ভারতীয় অক্ষয় উর্জা দিবস

২০ আগস্ট ।। ভারতীয় অক্ষয় উর্জা দিবস ।। রাজীব গান্ধী অক্ষয় উর্জা দিবস

প্রতি বছর প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশেই কিছু দিবস পালিত হয়। ঐ নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরী করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়। ভারতের পালনীয় সেই সমস্ত দিবসগুলোর মধ্যেই একটি হলো ভারতীয় অক্ষয় উর্জা দিবস (Indian Akshay Urja Day)।

প্রতি বছর ২০ আগস্ট সারা ভারত জুড়ে ভারতীয় অক্ষয় উর্জা দিবস পালন করা হয়। ২০ আগস্ট ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর রাজীব গান্ধীর জন্মদিন। তাঁর স্মৃতিরক্ষার্থে এই দিনটিকে রাজীব গান্ধী অক্ষয় উর্জা দিবস (Rajiv Gandhi Akshay Urja Diwas) হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়।

২০০৪ সালে ভারতের নতুন এবং নবীকরণযোগ্য শক্তি সম্পদ মন্ত্রকের তরফ থেকে ভারতে নবীকরণযোগ্য শক্তির উন্নতি সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে ২০ আগস্ট দিনটিকে ভারতীয় বা জাতীয় অক্ষয় উর্জা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর জন্মদিন হওয়ায় এই দিনটিকে রাজীব গান্ধী অক্ষয় উর্জা দিবস হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

অক্ষয় উর্জা বলতে নবীকরণযোগ্য শক্তি সম্পদকে বোঝানো হয়। যে সমস্ত শক্তি সম্পদের কোন বিনাশ হয়না, সেই প্রাকৃতিক শক্তিসম্পদ্গুলিকে নবীকরণযোগ্য শক্তি বলা হয়। সৌর শক্তি , বায়ু শক্তি, জলবিদ্যুৎ শক্তি, ভূ তাপীয় শক্তি, জৈববস্তু শক্তি এগুলি হল নবীকরণযোগ্য শক্তির কিছু উদাহরণ।

এই নবীকরণযোগ্য শক্তির সবথেকে বড় সুবিধা হল এগুলি কখনোই নিঃশেষ হয় না। যেহেতু নতুন করে এই শক্তি সৃষ্টির করার কোন প্রয়োজনীয়তা থাকে না সেহেতু এই শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে কোন বিনিয়োগের বিষয় থাকেনা। এই ধরণের শক্তির অধিক ব্যবহার কয়লা, খনিজ তেলের মত অনবীকরণযোগ্য শক্তির প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পেতে সাহায্য করবে যা গোটা বিশ্ব জুড়ে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দ্বন্দ্ব দূরীকরণে উপযোগী ভূমিকা পালন করবে। এর পাশাপাশি নবীকরণযোগ্য শক্তির অধিক ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষণের ক্ষেত্রেও সুরাহা হবে। এই ধরণের শক্তির অধিক ব্যবহারের ফলে গ্রিন হাউজ গ্যাস কম নির্গত হবে। এর ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সহজে লড়াই করা সম্ভবপর হবে।

উৎপাদন ক্ষেত্র ছাড়াও অন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনবীকরণযোগ্য শক্তির তুলনায় নবীকরণযোগ্য শক্তি বিনিয়োগের দিক থেকে অনেক বেশি সাশ্রয়ী। নবীকরণযোগ্য শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা অনেক বেশি সহজ। সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমাদের দেশের শক্তি সম্পর্কিত সমস্ত সমস্যা খুব সহজেই মিটিয়ে ফেলা যায়। একটি সমীক্ষা অনুসারে সারা বিশ্বের ভূতাপীয় শক্তিসম্পদের ভিত্তি কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং ইউরেনিয়ামের মিলিত পরিমাণের থেকে বেশি। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড ফান্ড ফর নেচার (World Wild Fund for Nature, WWF)এর মতে সঠিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সিদ্ধান্ত নিলে ২০৫০ সালের মধ্যে সারা পৃথিবীর মানুষের যত পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন তা তাঁরা নবীকরণযোগ্য শক্তি থেকেই পেতে পারে।

