণিকা অর্থাৎ সুগন্ধী ভাত, ৭) টাটা খিঁচুড়ি অর্থাৎ শুকনো খিঁচুড়ি, ৮) মেন্ধা মুন্ডিয়া অর্থাৎ বিশেষ ধরণের কেক, ৯) বড়া কান্তি অর্থাৎ বড় কেক, ১০) মাথা পুলি অর্থাৎ পুলি পিঠে, ১১) হামসা কেলি অর্থাৎ মিষ্টি কেক, ১২) ঝিলি অর্থাৎ এক ধরণের প্যান কেক, ১৩) এন্ডুরি অর্থাৎ নারকেল দিয়ে তৈরি কেক, ১৪) আদাপচেদি অর্থাৎ আদা দিয়ে তৈরি চাটনি, ১৫) শাক ভাজা, ১৬) মরীচ লাড্ডু অর্থাৎ লঙ্কার লাড্ডু, ১৭) করলা ভাজা, ১৮) ছোট্ট পিঠে, ১৯) বারা অর্থাৎ দুধ তৈরি মিষ্টি, ২০) আরিশা অর্থাৎ ভাত দিয়ে তৈরি মিষ্টি, ২১) বুন্দিয়া অর্থাৎ বোঁদে, ২২) পাখাল অর্থাৎ পান্তা ভাত, ২৩)খিড়ি অর্থাৎ দুধভাত, ২৪)কাদামবা অর্থাৎ বিশেষ মিষ্টি ২৫) পাত মনোহার মিষ্টি ২৬) তাকুয়া মিষ্টি, ২৭) ভাগ পিঠে, ২৮) গোটাই অর্থাৎ নিমকি, ২৯) দলমা অর্থাৎ ভাত ও সবজি, ৩০) কাকারা মিষ্টি ৷ ৩১) লুনি খুরুমা অর্থাৎ নোনতা বিস্কুট, ৩২) আমালু অর্থাৎ মিষ্টি লুচি, ৩৩) বিড়ি পিঠে, ৩৪) চাড়াই নাডা মিষ্টি, ৩৫) খাস্তা পুরি, ৩৬) কাদালি বারা, ৩৭) মাধু রুচী অর্থাৎ মিষ্টি চাটনি, ৩৮) সানা আরিশা অর্থাৎ রাইস কেক, ৩৯) পদ্ম পিঠে, ৪০) পিঠে, ৪১) কানজি অর্থাৎ চাল দিয়ে বিশেষ মিষ্টি. ৪২) দাহি পাখাল অর্থাৎ দই ভাত, ৪৩) বড় আরিশা, ৪৪) ত্রিপুরি, ৪৫) সাকারা অর্থাৎ সুগার ক্যান্ডি, ৪৬) সুজি ক্ষীর, ৪৭) মুগা সিজা, ৪৮) মনোহরা মিষ্টি, ৪৯) মাগাজা লাড্ডু, ৫০) পানা, ৫১) অন্ন, ৫২) ঘি ভাত, ৫৩) ডাল, ৫৪) বিসার অর্থাৎ সবজি, ৫৫) মাহুর অর্থাৎ লাবরা, ৫৬) সাগা নাড়িয়া অর্থাৎ নারকেলের দুধ দিয়ে মাখা ভাত !

প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ কুইন্টল চাল এবং ২০ থেকে ২৪ কুইন্টল ডাল এবং সব্জি দিয়ে রান্না করা হয় এই ‘কণিকা’ মহাপ্রসাদ৷ ৬০০-৭০০ জন বিশেষ সেবাইত (যাদের ‘সুয়ারা’ বলে)মুখ বন্ধ করে রান্না করেন এই মহাপ্রসাদ৷ মুখ বন্ধ করে রান্না করা হয় যাতে ভোগের মধ্যে কোনওভাবে থুথু বা লালা পড়ে না দুষিত হয়ে যায়৷

2 comments

আপনার মতামত জানান