ভারতবর্ষের ইতিহাসে এমন একেকজন মহান ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব ঘটেছে যাঁরা তাঁদের মেধা, দর্শন এবং জীবনব্যাপী বিপুল কর্মকাণ্ডের জন্য আজও অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন৷ তেমনই একজন মানুষ হলেন বিনোবা ভাবে (Vinoba Bhave)। তাঁর প্রকৃত নাম বিনায়ক নরহরি ভাবে। মহাত্মা গান্ধীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং তাঁর সহযোদ্ধা ছিলেন বিনোবা। গান্ধীজি তাঁকে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে প্রথম স্বতন্ত্র সত্যাগ্রহী হিসাবে নির্বাচন করেছিলেন। বিনোবা ভারত ছাড়ো আন্দোলনেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। মেয়েদের স্বনির্ভরতার জন্য ব্রহ্মবিদ্যা মন্দিরের নির্মাণ করেছিলেন তিনি। তাঁর কর্মকাণ্ডের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল তিনি ছিলেন ভূদান আন্দোলনের উদ্ভাবক। গরীব ও ভূমিহীন কৃষকদের জমি দেওয়ার জন্য সারা ভারত ভ্রমণ করে জমির মালিকদের থেকে জমি সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। এছাড়াও গো-হত্যা যেমন বন্ধ করেছিলেন তিনি, তেমনি আবার কলমেও ছিল তাঁর জোর। বিনোবা ভাবে মারাঠী ভাষায় শ্রীমদ্ভাগবত গীতাও অনুবাদ করেছিলেন৷
১৮৯৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মহারাষ্ট্রের কোঙ্কন অঞ্চলের কোলাবায় গাগোজি (বর্তমানে গাগোরে বুদ্রুক) নামক একটি ছোট গ্রামে উচ্চবর্ণের চিতাপাবন ব্রাহ্মণ পরিবারে বিনোবা ভাবের জন্ম হয়। তাঁর বাবার নাম নরহরি শম্ভু রাও এবং তাঁর মা ছিলেন রুক্মিণী দেবী। তাঁদের সর্বমোট পাঁচ সন্তানের মধ্যে চারজন ছিলেন পুত্র এবং বিন্যা নামে এক কন্যা ছিল। সকলের মধ্যে বিনোবাই ছিলেন জ্যেষ্ঠ পুত্র। বিনোবার বাবা নরহরি শম্ভু রাও বরোদা রাজ্যের একজন প্রশিক্ষিত তাঁতি হিসেবে কাজ করতেন। নরহরি শম্ভু একজন উদারমনস্ক সংকীর্ণতামুক্ত আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ ছিলেন। বিনায়ক ওরফে বিনোবা তাঁর ঠাকুরদাদা শম্বুরাও ভাবের কাছে লালিত-পালিত হয়েছিলেন। তাছাড়াও তাঁর মা রুক্মিণী দেবী ছিলেন প্রবল ধার্মিক আচারনিষ্ঠ একজন মানুষ। তবে জীবনে একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় অভিমুখ তৈরির ক্ষেত্রে তাঁর ঠাকুরদা এবং মায়ের ভূমিকাই সবচেয়ে সক্রিয় ছিল।
