পাশ্চাত্য দর্শনের বিপুল ঐশ্বর্যময় ভান্ডার যাঁদের অমূল্য দর্শন-চিন্তায় সমৃদ্ধ হয়ে রয়েছে ফরাসি দার্শনিক রেনে দেকার্ত (René Descartes) তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তিনি একজন সৃজনশীল গণিতবিদ, গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক চিন্তাবিদ, অধিবিদ্যায় পণ্ডিত এবং প্রাকৃতিক দার্শনিক হিসেবেই পরিচিত সমগ্র বিশ্বের কাছে। বিশ্লেষণাত্মক জ্যামিতির উদ্ভাবন দেকার্তের এক উল্লেখযোগ্য অবদান। তিনিই প্রথম বীজগণিত এবং জ্যামিতির পূর্ববর্তী পৃথক ক্ষেত্রগুলিকে সংযুক্ত করে বীজগাণিতিক জ্যামিতির ধারণা তৈরি করেছিলেন। ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন দেকার্ত। মন এবং শরীরের যে দ্বৈতবাদ তার আধুনিক সংস্করণ তৈরি করেছিলেন তিনিই সর্বপ্রথম। অ্যারিস্টটলের দর্শনের ওপর ভিত্তি করে যে দার্শনিক ধারার উদ্ভব হয়েছিল তাঁকে অস্বীকার করেছিলেন রেনে দেকার্ত তাঁর নিজস্ব দর্শন-চিন্তাকে প্রতিষ্ঠা করে। তাঁর শারীরবিদ্যার ধারণা সংবেদনশীল অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। সপ্তদশ শতকের মহাদেশীয় যুক্তিবাদের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন তিনি। অনেকেই তাঁকে আধুনিক দর্শনের জনকও বলে থাকেন।
১৫৯৬ সালের ৩১ মার্চ ফ্রান্সের টোরাইন প্রদেশের লা হায়ে এন টোরাইন শহরে দাদুর বাড়িতে রেনে দেকার্তের জন্ম হয়। তাঁর বাবা জোয়াকিম (Joachim) ছিলেন আইনজীবী এবং রেনেসের ব্রিটানির সংসদের একজন সদস্য হওয়ায় বাড়ি থেকে দূরে শ্যাটেলরাল্টে থাকতেন। পোইটৌতে এবং শ্যাটেলরাল্টে জোয়াকিম একটা খামার বাড়ি কিনেছিলেন। রেনে দেকার্তের পারিবারিক সংযোগ অতএব সেই দক্ষিণে পোইতুতে ক্রুস নদীর ওপার পর্যন্ত ছিল। দেকার্ত পরিবার মূলত রোমান ক্যাথলিক ছিল কিন্তু পোইটৌ অঞ্চল প্রোটেস্ট্যান্ট হুগুয়েনটস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। দেকার্তের মা জিন ব্রোচার্ড (Jeanne Brochard)দেকার্তের বয়স যখন মাত্র এক বছর তখন মারা যান। দেকার্তের জীবনের প্রথম কয়েক বছর কেটেছিল ঠাকুমা জিন সেন ব্রোচার্ডের সঙ্গে লা হায়েতে। দেকার্তের সঙ্গে ছিল তাঁর দাদা পিয়েরে এবং বড় বোন জিন। এরপর সম্ভবত তাঁরা বড় কাকা মিশেল ফেরান্ডের বাড়িতে চলে যান, যিনি নিজেও ছিলেন একজন আইনজীবী এবং শ্যাটেলরাল্টে রাজার পরামর্শদাতা হিসেবেও কাজ করতেন। আমস্টারডামে হেলেনা জ্যান্স ভ্যান ডার স্ট্রম (Helena Jans van der Strom) নামে এক পরিচারিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল দেকার্তের। ১৬৩৫ সালে তাঁদের ফ্রান্সািন নামে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছিল, যদি দেকার্ত কখনই বিবাহ করেননি হেলেনাকে। তাঁদের কন্যা সন্তান পাঁচবছর বয়সে স্কারলেট জ্বরে মারা যায়।
