ভার্জিনিয়া উলফ

ভার্জিনিয়া উলফ

বিশ্ব সাহিত্যের ইতিহাসে বাঁকবদল ঘটেছে নানাসময়ে আবির্ভূত যেসব প্রতিভাবান সাহিত্যকের জাদুকলমের স্পর্শে, ইংরেজ লেখিকা ভার্জিনিয়া উলফ (Virginia Woolf) ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর বিবাহ পূর্ববর্তী পদবি ছিল স্টিফেন। সারা বিশ্বে বর্তমানে যে নারীবাদী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে, সূচনার দিনগুলিতে ভার্জিনিয়া উলফের লেখা সেই আন্দোলনকে এগিয়ে দিয়েছিল অনেকখানি। মূলত একজন ঔপন্যাসিক হিসেবে পরিচিত হলেও নারীর ক্ষমতা ও অধিকার, রাজনীতি, লিঙ্গবৈষম্য ইত্যাদি বিষয় নিয়ে লেখা তাঁর প্রবন্ধগুলি সারস্বত সমাজের প্রশংসা যেমন লাভ করেছিল, তেমনি সেগুলিকে নারীবাদী আন্দোলনের অন্যতম মুখপত্রও বলা চলে। সারাজীবন বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন তিনি উপন্যাস রচনায়। চেতনাপ্রবাহের ধরনকে আখ্যানের সঙ্গে মেলাতে চেষ্টা করেছিলেন তিনি। এছাড়াও জীবনী লেখার ধরন নিয়েও নিরলস পরীক্ষা চালিয়েছিলেন ভার্জিনিয়া উলফ । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কার একজন প্রভাবশালী আধুনিক লেখক হিসেবে আধুনিকতার নানা লক্ষণ যথা, অবচেতন মন, সময়, অবক্ষয় ইত্যাদি তাঁর লেখার অন্তরালে টের পাওয়া যায়। তাঁর দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ হল ‘আ রুম অফ ওয়ানস ওন’ এবং ‘দ্য লাইট হাউস’। 

১৮৮২ সালের ২৫ জানুয়ারি লণ্ডনের দক্ষিণ কেনসিংটনের ২২ নং হাইড পার্ক গেটে এক ধনী পরিবারে ভার্জিনিয়া উলফের জন্ম হয়। তাঁর বাবা লেসলি স্টিফেন এবং মা জুলিয়া প্রিন্সেপ জ্যাকসনের সপ্তম সন্তান ছিলেন ভার্জিনিয়া। তাঁরা সর্বমোট আট ভাইবোন ছিলেন। ভার্জিনিয়ার দিদি ভেনেসা বেল ছিলেন একজন প্রথিতযশা চিত্রশিল্পী। ভার্জিনিয়ার বাবা লেসলি স্টিফেন ছিলেন একজন বিখ্যাত ইতিহাসবিদ, জীবনীকার এবং পর্বতারোহী। তিনি ‘ডিকশনারি অফ ন্যাশানাল বায়োগ্রাফি’ বইটিও সম্পাদনা করেছিলেন। ভার্জিনিয়ার মা জুলিয়া প্রিন্সেপের জন্ম হয়েছিল ব্রিটিশ ভারতের কলকাতায়। জুলিয়া একজন জনহিতৈষী মানুষ, নামকরা ফটোগ্রাফার এবং ব্লুমসবেরি গ্রুপের সদস্য ছিলেন। নার্সিংয়ের উপর জুলিয়া একটি গ্রন্থও প্রকাশ করেছিলেন। লেসলি এবং জুলিয়া দুজনেরই প্রথমে একটি বিবাহিত জীবন ছিল, যদিও দুজনেই তাঁদের প্রথম জীবনসঙ্গীকে হারিয়েছিলেন। বিবাহের পূর্বে তাঁদের মোট চার সন্তান ছিল এবং ১৮৭৮ সালে বিবাহের পরে লেসলি এবং জুলিয়ার যে চার সন্তান হয়েছিল, তারা হলেন, ভেনেসা, থবি, ভার্জিনিয়া এবং অ্যাড্রিয়ান। ভার্জিনিয়ার নামকরণ করা হয়েছিল তাঁর মায়ের বড়ো বোন অ্যাডলিন মারিয়া জ্যাকসন এবং তাঁর মায়ের কাকিমা ভার্জিনিয়া প্যাটেলের নামের অনুপ্রেরণায়। 

