হেলেন কেলার

হেলেন কেলার

পৃথিবীর ইতিহাসে এমন একেকজন মানুষ জন্মেছেন যাঁরা নিজেদের দুর্বলতাকে প্রবল প্রাণশক্তির বলে জয় করে এগিয়ে গেছেন সাফল্যের পথে। সেই তালিকায় নিঃসন্দেহে এক গুরুত্বপূর্ণ  স্থান পাবেন আমেরিকান সাহিত্যিক হেলেন কেলার (Helen Keller)। কেবলমাত্র সাহিত্যিক হিসেবে তাঁর পরিচিতি নয়, রাজনৈতিক কর্মী, সুবক্তা এবং প্রতিবন্ধী মানুষদের জন্য আজীবন লড়াই করে যাওয়া এক মানুষ ছিলেন হেলেন। একেবারে শৈশবাবস্থায় তিনি শ্রবণ ও দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছিলেন কিন্তু পড়াশুনা বন্ধ করেননি। প্রথম অন্ধ-বধির মানুষ হিসেবে তিনি ব্যাচেলর অব আর্টস ডিগ্রি লাভ করেন। নারীদের ভোটাধিকার, শ্রম অধিকার, প্রতিবন্ধীদের অধিকার, বিশ্বশান্তির পক্ষে আজীবন প্রচার চালিয়ে গেছেন তিনি। আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন হেলেন। চার্লি চ্যাপলিন, মার্ক টোয়েনের মতো মানুষদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল তাঁর। আমেরিকান স্যোশালিস্ট পার্টির সদস্যপদ অলঙ্কৃত করেছিলেন তিনি। সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন বরাবরই। সারাবিশ্বের প্রায় ৩৫টি দেশ ভ্রমণ করেছেন তিনি। ন্যাশনাল উওমেন’স হল অব ফেম-এ অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন হেলেন কেলার।

১৮৮০ সালের ২৭ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামা শহরের তুসকুম্বিয়াতে আইভি গ্রিন নামক এক বসতবাড়িতে হেলেন অ্যাডামস কেলারের জন্ম হয়। তাঁর বাবা আর্থার হেনলি কেলার গৃহযুদ্ধের সময় কনফেডারেট আর্মির হয়ে লড়াই করেছিলেন এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদমর্যাদা অর্জন করেছিলেন। এছাড়াও একটি স্থানীয় সাপ্তাহিক সংবাদপত্র ‘নর্থ আলবামিয়ান’-এর সম্পাদক ছিলেন আর্থার হেনলি কেলার। হেলেনের মা ক্যাথরিন অ্যাডামস কেলার ছিলেন আর্থারের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। তাঁদের পারিবারিক আয়ের মূল উৎস ছিল তুলোর বাগান। হেলেনের মোট চার ভাইবোন ছিল। তাঁর নিজস্ব দুই ভাইবোনের নাম মিলড্রেড ক্যাম্পবেল (কেলার) টাইসন এবং ফিলিপ ব্রুকস কেলার। এছাড়াও তাঁর বাবার প্রথম পক্ষের সন্তান, সম্পর্কে তাঁর সৎ দাদা ছিলেন দুজন, তাঁরা হলেন, জেমস ম্যাকডোনাল্ড কেলার এবং উইলিয়াম সিম্পসন কেলার।

হেলেন কেলার মাত্র ১৯ মাস বয়সে সম্ভবত স্কারলেট ফিভার অথবা মেনিনজাইটিস নামক একটি রোগে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি এবং শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। এই শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে অন্যের সঙ্গে কথোপকথন বা সংযোগ স্থাপনে সমস্যা হত তাঁর। কেবলমাত্র তাঁদের বাড়ির এক রান্নার লোক মার্থা ওয়াশিংটনের সঙ্গে তিনি সহজেই যোগাযোগ স্থাপন করতে পারতেন। মার্থা হেলেনের দেখানো অনেক চিহ্ন এবং সংকেত বুঝতে পারত। বাড়ির মানুষদের সঙ্গে কথা বলার জন্য তিনি এরকম ৬০টি সংকেত ও চিহ্ন তৈরি করেছিলেন।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

