ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো

বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে যেসব খেলোয়াড়ের নাম প্রায় কিংবদন্তীর স্তরে উত্তীর্ণ হয়েছে তাঁদের মধ্যে একজন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো (Cristiano Ronaldo)। পর্তুগালের এই ফুটবলারের কেরিয়ারে নানাবিধ রেকর্ড গড়ার স্বর্ণোজ্বল ইতিহাস অঙ্কিত রয়েছে। মাত্র তেইশ বছর বয়সে ফুটবলের অন্যতম সম্মান ব্যলন ডি’অর জেতা এই খেলোয়াড় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্তাসের মতো ক্লাবের হয়ে খেলেছেন দীর্ঘদিন। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো – ই প্রথম ফুবলার যিনি ইংরেজি, স্প্যানিশ এবং ইতালিয়ান লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার বিরল রেকর্ড করেছেন। রোনাল্ডোই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি পাঁচটি ফিফা বিশ্বকাপে গোল করেছেন।

১৯৮৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি  পর্তুগীজ দ্বীপ মাদেইরার রাজধানী ফুঞ্চালের সাও পেদ্রো যাজকপল্লীতে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ডস সান্তোস আভেইরোর (Cristiano Ronaldo dos Santos Aveiro) জন্ম হয়। যদিও তিনি বেড়ে উঠেছিলেন সান্তো আন্তোনিওর নিকটবর্তী যাজকপল্লীতে। তিনি মারিয়া ডোলোরেস ডস সান্তোস ভিভেইরোস দা আভেইরো (Maria Dolores dos Santos Viveiros da Aveiro) এবং জোসে দিনিস আভেইরোর (José Dinis Aveiro) চতুর্থ এবং সর্বকনিষ্ঠ সন্তান ছিলেন। তাঁর মা মারিয়া ছিলেন মূলত একজন বাবুর্চি এবং বাবা জোসে দিনিস মিউনিসিপালিটির বাগানের মালি। জোসে দিনিসের পছন্দের মানুষ ছিলেন আমেরিকান রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রেগান। মূলত তাঁর নামানুসারেই ছেলের নামকরণ করেন তিনি রোনাল্ডো। সংসারে দারিদ্র্য ছিল তাঁদের নিত্য সঙ্গী। অসহনীয় দারিদ্র্য, একাধিক সন্তান পালনের চাপ ও স্বামীর মদ্যপানে মাত্রাতিরিক্ত আসক্তির কারণে অতিষ্ঠ হয়ে রোনাল্ডো গর্ভে থাকাকালীন তাঁর মা তাঁকে গর্ভেই মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন। যদিও ডাক্তার এই গর্ভপাতে রাজি হননি। রোনাল্ডোর বড় ভাইয়ের নাম হুগো এবং দুই দিদির নাম যথাক্রমে এলমা এবং লিলিয়ানা কাটিয়া। রোনাল্ডোর যখন কুড়ি বছর বয়স অত্যধিক মদ্যপানজনিত লিভারের অসুখে তাঁর বাবার মৃত্যু হয়। ২০০৯ সালে রোনাল্ডো রাশিয়ান মডেল ইরিনা শায়েকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে লিপ্ত হন, যদিও ২০১৫ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। বর্তমানে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো আর্জেন্টিনীয় স্প্যানিশ মডেল জর্জিনা রদ্রিগেজের সঙ্গে সম্পর্কে আছেন। রোনাল্ডো মোট পাঁচ সন্তানের জন্মদাতা।

পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে সেভাবে পড়াশুনা করা হয়নি রোনাল্ডোর। তাছাড়া ১৪ বছর বয়সে একবার স্কুলের একজন শিক্ষকের দিকে চেয়ার ছুঁড়ে মারার অভিযোগে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি প্রচন্ড আকর্ষণ ছিল তাঁর। বাবা ফুটবল ক্লাবে কিটম্যানের (ফুটবলারদের ফুটবল কিটের যত্নআত্তি এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তি)কাজ করতেন বলেই তাঁর হাত ধরে রোনাল্ডোর ফুটবলের সঙ্গে পরিচয়৷ কিন্তু রোনাল্ডো যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে তিনি একজন ফুটবল খেলোয়াড় হবেন তখন তাঁর মা-ই তাঁকে সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দিয়েছিলেন এবং নিজের স্বপ্নকে সত্যি করার দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন ছেলেকে।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো খেলেছিলেন আন্দোরিনহার হয়ে। সেই ক্লাবেই তাঁর বাবা কিটম্যানের কাজ করতেন। এরপর দুবছর ছিলেন ন্যাসিওনালের সঙ্গে। ১৯৯৭ সালে বারো বছর বয়সে স্পোর্টিং সিপি-র সঙ্গে তিনদিনের ট্রায়ালে গিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে তিনি স্পোর্টিং এর যুব একাডেমীতে যোগদানের জন্য মাদেইরা থেকে লিসবনের কাছে আলকোচেতে চলে যান। চোদ্দ বছর বয়সেই ফুটবলে নিজের দক্ষতা সম্পর্কে সচেতন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো পড়াশুনা ছেড়ে এই খেলাতেই মনোনিবেশ করতে চেয়েছিলেন। সেসময় তাঁর মা তাঁকে উৎসাহ দিয়েছিলেন। তিনি ষষ্ঠ শ্রেণীর পর আর পড়াশুনা করেননি। বছরখানেক পরে তিনি ট্যাকিকার্ডিয়া নামে একটি রোগে আক্রান্ত হন, যা তাঁর ফুটবল খেলার পথে অন্তরায় হতে পারত। একটি হার্ট সার্জারিও তখন হয়েছিল তাঁর। কিন্তু চিকিৎসার গুণে এবং প্রচন্ড মনোবলের কারণে আরোগ্য লাভ করেন তিনি এবং পুনরায় মাঠে ফেরেন।

স্পোর্টিং দলের ম্যানেজার লাজলো বোলোনি রোনাল্ডোর ড্রিবলিং-এ মুগ্ধ হয়ে তাঁকে যুবদল থেকে উন্নীত করেন যখন রোনাল্ডোর বয়স ষোলো। পরে ক্লাবের অনূর্ধ্ব-১৬, অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৮ দল, বি দল এবং প্রথম দলের হয়ে এক মরশুমে খেলা একমাত্র খেলোয়াড় হয়েছিলেন রোনাল্ডো। এক বছর পর ২০০২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তিনি প্রাইমারি লীগায় অভিষেক করেন এবং প্রথম দুটি ম্যাচেই গোল পান ও তাঁর দল জয়ী হয়। ২০০২-০৩ মরশুমে লিভারপুল, বার্সেলোনা, আর্সেলানের মতো ক্লাবের ম্যানেজাররা রোনাল্ডোকে তাঁদের ক্লাবে গ্রহণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষরে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু ২০০৩ সালের আগস্টে এস্তাদিও হোসে আলভালাদে উদ্বোধনের সময় স্পোর্টিং যখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ৩-১ ব্যবধানে পরাজিত করে, তখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ম্যানেজার অ্যালেক্স ফার্গুসন রোনাল্ডোকে অবিলম্বে অধিগ্রহণ করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে পড়েন। ম্যাচের পর ফার্গুসন স্পোর্টিংকে ১২.২৪ মিলিয়ন পাউন্ড দিতে রাজি হন রোনাল্ডোর পরিবর্তে এবং তাঁকে সবচেয়ে আকর্ষণীয় তরুণ খেলোয়াড়দের একজন বলে উল্লেখ করেন। ২০০৩ সালের ১২ আগস্ট রোনাল্ডো যোগ দিয়েছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ক্লাবে। সেইসময় ইংলিশ ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ট্রান্সফার ছিল এটি। যদিও স্পোর্টিং-এ থাকতে তিনি ২৮ নম্বর জার্সি চেয়েছিলেন কিন্তু নতুন ক্লাবে রোনাল্ডো পরলেন সাত নম্বর। পরে এই সাত নম্বরই তাঁর নামের আদ্যক্ষরের সঙ্গে জুড়ে গিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন কিংবদন্তি ‘সি আর – সেভেন’। ২০০৩-সালের ১৬ আগস্ট প্রিমিয়ার লীগে বোল্টন ওয়ান্ডারার্সের বিরুদ্ধে ম্যাচে নিকি বাটের পরিবর্তে মাঠে নামেন তিনি এবং দর্শকরা উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে অভিবাদন জানায় তাঁকে। ইউনাইটেডের হয়ে সে বছর প্রথম ফ্রি-কিক থেকে গোল করেন রোনাল্ডো।