ভার্জিনিয়ার বাবা লেসলি স্টিফেন মাঝেমাঝেই কর্ণওয়েলের দিকে ভ্রমণে যেতেন। ১৮৮১ সালের বসন্তকালে কর্ণওয়েলের সেন্ট আইভসে একটি বিরাট সাদা বাড়ি ট্যালাণ্ড হাউসে তাঁকে খুব আকৃষ্ট করেছিল সামনের সমুদ্রের দৃশ্য এবং একটি লাইটহাউস। সেবছরই সেপ্টেম্বরে সেটি ভাড়া নিয়েছিলেন তিনি। ১৮৮২ সাল থেকে ১৮৯৪ সালের মধ্যে প্রতি বছর জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত গ্রীষ্মকালটুকু লেসলি এই ট্যালাণ্ড হাউস ভাড়া নিতেন। ভার্জিনিয়ার শৈশবের স্মৃতি থেকে জানা যায়, লণ্ডনের থেকে এই কর্ণওয়েলের স্মৃতিই তাঁর কাছে ছিল অধিক উজ্জ্বল। ট্যালাণ্ড হাউসে যখন তাঁরা কাটাতেন, সে সময়ও জর্জ মেরেডিথ, জেমস রাসেল লোয়েলের মতো সাহিত্যিক ব্যক্তিত্বরাও সেখানে আসতেন। তবে ১৮৯৫ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়ে ভার্জিনিয়ার মা জুলিয়া প্রিন্সেপের মৃত্যু হলে তারপর থেকে আর কেউ ট্যালাণ্ড হাউসে আসেনি গ্রীষ্মকালে। মায়ের মৃত্যুকালে ভার্জিনিয়ার বয়স ছিল মাত্র ১৩ বছর। সেই মৃত্যুর আঘাতের ফলে তখন এক মানসিক অসুস্থতার সঙ্গে সংগ্রাম করতে হয়েছিল তাঁকে। তাঁর জীবন এক লহমায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল। সেই গ্রীষ্মে সেন্ট আইভসের পরিবর্তে লেসলি স্টিফেনরা আইল অফ উইটের ফ্রেশওয়াটারে গিয়েছিলেন যেখানে জুলিয়ার কিছু আত্মীয় বাস করতেন। সেখানে প্রথম ভার্জিনিয়ার নার্ভাস ব্রেকডাউন হয়। এরপর জুলিয়ার প্রথম পক্ষের সন্তান ভার্জিনিয়ার সৎ দিদি স্টেলা ডাকওয়ার্থের মৃত্যু হয় ১৮৯৭ সালের ১৯ জুলাই। ভার্জিনিয়া তাঁর মা এবং স্টেলার মৃত্যুর পরের সময়টিকে ‘১৮৯৭ – ১৯০৪ : সাতটি অসুখী বছর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ১৯০২ সালের এপ্রিল মাসে তাঁর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন, কিন্তু একটি অস্ত্রোপচারের পরেও পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি তিনি। ১৯০৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারিতে ভার্জিনিয়ার পিতৃবিয়োগ ঘটে। পরপর এতগুলি আঘাত তাঁকে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছিল। অনেক সমালোচক এবং মনস্তাত্ত্বিক বলে থাকেন ভার্জিনিয়ার মানসিক অসুস্থতার একটি কারণ হল যৌন নির্যাতন। ভার্জিনিয়ার বয়ান থেকে জানা যায়, ছয় বছর বয়সে জুলিয়ার প্রথম পক্ষের সন্তান নিজের সৎ দাদা জেরাল্ড ডাকওয়ার্থ দ্বারা শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছিলেন তিনি। এই অভিজ্ঞতা তাঁকে আজীবন এক যৌনভয়ের মধ্যে ডুবিয়ে রেখেছিল এবং পুরুষতান্ত্রিক কর্তৃত্বের প্রতিরোধের দিকে চালিত করেছিল। ২২ নং হাইড পার্ক গেটে বসবাসের সময় একাধিকবার যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন ভার্জিনিয়া উলফ ।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

