বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবস

১০ এপ্রিল | বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবস

প্রতিবছর প্রতিমাসে নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশেই কিছু দিবস পালিত হয়। ওই নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। পালনীয় সেই সমস্ত  দিবসগুলোর মধ্যে একটি হল বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবস (WORLD HOMEOPATHY DAY)।

সারা বিশ্বে ১০ এপ্রিল দিনটি বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবস পালিত হয়ে থাকে।

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার জন্ম জার্মানিতে। বিজ্ঞানী ডাঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান হলেন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার আবিষ্কারক। তাঁর জন্মদিনের দিনটিতেই বিশ্ব জুড়ে ‘বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবস’ পালন করা হয়ে থাকে। হ্যানিম্যান বিজ্ঞানী ছাড়াও একাধারে অনুবাদের কাজও করতেন। এভাবেই উইলিয়াম কুলেন রচিত ‘এ ট্রিট্রিজ অন দ্য মেটেরিয়া মেডিকা’ (A Treatise on the Materia Medica) বইটি অনুবাদ করার সময় হ্যানিম্যান পেরুভিয়ান বার্ক (Peruvian bark) থেকে তৈরী ম্যালেরিয়া (malaria) জ্বরের প্রতিষেধক হিসেবে ‘সিঙ্কোনা'(cinchona) গাছের ছালের কার্যকারিতা দেখতে পান। হ্যানিম্যান বিশ্বাস করতেন যে ম্যালেরিয়া জ্বরে সিঙ্কোনা’র মত অন্যান্য সহায়ক উপাদান (astringent substances) ততটা কার্যকরী নয় যতটা সিঙ্কোনা গাছের ছাল। সিঙ্কোনার ছালের গুনাগুণের প্রভাব মানুষের ওপর কতটা সেটা দেখার জন্য তিনি ঠিক করলেন এর কার্যকারীতা নিজের দেহে পরীক্ষা করবেন। পরীক্ষায় দেখলেন যে এটি ম্যালেরিয়ার মত তাঁর দেহে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর সৃষ্টি করছে এবং এটা যে কোন সুস্থ মানুষের দেহেই করতে সক্ষম। এ বিষয়টি লক্ষ্য করে তিনি একটি মৌলিক নীতির প্রণয়ন করেন “যে উপাদান একজন সুস্থ ব্যক্তির ওপর প্রয়োগে একটি উপসর্গের সৃষ্টি করে তা একই রকম উপসর্গ সমৃদ্ধ অসুস্থ দেহে প্রয়োগে রোগ নিরাময় করতে সক্ষম”। এটাই “লাইক কিউর লাইক” (like cures like) যা একটি নতুন ধারার চিকিৎসা পদ্ধতির জন্ম দেয়। তিনি এই চিকিৎসা পদ্ধতির নাম দেন হোমিওপ্যাথি। ১৮০৭ সালে হুফেলান্ড (Hufeland) জার্নালে প্রকাশিত ‘ইন্ডিকেশনস অব দ্যা হোমিওপ্যাথিক এমপ্লয়মেন্ট অব মেডিসিনস ইন অর্ডিনারি প্র্যাকটিস’ (Indications of the Homeopathic Employment of Medicines in Ordinary Practice) নামে এক প্রবন্ধে প্রথম “হোমিওপ্যাথি” (homeopathy) শব্দটি হ্যানিম্যান প্রথম ব্যবহার করেন। তাঁর এই আবিষ্কার নিয়ে চিকিৎসা জগতে প্রচুর আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। তাঁর আবিষ্কারের জন্য অ্যালোপ্যাথি ওষুধ প্রস্তুতকারকরা হ্যানিম্যানের চরম বিরোধিতা করে। কিন্তু এত বিরোধিতা সত্ত্বেও তাঁর আবিষ্কৃত হোমিওপ্যাথি শুধুমাত্র জার্মানি নয় সমগ্র বিশ্বেই যথেষ্ট খ্যাতি লাভ করে।

