পরিবেশ রক্ষার জন্য অনেক সংস্থা যেমন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত তেমন কিছু কিছু মানুষ নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী সেই লড়াইকে এগিয়ে দিচ্ছে কয়েক ধাপ। ভারতীয় জনস্বার্থ আইনজীবী এবং পরিবেশকর্মী এম সি মেহতা তেমনই একজন মানুষ যিনি পরিবেশ রক্ষার্থে আইনি লড়াই লড়েছেন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। তিনি ‘গ্রিন অ্যাভেঞ্জার নামেও পরিচিত হয়েছেন সেই কারণে। তাজমহলের বিপজ্জনক অবস্থা নিয়ে যেমন সওয়াল করেছিলেন কোর্টে তেমনি কানপুর সংলগ্ন শিল্পাঞ্চলের কারণে গঙ্গার দূষণের প্রতিবাদেও লড়াই করেছিলেন আদালতে। তবে তাঁর কেরিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় মামলাটি হল ওলিয়াম গ্যাস লিক মামলা। দিল্লিতে অবস্থিত শ্রীরাম ফুড অ্যান্ড ফার্টিলাইজারস লিমিটেড কমপ্লেক্স থেকে ওলিয়াম গ্যাস লিক করলে ওই এলাকার মানুষ চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এম সি মেহতা শ্রীরাম ফুডস অ্যান্ড ফার্টিলাইজারস ইন্ডাস্ট্রিজের মালিকানাধীন বিভিন্ন শিল্প ইউনিটগুলিকে বন্ধ করার জন্য আদালতের কাছে রিট পিটিশন দায়ের করেন। শুরু হয় এম সি মেহতা বনাম ভারত মামলা ।
দিল্লির এক ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় দিল্লি ক্লথ মিলস লিমিটেডের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান শ্রীরাম ফুড অ্যান্ড ফার্টিলাইজারস লিমিটেড নামে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন একটি সারের কারখানা ছিল। সেখানে কস্টিক সোডা, ক্লোরিন, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড, স্টেবল ব্লিচিং পাউডার, সুপার ফসফেট, সাবান, সালফিউরিক অ্যাসিড, অ্যালাম অ্যানহাইড্রাস সোডিয়াম সালফেট, হাই-টেস্ট হাইপোক্লোরাইট ইত্যাদি রাসায়ানিক পদার্থ তৈরি হত। কারখানায় এইসব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার কারণে সেখান থেকে বিভিন্ন বিষাক্ত এবং পরিবেশ ও মানুষের জন্য বিপজ্জনক সব রাসায়ানিক বর্জ্য নির্গত হত। ১৯৪৯ সালে এই সংস্থার অধীনেই তৈরি হয়েছিল কস্টিক ক্লোরিন প্ল্যান্ট। ক্রমশই এই প্ল্যান্টের কর্মচারীদের স্বাস্থ্য এবং পার্শ্ববর্তী পরিবেশের অবস্থা উত্তরোত্তর খারাপ হতে শুরু করে। সেই কারণে সমাজকর্মী ও আইনজীবী এম সি মেহতা একবার সুপ্রিম কোর্টে সংবিধানের ধারা ২১ (ধারা ২১অনুযায়ী আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে তার জীবন বা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা হবে না।) এবং ৩২ (সাংবিধানিক প্রতিকারের অধিকার) এর উল্লেখ করে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেছিলেন শ্রীরাম কস্টিক ক্লোরিন এবং সালফিউরিক অ্যাসিড প্ল্যান্টকে অন্য কোনও জনবিরল এলাকায় স্থানান্তরিত করার আদেশ চেয়ে যাতে জনগণের স্বাস্থ্যের কোনও হানি না হয়। তবে এই পিটিশন মুলতুবি থাকাকালীনই ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর শ্রীরামের শিল্প ইউনিটগুলির একটি থেকে ওলিয়াম গ্যাস লিক হওয়ার ঘটনা ঘটে। এরফলে নিকটবর্তী জনবসতিতে আতঙ্ক ছড়ায়, পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে এবং তিস হাজারী আদালতে প্র্যাকটিসরত এক আইনজীবী এই বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে মারা যান। দুই দিন পর ৬ ডিসেম্বর পাইপের জয়েন্ট থেকে ওলিয়াম গ্যাসের আরেকটি ছোটখাটো লিকেজ ঘটে। সেই সময় এই ঘটনা ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার স্মৃতি উসকে দিয়েছিল।