সেসময় হেলেনের বাবা তাঁকে চোখ, কান, নাক এবং গলার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জে.জুলিয়ান. চিসলমের কাছে নিয়ে যান। এই প্রথম একটি পেশাদার শিক্ষণ পদ্ধতির মধ্যে হেলেনকে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁর মা চার্লস ডিকেন্সের ‘আমেরিকান নোটস’-এর অন্ধ ও বধির এক মহিলা লরা ব্রিজম্যানের সফল শিক্ষালাভ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়ে এই পরিকল্পনা করেছিলেন। ডাক্তার জুলিয়ান হেলেনকে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের কাছে রেফার করেন, যিনি তখন বধির শিশুদের শিক্ষা নিয়ে কাজ করছিলেন। ৬ বছর বয়সে গ্রাহাম বেল হেলেনকে দেখেছিলেন এবং তিনিই হেলেনের পরিবারকে পারকিন্স ইনস্টিটিউট ফর দ্য ব্লাইন্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। সেই স্কুলের পরিচালক মাইকেল অ্যানাগনস সেখানকারই প্রাক্তন এক ছাত্রী এবং দৃষ্টিশক্তিহীন অ্যান সুলিভানকে কেলারের প্রশিক্ষক হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সুলিভান রাজী হয়েছিলেন এবং এরপর প্রায় আজীবন এক অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে হেলেনের পাশে ছিলেন তিনি।

আশপাশের নানারকম শব্দ ও ধারণাগুলি সুলিভান যখন হাতের তালুতে আঙুল দিয়ে বানান করে সেগুলি সম্পর্কে শেখানোর চেষ্টা করছিলেন হেলেনকে, প্রাথমিক পর্যায়ে তা শিখতে ভীষণই অসুবিধা হচ্ছিল হেলেনের। এমনকি একবার ‘মগ’ শব্দটি ঠিকমতো শিখে উঠতে অসুবিধা হওয়ায় হতাশায় ও রাগে একটি মগ ছুঁড়ে ভেঙে ফেলেছিলেন তিনি। তবে এরকম শিক্ষার কারণে হেলেন বুঝতে পেরেছিলেন যে বস্তুর নাম আছে। কিভাবে জল সম্পর্কে ধারণা তৈরি করে দিয়েছিলেন সুলিভান, তা নিজের আত্মকথায় লিখেছিলেন হেলেন। ক্রমে একটা সময় পর তিনি বীট অনুভব করে সঙ্গীত উপভোগ করতে শুরু করেন এবং স্পর্শের সাহায্যে প্রাণীদের সঙ্গেও একটি শক্তিশালী সংযোগ স্থাপনেও সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। মাত্র তিনবছরেই সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ এবং অন্ধদের যোগাযোগের জন্য নির্মিত ব্রেইল বর্ণমালা আয়ত্ত করে পড়তে ও লিখতে শুরু করেন হেলেন।

১৮৮৮ সালের মে মাসে হেলেন পারকিন্স ইনস্টিটিউট ফর দ্য ব্লাইন্ডে যোগদান করেন। ১৮৯০ সালে বোস্টনের হোরেস মান স্কুল ফর দ্য ডিফ-এ স্পীচ বা কথা বলার ক্লাস করতে শুরু করেন তিনি। সেই স্কুলে সারাহ ফুলার তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন। বক্তার ঠোঁটে এবং গলায় আঙুল রেখে ঠোঁট পড়তে শিখেছিলেন তিনি। ১৪ বছর বয়সে অর্থাৎ ১৮৯৪ সালে তিনি  নিউইয়র্ক সিটির রাইট-হিউমাসন স্কুল ফর দ্য ডিফ-এ ভর্তি হন, সঙ্গে ছিলেন সুলিভানও। সেই স্কুলে যোগাযোগ দক্ষতা উন্নত করবার কাজে এবং নিয়মিত একাডেমিক নানা বিষয়ে অধ্যয়নের কাজে মগ্ন ছিলেন হেলেন। দুবছর সেই স্কুলে কাটানোর পর তাঁরা ম্যাসাচুসেটসে ফিরে আসেন এবং কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে ওঠেন তিনি। ১৮৯৬ সালে ‘দ্য কেমব্রিজ স্কুল ফর ইয়াং লেডিজ’-এ ভর্তি হন হেলেন। সেসময় সাহিত্যিক মার্ক টোয়েনের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় তাঁর। টোয়েন তাঁকে হেনরি হাটলস্টন রজার্সের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। সেই রজার্স এবং তাঁর স্ত্রী হেলেনের পড়াশুনার জন্য অর্থায়নে সাহায্য করেছিলেন৷ ১৯০০ সালে হেলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাডক্লিফ কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯০৪ সালে ২৪ বছর বয়সে সেই কলেজ থেকেই ফি বেটা কাপার সদস্য হিসেবে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনে সক্ষম হন। হেলেনই প্রথম অন্ধ-বধির ব্যক্তি ছিলেন যিনি আর্টস ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। এখানে উল্লেখ্য যে, স্নাতক হওয়ার আগেই ১৯০৩ সালে হেলেনের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ ‘দ্য স্টোরি অব মাই লাইফ’ প্রকাশিত হয়েছিল।