২০০৪ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে রোনাল্ডোর চুক্তি বর্ধিত হয়ে মেয়াদ হয় ২০১০ সাল পর্যন্ত। ২০০৫ সালে এফ এ কাপের ফাইনালে আর্সেনালের কাছে হেরে গেলেও অন্তিম ট্রাইব্রেকারে পেনাল্টিতে গোল করেন রোনাল্ডো। সেবছরই আবার ফুটবল লীগ কাপ জেতেন তিনি এবং ফাইনালে গোলও করেন। বেনফিকা সমর্থকদের প্রতি অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করবার জন্য উয়েফা একটি ম্যাচের জন্য তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ২০০৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে ম্যানচেস্টারে তাঁর সতীর্থ ওয়েন রুনির সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন তিনি ফলে ক্লাব থেকে রোনাল্ডো স্থানান্তরের আর্জি জানালেও তা গ্রাহ্য হয়নি৷ ২০০৬-০৭ সালের মরশুমে প্রথম প্রিমিয়ার লীগ শিরোপা জেতেন তিনি। তাঁকে নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে প্রিমিয়ার লীগের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত করা হয়। ২০০৭ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে এফ এ কাপের ফাইনালে পৌঁছতে সাহায্য করেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন। সেবছর নিজের পঞ্চাশতম গোল করেন তিনি এবং ‘ইয়াং প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার’ পুরস্কার জেতেন। সেইসাথে ‘ফুটবল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন’ এর পক্ষ থেকে বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কারও জেতেন তিনি।

পাঁচ বছরের চুক্তি সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে তাঁর বেতন সপ্তাহে ১২০,০০০ পাউন্ডে উন্নীত করা হয়। ২০০৭ সালে ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলারের দৌড়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন তিনি । ২০০৮ সালের ১২ জানুয়ারি নিউক্যাসল ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে প্রথম হ্যাটট্রিক করেন রোনাল্ডো। ৩১টি গোলের ফলে তিনি জেতেন প্রিমিয়ার লিগ গোল্ডেন বুট। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে ‘উয়েফা ক্লাব ফুটবলার অব দ্য ইয়ার’ নির্বাচিত হন তিনি। এরমধ্যে তাঁর রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৮ সালে প্রথম ব্যলন ডি’অর পান তিনি।

২০০৮-০৯ মরশুমের আগে গোড়ালিতে একটি অস্ত্রোপচারের ফলে দশ সপ্তাহ মাঠ থেকে দূরে থাকেন রোনাল্ডো। ১৫ নভেম্বর স্টোক সিটির বিপক্ষে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে ১০০তম গোলটি করেন তিনি। ২০০৮ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ‘ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ’ জিততে সাহায্য করেন তিনি। ম্যানচেস্টারের হয়ে ২৯২টি ম্যাচে মোট ১১৮টি গোল করেছিলেন রোনাল্ডো। এই বছরেই প্রথম ব্যলন ডি’অর জেতেন তিনি। এরপরই ২০০৯-১০ মরশুমে স্পেনের বিখ্যাত ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন তিনি যার চুক্তি ছিল ২০১৫ পর্যন্ত। তাঁর ট্রান্সফার ফি ছিল ৮০ মিলিয়ন, সেই সময়ের নিরিখে যা ব্যয়বহুলতার দিক থেকে বিশ্বরেকর্ড। সেই মরশুমে কোনো ট্রফি না জিতলেও রোনাল্ডো ৩৫টি ম্যাচে ৩৩টি গোল পান।

২০১০-১১ সালের মরশুমে সাত নম্বর জার্সি পান তিনি৷ এই মরশুমেই ৫৪টি ম্যাচে ৫৩টি গোল করে তিনি দ্বিতীয়বার ‘ইউরোপীয় গোল্ডেন শু’ জেতেন। পরের মরশুমে ৬০টি গোল করে অতীতের রেকর্ড ভেঙে দেন। ২০১০ সালে মাদ্রিদের সর্বোচ্চ গোলদাতা হন তিনি৷ ২০১১ সালে কোপা দেল রে ফাইনালের ১০৩ মিনিটে ম্যাচজয়ী গোলটি করেন রোনাল্ডো। ২০১২ সালে রিয়েল মাদ্রিদের হয়ে ১০০তম লীগ গোল করেন তিনি। এল ক্লাসিকোতে রিয়েল মাদ্রিদের অধিনায়কত্বও করেন রোনাল্ডো। ২০১৩-১৪ মরশুমে সর্বোচ্চ বেতনপ্রাপ্ত খেলোয়াড় হন তিনি। ২০১৩ সালে ব্যলন ডি’অর, ফিফা ব্যলন ডি’অর দুটোই আসে রোনাল্ডোর ঝুলিতে। রিয়াল মাদ্রিদকে তাদের দশম লা ডেসিমা কাপ জিততে সাহায্য করেন তিনি। ক্লাব ও দেশের হয়ে তখন প্রায় ৬৫৩ ম্যাচে ৪০০টি গোল করে ফেলেছেন তিনি। ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে ব্যলন ডি’অর পান তিনি। এরপর ২০১৬ ও ২০১৭ সালের ব্যলন ডি’অর সহ মোট পাঁচটি ব্যলন ডি’অর রয়েছে তাঁর কেরিয়ারে। ২০১৫-১৬ মরশুমে রিয়েল মাদ্রিদের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোল স্কোরার হন রোনাল্ডো।

