জানবাজার

জানবাজার

কলকাতার মানচিত্রে বেশ কিছু ‘বাজার’ আছে, যেমন  বাগবাজার, শ্যামবাজার, লালবাজার, বৌবাজার ( বহুবাজার) , আমিনীবাজার, জানবাজার, চিনাবাজার, বড়বাজার, টেরিটি বাজার, শোভাবাজার ইত্যাদি৷ প্রত্যেকটি বাজারেরই আছে তার নিজস্বতা, আছে তার ইতিহাস। এইরকমই স্থাননামে প্রসিদ্ধ কলকাতার বাজার-গুলির মধ্যে এখানে  জানবাজার নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হল।

অভিধানমতে, ‘জান’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত থেকে এর অর্থ দৈবজ্ঞ, গণক, জ্যোতিষবিশারদ, হস্তরেখাবিদ বোঝাতে এই ‘জান’ শব্দটি। ভবিষ্যৎ জানতে গেলে আগে ‘জান’-এর বাড়ি যাওয়ার চল ছিল। ধর্মতলা ও চৌরঙ্গির পাশে চৌরঙ্গি বংশীয় তেজস্বী যোগীপুরুষের বসবাসের কথা কলকাতার পুরনো ইতিহাসেই আমরা পাই৷ ধর্মতলা-চৌরঙ্গির পাশেই জানবাজার। জানবাজার অতীতে যে গণক তথা হস্ত রেখাবিদদের আস্তানা ছিল বলে জানা যায়।

আরও একটি মত অনুযায়ী, ‘জান’ অর্থে যে আগে স্ত্রীলোক, বারবধূ বা বাইজিদেরও বোঝানো হত। ‘জান’ কথাটির মধ্যে মুসলমান বাদশাহদের হারেমের সুর শোনা যায়৷ বেগমজান, মালকাজান, আর গওহরজান ইত্যাদি । গওহরজান হলেন প্রথম গ্রামোফোন রেকর্ডের মালিক তাঁর প্রথম বাড়িটি নাখোদা মসজিদের পাশে হলেও দ্বিতীয় বাড়িটি ছিল জানবাজারের কাছাকাছি অঞ্চলেই। সেখান থেকেও নামকরণটি আসতে পারে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ থেকে চৌরঙ্গী থেকে সার্কুলার রোড (অধুনা আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড) পর্যন্ত এক মাইল দীর্ঘ এই রাস্তাটির নাম ছিল জানবাজার রোড। পরে এটির নাম হয় কর্পোরেশন স্ট্রিট। বর্তমানে এই রাস্তাটির নাম সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি রোড।
ইতিহাস বলছে ১৭৮৫ সালে প্রথম যখন কলকাতা শহরকে ৩১টি থানায় বিভক্ত করা হয়েছিল, তখন জানবাজার ছিল কলকাতার অন্যতম থানা। পলাশীর যুদ্ধের পর ১৭৫৮ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় এবং দুর্গ তৈরীর জন্য গোবিন্দপুর অঞ্চলটিকে ঠিক করা হলে, সেই অঞ্চলের বাসিন্দাদের সুতানুটিতে সরিয়ে দেওয়া হয়। কলকাতার ইউরোপীয় বসতি পুরনো এলাকার গণ্ডী ছাড়িয়ে ময়দান এলাকার আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে ফলে নতুন দুর্গের ভিতর সাধারণ নাগরিকদের বসবাস নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। তবে লালদিঘির দক্ষিণ ও চৌরঙ্গী রোডের পূর্ব দিকের অংশটিতে ইংরেজ বসতি প্রসারিত হয়। সেই সময় থেকে সুতানুটি “ব্ল্যাক টাউন” অর্থাৎ ভারতীয়দের বসতি, এসপ্ল্যানেড ও চৌরঙ্গী “হোয়াইট টাউন” অর্থাৎ শ্বেতাঙ্গদের বসতি নামে পরিচিতি লাভ করে।জানবাজার এলাকার প্রধান দর্শনীয় স্থান রানি রাসমণির বাসভবনটি,  দক্ষিণেশ্বর কালীবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

 

8 comments

আপনার মতামত জানান