১৬০৬ সালে (মতান্তরে ১৬০৭) রেনে দেকার্ত নবপ্রতিষ্ঠিত লা ফ্লেচে জেসুইট কলেজে ভর্তি হন। ১৬১৪ সাল (মতান্তরে ১৬১৫) পর্যন্ত সেই কলেজেই পড়াশুনা করেছিলেন তিনি। সেখানে পাঁচ-ছয় বছর ব্যকরণ স্কুলের পাঠ গ্রহণ করেছিলেন, যেখানে গ্রীক এবং ল্যাটিন ব্যকরণ শেখার সুযোগ হয়েছিল তাঁর। ধ্রুপদী কবিদের কাব্য, এবং তিনবছরের দর্শনের পাঠ্যক্রমও অধ্যয়ন করেছিলেন তিনি। জেসুইটদের দর্শনের পাঠ্যক্রম অ্যারিস্টটলের অনুসরণে তৈরি ছিল। এই দর্শন মূলত যুক্তিবিদ্যা, নীতিবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা এবং অধিবিদ্যার তৎকালীন বিষয়গুলিতে বিভক্ত ছিল। সেখানে প্লেটো এবং স্টোইক্সের মতবাদগুলিও তাঁর কাছে স্পষ্ট হতে শুরু করে। যখন লা ফ্লেচেতে তিনি পড়াশুনা করছেন, সেই সময়েই ১৬১০ সালে বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিও দূরবীনের সাহায্যে বৃহস্পতির উপগ্রহ আবিষ্কার করেন। লা ফ্লেচেতে তিনি গণিত এবং পদার্থবিদ্যার সঙ্গেও পরিচিত হয়েছিলেন। এই কলেজে শেখা ভাষা, উপকথা, ধর্মতত্ত্ব ইত্যাদিকে আজীবন মূল্য দিয়েছিলেন তিনি। এমনকি তাঁর বাবাকে তিনি বলেছিলেন, যে, পৃথিবীতে আর কোথাও লা ফ্লেচের চেয়ে ভালভাবে দর্শন পড়ানো হয় না।
সমগ্র পরিবার বিশেষত তাঁর বাবা চেয়েছিলেন পরিবারের ঐতিহ্য মেনেই দেকার্তও একজন আইনজীবী হয়ে উঠুক। সেই কারণে আইন অধ্যয়নের জন্য তিনি পোইটার্স বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন এবং দুবছর পড়াশোনার পর ১৬১৬ সালে ক্যানন এবং সিভিল আইনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। আইন পাশ করলেও তিনি কখনই আইন অনুশীলন করেননি। বরং তাঁর মনে ছিল সামরিক বাহিনীর সদস্য হওয়ার বাসনা। সেই কারণে তিনি ১৬১৮ সালে চলে যান ব্রেডায় এবং সেখানে নাসাউ-এর মরিসের অধীনে প্রোটেস্টেন্ট ডাচ স্টেটস আর্মিতে একজন ভাড়াটে সেনা হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে গিয়ে মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিং অধ্যয়ন করেছিলেন দেকার্ত। গণিতের জ্ঞানকে আরও প্রসারিত করবার উৎসাহ তিনি পেয়েছিলেন ব্রেডায় থাকাকালীন। এই উৎসাহ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছিল যখন সেখানে ডরড্রেখট স্কুলের অধ্যক্ষ বিখ্যাত ডাচ দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী আইজ্যাক বেকম্যানের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন তিনি। তাঁরা উভয়েই বিশ্বাস করতেন যে গণিত এবং পদার্থবিদ্যাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সংযুক্ত করে একটি পদ্ধতি তৈরি করা প্রয়োজন। তাঁদের পদ্ধতিটি ‘ফিজিকো-ম্যাথেমেটিকা’ বা গাণিতিক পদার্থবিদ্যা নামে পরিচিত।
