প্রতি বছর প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশে কিছু দিবস পালিত হয়। ওই নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। পালনীয় সেই সমস্ত দিবস গুলির মধ্যে একটি হল জাতীয় ক্যানসার সচেতনতা দিবস (National Cancer Awarness Day)।
প্রতি বছর ৭ নভেম্বর জাতীয় ক্যানসার সচেতনতা দিবস সারা ভারত জুড়ে পালিত হয়। ৭ নভেম্বর প্রখ্যাত বিজ্ঞানী মাদাম কুরির জন্মদিন। তিনি নিউক্লিয়ার থেরাপি এবং রেডিও থেরাপি নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন যার ফলে কর্কট রোগ চিকিৎসায় অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। তাই তাঁর সেই অবদানকে মনে রেখেই এই সচেতনতামূলক দিবস উদযাপন করা হয়। এই দিনটি উদযাপনের মাধ্যমে ক্যান্সার নামক মারণ রোগটি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হয়। মাদাম কুরি রেডিয়াম এবং পোলোনিয়াম আবিষ্কার করেছিলেন। এই দুটিকে কর্কট রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বড় হাতিয়ার হিসেবে গণ্য করা হয়। ২০১৪ সালে ভারতের তৎকালীন স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডঃ হর্ষবর্ধন এই দিনটির ঘোষণা করেন। সেই বছর থেকে এই দিনটি পালিত হয়ে আসছে।
ক্যান্সার একটি মারণ রোগ। এখন প্রায় প্রতিটি ঘরেই কারোর না কারোর ক্যান্সার হয়। প্রথম পর্যায় এই রোগটি ধরা পড়লে এর অনেক চিকিৎসা ব্যবস্থা আছে যার দ্বারা এর থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু শেষ পর্যায়ে ধরা পড়লে ক্যান্সার প্রাণনাশক হয়ে দাঁড়ায়। তাই এই রোগটি সম্পর্কে মানুষের সচেতন হওয়া খুবই প্রয়োজন। মানুষকে এই রোগটি সম্পর্কে সচেতন করা এবং শিক্ষিত করে তোলার জন্য জাতীয় ক্যানসার সচেতনতা দিবস বিশেষ ভাবে পালিত হয়। সমীক্ষা অনুযায়ী ভারতে প্রতি বছর প্রায় ১.১ মিলিয়ন মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রেই শেষ পর্যায় রোগটি ধরা পড়ে। দেরিতে চিকিৎসা শুরু হওয়ার ফলে রোগীর বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কমে যায়। সমীক্ষা বলছে যে ভারতে প্রতি ৮ মিনিটে একজন করে সার্ভিকাল ক্যান্সারে (cervical cancer) আক্রান্ত মহিলার মৃত্যু হচ্ছে। এছাড়াও তামাক জাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার এই দেশে খুবই বেশি। ২০১৮ সালের একটি সমীক্ষা বলছে তামাক সেবনের ফলে সেই বছর ভারতে প্রায় গড়ে ৩১৭৯২৮ নারী ও পুরুষ ক্যান্সার হয়ে মারা যায়। মুখের ক্যান্সার (oral cancer) ও ফুসফুসের ক্যান্সারের ফলে প্রায় ২৫ শতাংশ পুরুষের মৃত্যু হয় এবং স্তন ক্যান্সার (brest cancer) ও দাঁতে ক্ষয়ের (oral cavity) জন্য প্রায় ২৫ শতাংশ নারীর মৃত্যু হয়।
একটি সমীক্ষা বলছে যে তামাক সেবনের ফলে প্রায় ১৪ রকমের ক্যান্সার হতে পারে। এছাড়াও অ্যালকোহল , ড্রাগ এবং অপুষ্টিকর খাওয়া দেওয়ার ফলে ক্যান্সার হতে পারে। যৌন সমস্যার ফলে সার্ভিকাল ক্যান্সার হতে পারে এবং এ ধরনের ক্যান্সার মহিলাদের মধ্যে খুব বেশি দেখা যায়। এছাড়াও বায়ু দূষণের কারণে ফুস্ফুসের ক্যান্সার হয়। ক্যান্সার রোগটি আয়ত্তের মধ্যে আনার জন্য ৯০ দশকের তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজ্যস্তরে বেশ কিছু সচেতনতা মূলক কাজ শুরু করেছিলেন। প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট দিনে মানুষকে অনুপ্রাণিত করা হতো হাসপাতালে মিউনিসিপ্যাল ক্লিনিকে গিয়ে বিনামূল্যে চিকিৎসা করানোর জন্য। এছাড়াও ক্যান্সার থেকে দূরে থাকার বিভিন্ন উপায় তাদেরকে বলা হত এবং এ সম্পর্কে তথ্য পুস্তিকা জনসাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হত। এছাড়াও ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ সম্পর্কে তাদের ওয়াকিবহাল করা হত, যাতে তারা এই রোগটির প্রথম পর্যায়তেই চিকিৎসা শুরু করতে পারে। প্রথম পর্যায় ক্যান্সার ধরা পড়লে তা অনেকটাই নির্মূল করা যায়।
ভারতবাসীকে ক্যান্সারমুক্ত করা এবং ক্যান্সার হলে তার প্রাথমিক পর্যায় চিকিৎসা শুরু করাই হল জাতীয় ক্যান্সার সচেতনতা দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য। ক্যান্সারের চিকিৎসা খুবই খরচসাপেক্ষ তাই কেরালা সরকার সুহুর্থাম (Suhurtham) নামক একটি পরিকল্পনা পেশ করেছে যেখানে ক্যান্সার রোগীদের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা করা হবে। ১৯৭৫ সালে ভারতে জাতীয় ক্যান্সার কন্ট্রোল প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়েছিল এবং ১৯৮৪-৮৫ সালে এই প্রোগ্রামটি আরো উন্নততর করে তোলা হয়েছিল যাতে প্রথম পর্যায়ে ক্যান্সার ধরা পরে এবং তার সঠিক চিকিৎসা হতে পারে। বর্তমান একটি সমীক্ষা বলছে যে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন ভারতীয় নাগরিক ক্যান্সারে আক্রান্ত। কেবল জাতীয় ক্যানসার সচেতনতা দিবসই নয়, প্রতি বছর ৪ ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্ব জুড়ে বিশ্ব ক্যানসার দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসে।
আশা করা হয় ভবিষ্যতে ভারতীয় নাগরিকদের ক্যান্সার সম্পর্কে আরও সচেতন করে তোলা যাবে। ভবিষ্যতে এই রোগটির প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা শুরু করা যাবে এবং বহু মানুষের প্রাণ রক্ষা করা যাবে।
Thanks for sharing this information about cancer awareness program.