মকবুল ফিদা হুসেন

মকবুল ফিদা হুসেন

ভারতীয় চিত্রকলা যাঁদের হাত ধরে বিশ্বের দরবারে সসম্মানে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, মকবুল ফিদা হুসেন (Maqbool Fida Husain) ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই শিল্পী বিচিত্র রঙে বর্ণনামূলক চিত্রকর্ম সম্পাদনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন। এই ধরনের চিত্রশিল্প নির্মাণে তিনি বিশ্বশিল্পের বিশিষ্ট কিউবিস্ট শৈলীকে একটু পরিবর্তিত পদ্ধতিতে ব্যবহার করেছিলেন। ‘বম্বে প্রগ্রেসিভ আর্টিস্টস গ্রুপ’-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন মকবুল। ১৯৪০-এর দশকে ভারতীয় আধুনিকতার ধারার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত মকবুল ফিদা হুসেনের ছবিতে উঠে এসেছে কখনও মহাত্মা গান্ধী, মাদার টেরেসা, রামায়ণ, মহাভারতের মতো বিষয়, কখনও আবার ভারতীয় শহর এবং গ্রামজীবনের খুঁটিনাটি বৈচিত্র্যময় বিষয় ফুটে উঠেছে তাঁর রঙ-রেখার আঁচড়ে। পোস্ট-ইম্প্রেশনিজ্‌ম, কিউবিজ্‌ম এবং এক্সপ্রেশনিজ্‌মের মতো আন্দোলনের প্রভাব স্পষ্টত লক্ষ্য করা যায় মকবুলের ক্যানভাসে। বলিউডের হিন্দি চলচ্চিত্রের পোস্টার অঙ্কনের কাজও করেছিলেন তিনি এবং নিজে চলচ্চিত্র পরিচালনাও করেছিলেন।

১৯১৫ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মহারাষ্ট্রের পান্ধারপুরে এক সুলায়মানি ইসলামিক পরিবারে চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হুসেনের জন্ম হয়। মকবুলের যখন দেড় বছর বয়স তখন তাঁর মা জুনাইব হুসেনের মৃত্যু হয়। মকবুলের বাবা ফিদা হুসেন পুনর্বিবাহ করেন ফিদা শিরিনকে এবং সপরিবারে তাঁরা ইন্দোরে চলে আসেন। তাঁর শৈশব ও কৈশোরের অধিকাংশ সময় কেটেছিল সেখানেই। ঠাকুরদার সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল মকবুলের, তাঁর কাছ থেকেই চিত্রশিল্পের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয় তাঁর। দশ বছর বয়সেই তাঁর ঠাকুরদার মৃত্যু হয়। বাড়িতে অযত্নের কারণে সাত-আট বছর বয়স থেকে অধিকাংশ সময়ই মকবুল রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন। ১৯৪১ সালে মকবুল বিবাহ করেন ফজিলা বিবিকে। বিবাহের এক বছরের মধ্যেই তাঁদের প্রথম সন্তান শাফাতের জন্ম হয় এবং তারপরে আরো ছয় সন্তানের জন্ম হয়েছিল তাঁদের।

গুজরাটের সিধপুরে মকবুলের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়েছিল। তারপর বরোদার এক ইসলামিক বোর্ডিং স্কুল দারুল তালাবায় পড়াশোনার জন্য ভর্তি হন তিনি। সেখানেই ক্যালিগ্রাফির সঙ্গে পরিচিত হন মকবুল। এই ক্যালিগ্রাফির প্রতি আকর্ষণ তাঁকে ক্রমে চিত্রশিল্পের প্রতি আগ্রহী করে তোলে এবং তিনি একজন শিল্পী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেসময় ক্যালিগ্রাফির পাশাপাশি মকবুল ‘কুলফিক খাত’ নামে এক ধরনের নান্দনিক আরবি হরফ লেখার অনুশীলন করেছিলেন। তখন কবিতা লেখার চর্চাও করতেন তিনি এবং নিয়মিত ইংরেজি সাহিত্যও পাঠ করতেন।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