দ্বিতীয় লিকেজের পর অবিলম্বে দিল্লির জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজদারি কার্যবিধির ১৩৩ ধারার উপধারা ১-এর অধীনে একটি আদেশ জারি করে শ্রীরামকে বিপজ্জনক এবং প্রাণঘাতী রাসায়নিক যথা ক্লোরিন, ওলিয়াম, সুপার ক্লোরিন ও ফসফেটের মতো গ্যাসের উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবসা বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। বলা হয় আদেশ জারি হওয়ার দুদিনের মধ্যে এটি পালন করতে হবে নতুবা, ১৭ ডিসেম্বর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে উপস্থিত হয়ে আদেশ কার্যকর না করার কারণ জানাতে হবে। এছাড়াও আদেশ দেওয়া হয়েছিল যে, দুই দিনের মধ্যে ইউনিটে ক্ষতিকারক রাসায়নিক ও গ্যাস ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং উল্লিখিত রাসায়নিকগুলিকে সাত দিনের মধ্যে একটি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে ফেলতে হবে।
এখন এই শিল্পসংগঠন নিয়ে কয়েকটি জরুরি পদক্ষেপের কথা এখানে বলে নেওয়া প্রয়োজন। ১৯৮৪ সালে ভোপাল গ্যাস বিপর্যয়ের পর, কেন্দ্রীয় সরকার শ্রীরামের মালিকানাধীন কস্টিক ক্লোরিন প্ল্যান্ট পরিদর্শন করার জন্য ‘টেকনিকা’ নামে একটি ফার্মকে নিযুক্ত করে। সেই ফার্ম সম্ভাব্য বিপজ্জনক ক্ষেত্রগুলিকে চিহ্নিত করে এবং সেগুলির উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন পাঠায় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। এই প্রতিবেদনের ফলস্বরূপ কস্টিক ক্লোরিন প্ল্যান্টটি পুনরায় পরিদর্শন করার জন্য মনমোহন সিং কমিটি নামে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। তারা বিভিন্ন নিরাপত্তা ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সুপারিশসহ প্লান্টটি বিশদে পরিদর্শনের পর একটি প্রতিবেদন জমা দেয়।
১৯৮৫ সালের ৭ ডিসেম্বর রিট পিটিশনগুলি` শুনানির জন্য নেওয়ার আগে কস্টিক ক্লোরিন প্ল্যান্টের পরিদর্শন করার জন্য এবং মনমোহন সিং কমিটির করা সুপারিশগুলি যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করার জন্য নিলয় চৌধুরী কমিটি নামে বিশেষজ্ঞদের একটি দল নিযুক্ত করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। তারা মৌখিকভাবে রিপোর্ট করেছিল যে বেশিরভাগ সুপারিশগুলি প্ল্যান্টের ব্যবস্থাপনার দ্বারা বাস্তবায়িত হয়েছিল এবং বিপদের প্রধান উৎস ক্লোরিনের দুটি ট্যাঙ্ক খালি ছিল।
১৯৮৫ সালের ৭ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টে শুনানির সময় দিল্লির কারখানা পরিদর্শক কারখানা আইন ১৯৪৮-এর ধারা ৪০(২)-এর অধীনে প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করেন এবং শ্রীরামকে কস্টিক ক্লোরিন এবং সালফিউরিক উভয়েরই ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন। এরপর ২৪ ডিসেম্বর সহকারী কমিশনার একটি আদেশের মাধ্যমে শ্রীরামকে কস্টিক ক্লোরিন প্ল্যান্ট সম্বলিত প্রাঙ্গণটি শিল্পজাত পণ্যের উৎপাদনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
