সুনীতি দেবী

সুনীতি দেবী

সুনীতি দেবী (Sunity devi) ছিলেন ব্রিটিশ শাসনাধীন কোচবিহারের মহারানী।  তিনি ছিলেন প্রথম ভারতীয় নারী যিনি ‘সি.আই.ই’ (মোস্ট এমিনেন্ট অর্ডার অফ দি ইন্ডিয়ান এম্পায়ার) উপাধি পান।  

১৮৬৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সুনীতি দেবীর জন্ম হয়। তাঁর বাবা ছিলেন বিখ্যাত ব্রাহ্মধর্ম প্রচারক কেশবচন্দ্র সেন । ১৮৭৮ সালে সুনীতির যখন চোদ্দ বছর বয়স তখন কোচবিহারের রাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ সাথে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর দুবছর সুনীতি দেবী বাবার কাছেই থাকেন যেহেতু  তাঁর স্বামী বিয়ের উচ্চশিক্ষার জন্য বিলেত চলে যান। তিনি চার পুত্র ও তিন কন্যার জননী ছিলেন যথা – পুত্র রাজেন্দ্র নারায়ণ, জিতেন্দ্র নারায়ণ, ভিক্টর নিতেন্দ্র নারায়ণ, এবং হিতেন্দ্র নারায়ণ, এবং কন্যা প্রতিভা দেবী, সুধীরা দেবী এবং সুকৃতি দেবী। রানী গায়ত্রী দেবী ছিলেন তাঁর পুত্র জিতেন্দ্র নারায়ণ ভূপ বাহাদুরের কন্যা।  

১৮৮৭ সালে স্বামী নৃপেন্দ্র নারায়ণকে জি সি আই ই সম্মানে ব্রিটিশ সরকার ভূষিত করে এবং একই সাথে  সুনীতি দেবীকেও সি আই ই পুরস্কার প্রদান করে। প্রথম ভারতীয় মহিলা হিসেবে সুনীতি দেবী সি আই ই পুরস্কার দ্বারা সম্মানিত হন। তিনি ১৯১১ সালের রানী ভিক্টোরিয়ার দিল্লি সফরে স্বামী ও বোনের সাথে দিল্লিতে আয়োজিত  হীরক জয়ন্তী  উদযাপনে অংশ নিয়েছিলেন।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

সুনীতি দেবী প্রকৃত অর্থেই একজন নারী অধিকার কর্মী তথা শিক্ষা প্রচারক ছিলেন। ১৮৮১ সালে তাঁর নামে ‘সুনীতি কলেজ’  নামে একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন যার নাম পরবর্তীকালে রাখা হয় ‘সুনীতি একাডেমি’। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বালিকা বিদ্যালয় হিসেবে পরিগণিত হয়। এই  প্রতিষ্ঠানের জন্য বার্ষিক অনুদান দিতেন তিনি।  এছাড়া তাঁর এই প্রতিষ্ঠানে পাঠরত ছাত্রীদের পড়ার খরচ  মকুব করে দিয়েছিলেন তিনি এবং সফল শিক্ষার্থীদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থাও করেছিলেন তিনি। ছাত্রীদের স্কুল থেকে বাড়ি এবং বাড়ি থেকে স্কুলে আনা নেওয়ার জন্য তাঁর প্রাসাদের গাড়িগুলি ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।  এমনকি বিতর্ক এড়াতে  জন্য তিনি গাড়িগুলির জানলা পর্দা দিয়ে ঘিরে রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন।  

তিনি তাঁর বোন সুচারু দেবী দার্জিলিংয়ে মহারাণী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নামক একটি বালিকা বিদ্যালয় ভিত্তি স্থাপনের জন্য অর্থ দান করেছিলেন। সুনীতি দেবী একাধারে রাজ্য কাউন্সিলের সভাপতি এবং অল বেঙ্গল উইমেন’স ইউনিয়নের প্রথম সভাপতি ছিলেন। 

১৯১৬ সালে তিনি একটি বই লেখেন “বেঙ্গল ড্যাকয়েটস অ্যান্ড টাইগারস” নামে। ‘দ্য বিউটিফুল মোগল প্রিন্সেসেস’ নামক আরও একটি বই লিখেছিলেন তিনি, যা ১৯১৮ সালে প্রকাশিত হয়।

১৯৩২ সালের ১০ নভেম্বর রাঁচিতে সুনীতি দেবীর মৃত্যু হয় ।

2 comments

আপনার মতামত জানান