স্ট্যানলি কুব্রিক

স্ট্যানলি কুব্রিক

বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে যেসমস্ত পরিচালকদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে, যাঁদের মেধাস্পর্শে সিনেমার দিগন্ত প্রসারিত হয়েছে, খুলে গেছে নানা পথ, সেই তালিকায় অবশ্যই উপরের দিকে স্থান পাবেন আমেরিকা চলচ্চিত্র নির্মাতা স্ট্যানলি কুব্রিক (Stanley Kubrick)। মূলত লুক ম্যাগাজিনের একজন ফটোগ্রাফার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। সিনেমায় ফটোগ্রাফি নিয়ে চোখ-ধাঁধানো পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দর্শককে মন্ত্রমুগ্ধ করে দিয়েছিলেন। তিনি এতই প্রতিভাবান ছিলেন যে, বিভিন্ন ঘরানার ছবি তৈরি করতে পেরেছিলেন সফলভাবে। কখনও রোম্যান্স, যুদ্ধ, অপরাধজগতের অন্ধকার, ডার্ক হিউমার, নৃশংসতা, অলৌকিকতা তাঁর সিনেমার বিষয় হয়েছে আবার কখনও কল্পবিজ্ঞানের জগতে বিচরণ করেছে তাঁর সৃজনশীলতা। স্টিভেন স্পিলবার্গের মতো পরিচালক তাঁর ছবির গুণমুগ্ধ ভক্ত ছিলেন। আবার কুব্রিকের ছবি ঘিরে বিতর্কও তৈরি হয়েছিল। একটি হরর ফিল্মের জন্য প্রথম স্টেডিক্যাম ব্যবহার করেছিলেন তিনি। পেয়েছিলেন ব্যক্তিগত অস্কারও। অনেকেই তাঁকে আমেরিকার  চলচ্চিত্রনির্মাতাদের তালিকায় শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে শীর্ষস্থান দিয়ে থাকেন।

১৯২৮ সালের ২৬ জুলাই নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটানে লাইং-ইন হাসপাতালে এক ইহুদী পরিবারে স্ট্যানলি কুব্রিক এর জন্ম হয়। তাঁর বাবা জ্যাকব লিওনার্ড কুব্রিক (Jacob Leonard Kubrick) মূলত ‘জ্যাক’ নামেই পরিচিত ছিলেন এবং পেশায় ছিলেন একজন হোমিওপ্যাথি ডাক্তার। এছাড়াও এই জ্যাকবের আবার দাবা এবং ফটোগ্রাফির শখও ছিল, যা-কিনা পরবর্তীকালে কুব্রিকের মধ্যেও সঞ্চারিত করে দেন তিনি। স্ট্যানলির মা স্যাডি গ্রার্ট্রুড কুব্রিক (Sadie Gertrude Kubrick) ছিলেন অস্ট্রিয়ান-ইহুদী অভিবাসীদের সন্তান। মোট দুই সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ ছিলেন স্ট্যানলি। তাঁর একটিমাত্র ছোটবোন বারবারা মেরি কুব্রিকের জন্ম হয় ১৯৩৪ সালে। নিউইয়র্কের ব্রঙ্কস শহরে বেড়ে উঠেছিলেন কুব্রিক।

বোনের জন্মের পরপরই স্ট্যানলি কুব্রিক ব্রঙ্কসের পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন পড়াশুনার জন্য। ১৯৩৮ সালের জুন মাসে অন্য আরেকটি পাবলিক স্কুলে স্থানান্তরিত হন তিনি। বিদ্যালয়ে খুব একটা মেধাবী ছাত্র ছিলেন না কুব্রিক। তবে সাহিত্যের প্রতি তাঁর আগ্রহ জন্মেছিল। গ্রীক ও রোমান পৌরাণিক কাহিনী কিংবা গ্রিম ব্রাদার্সের কল্পকাহিনীগুলি সাগ্রহে পড়ে ইউরোপ সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি হয়েছিল তাঁর। প্রাথমিকভাবে তাঁর ইচ্ছে ছিল তিনি সাহিত্যিক অথবা একজন বেসবল খেলোয়াড় হবেন। কুব্রিকের যখন মাত্র বারো বছর বয়স তাঁর বাবা তাঁকে দাবা খেলা শিখিয়েছিলেন তখন। তাঁর তৈরি অনেক চলচ্চিত্রতেও দাবা খেলার দৃশ্য চোখে পড়বে। পরবর্তীকালে ইউনাইটেড স্টেটস চেজ ফেডারেশনের সদস্যও হয়েছিলেন তিনি।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