এই মামলায় মূলত আদালতের সামনে যে প্রশ্ন ও সমস্যাগুলি উত্থাপিত হয়েছিল সেগুলি হল – মাননীয় আদালতের বর্তমান বিষয়টি শুনানির সুযোগ ও এক্তিয়ার আছে কি না? কস্টিক ক্লোরিন এবং ওলিয়াম তৈরির কাজ শ্রীরামকে পুনরায় চালু করার অনুমতি দেওয়া উচিত কিনা, কারণ সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকি রয়েছে এবং তা ২১ ধারা লঙ্ঘন হবে কিনা! ওলিয়াম গ্যাস লিক ট্র্যাজেডির ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে কি না। যদি হয়, তবে স্বাস্থ্যহানিকর বিপজ্জনক শিল্প উৎপাদনকারী ইন্ডাস্ট্রির দায় পরিমাপ কীভাবে করা হবে? এই ধরনের বড় উদ্যোগগুলিকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া উচিত কিনা এবং যদি তাদের কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে আশেপাশে বসবাসকারী শ্রমিক সম্প্রদায়ের জীবনের ঝুঁকি কমাতে কী ব্যবস্থা বা নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত?
আবেদনকারী অর্থাৎ এম সি মেহতার তরফে বেশ কিছু কঠোর যুক্তি ছিল। এম সি মেহতা, সুপ্রিম কোর্টের অনুমতির ভিত্তিতে আগরওয়াল কমিটি নামে বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি গঠন করেন এবং শ্রীরামের কস্টিক ক্লোরিন প্ল্যান্ট পরিদর্শন করেন। এই কমিটি প্ল্যান্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় একাধিক গলদ খুঁজে পেয়েছিল এবং তাদের মতামত ছিল যে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় প্ল্যান্টের অবস্থানের কারণে বিপদগুলি সম্পূর্ণ নির্মূল করা অসম্ভব। আবেদনকারী দাবি করেছিলেন যে শ্রীরাম প্ল্যান্টকে স্থায়ীভাবে বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া উচিত কারণ এটি সংবিধান বর্ণিত ২১ ধারা দ্বারা সুরক্ষিত মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে এবং কাছাকাছি বসবাসকারী সম্প্রদায়ের জীবন ও স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। সংবিধানে সরাসরি উল্লেখ না থাকলেও সুস্থ পরিবেশ ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশের অধিকার জীবনের অধিকারের মধ্যে নিহিত রয়েছে। এম সি মেহতা বলেন, কস্টিক ক্লোরিন প্ল্যান্টকে পুনরায় চালু করার অনুমতি দেওয়া উচিত নয় কারণ সমস্ত সুপারিশ সত্ত্বেও আশেপাশে বসবাসকারী মানুষের জন্য বিপদের একটি উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা সবসময় থাকবে। তিনি জানান, পর্যাপ্ত এবং দক্ষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা সত্ত্বেও এই ঝুঁকি সম্পূর্ণরূপে অপসারণ করা যাবে না। বিশেষজ্ঞ কমিটির সাধারণ মতামত অনুসারে, যদি মানুষের জীবনের ঝুঁকি দূর করতে হয় তবে কস্টিক ক্লোরিন প্ল্যান্টের স্থানান্তরই একমাত্র দীর্ঘমেয়াদী সমাধান।