ভার্জিনিয়ার এমনকি তাঁর বাড়ির মেয়েদের কারোরই সেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে প্রথমে আনুষ্ঠানিক বিদ্যায়তনিক শিক্ষার সুযোগ হয়নি। ছোটবেলা থেকেই এই বৈষম্য তাঁর অন্তরে গভীর রেখাপাত করেছিল। অনেক অভিজ্ঞতার মধ্যে কৈশোরকালের এই ঘটনাও পরবর্তীকালে নারীদের অধিকার প্রসঙ্গে লিখতে তাঁকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। যেহেতু তাঁর বাবা ছিলেন একজন সম্পাদক, ভার্জিনিয়ার বাড়িতে ভিক্টোরিয়ান সাহিত্যের একটি আমেজ ছিল। তাঁদের বাড়িতে ছিল একটি লাইব্রেরি এবং সেখানে ইংরেজি সাহিত্যের বিশাল অমূল্য ভাণ্ডারের সন্ধান পেয়েছিলেন ভার্জিনিয়া এবং তাঁর বোনেরা। পাবলিক স্কুল সমাপ্ত করবার পর থবি এবং অ্যাড্রিয়ান কেমব্রিজে যেতেন পড়াশোনা করতে। কিন্তু কেবল মা-বাবার সহায়তাতেই শিক্ষালাভ করতে হয়েছিল ভার্জিনিয়া এবং তাঁর বোনেদের। জুলিয়া সন্তানদের শিখিয়েছিলেন লাতিন ও ফরাসি ভাষা, ইতিহাস এবং লেসলি শিখিয়েছিলেন গণিত। তবে বাড়ির লাইব্রেরিতেই ইংরেজি সাহিত্যের রসভাণ্ডারের স্বাদ গ্রহণের সুযোগ হয়েছিল ভার্জিনিয়ার। জি. ই মুর, ই. এম ফর্স্টারের মতো সাহিত্যিকদের বিরাট সাহিত্যজগতের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরেছিলেন তিনি। ভার্জিনিয়ার যখন নয় বছর বয়স, তখন তিনি তাঁর অগ্রজ ভেনেসা এবং অ্যাড্রিয়ানের সঙ্গে যৌথভাবে ‘দ্য হাইড পার্ক গেট নিউজ’ সম্পাদনা করতেন। এটিকে তাঁদের ব্যক্তিগত এক পত্রিকা বলা যেতে পারে। স্টিফেন পরিবারের নানা ঘটনা তাঁরা প্রতিনিয়ত লিপিবদ্ধ করতেন এই পত্রিকায়। 

পরবর্তীকালে ভার্জিনিয়া ১৫ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৮৯৭ থেকে ১৯০১ সালের মধ্যে ১৩ নং কেনসিংটন স্কোয়ারের নিকটবর্তী কিংস কলেজ লণ্ডনের মহিলা বিভাগে ইংরেজি, ইতিহাসসহ প্রাচীন গ্রিক এবং ইন্টারমিডিয়েট লাতিন ও জার্মান বিষয়ের কোর্সে কখনও কখনও ডিগ্রি স্তরেও যোগদান করেছিলেন তিনি। কিংস-এর ধ্রুপদী সাহিত্যের অধ্যাপক বিখ্যাত পণ্ডিত জর্জ চার্লস উইন্টার ওয়ারের অধীনে গ্রিক ভাষা অধ্যয়ন করেন তিনি। তাঁর আরেকজন গ্রিক শিক্ষক ছিলেন জ্যানেট কেস যিনি ভার্জিনিয়াকে নারীর অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি জার্মান, গ্রিক এবং লাতিন ভাষায় গৃহশিক্ষকতাও করেছিলেন। 