কুব্রিকের যখন ১৩ বছর বয়স তখন তাঁর বাবা তাঁকে একটি গ্রাফলেক্স ক্যামেরা কিনে দেন। সেসময় মারভিন ট্রাব নামে এক প্রতিবেশীর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় কুব্রিকের। সেই মারভিনেরও ফটোগ্রাফির প্রতি প্রবল উৎসাহ ছিল এবং তাঁরা দুজনে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াত ক্যামেরায় ছবি তোলার জন্য। সিনেমাহলে গিয়ে বিভিন্ন সিনেমা দেখত দুজনে। সেই অল্পবয়সে কুব্রিক জ্যাজ মিউজিকের প্রতিও আকৃষ্ট হয়েছিলেন এবং হাইস্কুলের জ্যাজ ব্যান্ডে ড্রামও বাজিয়েছিলেন তিনি।

১৯৪১ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত উইলিয়াম হাওয়ার্ড টাফ্ট হাইস্কুলে পড়াশুনা করেন স্ট্যানলি কুব্রিক ৷ সেই স্কুলের ফটোগ্রাফি ক্লাবে যোগদান করেছিলেন তিনি। এমনকি স্কুলের ম্যাগাজিনে ছাপার জন্য স্কুলেরই বিভিন্ন ইভেন্টের ছবি তোলার দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। লাজুক ও অন্তর্মুখী একজন মানুষ ছিলেন তিনি। ছাত্র হিসেবেও ছিলেন মাঝারি। ১৯৪৫ সালে স্নাতক হয়েছিলেন বটে, কিন্তু খারাপ ফলাফলের কারণে কোনো ভালো কলেজে ভর্তির সুযোগ পাননি তিনি। এসময় তাঁর বাবা তাঁকে পারিবারিক লাইব্রেরিতে পড়াশুনা করবার উৎসাহ দিতে থাকেন এবং ফটোগ্রাফির শখটিকে নিয়ে ভাবনাচিন্তা করবার কথা বলেন। চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনাকে ক্যামেরাবন্দী করবার চেষ্টা করতেন তিনি৷ প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের মৃত্যুর পর একদিন এক কাগজবিক্রেতার কাছে এসেছিলেন ১৭ বছর বয়সী তরুণ কুব্রিক। মৃত্যুর এবং শোকবার্তার হেডলাইনের মধ্যে বসে থাকা কাগজবিক্রেতার বিষন্ন মুখখানি যে খুব ভালো একটি ছবির বিষয় হবে, তা মুহূর্তে বুঝতে পেরেছিলেন তিনি। এরপর ১৯৪৬ সালে নিউইয়র্কের সিটি কলেজের সান্ধ্য ক্লাসে যোগদান করেন তিনি৷ তবে ইতিমধ্যে হাইস্কুলে পড়াকালীনই বিখ্যাত ‘লুক’ ম্যাগাজিনের কাছে একটি ছবির সিরিজ বিক্রি করেছিলেন এবং ১৯৪৫ সালের ২৬শে জুন তা ছাপা হয়েছিল। সিটি কলেজের দিনগুলিতে ওয়াশিংটন স্কয়ার পার্ক এবং ম্যানহাটানের বিভিন্ন দাবা ক্লাবে দাবা খেলে অর্থ উপার্জন করতেন তিনি।