শ্রীরাম প্ল্যান্টের কাছেও তাদের নিজস্ব কিছু যুক্তি ছিল। প্রাথমিকভাবে করা রিট পিটিশনে ক্ষতিপূরণের দাবি না থাকায় আদালতের এই সাংবিধানিক বিষয়গুলির সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অগ্রসর হওয়া উচিত নয় বলে দাবি করে একটি প্রাথমিক আপত্তি উত্থাপন করেছিল বিরোধীরা। আবেদনকারী ক্ষতিপূরণের দাবি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য রিট পিটিশনের সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারতেন কিন্তু সংশোধনের জন্য এই ধরনের কোনো আবেদন করা হয়নি। এছাড়াও লোকহিত কংগ্রেস ইউনিয়ন এবং কর্মচারি একতা ইউনিয়নের কৌঁসুলি জানায়, প্ল্যান্টটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার ফলে প্রায় ৪,০০০ শ্রমিক বেকার হবে। শ্রীরাম ফ্যাক্টরির তরফ থেকেও আদালতের কাছে শ্রীরামকে কস্টিক ক্লোরিন প্ল্যান্টে পুনরায় কাজ শুরু করার অনুমতি দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয় কারণ তারা বলে, সমস্ত সম্ভাব্য পদক্ষেপ এবং সুরক্ষার ব্যবস্থা তারা গ্রহণ করেছে এবং মনমোহন সিং কমিটি এবং নিলয় চৌধুরী কমিটি উভয়ের দ্বারা করা সমস্ত সুপারিশ বাস্তবায়িত করেছে।
দীর্ঘ সওয়াল জবাবের পর এই মামলা থেকে উত্থাপিত প্রতিটি প্রশ্নের যুক্তিসঙ্গত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করে রায় ঘোষণা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রথমে তিনজন নিয়ে গঠিত বেঞ্চের থেকে মামলাটি পাঁচজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চের হাতে হস্তান্তরিত হয়৷ তিন বিচারপতির বেঞ্চের কাছে ক্ষতিপূরণের জন্য প্রদত্ত আবেদনগুলি দ্বারা কয়েকটি সাংবিধানিক সমস্যা উদ্ভূত হয়। এই ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদনগুলি যখন শুনানির জন্য এসেছিল তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে মামলাটি পাঁচজন বিচারপতির একটি বৃহত্তর বেঞ্চের কাছে পাঠানো উচিত কারণ উত্থাপিত সমস্যাগুলির মধ্যে সংবিধানের ২১ এবং ৩২ অনুচ্ছেদে বর্ণিত আইনের উল্লেখযোগ্য প্রশ্নগুলি জড়িত।
শ্রীরামের কস্টিক ক্লোরিন প্ল্যান্ট পুনরায় চালু করার অনুমতি দেওয়া উচিত কি না এই প্রশ্নে, আদালত আগে গঠিত বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামতের উল্লেখ করেছে। কমিটিদের মতামতে প্রভেদ থাকলেও শ্রীরাম প্ল্যান্টটি জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে অন্যত্র স্থানান্তরের বিষয়ে সকলেই একমত ছিল। আদালত ঝুঁকির কারণগুলি দূর করার জন্য এই ধরনের বিপজ্জনক শিল্পের অবস্থানের জন্য একটি জাতীয় নীতি তৈরি করতে সরকারকে নির্দেশ দেয়। তবে যেহেতু শ্রীরাম ফ্যাক্টরি পরে তিনটি বিশেষজ্ঞ কমিটির সমস্ত সুপারিশ বাস্তবায়িত করেছে ফলে কর্মচারী এবং নিকটবর্তী জনসম্প্রদায়ের জন্য আসন্ন বিপদের সম্ভাবনা প্রায় শূন্য থাকার কারণে কস্টিক ক্লোরিন প্ল্যান্ট পুনরায় চালু করা যেতে পারে বলে জানিয়েছিল আদালত। প্ল্যান্টটি বন্ধ হওয়ার কারণে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে, সেটিও আদালত বিবেচনা করেছিল। আদালত অন্যদিকে সেন্ট্রাল ওয়াটার বোর্ডকে দায়িত্ব দিয়েছিল কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য যা জলে মেশে, সেই বর্জ্যের মান পরীক্ষা করা এবং মান যদি আদালতের আদেশ অনুযায়ী পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক হয় তবে বোর্ডের উচিত আদালতকে সে বিষয়ে জানানো। রিপোর্ট অনুযায়ী শ্রীরামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একইভাবে, শ্রীরাম প্ল্যান্ট চত্বরে অবস্থিত গাছগুলি বায়ু দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৮১- এর