বাবার মৃত্যুর পর অ্যাড্রিয়ান এবং ভেনেসা হাইড পার্কের বাড়ি বিক্রি করে দেন এবং ভার্জিনিয়া ও টবিকে নিয়ে তাঁদের সৎ দাদা-দিদিদের থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং স্বাধীনভাবে বসবাস করতে থাকেন ব্লুমসবেরিতে গিয়ে। তাছাড়াও ব্লুমসবেরি থেকে ভেনেসার তৎকালীন স্কুল স্লেড স্কুলে যাতায়াতও ছিল সুবিধার। ভেনেসা ৪৬ নং জর্ডন স্কোয়ারে এক বাড়ির সন্ধান পান এবং নভেম্বর মাসে ভার্জিনিয়ারা সেই বাড়িতে চলে যান। ১৯০৫ সালের মার্চ থেকে সেই বাড়িতে থবির কেমব্রিজের বুদ্ধিজীবি বন্ধুদের জমায়েত শুরু হয়। স্যাক্সন সিডনি-টার্নার, লিটন স্ট্রেচির মতো লেখকরা যেমন ছিলেন সেই দলে, তেমনি ক্লাইভ বেল, ডেসমণ্ড ম্যাকসির মতো সমালোচকরাও ছিলেন। এই জমায়েত ‘থার্ডস ক্লাব’ নামে পরিচিত ছিল। এটি থেকেই লেখক-শিল্পীদের বিখ্যাত ব্লুমসবেরি গ্রুপ গড়ে ওঠে। পরবর্তীকালে ই. এম ফর্স্টার, রজার ফ্রাই-এর মতো ব্যক্তিরা যোগ দেন। 

১৯১২ সালের ১০ আগস্ট সেন্ট প্যানক্রাস রেজিস্টার অফিসে ভার্জিনিয়া বিবাহ করেন ইংরেজ রাজনৈতিক কর্মী এবং সাহিত্যিক লিওনার্ড উলফকে (Leonard Woolf)। অক্টোবরে এই দম্পতি ১৩ নং ক্লিফোর্ড ইনের একটি ছোট ফ্ল্যাটে চলে যান। ১৯১৩ সালে ভার্জিনিয়া মানসিক অবসাদের কারণে আরেকবার আত্মহত্যা করবার চেষ্টা করেছিলেন। ১৯১৫ সালে ‘দ্য ভয়েজ আউট’ উপন্যাস প্রকাশিত হবার পরে আবারও চেষ্টা করেছিলেন আত্মহত্যা করার। ১৯১৪ সালে তাঁরা সেন্ট্রাল লণ্ডন এবং ব্লুমসবেরি থেকে রিচমন্ডে চলে যান তিনি এবং সেখানে ১৭ নং ‘দ্য গ্রীন’ নামক বাড়িতে থাকেন। সেখান থেকেও তাঁরা স্থানান্তরিত হয়ে যান প্যারাডাইস রোডের কাছাকাছি হোগার্থ হাউসে। এই বাড়িতেই এবং বাড়িটির নামেই লিওনার্ড এবং ভার্জিনিয়া তাঁদের প্রকাশনা সংস্থা ‘হোগার্থ প্রেস’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ১৯১৭ সালে। ১৯১৭ সালের জুলাই মাসে তাঁদের নিজেদের একটি করে গল্প নিয়ে তৈরি ‘টু স্টোরিস’ বইটি হোগার্থ প্রেস থেকে প্রকাশিত প্রথম বই। সেই বইতে প্রকাশিত ভার্জিনিয়ার গল্পটির নাম ‘দ্য মার্ক অন দ্য ওয়াল’। ডোরা ক্যারিংটন এবং ভেনেসা বেল-সহ সমসাময়িক শিল্পীদের কাজও হোগার্থ প্রেসের বইতে স্থান পেত। ভার্জিনিয়ার পরবর্তী সমস্ত বই এই প্রেস থেকেই প্রকাশিত হয়েছিল। এছাড়াও টি. এস এলিয়ট, লরেন্স ভ্যান ডার পোস্ট-এর মতো সাহিত্যিকদের বইও প্রকাশ করেছিল হোগার্থ প্রেস। ১৯২৪ থেকে ১৯৪২ সালের মধ্যে ভার্জিনিয়া ব্লুমসবেরিতে ৫২ নং টাভিস্টক স্কোয়ারে দশ বছরের জন্য একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে সেখান থেকেই হোগার্থ প্রেস চালাতে থাকেন।

