গৌড় ভ্রমণ

গৌড় ভ্রমণ

গৌড় প্রাচীন বাংলার এক সমৃদ্ধশালী জনপদ। তৎকালীন বঙ্গদেশের রাজধানী গৌড় তার পোড়ামাটি ও লাল ইঁটের স্থাপত্যে, রঙবেরঙের মিনা করা টালির কাজে ধরে রেখেছে কয়েকশো বছরের সময়ের স্মৃতি। বহু রাজবংশের উত্থান পতনের নীরব সাক্ষী গৌড় আজ বাংলার পর্যটন মানচিত্রে খানিকটা দুয়োরাণীর আসনে; সময়ের ঝড়ে আর রক্ষনাবেক্ষণের অভাবে আগের জৌলুশ হারিয়েছে অনেকটাই। তবুও ইতিহাসের টানে প্রতিবছরই দেশ-বিদেশ থেকে প্রচুর মানুষ আসেন গৌড় ভ্রমণে। শোনা যায়, একসময় গুড়ের ব্যবসার জন্য এই জনপদ ছিল বিখ্যাত আর সেই থেকেই গৌড় নামটা এসেছে। আবার পুরাণ বলে, সূর্যবংশীয় রাজা মান্ধাতার দৌহিত্র গৌড় এই অঞ্চলের অধীশ্বর ছিলেন, সেখান থেকেই এই নামকরণ।

ঐতিহ্যবাহী এই জনপদের বেশিরভাগ অংশ এখন পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার অন্তর্গত, বাকি অংশ পড়েছে বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। গৌড়ের অবস্থান ছিল এখনকার মালদা জেলার দক্ষিণে গঙ্গা ও মহানন্দা নদীর মাঝখানে। প্রায় কুড়ি মাইল লম্বা ও চার মাইল প্রস্থ নিয়ে গড়ে ওঠা সেকালের গৌড় নগরের প্রবেশের মূল তোরণটি পরিচিত ছিল ‘কোতোয়ালি দরওয়াজা’ নামে যা এখন ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমানার সীমান্তবর্তী চেকপোস্ট।

