মালদা - হিমসাগর আমের স্বর্গ রাজ্য

মালদা – হিমসাগর আমের স্বর্গ রাজ্য

বাঙালির পরিচয় যেমন সিনেমায় উত্তমকুমার গানে মান্না হেমন্ত খাবারে লুচি, ইলিশমাছ আর রসগোল্লা তেমনি ফলের মধ্যে আম। বাঙালি আর আম যেন সমার্থক। ভারতবর্ষের জাতীয় ফল আম। পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে বেশি আম উৎপাদিত হয় ভারতে।  ভারতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আম উৎপাদন হয় বাংলায় আর বাংলার মধ্যে আমের স্বর্গরাজ্য মালদা। ২০০৭ সালে মালদার হিমসাগর আম জি আই স্বীকৃতি পেয়েছে । 

হিমসাগর পশ্চিমবঙ্গের একটি অত্যন্ত বিখ্যাত আম। হিমসাগর ক্ষীরসাপাতি নামেও পরিচিত। এই ক্ষীরসাপাতি আম প্রধানত দুই প্রকার -মালদা ক্ষীরসাপাতি এবং বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জের কুমারখাঁ ক্ষীরসাপাতি। বাংলায় এই আমকে তার স্বাদ ও গন্ধের কারণে আমের রাজা বলা হয়। ভারত ছাড়াও এই আম বাংলাদেশের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও সাতক্ষীরা জেলাতে চাষ হয়। বাংলার মধ্যে মালদা ছাড়াও নদীয়া, মুর্শিদাবাদ এবং হুগলীতে এই আম চাষ করা হয়। সাধারণত এই আমের আকার  গোল হয়। এর  আঁটি বেশ  ছোট‌ এবং আঁশহীন হয়।  সাধারণত জৈষ্ঠ মাসে শেষ সপ্তাহে এই আম পাকে। পাকা হিমসাগরের রং হলুদ হয়। হুগলীর চন্দননগর আর আর নদীয়ার শান্তিপুরের হিমসাগর বেশ সুস্বাদু । মালদার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত মহানদী এবং কালিন্দী নদীর তীর বরাবর সাধারণত এই আম চাষ হয়। পুরোনো পলিমাটি থেকে প্রাপ্ত লাল হয়ে যাওয়া মাটি এবং ক্রান্তীয় জলবায়ু এখানে আম চাষের সহায়ক পরিবেশ গড়ে তুলেছে। কেবল সহায়ক পরিবেশই নয় মালদায় উৎপাদিত আমের মধ্যে এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য যোগ করেছে যা ভারতের আর কোন আমে পাওয়া যায়না। এই ক্ষীরসাপাতি আম একদম ভোর ভোর দিনের আলো ফুটতেই গাছ থেকে পাড়া হয়। সাধারণত উপযুক্ত পরিবেশে এই আম এগারো দিন অবধি রাখা যায়। ২৫০ -৩৫০ গ্রাম ওজনের এক একেকটি আমে প্রায় ৭৭ শতাংশ শাঁস থাকে যা অন্যান্য যেকোন আমের তুলনায় নিঃসন্দেহে প্রায় অনেকটাই বেশি।

মালদায় উৎপাদিত প্রায় ২০০ প্রজাতির আমের মধ্যে ল্যাংড়া, হিমসাগর এবং লক্ষণভোগ আম  জি আই স্বীকৃতি পেয়েছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি কাউন্সিলের উদ্যোগেই মালদার ক্ষীরসাপাতি, ফজলি ও লক্ষ্মণভোগ আম জি আই ট্যাগ পেয়েছে। কেবল সারা ভারতজুড়েই কেবল মালদার আমের রপ্তানি হয়না বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও মালদার ক্ষীরসাপাতি আম আজ নিজের জায়গা করে নিয়েছে মালদা সেই প্রাচীনকাল থেকেই আমের জন্য  বিখ্যাত।  জি আই ট্যাগ প্রাপ্তি মালদার সেই আম ঐতিহ্যকেই স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব দরবারে।   

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

আপনার মতামত জানান