ইন্দোরে থাকাকালীন মকবুল ‘ইন্দোর স্কুল অফ আর্টস’-এ ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু অল্প সময় এখানে কাটানোর পর ডিপ্লোমা সমাপ্ত না করেই তিনি চলে যান। ১৯৩৪ সালে নিজের আঁকা ছবি রাস্তায় দশ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতে শুরু করেন তিনি। এরপর বম্বের ‘স্যার জে. জে স্কুল অফ আর্ট’-এ চিত্রশিল্পের অধ্যয়নের জন্য যোগদান করেন তিনি, কিন্তু ইতিমধ্যে তাঁর বাবার চাকরি চলে যাওয়ায় আর্থিক অনটনের কারণে এই পড়াশোনাতেও ব্যাঘাত ঘটে। ১৯৩৫ সালে পুনরায় বম্বেতে ফিরে আসেন তিনি। এই নতুন শহরে তাঁর প্রথম কয়েক বছর খুবই কঠিন অবস্থার মধ্যে দিয়ে কেটেছিল। দারিদ্র্য এবং একাকিত্বের সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাঁকে। ১৯৩০-এর দশকের গোড়ার দিকে প্রতি বছর প্রায় ২০০টির মতো হিন্দি চলচ্চিত্র তৈরি হত, সে কারণে চলচ্চিত্রের বিজ্ঞাপনের জন্য উচ্চমানের চিত্রশিল্পীর খুব প্রয়োজন ছিল তখন।

বম্বের ফিল্ম ইণ্ডাস্ট্রিতে বিলবোর্ড এবং পোস্টার অঙ্কনের কাজ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন মকবুল ফিদা হুসেন । সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ায় অতিরিক্ত উপার্জনের জন্য তিনি ১৯৪১ সালে একটি খেলনার দোকানে খেলনা এবং শিশুদের নার্সারির আসবাব ডিজাইন করবার কাজ করতে শুরু করেন। এইসময় মাঝেমাঝে ল্যাণ্ডস্কেপ আঁকার জন্য তিনি বরোদা, সুরাট, আহমেদাবাদ ভ্রমণ করতেন। ১৯৪০-এর দশকের শেষের দিকে শিল্পী হিসেবে অল্প অল্প করে পরিচিতি পেতে শুরু করছিলেন মকবুল। শিল্পী হিসেবে মকবুল প্রথম বড় রকম সাফল্যের স্বাদ পান যখন ১৯৪৭ সালে ‘বম্বে আর্ট সোসাইটি’তে তাঁর ছবির প্রদর্শনী হয় এবং সেখানে তিনি একটি পুরস্কার জেতেন। সেসময় অনেকেরই নজরে পড়েন মকবুল। সেবছরই ভারত স্বাধীনতা লাভ করে এবং ফলস্বরূপ ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের ঘটনা মকবুলের কর্মজীবনে গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করে।  সেই সময় মকবুল হুসেন এবং একদল তরুণ শিল্পী ‘বেঙ্গল স্কুল অফ আর্ট’ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী ঐতিহ্যকে ভাঙতে চেষ্টা করেন। নতুন ভারতের জন্য শিল্পের নতুন শৈলীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল শিল্পীদের।  তাঁরা চেয়েছিলেন ভারতীয় শিল্পকে আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নীত করে পাশ্চাত্য শিল্পের ধারার সঙ্গে মেশাতে। এই ভাবনার বীজ থেকেই ১৯৪৭ সালেরই ডিসেম্বর মাসে ‘বম্বে প্রগ্রেসিভ আর্টিস্ট গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ফ্রান্সিস নিউটন সুজা। মকবুল ফিদা হুসেন এই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। এই গোষ্ঠীতে যোগদানের ফলে তিনি জার্মান অভিব্যক্তিবাদী এমিল নোল্ড এবং অস্ট্রিয়ান শিল্পী অস্কার কোকোস্কার ছবি দ্বারা প্রভাবিত হন। ১৯৪৯ সালে ‘বম্বে প্রোগ্রেসিভ আর্টিস্ট গ্রুপ’-এর সম্পাদকের দায়িত্ব সামলেছিলেন মকবুল।