বঙ্গদেশে স্বাধীন গৌড় রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন ভোজবংশীয় রাজা শশাঙ্ক (নরেন্দ্র গুপ্ত) আনুমানিক ৬০২ সাধারণ অব্দে। শশাঙ্কের আমলে গৌড়ের রাজধানী ছিল বর্তমান মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত কর্ণসুবর্ণ। শশাঙ্কের মৃত্যুর পর গৌড় চলে যায় সম্রাট হর্ষবর্ধনের দখলে। সেইসময় এখানে বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের প্রসার ঘটে। এর পরবর্তী পর্যায়ে গৌড়ে রাজত্ব করেন শূর বংশীয় রাজারা। আদিশূরের আমলে বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব কমে আসে, ব্রাহ্মণ্য ধর্মের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। শশাঙ্কের মৃত্যুর পর প্রায় একশো বছরেরও বেশি সময়জুড়ে একধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। সেই টালমাটাল অবস্থার অবসান হয়  পাল রাজবংশের আমলে। পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম গোপালদেব ৭৭৫ সালে গৌড়ের সিংহাসনে বসেন। গোপালদেবের পুত্র ধর্মপাল এবং ধর্মপালের পুত্র দেবপালের সময় গৌড়ের ইতিহাসে সমৃদ্ধির যুগ। এইসময়ের দুই বিশিষ্ট ভাস্কর ধীমান ও বীটপালের অসামান্য ভাস্কর্যে সমৃদ্ধ হয় গৌড়। পাল রাজাদের আমলে, বিশেষত ৭৭৫ থেকে ১১১৫ সালের মধ্যে গৌড় সাম্রাজ্যে বৌদ্ধ ধর্মের বিশেষ প্রসারের প্রমাণ মেলে। অনেক বৌদ্ধবিহার, মঠ, বিদ্যালয়, এমনকি মহাবিদ্যালয় এইসময় তৈরি হয়। ১১১৯ (মতান্তরে ১১২০) সালে পালরাজা রামপালের মৃত্যুর পর গৌড়ে শুরু হয় সেনবংশের শাসন। বল্লাল সেনের রাজত্বকালে শিক্ষা, সংস্কৃতিতে গৌড়ের রমরমা ছিল বিশ্বজোড়া। লক্ষণসেনের রাজত্বকালে এই অঞ্চলের নাম হয় লক্ষণাবতী। ১১৯৮ সালে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজি প্রথম গৌড় আক্রমণ করেন। সেবারে তিনি সফল না হলেও ১২০২ (মতান্তরে ১২০৩/১২০৪) সালে বখতিয়ার খলজি সফলতা লাভ করেন। লক্ষণসেন পালিয়ে যান। গৌড়ে শুরু হয় নবাবী শাসন। লক্ষণাবতী নাম পরিবর্তিত হয়ে গৌড় পরিচিতি পায় লখনৌতি নামে। বস্তুত: খলজি ছিলেন বাংলার প্রথম মুসলিম শাসক। তিনি গৌড়বিজয়ের স্মৃতি অমর করে রাখতে তৎকালীন দিল্লির সুলতান মুহম্মদ ঘোরির সম্মানে স্বর্ণমুদ্রা প্রচলন করেন এবং মুদ্রার ওপর সংস্কৃতে ‘গৌড়ীয় বিজয়’ কথাটা লিপিবদ্ধ করেন। নানা উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে ১৩৩৯ সালে পাঠান বংশ গৌড়ের দখল নেয়। আফগান নায়ক ফকরুদ্দিন সুলতান হন। আরও কিছুসময় পরে, হিন্দু রাজা গণেশের পুত্র যদু বাবার আদেশে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে জালালউদ্দিন নাম নিয়ে গৌড়ে কিছুদিন (১৪১৪-১৪৩০) রাজত্ব করেন। এরপরে ১৪৪২ সালে ইলিয়াসশাহী বংশ গৌড় দখল করে। তার পরের পর্যায়ে ১৪৯৪ থেকে ১৫২৫ সালে গৌড়ে হোসেনশাহী বংশের শাসন চলে। এই বংশের শাসনকালেই গৌড়ের রামকেলি গ্রামে চৈতন্যদেব আসেন। হোসেনশাহী বংশের রাজত্বকাল ও চৈতন্যদেবের রামকেলিতে আগমন গৌড়ের ইতিহাসে এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা যার প্রভাবে ছিল সুদূরপ্রসারী। ১৫৩৭ এ শের শাহ সুরীর অভিযান ও ১৫৭৫ সালের প্লেগ-মহামারীতে শেষ হয় গৌড়ের অতীত গৌরব। এখন গৌড়ে যে স্থাপত্যগুলো দেখা যায় তা মূলত: সুলতানি শাসনের স্মৃতি বয়ে নিয়ে চলেছে।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

গৌড় ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক হলো মালদাকে কেন্দ্র করে ঘোরা। শিয়ালদা, হাওড়া বা কলকাতা স্টেশন থেকে দিনের বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু ট্রেন আছে মালদা যাওয়ার জন্য। যদিও গৌড়ের সবচেয়ে কাছের রেলস্টেশন গৌড় মালদা, তবুও গৌড় ঘোরার জন্য সুবিধাজনক হলো মালদা টাউন স্টেশনে নামা।
এছাড়াও উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ, কলকাতা স্টেট ট্রান্সপোর্টের বিভিন্ন ধরণের বাস (শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, রকেট, ডিলাক্স ও এক্সপ্রেস বাস ইত্যাদি) কলকাতা ময়দান বা উলটোডাঙ্গার বাস টার্মিনাস থেকে ছেড়ে মালদা যায়। এগুলো বেশিরভাগই রাতের দিকে ছেড়ে ভোরবেলা  মালদা পৌঁছোয়।

মালদা শহরের কেন্দ্রস্থলে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ওপর অবস্থিত রথবাড়ি মোড় থেকে সহজেই টোটো বা প্রাইভেট গাড়ি পাওয়া যায় গৌড় যাবার জন্য। রথবাড়ি মোড় থেকে গৌড়ের দূরত্ব প্রায় ১৬ কিলোমিটার। টোটো বা প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে ঘন্টা চার-পাঁচেকের মধ্যে দেখে নেওয়া যায় গৌড়ের প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলো।

