ষষ্ঠী

শীতল ষষ্ঠী ব্রত

শীতল ষষ্ঠী ব্রত মাঘ মাসে শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীর দিন অর্থাৎ সরস্বতী পুজোর পরের দিন পালন করা হয়ে থাকে। জেনে নেওয়া যাক এই ব্রতের পেছনে প্রচলিত কাহিনী।

এক দেশে এক বামুন আর বামুনি বাস করত। তার সাতটি ছেলে আর সাতটি বৌমা। কিণ্তু কারও ছেলে মেয়ে হয়নি। এতো বড় সংসারে কোনো নাতিপুতি না থাকায় তারা মনের দুঃখে থাকে আর মা ষষ্ঠীর কাছে তাদের দুঃখ জানায়। একদিন দুপুরে বামুনি তার সাত বউএর সাথে উঠোনে বসে গল্প করছে এমন সময় এক বুড়ি ভিক্ষা নিতে আসে। তাদের সবাইকে একসাথে দেখে বুড়ি বলে, “তোমাদের নাতি পুতি কই?”
বামুনি মনের দুঃখে তাকে জানায়, “কি বলবো মা,বাড়িতে সাত সাতটা বৌমা কিণ্তু কারও একটিও সন্তান নাই।”
তা শুনে বুড়ি বলল, “তুমি এক কাজ করো সামনে মাঘ মাসের শুক্লপক্ষে যে ষষ্ঠী আসছে সেই ষষ্ঠীতে তুমি ভালো করে মায়ের পুজো করো, তাহলে মা ঠিক মুখ তুলে চাইবেন।”
বামুনি এই পুজো কিভাবে করবে তা জানতে চাইল।
বুড়ি সমস্ত নিয়ম জানাল। তাতে ঠাণ্ডা খাবারের কথা বলল। শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীতে বামুনি নিয়ম মেনে তাদের বৌমাদের দিয়ে এই শীতলষষ্ঠী পুজো করালো। তারপর বছর ঘুরতেই সাত বউয়ের কোল আলো করে চাঁদের মতো সাত ছেলে হল। বামুন বামুনি মহা আনন্দে আবার মা শীতলষষ্ঠীর পুজো দিল। এরপর দেখতে দেখতে সাত বউয়ের সাতটি ছেলে বড় হল, তাদেরও বিয়ে হল। এই ভাবে বামুন বামুনির সংসার ভরে উঠল আর তারা প্রতি বছর মা শীতলষষ্ঠীর পুজো করতে থাকল।

এই ভাবেই দিন কাটতে লাগল। আবার মাঘ মাসের ষষ্ঠী এল তখন বউয়েরা আগের দিন গোটা সিদ্ধ করে, ভাতে জল ঢেলে শুতে গেল। সকালে উঠে বামুনি তার বউমাদের বলল, “আজ খুব শীত আমি ঠান্ডা ভাত খাবো না আর ঠান্ডা জলে স্নান করবো না। আমাকে গরম জল করে দাও স্নান করি আর গরম ভাত আর মাছের ঝোল করো খেয়ে লেপ মুড়ি দিয়ে শুই।”
বৌমারা বলল, “মায়ের আজ ভীমরতি হয়েছে না হলে গরম ভাত খাবে বলে।”
কিন্তু বামুনির চেঁচামেচিতে তার বৌমারা তাই করল। আর বামুনি গরম ভাত মাছ খেয়ে শুয়ে পড়ল। এরপর তার বৌমারা সব পান্তা ভাত, গোটা সিদ্ধ, শীতলষষ্ঠী পুজোর প্রসাদ খেয়ে কাজকর্ম সেরে সবাই যে যার ঘরে শুতে গেল। শেষ রাত্রে খারাপ স্বপ্ন দেখে বামুনির ঘুম ভেঙে গেল। ভয়ে সে বামুনকে ডাকতে গিয়ে দেখে তার গা ঠান্ডা দেহে প্রাণ নেই।এরপর বামুনি ঘর থেকে বেরিয়ে দেখে বাড়ির বেড়ালটা মরে পরে আছে। সে তাড়াতাড়ি বাড়ির অন্য সবাইকে ডাকতে গেলে দেখে কারুর কোনো সাড়া নেই সব মরে পরে আছে।তা দেখে বামুনি পাগলের মতো হাত পা ছুঁড়ে কাঁদে আর মাথার চুল ছেঁড়ে। পাড়ার সবাই তাকে ছি ছি করে যায়। তার এই দশা দেখে মা ষষ্ঠীর দয়া হয়। তিনি বুড়ির বেশ ধরে এসে বামুনিকে বলে, “খাও শীতল ষষ্ঠীর দিন গরম ভাতমাছ।”
বামুনি তার পা ধরে কেঁদে উপায় জানতে চায়। বুড়ির বেশধারী মা ষষ্ঠী বলেন, “তোর বৌমারা শিলের গায়ে যে দই হলুদ দিয়েছে তা নিয়ে প্রথমে বেড়ালের কপালে ফোঁটা দিবি তারপর বাড়ির অন্য সবার কপালে ফোঁটা দে। আর কখনও শীতলষষ্ঠীর দিন গরম কিছু খাবিনি এই বলে মা ষষ্ঠী চলে গেলেন।”

বামুনি মা ষষ্ঠীর কথামত তাই করল। এরপর একে একে সবাই ঘুম থেকে জেগে উঠল।বৌমারা বলল, “মা আমাদের ডাকেন নি কেন কত বেলা হয়ে গেছে।”
বামুনি সব ঘটনা তাদের বলল। তাই শুনে বামুন বামুনির উপর রেগে গেল। এরপর বামুন খুব ঘটা করে মা শীতল ষষ্ঠী পুজো করল আর এই ব্রত চারিদিকে প্রচারিত হল।

তথ্যসূত্র


  1. মেয়েদের ব্রতকথা- লেখকঃ আশুতোষ মজুমদার, প্রকাশকঃ অরুণ মজুমদার, দেব সাহিত্য কুটির, পৃষ্ঠা ৪৩
  2. মেয়েদের ব্রতকথা- লেখকঃ গোপালচন্দ্র ভ ট্টাচার্য সম্পাদিত ও রমা দেবী কর্তৃক সংশোধিত, প্রকাশকঃ নির্মল কুমার সাহা, দেব সাহিত্য কুটির, পৃষ্ঠা ১৬৮

আপনার মতামত জানান