১৯৫০ সালে বম্বেতে মকবুল ফিদা হুসেন তাঁর প্রথম প্রদর্শনী করেছিলেন। ১৯৫৪ সালে নতুন দিল্লির মর্যাদাপূর্ণ চারুকলা অ্যাকাডেমি, ললিত কলা অ্যাকাডেমিতে যোগদানের জন্য মনোনীত হন তিনি। পরের বছর ১৯৫৫ সালে বাংলার দুর্ভিক্ষের প্রেক্ষিতে মানুষের অবস্থার পটভূমিতে অঙ্কিত তাঁর ছবি ‘দ্য ল্যাণ্ড’ বা ‘জমিন’ জাতীয় ললিত কলা অ্যাকাডেমি পুরস্কার অর্জন করে। ১৯৫০-৬০ দশকের ছবিগুলিতে মকবুল ভারতীয় আধুনিকতার প্রবণতাকে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন। একদিকে যেমন ইউরোপীয় আধুনিকতাবাদ থেকে উদ্ভূত কিউবিস্ট শৈলীকে গ্রহণ করেছিলেন তিনি, তেমনি অন্যদিকে তাঁর রামায়ণ, মহাভারতের মতো পৌরাণিক ছবি, রাজনীতি ও ইতিহাসকেন্দ্রিক ছবিগুলি দেখলে বোঝা যায় ভারতের মাটির সঙ্গে তাঁর কী গভীর সম্পর্ক। ১৯৫৪ সালে তিনি তাঁর বিখ্যাত ছবি ‘প্যাসেজ অব টাইম’ অঙ্কন করেছিলেন। ঘোড়াকে অবলম্বন করে আঁকা ছবির সূচনা এই সময় থেকেই। ১৯৬৩ সালে প্রথম জওহরলাল নেহেরুর প্রতিকৃতি আঁকেন তিনি। এছাড়াও মহাত্মা গান্ধী, মাদার টেরেসা যেমন তাঁর ছবির বিষয় হয়েছে, ব্রিটিশ ভারতে বেড়ে ওঠা মকবুলের ক্যানভাসে ব্রিটিশ রাজের চিত্রও ফুটে উঠেছে রঙে-রেখায়। আরও কয়েকটি ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘বিশ্বামিত্র’ (১৯৭৩) এবং ‘প্যাসেজ থ্রু হিউম্যান স্পেস’।

পশ্চিমি আধুনিকতাকে আরও গভীরভাবে বোঝার জন্য ১৯৫০-এর দশকের গোড়ার দিকে তিনি প্রথমবারের মতো ইউরোপে যান এবং খালি পায়ে গ্র্যাণ্ড ট্যুর করেন। ১৯৫২ সালেই জুরিখে তাঁর প্রথম একক প্রদর্শনীও করেন। ইউরোপে থাকাকালীন তিনি পিকাসো, মাতিস এবং পল ক্লির মতো বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। ভারতীয় দর্শন সম্পর্কে পল ক্লির জ্ঞান তাঁকে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছিল। চিনেও ভ্রমণ করেছিলেন মকবুল এবং সেখানকার জু বেইহং-এর অভিব্যক্তিবাদী ঘোড়ার চিত্রগুলি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। ১৯৫৯ সালে আমেরিকা সফরের সময় বিমূর্ত অভিব্যক্তিবাদের সাথে তাঁর পরিচয় শুরু হয়। ১৯৫০-এর দশকে মকবুল আন্তর্জাতিকভাবে প্যারিস, প্রাগ এবং ভেনিসে তাঁর চিত্রপ্রদর্শনী করেন। ১৯৬০-এর দশকে তিনি ফ্রাঙ্কফুর্ট, টোকিও, রোম, বাগদাদ, কাবুল, নিউ ইয়র্ক এবং ঘেন্ট-এ একক প্রদর্শনী করেন। ১৯৬৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর প্রথম প্রদর্শনী হয়েছিল নিউইয়র্ক হাউসে। তিনি টোকিও, বার্লিন এবং সাও পাওলো সহ প্রধান আন্তর্জাতিক দ্বিবার্ষিকীগুলিতে বিশেষ স্বীকৃতি পান। ১৯৭১ সালে সাও পাওলোর দ্বিবার্ষিক অনুষ্ঠানে মহাভারত সিরিজের কাজগুলি প্রদর্শন করেন তিনি কিন্তু সেই সিরিজটি এখনও পর্যন্ত ভারতে প্রদর্শিত হয়নি। এই সময়কালে মকবুল ‘ভারতের পিকাসো’ আখ্যা পান।