মালদা শহরে হোটেলের অভাব নেই। রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন অঞ্চলে বেশ কিছু ছোট বড় বিভিন্ন মানের ও দামের হোটেল ও লজ আছে। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ট্যুরিস্ট লজ আছে শহরের কেন্দ্রে।

পিয়াস বারি: গৌড় ভ্রমণে বেরিয়ে প্রথমেই দেখে নেওয়া যেতে পারে পিয়াস বারি বা পিয়াজবাড়ি। অদ্ভুত এক নির্মমতার ইতিহাস আছে ৩৩ একর দীঘি সংলগ্ন প্রায়-লুপ্ত এই বাড়িটি ঘিরে। সম্রাট নসরত শাহের মৃত্যদন্ড দেওয়ার পদ্ধতি ছিল অভিনব। আকণ্ঠ মিষ্টি খাইয়ে অপরাধীকে আটকে রাখা হোতো বদ্ধ ঘরে। সামনের বিস্তীর্ন দীঘি দেখে তেষ্টা বা পিয়াসা যেত বেড়ে। পিপাসার্ত মানুষ ঢলে পড়তো মৃত্যুর কোলে। শোনা যায় সেসময় দীঘির জলও ছিল বিষাক্ত।

রামকেলি: পিয়াসবাড়ির কাছেই শ্রীচৈতন্যের স্মৃতিবিজড়িত রামকেলি গ্রাম। ষোড়শ শতকের গোড়ার দিকে হুসেন শাহের রাজত্বকালে মহাপ্রভু আসেন রামকেলিতে। তমাল ও কদম গাছের নিচে চৈতন্যদেবের যুগল পদচিহ্ন আজও ধরে রেখেছে সেই স্মৃতি। হুসেন শাহের দুই মন্ত্রী চৈতন্যভক্ত রূপ ও সনাতন গোস্বামীর তৈরি মদনমোহন জীউ মন্দির বিশেষ দ্রষ্টব্য। চৈতন্যদেবের রামকেলি আসার সময়কাল উপলক্ষ্যে এখনও প্রতিবছর জৈষ্ঠ্য সংক্রান্তিতে বিরাট মেলা বসে এখানে।

বড়সোনা-মসজিদ
বড়সোনা মসজিদ। ছবি ইন্টারনেট।

বারোদুয়ারী: গৌড়ের সৌধগুলোর মধ্যে অন্যতম বারোদুয়ারী বা বড়সোনা মসজিদ। প্রায় ১২ মিটার উঁচু, দৈর্ঘ্য-প্রস্থে বিশালাকার (৫০.৪ মিটার X ২২.৮ মিটার) এই মসজিদ তৈরি শুরু হয় আলাউদ্দিন হুসেন শাহের আমলে, শেষ করেন তাঁর পুত্র নাসিরুদ্দিন নসরত শাহ ১৫২৬ সালে। নাম বারোদুয়ারী হলেও এর দুয়ার বা দরজা আসলে ১১টা। শোনা যায় বাদশা আসতেন এই মসজিদে নামাজ পড়তে। ইন্দো-আরবীয় শৈলীর মিশ্রণে তৈরি এই মসজিদ নির্মাণ শুরু হয় ইঁট দিয়ে, পূর্ণতা পায় পাথরের কাজে। ৪৪ টা গম্বুজের মধ্যে মাত্র ১১ টা এখন টিকে আছে। গম্বুজের সোনালি চিকন কাজের জন্য একে সোনা মসজিদ বলে, আর আকৃতির বিশালত্বের জন্য নাম বড়সোনা মসজিদ।

দাখিল-দরওয়াজা
দাখিল দরওয়াজা। ছবি ইন্টারনেট।

দাখিল দরওয়াজা: ফারসি শব্দ দাখিল এর অর্থ প্রবেশ। পরিখা দিয়ে ঘেরা প্রাচীরবেষ্টিত প্রাসাদের প্রবেশের মূল দ্বার বা দরজা ছিল দাখিল দরওয়াজা। পোড়ামাটি ও লাল ইঁটের অসাধারণ কাজের জন্য দাখিল দরওয়াজাকে বিশেষ স্বীকৃতি দিয়েছে The Cambridge History of India। ১৪২৫ সালে এই দাখিল দরওয়াজা তৈরি। সম্ভবত একসময় এখান থেকে তোপ দেগে সেলাম জানানো হোতো গণমাণ্য ব্যক্তিদের, তাই এর আর এক নাম সালামী দরওয়াজা।