১৬১৯ সালে রেনে দেকার্ত ব্রেডা ত্যাগ করে প্রথম ম্যাক্সিমিলিয়ানের ক্যাথলিক সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর ১৬১৯ সালে ফ্রাঙ্কফুর্টে দ্বিতীয় ফার্দিনান্দের রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেন তিনি। ১৬১৯ সালে তিনি তিনটি স্বপ্ন দেখেছিলেন যার ফলে দর্শনশাস্ত্র অধ্যয়নের প্রতি তাঁর আগ্রহ বৃদ্ধি পায় প্রবলভাবে। তিনি বিশ্বাস করতেন, দর্শনের একটি নতুন পদ্ধতি প্রকাশ করার তাগিদ তাঁকে কোন এক ঐশ্বরিক আত্মা প্রেরণ করেছিল। ১৬২০ সালে প্রাগের কাছে হোয়াইট মাউন্টেনের যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন দেকার্ত। ১৬২০ সালে এই সেনাবাহিনী ছেড়ে যাওয়ার পর পরবর্তী কয়েকবছর তাঁর অবস্থান অজানা ছিল। তবে খুব সম্ভব সেসময় উলমে সময় কাটিয়েছিলেন তিনি। লরেটোতে তিনি ব্যাসিলিকা ডেলা সান্তা কাসা পরিদর্শন করেছিলেন। প্যারিসে প্লেগ ছড়িয়ে পড়ায় তিনি ফেরত আসতে পারেননি যদিও নথিপত্র ঘেঁটে অনুমান করা হয় ১৬২২ নাগাদ তিনি প্যারিসে ছিলেন। এই সময়ে, ১৬২৩ সাল নাগাদ তিনি লা হায়েতে আসেন এবং উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি বিক্রি করেন ফলে পরবর্তী কয়েকবছর তাঁর আয়ের ভাবনা ছিল না। ১৬২৩ থেকে ১৬২৫ সালের মধ্যে তিনি ইতালি সফর করেছিলেন। ১৬২৫ সালে প্যারিসে আসেন তিনি। ১৬২৭ সালে কার্ডিনাল রিচেলিউ কর্তৃক লা রোচেল অবরোধের সময় উপস্থিত ছিলেন দেকার্ত। সেই বছর শরৎকালে, পোপ নুনসিও গুইডি ডি ব্যাগনোর বাসভবনে তিনি মারসেন এবং অন্যান্য অনেক পণ্ডিতদের সাথে আলকেমিস্ট, নিকোলাস ডি ভিলিয়ার্স, সিউর ডি চ্যান্ডোক্সের দেওয়া একটি বক্তৃতা শুনতে এসেছিলেন। তাঁর নোটগুলি থেকেও বোঝা যায় তিনি অর্ডার অব মিনিমসের সদস্য ফাদার মারিন মারসেনের সংস্পর্শে এসেছিলেন। এই সম্পর্ক তাঁকে প্রাকৃতিক দর্শন বিষয়ে তাঁর চিন্তাভাবনার প্রকাশে প্ররোচিত করেছিল বলা চলে। ১৬২৮ সালে তিনি প্যারিস ত্যাগ করেন এবং’রেগুলে অ্যাড ডিরেকশনেম ইনজেনি’ নামক বৈজ্ঞানিক এবং দার্শনিক চিন্তার সঠিক পদ্ধতি সংক্রান্ত গ্রন্থের কাজ শুরু করেন।