অস্ট্রিয়ান দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ উইলহেম জেরুজালেমের সঙ্গে পত্রবিনিময় চলত হেলেনের৷ উইলহেমই প্রথম হেলেনের অসাধারণ সাহিত্যিক প্রতিভাকে আবিষ্কার করেছিলেন বলা যায়। ১৯০৫ সালে সুলিভান হার্ভার্ড প্রশিক্ষক এবং সামাজিক সমালোচক জন ম্যাসিকে বিবাহ করলে হেলেন তাঁদের সঙ্গেই  থাকতেন। ১৯১৪ সাল নাগাদ সুলিভানের স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে। বাড়ির দেখভালের জন্য পলি থম্পসন নামে একটি মেয়েকে নিয়োগ করেন হেলেন। স্কটল্যান্ডের এই তরুণীটির ইতিপূর্বে অন্ধ-বধির মানুষদের সঙ্গে থাকার অভিজ্ঞতা কখনও হয়নি। এই পলিই একসময় হেলেনের অবিরাম সহচরী হয়ে উঠেছিলেন।
এইসময় রাজনৈতিকভাবে ভীষণই সচেতন হয়ে ওঠেন হেলেন। নারীদের ভোটাধিকার আন্দোলনকে সমর্থন করেন, উগ্র সমাজতন্ত্রে আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে শুরু করেন, অন্ধ-বধির, প্রতিবন্ধী মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে উকিলের মতো তাঁদের অধিকারের জন্য সওয়াল করতে থাকেন তিনি। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে একজন শান্তিবাদী হিসেবে শান্তির বার্তা প্রচারে সক্রিয় হয়েছিলেন হেলেন। জন্ম নিয়ন্ত্রণকে সমর্থন করেন তিনি এবং বিরোধিতা করেন উড্রো উইলসনের। সংসদীয় সমাজতন্ত্রের বিরোধী ছিলেন তিনি এবং ১৯১২ সালে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’-এ যোগদান করেছিলেন। মূলত ম্যাসাচুসেটসের লরেন্সে টেক্সটাইল শ্রমিকদের ধর্মঘট তাঁকে বৃহত্তর সমাজতন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করে তুলেছিল। তার আগে ১৯০৯ সালে আমেরিকান সমাজবাদী পার্টির সদস্য হন তিনি এবং ১৯০৯ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত শ্রমিক শ্রেণীর সমর্থনে সক্রিয়ভাবে প্রচারকার্যে অংশ নিয়েছিলেন, অনেকগুলি লেখাও লিখেছিলেন। স্যোশালিস্ট পার্টির সদস্য ইউজিন.ভি ডেবসেকের রাষ্ট্রপতি পদের জন্য প্রতিটি প্রচারকে সমর্থন করেছিলেন হেলেন। ১৯১৫ সালে হেলেন এবং জর্জ.এ.কেসলার ‘হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল’ নামক একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই সংস্থাটিতে দৃষ্টি, স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি বিষয়ে গবেষণা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান এবং আইন দ্বারা এই দেশের প্রতিটি ব্যক্তির জন্য স্বতন্ত্র অধিকার এবং স্বাধীনতার নিশ্চয়তা রক্ষা এবং সংরক্ষণের জন্য হেলেন ১৯২০ সালে জেন অ্যাডামস, ক্রিস্টাল ইস্টম্যান এবং অন্যান্য সামাজিক কর্মীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে ‘আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড থেকে শুরু করে লিন্ডন বি জনসন পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি।

১৯২১ সালে যখন আমেরিকান ফাউন্ডেশন ফর দ্য ব্লাইন্ড তৈরি হয়েছিল তখন তার নেপথ্যে হেলেনও সক্রিয় ছিলেন। ১৯২৪ সালে এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হন এবং অন্ধদের জন্য সচেতনতা, অর্থ এবং সমর্থন বাড়াতে প্রচারাভিযান শুরু করেছিলেন। তিনি পার্মানেন্ট ব্লাইন্ড ওয়ার রিলিফ ফান্ডের (পরবর্তীকালে আমেরিকান ব্রেইল প্রেস) মতো সংস্থাগুলির সঙ্গেও যুক্ত হয়েছিলেন।
সুলিভানের সঙ্গে প্রায় ৪০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেছিলেন হেলেন। সেগুলির মধ্যে জাপান ভ্রমণ ছিল উল্লেখযোগ্য। হেলেন সেখানকার মানুষদের কাছে খুবই প্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। হেলেন একজন বিখ্যাত বক্তা হয়ে উঠেছিলেন। বধির মানুষদের অবস্থা সম্পর্কে অনুপ্রেরণামূলক বক্তৃতা দেওয়ার জন্য প্রায় পঁচিশটি দেশে গিয়েছিলেন তিনি।