১৯৪৬ সালেই ‘লুক’ ম্যাগাজিনে একজন শিক্ষানবিশ ফটোগ্রাফার হিসেবে চাকরি পেয়েছিলেন স্ট্যানলি কুব্রিক । পরে অবশ্য একজন ফুল টাইম স্টাফ ফটোগ্রাফার পদে উন্নীত হয়েছিলেন। এইসময় কাজের সূত্রে প্রায় গোটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করতে হয়েছিল তাঁকে। ছবির মধ্য দিয়ে গল্পবলা, মূলত এই বৈশিষ্ট্যের জন্যই কুব্রিক দ্রুত পরিচিতি পেতে থাকেন। ১৯৪৬ সালের ১৬ই এপ্রিল প্রকাশিত ‘আ শর্ট স্টোরি ফ্রম আ মুভি ব্যালকনি’ নামক তাঁর ছবিটিতে এক পুরুষ ও মহিলার ঝগড়ার দৃশ্য ধরা পড়েছিল। আবার একটি ডেন্টাল ক্লিনিকে অপেক্ষারত বিভিন্ন মানুষের ১৮টি ছবি তুলেছিলেন, যে-ছবিগুলি প্রত্যেক ব্যক্তির অভিব্যক্তিকে তুলে ধরেছিল স্পষ্টভাবে।

বক্সিং খেলারও ভীষণ ভক্ত ছিলেন স্ট্যানলি কুব্রিক । অবশেষে ম্যাগাজিনের জন্য বক্সিং ম্যাচের ছবি তুলতে শুরু করেন তিনি। তাঁর তোলা বিখ্যাত বক্সিং খেলোয়াড় ওয়াল্টার কার্টিয়েরের ম্যাচের ছবি ‘লুক’-এ প্রকাশিত হয়েছিল। ছবির সাহায্যে পরিবেশ নির্মাণে তাঁর যে দক্ষতা তা প্রমাণ হয়েছিল ১৯৪৯ সালের ২ এপ্রিল ‘শিকাগো-সিটি অব এক্সট্রিমজ’ নাম চিত্র-প্রবন্ধের মাধ্যমে। কুব্রিককে অসংখ্য জ্যাজ সঙ্গীতশিল্পীর ছবি তোলার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল। তিনি ফ্রাঙ্ক সিনাত্রা, এরল গার্নার, জর্জ লুইস, এডি কনডন প্রমুখ বিখ্যাত সব জ্যাজশিল্পীর ছবি তুলেছিলেন। কর্মসূত্রে এই ভ্রমণকালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নন-ম্যাট্রিকুলেশন ছাত্র হিসেবে ভর্তির অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। এসময়ে, ১৯৪৮ সালের ২৮শে মে উচ্চবিদ্যালয়ের ঘনিষ্ঠ সঙ্গিনী টোবা মেটজকে (Toba Metz) বিবাহ করেন স্ট্যানলি কুব্রিক ।  অবসর সময়ে তিনি মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্ট এবং নিউ ইয়র্ক সিটির সিনেমায় প্রদর্শিত চলচ্চিত্রগুলি দেখতে হাজির হতেন। পরিচালক ম্যাক্স ওফুলসের জটিল ক্যামেরার কাজ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন তিনি। ফিল্ম তত্ত্বের ওপর বই পড়া এবং নোট নেওয়া শুরু করেছিলেন। ‘লুক’ ম্যাগাজিনের ফটোগ্রাফিক টেকনিক্যাল ডিরেক্টর সের্গেই আইজেনস্টাইন এবং আর্থার রথস্টেইনের দ্বারা বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

অনেক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ১৯৫১ সালে বক্সার ওয়াল্টার কার্টিয়ারকে নিয়ে একটি ১৬ মিনিটের সাদা-কালো শর্ট-সাবজেক্ট ডকুমেন্টারি ফিল্ম ‘ডে অব দ্য ফাইট’ নির্মাণ করেছিলেন কুব্রিক। প্রথম ছবি হিসেবে সেটি যথেষ্ট উন্নতমানের কাজ হয়েছিল। জেরাল্ড ফ্রাইড এই ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর তৈরি করেছিলেন। এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করতে খরচ হয়েছিল ৩৯০০ ডলার এবং আরকেও পিকচার্সের কাছে কুব্রিক এটিকে ৪০০০ ডলারে বিক্রি করতে সক্ষম হন। আরকেও পিকচার্সের ‘দিস ইজ আমেরিকা’ সিরিজের অন্তর্ভুক্ত হয়ে মুক্তি পায় ছবিটি ১৯৫১ সালের ২৬শে এপ্রিল মাসে। এই প্রথম পর্যায়ের সাফল্যের পর কুব্রিক লুক ম্যাগাজিনের চাকরি ছেডে দেন এবং চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে থাকেন, সিনেমার প্রযুক্তিগত কলাকৌশল সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করতে থাকেন। এরপর ১৯৫১ সালেই তিনি তাঁর দ্বিতীয় সাদা-কালো ডকুমেন্টারি ফিল্ম ‘ফ্লাইং পাদ্রে’ নির্মাণ করেন এবং প্রথম আরকেও পিকচার্সের ব্যানারে তা করেছিলেন। রেভারেন্ড ফ্রেড স্ট্যাডমুলারকে কেন্দ্র করে এই ছবি নির্মিত। দুবছর পরে ১৯৫৩ সালে কুব্রিক তাঁর প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। সেটি ছিল ‘দ্য সিফেরার্স’ নামের ৩০ মিনিটের একটি শিল্প তথ্যচিত্র।