নবীকরণযোগ্য শক্তির এই গুরুত্ব সম্পর্কে মানুষজনকে সচেতন করতে এবং ভবিষ্যতে প্রকৃতি, পরিবেশ তথা নিজেদের সামগ্রিক উন্নতির কথা চিন্তা করে যাতে নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ানো যায় সেই লক্ষ্যে এই বিশেষ দিনটির অবতারণা করা হয়। নবীকরণযোগ্য শক্তিগুলিকে আরও দক্ষভাবে কাজে লাগানোর পথ খুঁজে বের করা দরকারি। কারণ, এই ধরণের শক্তিকে কাজে লাগালে প্রকৃতি-পরিবেশ তো সুরক্ষিত থাকবেই, সঙ্গে অনবীকরণযোগ্য প্রাকৃতিক শক্তিগুলিকেও অনেকদিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। ভারত সরকার এবং নতুন এবং নবীকরণযোগ্য শক্তি সম্পদ মন্ত্রক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নবীকরণযোগ্য শক্তিকে কাজে লাগাতে অভিনব উদ্যোগের পৃষ্ঠপোষণা করে থাকে ।

২০০৪ সালে যখন প্রথম এই দিনটি ঘোষিত হয় তখন ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর স্মৃতিতে তাঁর ছবি দেওয়া একটি ডাকটিকিটের সূচনা করা হয়। এই দিন ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে নবীকরণযোগ্য ভবিষ্যতের কথা প্রচার করতে প্রায় ১২,০০০ স্কুলপড়ুয়া মিলিতভাবে একটি মানব বন্ধন তৈরি করেন। ২০০৪ সালে নয়া দিল্লিতে এই অনুষ্ঠানটি হওয়ার পরে, ২০০৫ এবং ২০০৬ সালে এই অনুষ্ঠানটি নাগপুরে হয়। ২০০৭ সালে হয় হায়দ্রাবাদে এবং ২০০৮ সালে এই অনুষ্ঠানটি হয় হরিয়ানার পাঁচকুলায়।

সারা ভারতবর্ষের মতো পশ্চিমবঙ্গেও এই দিনটি উদযাপিত হয়ে থাকে। বিগত কয়েক বছরে এই অনুষ্ঠানটি কাদের সহযোগিতায় কোথায় পালিত হয়েছিল দেখে নেওয়া যাক। ২০০৮ এবং ২০০৯ সালে বিবেকানন্দ ইন্সটিটিউশনের সঙ্গে যৌথভাবে কলকাতার সল্টলেকের ইস্টার্ন জোনাল কালচার সেন্টারে অনুষ্ঠানটি হয়। ২০১০ সালে মনোরঞ্জন রায় এনার্জি এডুকেশন সেন্টারের সঙ্গে মিলিতভাবে হাওড়ার শরৎ সদনে হয়। ২০১১ সালে মধ্যমগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটি এবং মধ্যমগ্রাম সবুজ মঞ্চের সঙ্গে মিলিতভাবে নজরুল শতবার্ষিকী হলে এবং ২০১২ সালে মহেশতলা মিউনিসিপ্যালিটির সঙ্গে যৌথভাবে উৎপল দত্ত মঞ্চে অনুষ্ঠানটি উদযাপিত হয়।

নবীকরণযোগ্য শক্তির গুরুত্ব বুঝে সাধারণ মানুষ নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনে এবং বৃহত্তর ক্ষেত্রে এর ব্যবহারের পরিধিকে বিস্তৃত করবেন এই আশা নিয়েই ভারতীয় অক্ষয় উর্জা দিবস বা রাজীব গান্ধী অক্ষয় উর্জা দিবসটিকে উদযাপন করা হয়ে থাকে। দূরবর্তী ভবিষ্যতে ভারতবর্ষ এবং ভারতবাসী এই নবীকরণযোগ্য শক্তির ওপরে অধিক বিশ্বাস রেখে একটি দূষণমুক্ত সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে পারলেই এই উদ্যোগ সার্থক হবে।

আপনার মতামত জানান