মকবুল হুসেনের বিস্তৃত শৈল্পিক অন্বেষণ চিত্রকর্ম, প্রিন্ট এবং অঙ্কনের বাইরে ফটোগ্রাফি, পাবলিক ম্যুরাল প্রজেক্ট এবং চলচ্চিত্র নির্মাণ সহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রসারিত। ‘বম্বে ফিল্ম ইণ্ডাস্ট্রি’র বিলবোর্ডের চিত্রকর হিসেবে প্রথম দিন থেকেই চলচ্চিত্রের প্রতি হুসেনের আগ্রহ শুরু হয়েছিল। ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে চলচ্চিত্র পরিচালনার জগতে প্রবেশ করেন তিনি। ১৯৬৭ সালে তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্র ‘থ্রু দ্য আইজ অফ আ পেইন্টার’ সমালোচক মহলে উচ্চ প্রশংসিত হয় এবং বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবে ‘গোল্ডেন বিয়ার পুরস্কার’ পায়। চলচ্চিত্রটি পরবর্তীকালে ১৯৬৮ সালে শ্রেষ্ঠ পরীক্ষামূলক চলচ্চিত্রের জন্য ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’-এও ভূষিত হয়েছে। পরবর্তীকালে আরও দুটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন তিনি। সেসময় বিখ্যাত অভিনেত্রী মাধুরী দীক্ষিত মকবুলের চোখে ছিলেন শিল্পীর কল্পনারী। মাধুরী দীক্ষিতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য অভিনেত্রীর ছবির একটি সিরিজ অঙ্কন করেছিলেন তিনি। ২০০০ সালে মাধুরী দীক্ষিতকে প্রধান চরিত্র করে মকবুল তৈরি করেছিলেন ‘গজ গামিনী’ সিনেমা। এই সিনেমায় কালিদাসের নারী অনুপ্রেরণা, মোনালিসা প্রভৃতির মাধ্যমে নারীত্বের বিভিন্ন রূপকে তুলে ধরেছিলেন তিনি। মাধুরী দীক্ষিত অভিনীত চলচ্চিত্র ‘মহব্বত’-এর একটি দৃশ্যেও উপস্থিত ছিলেন মকবুল। এরপর ২০০৪ সালে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিনেমা ‘মীনাক্ষী: আ টেল অফ থ্রি সিটিস’ তৈরি করেন মকবুল ফিদা হুসেন। অভিনেত্রী তাব্বু তাতে অভিনয় করেছিলেন। এই সিনেমার একটি গান নিয়ে কিছু মুসলিম সম্প্রদায় আপত্তি তুলেছিল। ধর্মে মুসলিম হলেও সাম্প্রদায়িকতাকে কখনও প্রশ্রয় দেননি মকবুল। কিন্তু তাঁর কিছু ছকভাঙা ছবির জন্য হিন্দুধর্মকে আঘাতের অভিযোগ করা হয়েছিল। ১৯৭০ সালে হিন্দু দেবী দুর্গা এবং সরস্বতীর নগ্নচিত্র অঙ্কন করেছিলেন মকবুল। এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ আটটি ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধে। মূলত ১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি এই ছবিগুলি নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক ও সমালোচনা শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলি ঘোষণা করেছিল নগ্ন হিন্দু দেবীদের চিত্র ধর্মীয় সংবেদনশীলতায় একপ্রকার আঘাত। বিভিন্ন মাসিক পত্রিকায় তাঁর এই ছবিগুলির সমালোচনা ছাপা হতে থাকে। ১৯৯৮ সালে মকবুলের বাড়িতে বজরং দলের মত হিন্দু মৌলবাদী গোষ্ঠী আক্রমণ করে এবং শিল্পকর্ম ভাঙচুর করে ও তাঁর অনেক ছবি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বিদ্রোহের জেরে ইংল্যাণ্ডে তাঁর একটি প্রদর্শনী বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে দুর্গা ও সরস্বতীর ছবি ঘিরে যে অশান্তি এবং অভিযোগ ২০০৪ সালে দিল্লি হাইকোর্ট তা খারিজ করে দেয়। ২০০৬ সালে তিনি যখন ভারতমাতার নগ্ন প্রতিকৃতি অঙ্কন করেন, তখন আবার অশান্তির আগুন জ্বলে ওঠে চারদিকে এবং পুনরায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ২০০৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট এই অভিযোগ খারিজ করে দেয়। এই ছবিটিই পরে ৮০ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়।