ছোটবেলা থেকেই মহারাষ্ট্রের সাধু ও দার্শনিকদের লেখা মনোযোগ সহকারে পড়তেন তিনি৷ গণিতের প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল প্রবল। অল্প বয়সেই ভগবদগীতা পড়ে ভীষণ আকৃষ্ট হয়েছিলেন বিনোবা ভাবে। পরবর্তীকালে তাঁর আধ্যাত্মিক চেতনাসর্বস্ব জীবনের ইঙ্গিত যেন গীতার প্রতি এই আকর্ষণ থেকেই পাওয়া যায়। একজন ভাল ছাত্র হলেও ঐতিহ্যগত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বিনোবাকে কখনও আকৃষ্ট করেনি। সামাজিক জীবন ত্যাগ করে এমনকি হিমালয়ে চলে যাওয়ার কথাও ভেবেছিলেন তিনি। ধর্মগ্রন্থ ও সংস্কৃত গ্রন্থাবলী অধ্যয়ন করেছিলেন তিনি অভিনিবেশ সহকারে। ১৯১৬ সালের প্রথম দিকে তিনি ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য সে বছরের মার্চ মাসে মুম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু মুম্বাই যাওয়ার পথে স্কুল ও কলেজের সার্টিফিকেটগুলি আগুনে পুড়িয়ে ফেলেন তিনি এবং মুম্বাইয়ের বদলে বেনারসে গিয়ে ওঠেন। সেই সময় নবপ্রতিষ্ঠিত বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে মহাত্মা গান্ধীর বক্তৃতা সম্পর্কে সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এরপর গান্ধীকে একটি চিঠি লেখেন বিনোবা ভাবে। অবশেষে ১৯১৬ সালের ৭ জুন আহমেদাবাদের কোচরাব আশ্রমে গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি৷ এই সাক্ষাৎ তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল বলা চলে। তিনি বেনারসে চলে এসেছিলেন মূলত এক আধ্যাত্মিকতার টানে এবং সেসময়ে তাঁর হৃদয়ে ছিল হিমালয়ে চলে যাওয়ার বাসনা। তিনি যেতে চাইতেন বাংলাতেও। মহাত্মা গান্ধীর সাক্ষাৎলাভে বিনোবার যেন দুই স্বপ্নই পূরণ হয় একত্রে এবং চোখের সামনে এক অন্য দিগন্ত খুলে যায়।
ক্রমে গান্ধীজির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পেতে থাকে বিনোবার। মহাত্মার কর্মকাণ্ড দ্বারা প্রভাবিত হতে থাকেন তিনি। তাঁর ভিতরে স্বদেশচেতনা বিকাশলাভ করতে থাকে। উচ্চশিক্ষার পথ ছেড়ে দিয়ে তখন বিনোবা গান্ধীর প্রতিষ্ঠিত আশ্রমেই বসতি স্থাপন করেন এবং সেখানে শিক্ষকতায় নিযুক্ত ছিলেন, চরকা কাটায় অংশগ্রহণ করতেন। খাদি, গ্রামীণ শিল্প, নতুন শিক্ষা (নাই তালিম), স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত মহাত্মা গান্ধীর গঠনমূলক কর্মসূচির সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা বাড়তে থাকে। এরপর গান্ধীর ইচ্ছানুযায়ী আশ্রমের দায়িত্ব নিতে ১৯২১ সালের ৮ এপ্রিল ওয়ার্ধায় চলে যান বিনোবা ভাবে। ১৯২৩ সাল থেকে মারাঠী ভাষায় বিনোবা ভাবে একটি মাসিক পত্রিকা ‘মহারাষ্ট্র ধর্ম’ প্রকাশ করতে থাকেন। সেই পত্রিকায় উপনিষদের ওপর লেখা তাঁর প্রবন্ধ প্রকাশিত হত। পরবর্তীকালে সেই মাসিক পত্রিকাটি সাপ্তাহিক হয়ে যায় এবং সেটি তিন বছর সক্রিয় ছিল। এটিতে সন্ত তুকারামের অভঙ্গের ওপর লেখা তাঁর প্রবন্ধগুলি জনপ্রিয় হয়েছিল। পরবর্তীকালে ‘সর্বোদয়’ এবং ‘সেবক’ নামেও দুটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলেন তিনি। এরপর ১৯২৫ সালে গান্ধীজি তাঁকে কেরালার ভাইকোমে পাঠিয়েছিলেন মন্দিরে হরিজনদের প্রবেশের তত্ত্বাবধানের জন্য। এই হরিজনদের সংস্পর্শে এসে তাঁদের জীবন-যাপনকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিল তাঁর। এরপর থেকেই দক্ষিণ ভারতের ‘অস্পৃশ্য’ মানুষদের অধিকারের পক্ষে লড়াই করেছেন বিনোবা ভাবে, তাঁদের জন্য বহু কাজ করে গিয়েছেন তিনি দীর্ঘদিন।
১৯২০ থেকে ১৯৩০-এর মধ্যে বিভিন্ন ব্রিটিশ বিরোধী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য অন্যান্য জাতীয়তাবাদী নেতার সঙ্গে বিনোবা ভাবেকেও বহুবার কারাগারে যেতে হয়েছিল। ১৯২৩ সালে নাগপুরে পতাকা সত্যাগ্রহে বিশেষভাবে অংশগ্রহণের জন্য তাঁকে নাগদা জেল এবং আকোলা জেলে কয়েকমাস বন্দি রাখা হয়। আবার ৩০-এর দশকে আইন অমান্য আন্দোলনে অংশ নেওয়ার জন্যও কারাবন্দি হতে হয় তাঁকে। ১৯৩২ সালের ২৩ ডিসেম্বর ওয়ার্ধা থেকে দুই মাইল দূরের একটি গ্রাম নলওয়াদিতে চলে যান তিনি। সেখানে তিনি একা একা ঘুরে বেড়াতেন এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের ধারণাটিকে পরীক্ষা করে বোঝার চেষ্টা করতেন। সেবছরই ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলার জন্য ধুলিয়ায় ছয় মাসের জন্য জেলে যান তিনি। ১৯৩৮ সালে অসুস্থ হয়ে পড়ে পাউনারের পরমধাম আশ্রমে চলে যান যেটি মূলত তাঁর সদর দফতর হিসেবেই পরিচিত।
১৯৪০ সালে মহাত্মা গান্ধী বিনোবাকে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম স্বতন্ত্র সত্যাগ্রহী হিসাবে নির্বাচিত করেছিলেন। গান্ধীর সবরমতী আশ্রমে যে কুটিরে বসবাস করতেন তিনি তা ‘বিনোবা কুটির’ নামে পরিচিতি লাভ করে। অনেকে মনে করেন গান্ধীজি বিনোবার ব্রহ্মচর্যকে যুগপৎ ঈর্ষা ও সম্মান করতেন। ১৯৪০-৪১ সালের মধ্যে ব্যক্তিগত সত্যাগ্রহের জন্য নাগপুর জেলে তিনবার বন্দি হন তিনি। প্রথমে তিন মাসের জন্য, দ্বিতীয়বার ছয় মাস এবং তৃতীয়বারে এক বছর কারাবন্দি ছিলেন তিনি। এরপর ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনে অংশ নিয়ে ভেলোর এবং সিওনি জেলে তিন বছরের কারাদণ্ড ভোগ করেন বিনোবা ভাবে।
বিনোবা তাঁর এই দীর্ঘ জেলজীবনকে লেখা, পড়া এবং শেখার কাজে লাগিয়েছিলেন। যখন তিনি ধুলিয়া জেলে ছিলেন তখন মারাঠী ভাষায় ‘গীতাই’ নামে গীতার অনুবাদ করেছিলেন। জেলে সহকর্মীদের কাছে গীতার ওপর দেওয়া বক্তৃতাগুলি পরে একত্র করে ‘টকস অন দ্য গীতা’ নামে প্রকাশ পেয়েছিল। এছাড়াও ‘স্বরাজ্য শাস্ত্র’ গ্রন্থ রচনা এবং সাধক জ্ঞানেশ্বর, একনাথ ও নামদেবের ভজন সংকলন সম্পন্ন করেন। নাগপুর কারাগারে রচনা করেন ‘ঈশাবস্যবৃত্তি’ এবং ‘স্থিতপ্রজ্ঞা দর্শন’ নামে বইটি লিখেছিলেন সিওনি কারাগারে বসে। ভেলোর কারাগারে বিনোবা দক্ষিণ ভারতের চারটি ভাষা শিখেছিলেন।
