ঘামাচি হয় কেন

ঘামাচি হয় কেন এবং প্রতিকার কীভাবে

সেই ছোটবেলা থেকে মায়েদের মুখে আমরা সকলে শুনে আসছি ঘাম বসলে নাকি ঘামাচি হয়। তাই বেশি বেশি করে পাউডার মাখা। কিন্তু সত্যিই কি তাই? আসুন জেনে নিই, ঘামাচি হয় কেন? আর একবার যদি বুঝে যাই ঘামাচি হয় কেন তাহলে এর থেকে বাঁচার উপায় খুঁজতে সময় লাগবে না।

পরিবেশের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ত্বকের তাপগ্রাহক কোষ দ্বারা দেহে অত্যধিক তাপের অনুভূতি বোধ হয়। এই অবস্থায় শরীরকে ঠান্ডা করার জন্য ত্বকে থাকা ঘর্মগ্রন্থিগুলো ঘাম বের করে (ঘাম হয় কেন জানতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন)। এই ঘাম বাষ্পীভবনের সময়  ত্বক থেকে লীনতাপ নেয় ফলে শরীর শীতল হয়। কিন্তু অতিরিক্ত গরম ও আদ্রর্তাযুক্ত আবহাওয়াতে ঘর্মগ্রন্থিগুলো অতিরিক্ত ঘাম নিঃসরণ করার চেষ্টা করে। তখন কোনো ভাবে ময়লা আটকে বা টাইট জামাকাপড়ের পড়ার জন্য এই নিঃসরণের পথ বন্ধ হয়ে গেলে ঘাম বাইরে বেরোতে পারে না এবং ত্বকের মধ্যেই বিন্দু বিন্দু আকারে জমতে থাকে। একেই ঘামাচি বলে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ঘামাচিকে মিলিয়ারিয়া (miliaria) বলা হয়। মিলিয়ারিয়া আসলে ঘাম জমার ফলে ত্বকের ইনফ্লেমেশন। আবার অতিরিক্ত ঘাম জমার ফলে ঘর্মগ্রন্থি ফেটে ঘাম যদি ত্বকের নীচে বেরিয়ে এসে জ্বালা করে, তাহলে লাল ঘামাচি বেরোয়। এগুলিকেই বলে প্রিকলি হিট (prickly heat) চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় মিলিয়ারিয়া রুব্‌রা (miliaria rubra)। এগুলোই সবচেয়ে বেশি হতে দেখা যায়। এগুলো খুব চুলকায় এবং অস্বস্তিকর। মিলিয়ারিয়া রুব্‌রা না কমলে, ব্যাকটেরিয়াসংক্রমণ হয়ে কিছুদিন পর এতে পুঁজ তৈরি হতে পারে, তাকে বলে মিলিয়ারিয়া পাশ্চুলোসা (miliaria pustulosa)।

এ তো গেল ঘামাচি কেন হয় এবং তার নানান অবস্থার কথা। এবার জেনে নেব ঘামাচি কমানোর উপায় সম্বন্ধে। জিনগত ভাবে অনেকের বেশী ঘাম হয়। আবার গরমকালে গরম থেকে বাঁচতেও ঘাম বেশি হয়। এই সঙ্গে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে এবং মোটা, টাইট জামাকাপড় পড়লে ঘামাচি হওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও ঘামাচি হতে পারে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে ঘামের পরিমাণ কমাতে পারলে ঘামাচির সম্ভবনা কম। যেমন শীতকালে ঘামাচি প্রায় হয় না বললেই চলে। ঘামাচি এড়াতে শরীর ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করতে হবে। রোদে বাইরে বেরোলে হাল্কা রঙের পাতলা পোশাক পড়তে হবে। বার বার স্নান করে শরীর ঠান্ডা করতে হবে ও ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে। পাউডার ঘর্মগ্রন্থির ছিদ্র বন্ধ করে দিতে পারে। তাই জ্বালা ভাব হলে ক্যালামিন, মেন্থল দেওয়া লোশন লাগাতে পারেন। ফ্যান ও এসি তে বসে ঘাম জুড়িয়ে নিতে হবে। রুমালে বরফ জড়িয়ে ঘামাচি হওয়া জায়গায় মাঝে মাঝে বুলিয়ে নিলে প্রদাহ কমে যাবে। স্নানের সময় খুব বেশি সাবান দিয়ে ঘষলে ত্বকে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভবনা থাকে তাই সতর্ক থাকুন। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বিশেষ অ্যান্টি ফাঙ্গাল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহার করা উচিত। ছোটদের ঘর্মগ্রন্থি পরিপূর্ণতা পায় না তাই ওদের ঘামাচি বেশি হয়। বড়ো হয়ে গেলে এই সমস্যা অনেকটা মিটে যায়। প্রচুর জল ও ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই যুক্ত খাদ্য খেলে ঘামাচির সমস্যা কমে। ঘামাচির সমস্যা থাকলে একটু সাবধানতা অবলম্বন করলেই ঘামাচি কম হবে। বাড়াবাড়ি হলে অবশ্যই ডাক্তারবাবুদের পরামর্শ নেবেন।


সববাংলায় সাইটে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য আজই যোগাযোগ করুন
contact@sobbanglay.com


 

One comment

আপনার মতামত জানান