১৯৩৬ সালে করোনারি থ্রম্বোসিসের জেরে সুলিভানের মৃত্যু হলে কেলার এবং থমসন চলে আসেন কানেকটিকাটে। সুলিভানের মৃত্যুর পর বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ শুরু করেন হেলেন, অন্ধদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেন এবং বক্তৃতাও দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সৈন্যদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য সামরিক হাসপাতালও পরিদর্শন করেছিলেন তিনি। ১৯৫৭ সালে থমসনের স্ট্রোক হওয়ার পর আর তিনি সুস্থ হননি। থমসনের দেখাশোনার জন্য উইনি কর্বালি নামের এক নার্সকে নিযুক্ত করেন হেলেন। ১৯৬০ সালে থমসনের মৃত্যু হলেও কর্বালি আজীবন হেলেনের সঙ্গে থেকে গিয়েছিলেন। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩৫টি দেশ ভ্রমণ করেছিলেন হেলেন।

অনেক ছোট বয়স থেকেই লেখালেখির চর্চা শুরু করেছিলেন হেলেন। ১৮৯১ সালে পারকিন্স ইনস্টিটিউট ফর দ্য ব্লাইন্ডের পরিচালক মাইকেল অ্যানাগনসকে জন্মদিনের উপহার স্বরূপ ‘দ্য ফ্রস্ট কিং’ নামের একটি গল্প লিখে দিয়েছিলেন। ভীষণ খুশি হয়ে অ্যানাগনস তা পারকিন্সের প্রাক্তন ছাত্রদের ম্যাগাজিনে প্রকাশ করেছিলেন। পরবর্তীকালে জানা যায় হেলেনের গল্পটির সঙ্গে পূর্ব প্রকাশিত একটি গল্পের ভীষণই মিল রয়েছে। হয়তো অনেকদিন আগে তিনি গল্পটি পড়েছিলেন এবং স্মৃতি থেকে নিয়ে গল্পটি পুনরায় নির্মাণ করেছিলেন। এই চুরির অভিযোগ অ্যানাগনস এবং হেলেন উভয়কেই আহত করেছিল। এরপর ১৯০৩-এ আত্মজীবনীমূলক রচনা ‘দ্য স্টোরি অব মাই লাইফ’ প্রকাশ পায়। সেবছরই ‘অপটিমিজম’ নামে তাঁর আরেকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯০৮ সালে রচনা করেন ‘দ্য ওয়ার্ল্ড আই লিভ ইন’। ১৯১৩ সালে তাঁর সমাজতন্ত্র বিষয়ে লেখা একগুচ্ছ প্রবন্ধ নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল ‘আউট অব দ্য ডার্ক’ নামক বিখ্যাত বই। ১৯২৭ সালে হেলেনের একটি আধ্যাত্মিক আত্মজীবনী ‘মাই রিলিজিয়ন’ প্রকাশ পেয়েছিল৷

হেলেনের জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেক তথ্যচিত্র, টেলিভিশন সিরিজ তৈরি হয়েছিল। ১৯১৯ সালে নির্মিত ‘ডেলিভারেন্স’ নামক নির্বাক চলচ্চিত্র তাঁর জীবন অবলম্বনে তৈরি। সেটিতে হেলেন নিজেও উপস্থিত হয়েছিলেন। তাঁর ‘দ্য স্টোরি অব মাই লাইফ’ থেকে ‘দ্য মিরাকল ওয়ার্কার’ নামে একটি নাটক নির্মিত হয়। ১৯৫৭ সালে তা ‘প্লেহাউস ৯০’ নামক টেলিপ্লে অনুষ্ঠানে দেখানো হয়। ১৯৬২তে তা থেকেই অস্কারজয়ী ফিচার ফিল্ম তৈরি হয়৷ ১৭৯৭ এবং ২০০০ সালে পুনরায় সেটি টেলিভিশনের জন্য পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৯৮৪ তে হেলেন কেলার: দ্য মিরাকল কন্টিনিউজ নামে টিভি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছিল। এছাড়াও বলিউডের ‘ব্ল্যাক’ নামে ছবিটি হেলেনের জীবন থেকেই অনুপ্রাণিত।

১৯৬৪-এর ১৪ই সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি জনসন হেলেনকে প্রেসিডেন্ট মেডেল অব ফ্রীডম প্রদান করেন। ১৯৬৫তে ‘ন্যশানাল উওমেন’স হল অব ফেমে’ নির্বাচিত হন তিনি। মৃত্যুর পর তাঁকে সম্মান জানিয়ে তাঁর নামে রাস্তা, ডাকটিকিট, স্কুলের নামকরণ করা হয় এমনকি ব্রোঞ্জ মূর্তিও নির্মাণ করা হয়েছিল।

১৯৬৮ সালের ১ জুন কানেকটিকাটের ইস্টনে নিজের বাড়িতেই ঘুমের মধ্যে হেলেন কেলারের মৃত্যু হয়।

আপনার মতামত জানান