স্ট্যানলি কুব্রিক তাঁর প্রথম ফিচার-লেংথ ফিল্ম, ‘ফিয়ার অ্যান্ড ডিজায়ার’-এর জন্য আত্মীয়দের কাছ থেকে তেরো হাজার ডলার সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁর এক কাকা মার্টিন পারভেলার নয় হাজার ডলার বিনিয়োগ করেছিলেন এই শর্তে, যে তাঁকে সে-ছবির নির্বাহী প্রযোজক হিসেবে কৃতিত্ব দেওয়া হবে। ১৯৫৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিটিকে অবশ্য পরে তিনি নিজেই অপেশাদার তকমা দিয়ে জনসমক্ষে এর প্রদর্শনে বাধা দিয়েছিলেন। ১৯৫৪তে দ্বিতীয়বার বিবাহ করেন রুথ সোবোটকাকে এবং ১৯৫৭তে বিচ্ছেদ হয়ে যায়।এরপর চিত্রশিল্পী ক্রিশ্চিয়ান হারলানকে বিবাহ করেন এবং ৪১ বছর একসঙ্গে কাটান। এর পরবর্তী ছবি ‘কিলার’স কিস’-এর জন্য পুনরায় আত্মীয়দের কাছ থেকে চল্লিশ হাজার ডলার সংগ্রহ করেছিলেন। এই ছবির ক্যামেরার পরীক্ষা-নীরিক্ষামূলক কাজের খুবই প্রশংসা করেছিলেন সমালোচকেরা। এই সিনেমার জন্য সেরা পরিচালক হিসেবে ‘লোকার্নো ইন্টারন্যাশানাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’ পুরস্কার পেয়েছিলেন ১৯৫৫তেই।

১৯৫৫ সালে বিখ্যাত প্রযোজক জেমস বি হ্যারিসের সঙ্গে হ্যারিস-কুব্রিক পিকচার্স কর্পোরেশন গঠন করেন তিনি৷ হ্যারিস লিওনেল হোয়াইটের ‘ক্লিন ব্রেক’ উপন্যাসের স্বত্ব ক্রয় করেন এবং কুব্রিকের পরামর্শমতো ঔপন্যাসিক জিম্প থম্পসনকে ভাড়া করা হয় স্ক্রিপ্ট রচনার জন্য। ১৯৫৬ সালে তা থেকে কুব্রিকের পরিচালনায় তৈরি হয় ‘দ্য কিলিং’ সিনেমাটি। এই সিনেমাটি থেকেই তাঁর পরিচালক জীবনের প্রকৃত সূচনা বলে মনে করেন অনেকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জু্ড়ে ‘দ্য কিলিং’-এর মুক্তি সম্ভব হয়নি, ফলে বাণিজ্যিক সাফল্য খুব একটা পায়নি এ-ছবি।

হামফ্রে কোবের উপন্যাস অবলম্বনে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত কুব্রিকের ছবি ‘পাথস অব গ্লোরি’ মুক্তি পায় ১৯৫৭তে। বিখ্যাত অভিনেতা কার্ক ডগলাস এই ছবিতে অনবদ্য অভিনয় করেছিলেন। ডগলাসের প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে কুব্রিকরা মোট তিনটি ছবির চুক্তি করেন৷ ‘পাথস অব গ্লোরি’ প্রথম বাণিজ্যিকভাবে সফল ছবি ছিল কুব্রিকের। যুদ্ধের ওপর নির্মিত একটি শ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে বিবেচনা করা হয় এটিকে। মারলোন ব্রান্ডোর সঙ্গে যৌথভাবে একটি ছবি নির্মাণকালীন নানা বিরোধের কারণে সরে আসেন কুব্রিক।