ভারতবর্ষে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতির জনপ্রিয়তা প্রবল। ভারতবর্ষে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার প্রকৃত জনক বলা হয় বাবু রাজেন্দ্রলাল দত্তকে। তিনি কোন স্বীকৃত হোমিওপ্যাথ না হওয়া সত্ত্বেও বিদ্যাসাগর এবং রাজা রাধাকান্ত দেবকে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তুলেছিলেন। ভারতের প্রথম স্বীকৃত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক হলেন মহেন্দ্রলাল সরকার। তিনি ভারতে হোমিওপ্যাথিকে জনপ্রিয় করেছিলেন। বর্তমানে ভারত সরকারের আয়ুষ AYUSH (Ayurveda, Yoga and Naturopathy, Unani, Siddha, and Homeopathy) মন্ত্রক সুনির্দিষ্ট গবেষণা, উৎপাদন এবং উৎপাদিত ওষুধের মানোন্নয়ন এবং হোমিওপ্যাথি কলেজগুলিতে উচ্চমানের শিক্ষার মাধ্যমে হোমিওপ্যাথিকে স্বীকৃতি দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। রাজস্থানে ভারতের প্রথম হোমিওপ্যাথি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। এছাড়াও হোমিওপ্যাথি বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার আরও নানা উদ্যোগ নিয়েছে। হোমিওপ্যাথি ওষুধের গুণমান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এই চিকিৎসাবিদ্যার বিশ্বাসযোগ্যতা গড়ে তোলার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রতি বছর ভারত সরকারের আয়ুষ মন্ত্রক এই দিনে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদের নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করে একটি নির্দিষ্ট প্রতিপাদ্যের ওপর। ২০১৯ সালের প্রতিপাদ্য ছিল – হোমিওপ্যাথি এবং মানসিক স্বাস্থ্য(Homeopathy and Mental Health.)। ২০২০ সালের আয়োজিত সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয় – ‘জন স্বাস্থ্যে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধি’ (Enhancing the scope of Homeopathy in Public Health)। ২০২১ সালের প্রতিপাদ্য ছিল – হোমিওপ্যাথি- ইন্টিগ্রেটিভ মেডিসিনের জন্য রোডম্যাপ (Homeopathy- Roadmap for Integrative Medicine)। ২০২২ সালের প্রতিপাদ্য ছিল – হোমিওপ্যাথি: সুস্থতার জন্য মানুষের পছন্দ (Homoeopathy: People’s Choice for Wellness)। ২০২৩ সালের প্রতিপাদ্য – এক স্বাস্থ্য, এক পরিবার (One Health, One Family)। ২০২৪ সালের প্রতিপাদ্য – ‘গবেষণার ক্ষমতায়ন, দক্ষতার বৃদ্ধি: একটি হোমিওপ্যাথি আলোচনাসভা’ (Empowering Research, Enhancing Proficiency: A Homeopathy Symposium)।

2 comments

  1. একটি আশ্চর্যজনক তথ্য বহুদিন ধরে ইন্টারনেট (আমি অর্থহীন আন্তর্জাল শব্দটির পরিবর্তে ঐখনও ইংরেজী কথাটিই বেশী পছন্দ ও ব্যবহার করি) ঘেঁটে আবিষ্কার করলাম। সেটি হলো, পশ্চিমবঙ্গ থেকে একটিও হোমিওপ্যাথি বিষয়ে পত্রিকা প্রকাশিত হয়না। এই বিষয়ক সমস্ত পত্রিকাই বাংলাদেশ থেকে বার হয়। এমন কি ওয়েব ম্যাগাজিন পর্যন্ত। ফেসবুকেও এ বিষয়ে সব কটি পেজের উৎস প্রতিবেশী দেশটি, যার রাষ্ট্রীয় ভাষা বাংলা।

আপনার মতামত জানান