১৬২৮ সালে ডাচ প্রজাতন্ত্রে চলে যান দেকার্ত। সেখানে থাকাকালীন তিনি তাঁর ঠিকানা গোপন রাখবার চেষ্টা করেন তিনি এবং ঘন ঘন নিজের অবস্থান পরিবর্তন করতেন। এখানে থাকাকালীন তাঁর কানে এসেছিল রোমে পারহেলিয়া বা মিথ্যা সূর্য দেখা গেছে। সেসময় এই প্রাকৃতিক ঘটনার কারণ বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছিলেন তিনি। অনুমান করেছিলেন যে, আকাশে একটি কঠিন বরফের বলয় তৈরি হয়, যা কিনা লেন্সের মতো কাজ করে এবং সূর্যের একাধিক প্রতিবিম্ব তৈরি করে। নেদারল্যান্ডসে তিনি অধিবিদ্যা বা মেটাফিজিক্স নিয়েও চর্চা করছিলেন। অধিবিদ্যার তদন্তের বিষয়গুলির মধ্য ঈশ্বর এবং আত্মার অস্তিত্ব ও প্রকৃতি অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই আধিভৌতিক অনুসন্ধান অবশ্য সেই পারহেলিয়ার মতো সমস্যাগুলি থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন নয়। তিনি দাবি করেছিলেন যে, ঈশ্বর এবং মানুষের আত্মা সম্পর্কে অনুসন্ধানের মাধ্যমে তিনি পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। লাতিন ভাষায় মেটাফিজিক্সের ওপর এক পুস্তিকাও রচনা করেছিলেন তিনি। পারহেলিয়া নিয়ে কাজ করবার সময় দেকার্ত একটি উচ্চমানের গ্রন্থের পরিকল্পনাও করেছিলেন। মার্সেনকে লিখেছিলেন তিনি এমন এক গ্রন্থ রচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যাতে প্রকৃতির সমস্ত ঘটনা অর্থাৎ সমগ্র পদার্থবিজ্ঞান ব্যাখা করবেন। এই পরিকল্পনা থেকেই জন্ম নিয়েছিল তিনটি অংশে বিভক্ত রেনে দেকার্তের বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দ্য ওয়ার্ল্ড’। ১৬২৯ থেকে ১৬৩৩ সালের মধ্যে লিখিত এই গ্রন্থটির প্রকাশ বিলম্বিত করে দিয়েছিলেন যখন ধর্মদ্রোহী সন্দেহে গ্যালিলিওকে বন্দী করা হয়েছিল।
১৬২৯ সালের এপ্রিলে রেনে দেকার্ত ফ্রানেকার বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং অ্যাড্রিয়ান মেটিউসের অধীনে অধ্যয়ন করতে থাকেন। সেসময় একটি ক্যাথলিক পরিবারের সঙ্গে ভাড়া থাকতেন অথবা সেজারডেমাস্লট ভাড়া নিয়ে থাকতেন। পরেরবছর লিডেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং জেকব গোলিয়াসের অধীনে গণিতশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন ও পাপ্পাসের ষড়ভুজ উপপাদ্যের সঙ্গে পরিচিত হন। সেখানে মার্টিন হর্টেনসিয়াসের কাছে জ্যোতির্বিজ্ঞানের পাঠও গ্রহণ করেন।
১৬৩৭ সালে দেকার্তের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দার্শনিক গ্রন্থ ‘ডিসকোর্স অন দ্য মেথড’ প্রকাশিত হয়। ১৬৩৩ সালে ‘দ্য ওয়ার্ল্ড’ গ্রন্থের প্রকাশ স্থগিত হয়ে গেলেও এই গ্রন্থের চিন্তাভাবনার অংশ যে তিনটি ছোট প্রবন্ধ পুস্তিকায় প্রকাশিত হয়েছিল সেগুলি হল, ”লেস মেটোরেস’, ‘লা ডিওপট্রিক’ এবং ‘লা জিওমেট্রি’। এই