ফিরোজ-মিনার
ফিরোজ মিনার। ছবি ইন্টারনেট।

ফিরোজ মিনার: গৌড়ের অন্যতম বিশেষ আকর্ষণ দিল্লির কুতুব মিনারের আদলে তৈরি ফিরোজ মিনার। হাবসি সুলতান সইফ উদ্দিন ফিরোজ শাহ তাঁর গৌড় বিজয়ের স্মারক হিসেবে ১৪৮৫-১৪৮৯ এই পাঁচ বছর সময়কালের মধ্যে এই মিনার নির্মাণ করিয়েছিলেন। তুঘলকি স্থাপত্যশৈলীতে তৈরি ৮৪ শঙ্খপ্যাঁচ সিঁড়ি বিশিষ্ট পাঁচতলা এই মিনার পীর-আশা-মিনার বা চিরাগদানি নামেও পরিচিত। কথিত আছে, মিনার নির্মাণের পরে স্থপতি পিরুকে মিনারের ওপর থেকে ফেলে দেওয়া হয়।

কদম-রসুল-মসজিদ
কদম রসুল মসজিদ। ছবি ইন্টারনেট।

কদম রসুল মসজিদ: রসুল অর্থাৎ পয়গম্বর হজরত মুহম্মদের কদম বা পায়ের চিহ্ন ধরে রেখেছে এই মসজিদ। জনশ্রুতি, মদিনা থেকে হজরত মুহম্মদের পায়ের ছাপ নিয়ে এসেছিলেন আলাউদ্দিন হুসেন শাহ। মসজিদের চার কোণে চারটে কালো মার্বেলের  মিনার রয়েছে। এই মসজিদের উল্টোদিকে রয়েছে ঔরঙ্গজেবের সেনাপতি দিলওয়ারের ছেলে ফতে খাঁ এর সমাধি। আশ্চর্জনক ভাবে সেই সমাধি মসজিদ হিন্দু নির্মাণশৈলী দো-চালার ঢঙে তৈরি।

চিকা মসজিদ। ছবি ইন্টারনেট।

চিকা মসজিদ: ১৪৭৫ সালে সুলতান ইউসুফ শাহের তৈরি এক গম্বুজওয়ালা মসজিদ চিকা মসজিদ। শোনা যায় একসময়ে বিপুল সংখ্যক চিকা বা বাদুড়ের বাস ছিল এইখানে, আর সেখান থেকেই এই নাম। চাকচিক্যময় অলঙ্করণের জন্য চামখানা নামেও পরিচিতি ছিল এই মসজিদের। অনেক হিন্দু স্থাপত্যের নিদর্শন পাওয়া যায় এর অলংকরণে। একসময় চৈতন্যপ্রীতির জন্য রূপ ও সনাতনকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল এখানে। পরে অবশ্য কারাররক্ষীর সাহায্যে এখানে থেকে পালিয়ে গঙ্গা পেরিয়ে রূপ-সনাতন চলে যান চৈতন্যদেবের কাছে।

লুকোচুরি গেট বা লক্ষছিপি দরওয়াজা: সুলতান তাঁর বেগমদের সাথে লুকোচুরি খেলতেন এইখানে। এই দরওয়াজা কে নির্মাণ করেছিলেন সে নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। গরিষ্ঠ মত বলে, ১৬৫৫ সালে শাহ সুজার সময়ে লুকোচুরি গেট তৈরি; মতান্তরে ১৫২২ সালে হুসেন শাহ এর নির্মাতা।

ইতিহাসের খোঁজে আসা পর্যটকেরা আশপাশে ঘুরে দেখে নিতে পারেন তাঁতিপাড়া মসজিদ, ছোটসোনা মসজিদ, লোটন মসজিদ, গুণমন্ত মসজিদ, চমকাটি মসজিদ, কোতোয়ালি দরওয়াজা। শোনা যায়, এই কোতোয়ালি দরওয়াজা দিয়েই নাকি বখতিয়ার খলজি গৌড়ে প্রবেশ করেন।

