জাতীয় শিশু দিবস (বাংলাদেশ)

১৭ মার্চ ।। জাতীয় শিশু দিবস (বাংলাদেশ)

প্রতি বছর প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশেই কিছু দিবস পালিত হয়। ঐ নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশের পালনীয় সেই দিবসগুলির মধ্যে একটি হল জাতীয় শিশু দিবস (National Children’s Day)।

প্রতি বছর ১৭ মার্চ বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মদিন পালনার্থে সমগ্র বাংলাদেশ জুড়েই জাতীয় শিশু দিবস পালন করা হয়। শিশুদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল ছিলেন বঙ্গবন্ধু ছিলেন। তিনি নিজের জন্মদিন পালন করতে খুব একটা পছন্দ করতেন না। অন্যদিকে তাঁর জন্মদিনে বঙ্গবন্ধু শিশুদের সঙ্গেই সময় কাটাতে পছন্দ করতেন। শিশুরা তাঁকে খুবই ভালবাসত। ঐ দিন শিশুরা একজোট হয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা বার্তা জানাত। ফলে একদিকে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন আর অন্যদিকে শিশুদের প্রতি তাঁর পরম মমতাকে স্মরণীয় করে রাখতে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে প্রতি বছর এই বিশেষ দিনটি পালিত হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে প্রাথমিক পর্বে আন্তর্জাতিক শিশু দিবস পালিত হলেও ১৯৯৬ সাল থেকে ১৭ মার্চ দিনটিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মদিনের পাশাপাশি জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই সময় বাংলাদেশের শাসনক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ এবং তাদের সুপারিশেই ১৯৯৭ সাল থেকে সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে রাষ্ট্রীয় ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত পালনীয় বিশেষ দিবস হিসেবে ১৭ মার্চ পালিত হয়ে আসছে জাতীয় শিশু দিবস। এই দিনটিকে বাংলাদেশের সাধারণ ছুটির দিন হিসেবেও ধার্য করা হয়েছে। যদিও ২০০১ সালে সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয় হয় এবং বিনপি সরকার গঠিত হলে বিএনপি সরকার শিশু দিবস পালন ও এই দিনের সরকারি ছুটি বাতিল করে। ২০০২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৭ বছর বাংলাদেশে জাতীয় শিশু দিবস পালিত হয়নি। তারপরে নবম জাতীয় সংসদে পুনরায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে এবং এই দিনটি বিশেষ মর্যাদাসহ পালন করা শুরু হয়। ১৯২০ সালের এই দিনেই বাংলাদেশের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের। তাঁর বাবার নাম ছিল শেখ লুৎফর রহমান এবং মায়ের নাম ছিল সায়েরা খাতুন। চার ভাই আর দুই বোনের মধ্যে তৃতীয় সন্তান মুজিবর পরবর্তীকালে মুসলিম সেবা সমিতিতে যোগ দেন এবং গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ান। কিশোরবেলা থেকেই ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, ভলিবল ইত্যাদি খেলায় পারদর্শিতার পাশাপাশি ক্রমে ক্রমে রাজনীতির ময়দানে পা রাখেন তিনি। গোপালগঞ্জে প্রথমে মুসলিম ছাত্রলীগ এবং পরে মুসলিম লীগ এবং আরও পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গঠন করেন তিনি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যুত্থান এমনকি সত্তরের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা আবশ্যিক করে তোলার লক্ষ্যে তিনি ‘শিশু আইন, ১৯৭৪’ পাস করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার যজ্ঞে তাঁর আত্মবলিদান বাঙালি জাতি কখনও ভুলতে পারে না। তাই তাঁর জন্মদিনকে স্মরণীয় করে রাখতেই ১৭ মার্চ প্রতি বছর সমগ্র বাংলাদেশে পালিত হয় জাতীয় শিশু দিবস।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

২০২১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী হিসেবে টানা ১০ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল বাংলাদেশে। পাঁচটি দেশের প্রধানরা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এবং অন্যান্য আরও অনেক দেশের প্রধানরা ভিডিও বার্তায় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। ২০২১ সালের ১৭ মার্চ বিকেলের একটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের নাম ছিল ‘ভেঙেছো দুয়ার এসেছো জ্যোতির্ময়’। অন্যদিকে ১৯ মার্চ ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী। ২২ মার্চের অনুষ্ঠানের নাম ছিল ‘বাংলার মাটি আমার মাটি’ যেখানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন নেপালের রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভাণ্ডারী। এভাবে ২৪ মার্চ ‘শান্তি-মুক্তি ও মানবতার অগ্রদূত’ এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ৫০ বছর ও সুবর্ণরেখা অনুষ্ঠানে বহু বিশিষ্ট প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শেষ দিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও উপস্থিত ছিলেন। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠান ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে পালন করা হয়েছে। ঐ দিন সকালে বঙ্গবন্ধু ভবনে, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এবং সমস্ত দেশের আওয়ামী লীগের কার্যালয়গুলিতে দলের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে বঙ্গবন্ধু ভবনে শেখ মুজিবর রহমানের ছবিতে মাল্যদানের মাধ্যমে তাঁকে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। এছাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর যৌথ উদ্যোগে কিছু সভাও আয়োজিত হয়ে থাকে। বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়াতেও শেখ মুজিবর রহমানের সমাধিতে মাল্যদানের পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোয়া ও মিলাদ মেহফিলে অংশ নেন।

২০১৯ সালে এই বিশেষ দিনের প্রতিপাদ্য (Theme) ছিল ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুদের জীবনকে রঙিন করে তোলো’ (Bangabandhu’s birthday, rinse life of the children with colour)। ২০২২ সালে বাংলাদেশের জাতীয় শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শিশুদের সমানাধিকার, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের প্রতিশ্রুতি’ (Equal rights of the children, Commitment of Bangabandhu’s Birthday)।     

আপনার মতামত জানান