১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৪৮ সালে মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করা হয়৷ ১৯৪৮-এর মার্চ মাসে গান্ধীর অনুসারী এবং গঠনমূলক কর্মীরা সেবাগ্রামে মিলিত হন। সেখান থেকেই সর্বোদয় সমাজের ধারণা প্রকাশ পায় এবং ক্রমে গ্রহণযোগ্যতা পেতে শুরু করে৷ এই সর্বোদয় আন্দোলনের মূল মন্ত্র হল সকলের কল্যাণ করা। দেশভাগের ক্ষতকে প্রশমিত করবে এমন কিছু কাজ শুরু করেন বিনোবা ভাবে। ১৯৫০ সালের শুরুতে ‘কাঞ্চন-মুক্তি’ (অর্থের ওপর নির্ভরতা থেকে মুক্তি) এবং ‘ঋষি-ক্ষেতি’ ( প্রাচীন ঋষিদের মতো ষাঁড়ের ব্যবহার ছাড়া চাষাবাদ) নামে দুটি কর্মসূচির সূত্রপাত করেন। ১৯৫১ সালের এপ্রিল মাসে শিবনামপল্লীতে তিনি সর্বোদয় সম্মেলনে যোগ দেন এবং তেলেঙ্গানার হিংসা-বিধ্বস্ত অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে শান্তিযাত্রা করেন। এই সর্বোদয় আন্দোলনের সূত্র ধরেই বিখ্যাত ভূদান আন্দোলনের সূত্রপাত করেন বিনোবা ভাবে।
১৯৫১ সালের ১৮ এপ্রিল পোচামপল্লীতে গ্রামবাসীদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন তিনি। সেখানে হরিজনরা তাঁকে বলেছিল যে তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য ৮০ একর জমির প্রয়োজন। এরপর বিনোবা যখন গ্রামবাসীদের কাছে জানতে চাইলেন এই সমস্যার সমাধান তাঁরা করতে পারবেন কিনা, তখন সকলকে প্রায় চমকে দিয়ে রামচন্দ্র রেড্ডি নামের এক জমিদার উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন তিনি ১০০ একর জমি দান করতে প্রস্তুত৷ এই ঘটনা ভূমিহীনদের সমস্যা সমাধানের পথ দেখিয়েছিল৷ এখান থেকেই ভূদান আন্দোলনের বীজ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।
বিনোবা ভাবে ভারতবর্ষের নানা প্রান্তে হেঁটে গিয়েছিলেন ভূমিহীনদের জন্য। বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে মানুষের দ্বারে গিয়েছেন এবং নিজেকে তাদের পুত্রসম বিবেচনা করতে অনুরোধ করেছিলেন। তাঁর করুণা এবং অহিংসার পথ অনেককে প্রভাবিত করেছিল৷ অনেকে তাদের ছয় ভাগের একভাগ জমি বিনোবাকে দিয়েছিল এবং সেই জমি তিনি ভূমিহীন দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করে দিয়েছিলেন। তেলেঙ্গানা থেকে প্রতিদিন গড়ে ২০০ একর জমি উপহার হিসেবে পাওয়া গিয়েছিল। পাভনার থেকে দিল্লি যাত্রায় প্রতিদিন ৩০০ একর করে জমি পেয়েছিলেন তিনি। বিনোবার লক্ষ্য ছিল পাঁচ কোটি একর সংগ্রহ করা। ১৯৫২ সালের মে মাসে উত্তরপ্রদেশে হাঁটার সময় সমগ্র মাংরাথ গ্রামের কাছ থেকে জমি উপহার পেয়েছিলেন বিনোবা। ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৫৪-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি বিহারে পেয়েছিলেন ২৩ লক্ষ একর জমি। ১৯৫৪-এর পর তিনি গ্রামদান কর্মসূচি চালু করে সমগ্র গ্রামের কাছে অনুদান চাইতে শুরু করেছিলেন। অনুদানের মাধ্যমে এক হাজারেরও বেশি গ্রাম পেয়েছিলেন তিনি৷ এর মধ্যে শুধুমাত্র তামিলনাড়ুতেই বিনোবা ভাবে ১৭৫টি গ্রামদান করেছিলেন। এইভাবে তামিলনাড়ু, কেরালা, উড়িষ্যা ইত্যাদি নানা স্থানে ঘুরে ভূমিহীনদের সমস্যা দূরীকরণে যে ভূমিকা বিনোবা পালন করেছিলেন, তা ভারতের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে।
ভূদানের মতো কর্মসূচির পাশাপাশি সম্পত্তি-দান, শ্রমদান, শান্তিসেনা (শান্তির জন্য সেনাবাহিনী), সর্বোদয়-পাত্র (এমন একটি পাত্র যেটিতে প্রতিদিন প্রতিটি পরিবার একমুঠো শস্য দেবে), জীবনদান প্রভৃতি কর্মসূচিও জনকল্যাণের স্বার্থে দক্ষ হাতে চালিয়ে গেছেন। এছাড়াও মহারাষ্ট্রের পাউনারে মহিলাদের জন্য ব্রহ্মবিদ্যা মন্দিরের সূচনা করেছিলেন তিনি। এটির লক্ষ্য ছিল মূলত মহিলাদের স্বনির্ভর এবং অহিংস করে তোলা। দলের মহিলারা খাবারের জন্য চাষাবাদ করত, প্রার্থনা করত, আন্তরিকভাবে ভগবদ গীতা পাঠ এবং অনুশীলন করত।
গান্ধীর মতো বিনোবাও পদযাত্রার শক্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন। প্রায় ১৩ বছর ধরে সারা ভারতবর্ষে পদযাত্রা করে ছয়টি আশ্রমও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। ১৯৫১ সাল থেকে ১৯৬৪ সালের ১০ এপ্রিল পর্যন্ত বিনোবা ভাবে পদযাত্রা বহাল রেখেছিলেন। ১৯৬৫ সালে একটি যানবাহন ব্যবহার করে শুরু করেছিলেন ‘তুফান যাত্রা’ এবং ১৯৬৯ সালে এটি সম্পন্ন করেন। ১৯৬৯ সালেই তিনি ফিরে আসেন পাউনারে। আধ্যাত্মিক শক্তির অন্বেষণ তাঁকে পার্থিব সব ক্রিয়াকলাপ পরিত্যাগের দিকে পরিচালিত করেছিল। ১৯৭৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১৯৭৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি নীরবতা পালন করেছিলেন। এসময় অন্য সমস্ত কাজ থেকে বিযুক্ত হয়ে গিয়েছিলেন তিনি এবং এসময় তাঁর আধ্যাত্মিক সাধনা আরও তীব্র হয়ে উঠেছিল।
১৯৫৮ সালে বিনোবা কমিউনিটি লিডারশিপের জন্য আন্তর্জাতিক র্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারের প্রথম প্রাপক ছিলেন৷ ১৯৮৩ সালে তিনি মরণোত্তর ‘ভারতরত্ন’ সম্মানে ভূষিত হন। বিনোবা ভাবের জীবন ও কর্মকাণ্ড নিয়ে ‘বিনোবা ভাবে, দ্য ম্যান’ এবং ‘বিনোবা ভাবে’ নামে দুটি তথ্যচিত্রও নির্মিত হয়েছে।
১৯৮২ সালের ১৫ নভেম্বর ৮৭ বছর বয়সে বিনোবা ভাবের মৃত্যু হয়৷