গৌড় ভ্রমণে এসে মালদাকে কেন্দ্র ঘুরে নেওয়া যায় পান্ডুয়া। এই পান্ডুয়াও এক সময় ছিল বাংলার রাজধানী। পাণ্ডুয়ার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থাপত্যের মধ্যে আদিনা মসজিদ, একলাখি মসজিদ, বড়ি দরগাহ, ডিয়ার পার্ক উল্লেখযোগ্য। মালদা সদর থেকে উত্তর-পূর্বে প্রায় ৪১ কিলোমিটার দূরে জগজ্জীবনপুরে পাওয়া গেছে নবম শতকের বৌদ্ধবিহার। উৎসাহীরা ঘুরে আসতে পারেন সেখানেও।

গৌড় ভ্রমণের আদর্শ সময় নভেম্বর থেকে মার্চের মাঝামাঝি। এইসময় আবহাওয়া মোটামুটি আরামদায়ক। মার্চের পরেই গরমের বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে গরম হাওয়ার প্রকোপ, পর্যটকদের জন্য যা বেশ অস্বস্তিকর।

গৌড়ের বেশিরভাগ স্থাপত্যই পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তার সাথে রয়েছে ধুলোর প্রকোপ। কাজেই, যাঁদের ডাস্ট এলার্জি রয়েছে তাঁদের অবশ্যই গৌড় ভ্রমণের সময় মাস্ক বা কাপড় ব্যবহার করা উচিত। বিকেলের পরে যানবাহন চলাচল কমে আসে, সন্ধ্যের পরে গৌড়ে ঘোরা বিশেষ নিরাপদ নয়।

মালদা শহর থেকে গৌড়ের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার সময় জল ও খাবার সঙ্গে রাখা ভালো। ওই অঞ্চলে টুকটাক কিছু খাবারের দোকান ছাড়া বিশেষ কিছু পাওয়া যায়না। রামকেলি মেলার সময় বেশ ভিড় হয় গৌড়ে। সেইসময় যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলে আগে থেকে হোটেল বুক করে যাওয়া বাঞ্ছনীয়।


ট্রিপ টিপস

  • কিভাবে যাবেনঃ শিয়ালদা বা হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেনে মালদা টাউন স্টেশনে নামতে হবে। এছাড়াও কলকাতা ময়দান বা উলটোডাঙ্গার বাস টার্মিনাস থেকে বাসে মালদা যাওয়া যায়। মালদায় পৌঁছে টোটো, প্রাইভেট গাড়ি বুক করে গৌড় ঘুরে আসা যায়।
  • কোথায় থাকবেনঃ রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন অঞ্চলে বেশ কিছু ছোট বড় বিভিন্ন মানের ও দামের হোটেল ও লজ আছে। এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ট্যুরিস্ট লজ আছে শহরের কেন্দ্রে।
  • কী দেখবেনঃ পিয়াসবারি, রামকেলি, বারোদুয়ারী, দাখিল দরওয়াজা, ফিরোজ মিনার ইত্যাদি। এছাড়াও ঘুরে নেওয়া যায় পাণ্ডুয়া, জগজ্জীবনপুর।  
  • কখন যাবেনঃ গৌড় ভ্রমণের আদর্শ সময় নভেম্বর থেকে মার্চের মাঝামাঝি।
  • সতর্কতাঃ গৌড়ে ধুলোর প্রকোপ বেশি। তাই, যাঁদের ডাস্ট এলার্জি রয়েছে তাঁদের অবশ্যই মাস্ক বা কাপড় ব্যবহার করা উচিত।
  • গৌড় ভ্রমণ শেষ করে সন্ধ্যের আগেই শহরে ফিরে আসা বাঞ্ছনীয়।

তথ্যসূত্র


  1. মালদহের দেবদেউল - ড. নিমাইচন্দ্র ঝা, প্রকাশকঃ সংবেদন, মালদা
  2. ভ্রমণ সঙ্গী - গীতা দত্ত, মৃণাল দত্ত; ISBN: 81-7942-022-1, প্রকাশকঃ এশিয়া পাবলিশিং কোম্পানি
  3. https://en.wikipedia.org/wiki/Gau%E1%B8%8Da_(city)
  4. http://archive.prothom-alo.com/print/news/79582

আপনার মতামত জানান