১৯২১ সালে ভার্জিনিয়ার ‘মনডে অ্যাণ্ড টিউসডে’ প্রকাশ পায়। ১৯২৫ সালের মে মাসে ভার্জিনিয়ার ‘মিসেস ডালোওয়ে’ প্রকাশিত হয়। ১৯২৭ সালে পরবর্তী উপন্যাস ‘টু দ্য লাইটহাউস’ প্রকাশিত হওয়ার পরের বছর কেমব্রিজে তিনি ‘উওমেন অ্যান্ড ফিকশন’ বিষয়ে বক্তৃতা দেন এবং সে বছরই অর্থাৎ ১৯২৮ সালেই অক্টোবরে ‘অরল্যাণ্ডো : আ বায়োগ্রাফি’ প্রকাশিত হয়। কেমব্রিজের দুটি বক্তৃতা ১৯২৯ সালে প্রকাশিত তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধগ্রন্থ ‘আ রুম অব ওয়ানস ওন’-এর ভিত্তি হয়ে উঠেছিল। আরেকটি বিখ্যাত প্রবন্ধগ্রন্থ হল ‘এ লেটার টু এ ইয়াং পোয়েট’ (১৯৩২)। ১৯৩১-এ প্রকাশ পায় পরীক্ষামূলক উপন্যাস ‘দ্য ওয়েভস’। ভার্জিনিয়ার লেখা একমাত্র নাটক ‘ফ্রেশওয়াটার’ ১৯৩৫ সালে অভিনীত হয়েছিল। জীবদ্দশায় প্রকাশিত তাঁর শেষ উপন্যাস হল ‘দ্য ইয়ারস’ (১৯৩৭)। প্রকৃতপক্ষে তাঁর শেষ উপন্যাস ‘বিট্যুইন দ্য অ্যাক্টস’ ১৯৪১-এ তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছিল। 

ভার্জিনিয়া সম্ভবত একজন সমকামী মানুষ ছিলেন, কেউ কেউ তাঁকে উভকামীও বলেছেন। কৈশোরে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন বলেই হয়তো পুরুষদের সঙ্গে যৌনতার বিদ্বেষী ছিলেন তিনি। যেসমস্ত নারীর সঙ্গে ভার্জিনিয়ার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সাহিত্যিক ভিটা স্যাকভিল-ওয়েস্ট। এছাড়াও সিবিল কোলফ্যাক্স, লেডি অটোলিন মরেল এবং মেরি হাচিনসনের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল তাঁর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভার্জিনিয়া উলফ মৃত্যুর প্রতি আরও আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন।  যুদ্ধের বাতাবরণ তাঁকে আরও অন্ধকারে ঠেলে দেয়। 

১৯৪১ সালের ২৮ মার্চ নিজের ওভারকোটের পকেটে পাথর ভর্তি করে বাড়ির কাছের ওউস নদীতে জলে ডুবে আত্মহত্যা করেন ভার্জিনিয়া উলফ ।

আপনার মতামত জানান