১৯৫৯ সালে কার্ক ডগলাস ‘স্পার্টাকাস’ ছবির পরিচালনার দায়িত্ব দেন তাঁকে। পরিচালক অ্যান্টনি মানকে দরখাস্ত করার পর ছবিটি ডগলাস কুব্রিকের হাতে তুলে দেন। ১৯৬০-এ মুক্তি পাওয়া ‘স্পার্টাকাস’ অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছিল। চারটি একাডেমি পুরস্কারও জিতেছিল। কিন্তু কাজ চলাকালীন ডগলাসের সঙ্গে নানা মতবিরোধের ফলে কুব্রিকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কেও ছেদ পড়ে।১৯৬২তে মুক্তিপ্রাপ্ত ভ্লাদিমির নভোকভের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ‘লোলিটা’ ছবিতে কুব্রিকের প্রথম ব্ল্যাক কমেডির প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। লোলিটা ছবিটির জন্য ইংল্যান্ডে যান তিনি এবং ইংল্যান্ডকেই একসময় নিজের বাড়ি মনে করতেন। সেন্ট অ্যালবানসের কাছে চাইল্ডউইকবারির একটি আধা-গ্রামীণ ম্যানর হাউসে বাস করতেন তিনি। লোলিটার বিষয়বস্তুর জন্যই প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। ১৯৬৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ডঃ স্ট্রেঞ্জলাভ অর: হাউ আই লার্নড টু স্টপ ওয়ারিং অ্যান্ড লাভ দ্য বোম্ব’ কুব্রিকের তৈরি ব্ল্যাক কমেডিগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।  ভীষণই সাফল্য পায় ছবিটি। ‘রেড অ্যালার্ট’ উপন্যাস থেকে এই ছবি নির্মিত এবং এটিকে ঘিরে মতানৈক্যের কারণে হ্যারিসের সঙ্গেও কুব্রিকের দুরত্ব তৈরি হয়েছিল। কল্পবিজ্ঞান জগতের চিত্রায়ন করেছিলেন কুব্রিক তাঁর বিখ্যাত ২০০১: আ স্পেস ওডিসি’ (১৯৬৮) ছবিতে। এই ছবির জন্য নাসা তাঁকে একটি মহাকাশযান পর্যবেক্ষণের অনুমতি দিয়েছিল। এই সিনেমার ভিজ্যুয়াল এফেক্টস দেখে স্পিলবার্গ এটিকে তাঁদের সময়ের ‘বিগ ব্যাং’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। এই ছবির স্পেশাল এফেক্টের জন্য একমাত্র একাডেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।  ১৯৭১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তাঁর ‘আ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ’ ছবিটিতে হিংসাত্মক ও নৃশংস দৃশ্যের প্রদর্শনের কারণেও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল তখন। ১৯৭৫-এ মুক্তিপ্রাপ্ত তাঁর পরবর্তী ছবি ‘ব্যারি লিন্ডন’ সমালোচকদের প্রশংসা পায় ও খুবই সফল হয়। সাতটি একাডেমি পুরস্কারের জন্য মনোনীতও হয়েছিল। ১৯৮০ সালে হরর মুভি ‘দ্য শাইনিং’-এর জন্য স্টেডিক্যাম ব্যবহার করা প্রথম পরিচালক ছিলেন কুব্রিক। ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ১৯৮৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তাঁর ‘ফুল মেটাল জ্যাকেট’ যুদ্ধবিষয়ক এক গুরুত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র। কুব্রিকের শেষ সিনেমা ‘আইজ ওয়াইড শাট’ ১৯৯৯ সালে তাঁর মৃত্যুর কিছু আগে সম্পন্ন হয়েছিল।

শেষছবির চুড়ান্ত স্ক্রিনিং-এর ছয়দিন পর ১৯৯৯ সালের ৭ মার্চ চাইল্ডউইকবারিতে ৭০ বছর বয়সে ঘুমের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে স্ট্যানলি কুব্রিকের মৃত্যু হয়।

One comment

আপনার মতামত জানান