২০১৬ সাল তাঁর কেরিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। অনেক লীগ জেতার সাথে জাতীয় দলের হয়ে ইউরো কাপও জিতেছিলেন তিনি। যদিও হাঁটুর আঘাতের কারণে ফাইনাল ম্যাচ সম্পূর্ণ খেলতে পারেননি তিনি৷ সেবছর মাদ্রিদ ডার্বিরও সর্বোচ্চ গোলদাতা হন তিনি। উয়েফা কাপ প্রতিযোগিতায় ১০০ গোল করা প্রথম খেলোয়াড় তিনি। ২০১৭-১৮ সালে রোনাল্ডো পঞ্চম চ্যাম্পিয়নস লীগ শিরোপা জেতেন।

রিয়াল মাদ্রিদের চুক্তি বাড়ানোর আলোচনা চললেও তা কার্যকরী হয়নি এবং ২০১৮ সালের ১০ জুলাই ১০০মিলিয়ন ট্রান্সফার ফি-তে জুভেন্টাস ক্লাবে চারবছরের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করেন। ২০১৯-২০ মরশুমে সর্বাধিক চ্যাম্পিয়ন লীগ জয়ের রেকর্ড ভেঙেছেন তিনি। ২০২১ সালে কোপা ইতালিয়ার ফাইনালে জিতে রোনাল্ডো ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হন যিনি ইংল্যান্ড, স্পেন এবং ইতালিতে ট্রফি জিতেছেন৷ ২০২১ সালে পুনরায় ফেরত যান ম্যানচেস্টারে। সেখানেও কিছুদিন উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার পর দলের অভ্যন্তরীন সমস্যার কারণে দল ছাড়েন দ্বিতীয়বারের জন্য এবং ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বরে সৌদি আরবের আল নাসের দলে যোগদান করেন তিনি।

দেশের হয়ে প্রথম সিনিয়র ম্যাচ খেলেন রোনাল্ডো আঠারো বছর বয়সে। ২০০৭ সালে প্রথমবার পর্তুগালের অধিনায়কত্ব করেন তিনি। ২০০৮ সালের ইউরো কাপের আগে তাঁকে প্রথমবার ৭ নম্বর জার্সি দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে দেশের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা হন তিনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে দেশের হয়ে ৫০তম গোলটি করেন৷ ২০১৮ ফিফা বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক করা প্রথম বয়স্ক খেলোয়াড় হন তিনি৷ ২০২০ সালে ১০০তম আন্তর্জাতিক গোল করেন রোনাল্ডো। ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে যাওয়ার ফলে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন তাঁর অধরাই রয়ে গেছে। লিওনেল মেসির সঙ্গে তাঁর চির প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্মরণীয় হয়ে থাকবে ফুটবলের ইতিহাসে।

ফুটবল ছাড়াও নানা মানবহিতৈষী কাজের সঙ্গে জড়িত তিনি। ক্যান্সারে আক্রান্ত নয় বছরের বালকের চিকিৎসার জন্য যেমন অর্থপ্রদান করেছেন, তেমনই নেপাল ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দান করেছেন প্রায় পাঁচ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার। ‘সেভ দ্য চিল্ড্রেন’ সংস্থার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডার হয়েছিলেন যেমন, তেমনি ইন্দোনেশিয়ার ম্যানগ্রোভ কেয়ার ফোরামের রাষ্ট্রদূতও হন রোনাল্ডো। মাদেইরার দাতব্য সংস্থায় ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন, আবার সেখানকার বন্যা ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য ম্যাচের আয়োজনও করেছিলেন। আবার কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে, মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগেও তাঁকে আইনি ঝামেলাতেও পড়তে হয়েছিল যদিও এর কেরিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি তাঁর।

কিংবদন্তি ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো বর্তমানে আল নাসের ক্লাবের হয়ে খেলে চলেছেন।

One comment

আপনার মতামত জানান