ধারা ১৯(১) এর অধীনে কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা বিজ্ঞাপিত বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ এলাকায় অবস্থিত ছিল। তাই প্ল্যান্ট চালানোর জন্য শ্রীরাম প্ল্যান্টটিকে আইনের ধারা ২১-এর অধীনে সম্মতির আদেশের জন্য আবেদন করতে হয়েছিল। শ্রীরাম প্ল্যান্ট সেই সময়ে আদালত নির্দেশিত সম্মতি আদেশে উল্লিখিত সমস্ত শর্ত মেনে চলে। যাইহোক, আদালত বোর্ডকে সম্মতি আদেশের কোনো লঙ্ঘন খুঁজে পেলে শ্রীরামের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিল।
অবশেষে ১৯৮৬ সালে প্রদত্ত রায়ে, সুপ্রিম কোর্ট শ্রীরামকে কস্টিক ক্লোরিন প্ল্যান্ট চালু করার জন্য অনুমতি দেয় তবে সেইসঙ্গে দিয়েছিল কিছু কঠোর শর্তও। আদালত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছিল যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে পাক্ষিক দুইবার নজরদারি করতে হবে এবং তারপর আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। আদালত শ্রীরামকে বিশেষজ্ঞ কমিটির বিভিন্ন খরচ বাবদ ত্রিশ হাজার টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। আদালত শ্রীরামকে প্ল্যান্টের নিরাপত্তা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করার জন্য একজন প্ল্যান্ট অপারেটরকে নিযুক্ত করার নির্দেশ দেয়। ভবিষ্যতে আর কোন দুর্ঘটনা ঘটলে অপারেটরকে ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করা হবে। শ্রীরাম সঠিকভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়মগুলি অনুসরণ করছে কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য কেন্দ্রীয় বোর্ডকে আরও একজন সিনিয়র অফিসারকে নিযুক্ত করতে বলে আদালত। শ্রীরামের দুটি ট্রেড ইউনিয়ন, অর্থাৎ লোকহিত কংগ্রেস ইউনিয়ন এবং কর্মচারি একতা ইউনিয়নকে প্ল্যান্টের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করার জন্য প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে তিনজন প্রতিনিধি নিয়ে একটি কমিটি গঠন করতে বলা হয়।
আদালত দুর্ঘটনাজনিত লিকেজের ক্ষেত্রে স্থানীয় মানুষকে সতর্ক করার জন্য কারখানার চত্বরে লাউডস্পিকার স্থাপনের নির্দেশ দেয়। কস্টিক ক্লোরিন প্ল্যান্টের কর্মচারীদের শিক্ষিত এবং সঠিকভাবে প্ল্যান্টের কার্যকারিতা এবং লিকেজ হওয়ার সময়ে নেওয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। আদালত শ্রীরামকে ওলিয়াম গ্যাস লিকেজের ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের জন্য কুড়ি লাখ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
এই যুগান্তকারী মামলার পরে সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে বিভিন্ন পরিবেশগত সমস্যা যেমন দূষণ, পরিবেশের ক্ষতি এবং পরিবেশ সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যার ক্ষেত্রে যথাযথ মনোযোগ দিয়ে মোকাবেলা করার জন্য আঞ্চলিকভাবে পরিবেশ আদালত গঠন করার নির্দেশ দেয়। এনভায়রনমেন্টাল কোর্টে একজন পেশাদার বিচারক এবং “ইকোলজিক্যাল সায়েন্সেস রিসার্চ গ্রুপ” থেকে বিচারককে মামলার বিচারে সহায়তা করার জন্য দুইজন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ থাকতে হবে বলে জানায় আদালত।