ক্ষুদিরামের ফাঁসির চাক্ষুস বর্ণনা

ক্ষুদিরামের উকিল কালিদাসবাবুর ১১ আগস্টে ক্ষুদিরামের ফাঁসির চাক্ষুস বর্ণনা :

১১ আগস্ট ফাঁসির দিন ধার্য হইল । আমরা দরখাস্ত দিলাম যে , ক্ষুদিরামের ফাঁসির সময় উপস্থিত থাকিব এবং তাহার মৃতদেহ হিন্দুমতে সৎকার করিব । উডম্যান সাহেব আদেশ দিলেন দুজন মাত্র বাঙালি ফাঁসির সময় উপস্থিত থাকিবে , তার শববহন করিবার জন্য বারোজন এবং শবের অনুগমনের জন্য বারোজন থাকিবে । ইহারা কর্তৃপক্ষের নির্দিষ্ট রাস্তা দিয়া শ্মশানে যাইবে ।

ক্ষুদিরামের ফাঁসির চাক্ষুস বর্ণনা

ভোর ছয়টায় ফাঁসি হইবে । পাঁচটার সময় আমি খাটিয়াখানি ও সৎকারের বস্ত্রাদি লইয়া জেলের ফটকে উপস্থিত হইলাম । দেখিলাম নিকটবর্তী রাস্তা লোকারণ্য , ফুল লইয়া বহু লোক দাঁড়াইয়া আছে । সহজেই আমরা জেলের ভিতর প্রবেশ করিলাম । ঢুকিতেই এক পুলিশকর্মী প্রশ্ন করিল – বেঙ্গলী কাগজের সংবাদদাতা কে ? আমি উওর দিলে হাসিয়া বলিলেন যান ভিতরে । জেলের আঙিনায় প্রবেশ করে আমরা দেখিলাম , ডান দিকে একটু দূরে ১৫ ফুট উঁচুতে ফাঁসির মঞ্চ । দুই দিকে দুটি খুঁটি আর একটা মোটা লোহার রড , তারই মধ্যস্থানে বাঁধা মোটা একগাছি দড়ি , শেষপ্রান্তে একটি ফাঁস । একটু অগ্রসর হতেই দেখিলাম চারজন পুলিশ ক্ষুদিরামকে নিয়ে আসছেন । ক্ষুদিরাম আগে আগে দ্রুত পদে আসিয়া যেন পুলিশগুলোকে টেনে আনছেন । আমাদের দেখিয়া ক্ষুদিরাম হাসিল । তারপর দৃঢ়ভাবে মঞ্চের দিকে অগ্রসর হইল । মঞ্চে উপস্থিত হইলে তাহার হাত দুখানি পিছন দিকে আনিয়া দড়ি দিয়ে বাধা হইল । একটি সবুজ রঙের পাতলা টুপি দিয়ে তাহার গ্রীবামূল অবধি ঢাকিয়া গলায় ফাঁসি লাগাইয়া দেওয়া হইল । ক্ষুদিরাম সোজা হয়ে দাঁড়াইয়া রহিল । উডম্যান সাহেব ঘড়ি দেখে একটি রুমাল উড়াইয়া দিলেন । একজন প্রহরী মঞ্চের অন্য প্রান্তে একটি হ্যান্ডেল টানিয়া দিল । ক্ষুদিরাম নীচে অদৃশ্য হয়ে গেল । কেবল কয়েক সেকেন্ড ধরিয়া উপরের দড়িটি নড়িতে লাগিল । তারপর সব স্থির । আধঘন্টা পর দুজন বাঙালি ডাক্তার আসিয়া খাটিয়া ও নতুন বস্ত্র নিয়ে গেল। নিয়ম অনুসারে ফাঁসির পর গ্রীবার পশ্চাদদিক অস্ত্র করিয়া দেখা হয় , পড়বার পর মৃত্যু হইল কিনা । ডাক্তার সেই অস্ত্র করা স্থান সেলাই করিয়া , ঠেলিয়া বাহির হওয়া জিহ্বা ও চক্ষু যথাস্থানে বসিয়া, নূতন কাপড় পড়াইয়া জেলের বাহিরে আনিলেন ।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

9 comments

    1. ওয়েব সাইটের সুরক্ষার জন্য সাইটে কপি, পেস্ট বন্ধ করে রাখা আছে। কমেন্ট বক্সে ক্লিক করলে ইউনিজয়, অভ্র ফোনেটিক ও ইংরাজি অপশন আসে। অভ্র বেছে নিয়ে আপ্নি সরাসরি বাংলায় কমেন্ট করতে পারেন – যেভাবে আমরা করছি। পড়তে থাকুন আর আমাদের জানাতে থাকুন কেমন লাগছে।

    1. ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিতদের থেকে এর বেশি কি আশা করা যায়! ইদানিং কিছু পাঠ্য বইয়েও ওনাকে সন্ত্রাসবাদী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এর থেকে দুঃখজনক সত্যিই কিছু হয় না।

    1. ক্ষুদিরাম বসু ফাঁসির মঞ্চে উঠে গান গেয়েছিলেন এটি অতিরঞ্জিত ঘটনা। আসলে, তাঁর মৃত্যুবরণকে শ্রদ্ধা জানিয়ে পীতাম্বর দাস (মতান্তরে চারণ কবি মুকুন্দ দাস) গানটি গেয়েছিলেন।
      এরকমই বিভিন্ন সঠিক তথ্য বাংলা ভাষায় পড়তে নিয়মিত চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে।

আপনার মতামত জানান