২০০৬ সালে বিতর্ক দানা বেঁধে উঠলে মকবুল স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান। সেসময় মূলত কাতারের রাজধানী দোহা এবং গ্রীষ্মকালে লণ্ডনে বসবাস করতেন তিনি। ২০০৮ সালে তাঁকে ভারতীয় ইতিহাসের ৩২টি বড় আকারের চিত্রকর্ম তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। মৃত্যুর আগে তিনি মাত্র আটটি সমাপ্ত করতে পেরেছিলেন। ২০০৮ সালে ক্রিস্টির নিলামে মকবুল ভারতের সর্বোচ্চ সাম্মানিকপ্রাপ্ত চিত্রশিল্পী নির্বাচিত হন। ২০১০ সালে তাঁকে কাতারের নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হলে তিনি তাতে সম্মত হন। কাতারের ফার্স্ট লেডি মোজাহ বিনতে নাসের আল মিসনেদের অনুমোদনে আরবের ইতিহাস বিষয়ে ছবি আঁকার কাজ করতে শুরু করেন মকবুল ফিদা হুসেন। কাজগুলি দোহার জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে।

১৯৮৬ সালে মকবুল রাজ্যসভার সদস্য হিসেবেও মনোনীত হয়েছিলেন। সারাজীবন নানা পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন তিনি। ১৯৬৬ সালে ভারত সরকার তাঁকে চতুর্থ বেসমারিক পুরস্কার ‘পদ্মশ্রী’ উপাধিতে সম্মানিত করে। ১৯৭৩ সালে তাঁকে ‘পদ্মভূষণ’ এবং ১৯৯১ সালে ‘পদ্মবিভূষণ’ সম্মানে ভূষিত করে ভারত সরকার। ২০০৭ সালে কেরালা সরকারের পক্ষ থেকে মকবুল ‘রাজা রবি বর্মা পুরস্কারে’ সম্মানিত হন। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়, মাইসোর বিশ্ববিদ্যালয়, কালিকটের জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় মকবুলকে সম্মানীয় ডক্টরেট উপাধি প্রদান করেছে।

লণ্ডনের রয়্যাল ব্রম্পটন হাসপাতালে ২০১১ সালের ৯ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৯৫ বছর বয়সে মকবুল ফিদা হুসেনের মৃত্যু হয়।

One comment

আপনার মতামত জানান