তিনটি প্রবন্ধ তাঁর ‘ডিসকোর্স অন দ্য মেথড’-গ্রন্থের মূল স্তম্ভস্বরূপ বলা চলে। এই লা জিওমেট্রিতে দেকার্ত বীজগণিত এবং জ্যামিতির সংযুক্তকরণের ধারণাটি আলোচনা করেছিলেন। এই গ্রন্থই বীজগাণিতিক জ্যামিতির উদ্ভাবনের কান্ডারি। এছাড়াও পিয়েরে দে ফার্মাটের সঙ্গে যে আবিষ্কারগুলি করেছিলেন তা এই লা জিওমেট্রি গন্থে ব্যবহার করেন দেকার্ত।
এরপর জীবনের বাকি সময় জুড়ে গণিত এবং দর্শনের উপরে কাজ করে গেছেন দেকার্ত। ১৬৪১ সালে লাতিন ভাষায় লিখেছিলেন ‘মেডিটেশনেস ডি প্রিমা ফিলোসফিয়া’ (‘মেডিটেশনস অন ফার্স্ট ফিলোসফি’)। এটি মূলত অধিবিদ্যা বা মেটাফিজিক্সের ওপর লিখিত একটি ছোট পুস্তিকা। এরপর ১৬৪৪ সালে প্রকাশিত হয়েছিল ‘প্রিন্সিপিয়া ফিলোসফিয়া’ (‘প্রিন্সিপালস অব ফিলোসফি’)। এটি মূলত ডিসকোর্স অন দ্য মেথড এবং মেডিটেশনস অন ফার্স ফিলোসফির একটি সমন্বয় বলা যেতে পারে। দেকার্তের লেখা থেকে উদ্ভব হয়েছিল কার্টেশিয়ান দর্শনের৷ মন দেহ থেকে আলাদা এবং দেকার্তের মতে মন হল সম্পূর্ণ সক নিজের থেকে কখনও বিচ্ছিন্ন হতে পারে না, কিন্তু হাত বা পা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে। মনের সারমর্ম হল চিন্তা, মানুষ চিন্তা করে বলেই তাঁর অস্তিত্ব আছে। এই দর্শনই মূলত কার্টেসিয়ান দর্শন নামে খ্যাত। উট্রেখ্ট বিশ্ববিদ্যালয় এই কার্টেসিয়ান দর্শনের নিন্দা করলে দেকার্ত পালিয়ে যান হগে এবং সেখানে এগমন্ড-বিনেনে বসতি স্থাপন করেন৷ এরপর ছয় বছর বোহেমিয়ার রাজকুমারী এলিজাবেথের সঙ্গে পত্রালাপ ছিল মূলত নৈতিক এবং মনস্তাত্ত্বিক বিষয়কেন্দ্রিক। ১৬৪৯ সালে এগুলি একত্র করে প্রকাশিত হয়েছিল ‘দ্য প্যাশনস অব দ্য সোলস’। এটি রাণীকে উৎসর্গ করা। ১৬৪৭ সালে ‘প্রিন্সিপালস অফ ফিলোসফি’ বইটির যে ফরাসি অনুবাদ হয়েছিল, সেটিও দেকার্ত রাণীকে উৎসর্গ করেন।
১৬৪৯ নাগাদ দেকার্ত ইউরোপের অন্যতম বিখ্যাত দার্শনিক হয়ে ওঠেন। সেই বছর, সুইডেনের রাণী ক্রিস্টিনা তাঁকে তার দরবারে একটি নতুন বৈজ্ঞানিক একাডেমি সংগঠিত করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। দেকার্ত সম্মত হন এবং সুইডেনে চলে যান। তিনি স্টকহোমের ট্রে ক্রোনার থেকে ৫০০ মিটারেরও কম দূরে ভ্যাস্টারল্যাংগাটানে বসবাসকারী পিয়েরে চানুটের বাড়িতে অতিথি ছিলেন । সেখানে, চানুট এবং দেকার্ত টরিসেলিয়ান পারদ ব্যারোমিটার দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।
১৬৫০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ৫৩ বছর বয়সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রেনে দেকার্তের মৃত্যু হয়।
One comment