কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা

কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে সশস্ত্র সংগ্রাম কিংবা গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠনের আন্দোলন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। জাতীয় কংগ্রেসের নরমপন্থী দলের কার্যকলাপে আস্থা হারিয়েছিল কিছু তরুণ-যুব সম্প্রদায়। আবেদন-নিবেদনের বদলে সশস্ত্র বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে বাংলা সহ পুরো ভারতে একের পর এক তৈরি হয়েছিল গুপ্ত বিপ্লবী সমিতি। প্রথম পর্যায়ে বোমা তৈরি এবং পরপর কতগুলি বোমা নিক্ষেপের ঘটনার সাক্ষী থেকেছে ভারতবাসী। উঠে এসেছে একাধিক বিপ্লবীর নাম, চলেছে একাধিক ষড়যন্ত্র মামলা। আলিপুর বোমা মামলা, মুজফ্‌ফপুর বোমা মামলা, দক্ষিণেশ্বর বোমা মামলার পাশাপাশি বাংলার বাইরে যে সমস্ত বিপ্লবী কার্যকলাপ গড়ে উঠেছিল তার মধ্যে সর্বাগ্রে স্মরণীয় কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলার কথা। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের কথা আমরা সকলেই জানি। ঠিক যেভাবে মাস্টারদার নেতৃত্বে চট্টগ্রামের পুলিশ ফাঁড়ির অধীনস্থ অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র লুঠ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, একইভাবে ট্রেনের মধ্যে ভারতীয় টাকা লুঠ করে অস্ত্র সংগ্রহের পরিকল্পনাকে ঘিরে কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ভারতীয় বিপ্লবীর বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছিল এক ঐতিহাসিক মামলা – কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা (Kakori Conspiracy Case)।

১৯২৬ সালের ১ মে কাকোরিতে সশস্ত্র ট্রেন ডাকাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা । মামলায় অভিযুক্ত বিপ্লবীদের মধ্যে ছিলেন – চন্দ্রধর জোহরি, চন্দ্রভাল জোহোরি, শীতলা সাহাই, জ্যোতি শঙ্কর দীক্ষিত, ভূপেন্দ্রনাথ সান্যাল, মন্মথনাথ গুপ্ত, দামোদর স্বরূপ শেঠ, রামনাথ পাণ্ডে, দেবদত্ত ভট্টাচার্য, ইন্দ্র বিক্রম সিং, মুকুন্দি লাল, শচীন্দ্রনাথ সান্যাল, যোগেশচন্দ্র চ্যাটার্জি, রাজেন্দ্রনাথ লাহিড়ি, শরৎচন্দ্র গুহ, কালিদাস বসু, বাবু রাম ভার্মা, ভাইরোন সিং, প্রণবেশ চ্যাটার্জি, রাম দুলারি ত্রিবেদী, গোপী মোহন, রাজকুমার সিন্‌হা, সুরেশ চরণ ভট্টাচার্য্য, মোহন লাল গৌতম, হরনাম সুন্দরলাল, গোবিন্দ চরণ কর, শচীন্দ্রনাথ বিশ্বাস, বিষ্ণুচরণ দুব্লিশ, বীরভদ্র তেওয়ারি, রামকৃষ্ণ ক্ষত্রী, বনোয়ারিলাল, রামপ্রসাদ বিসমিল, বানারসিলাল, লালা হরগোবিন্দ, প্রেমকৃষ্ণ খান্না, ইন্দুভূষণ মিত্র, ঠাকুর রোশান সিং, রাম দত্ত শুক্লা, মদনলাল, রাম রতন শুক্লা, আসফাকউল্লা খান, শচীন্দ্রনাথ বক্সী প্রমুখ। এর মধ্যে যদিও দুজন রাজসাক্ষী হয় এবং ১৭ জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। বাকি ২১ জন বিপ্লবীর বিরুদ্ধে শুরু হয়েছিল এই মামলা। দীর্ঘ আঠারো মাস ধরে ব্রিটিশদের দায়ের করা এই রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা চলে যার চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হয়েছিল ১৯২৭ সালের ৬ এপ্রিল। স্পেশাল সেশন আদালতে চলা এই মামলার বিচারের ভার ছিল কুখ্যাত ব্রিটিশ বিচারপতি অ্যাণ্ড্রুজ হ্যামিলটনের উপর। আদালতের হয়ে সওয়াল-জবাব করেছিলেন জগৎ নারায়ণ মোল্লা।

সময়টা ১৯২৫ সাল। রামপ্রসাদ বিসমিল, আসফাকউল্লা খান প্রমুখরা প্রত্যেকেই নিজে নিজের মতো করে সশস্ত্র বিপ্লবের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের চেষ্টা করছিলেন। ইতিমধ্যে ১৯১৮ সালে মৈনপুরী মামলায় অভিযুক্ত হয়েছিলেন রামপ্রসাদ বিসমিল। পরে ছাড়া পেয়ে তিনি যখন উত্তরপ্রদেশের শাহজাহানপুরে আসেন, তখন তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় আসফাকউল্লা খানের। স্বরাজ দলের হয়েও এই দুই বিপ্লবী প্রচারকার্যে সহায়তা করেছিলেন। কিন্তু গান্ধীজি পরিচালিত অহিংস অসহযোগ আন্দোলন হঠাৎ করেই চৌরিচৌরার ঘটনার পরে গান্ধীজি স্বয়ং প্রত্যাহার করে নিলে ক্ষুন্ন হন তারা। বিকল্প পথে স্বাধীনতা আনয়নের লক্ষ্যেই ১৯২৪ সালে কয়েকজন সমমনস্ক স্বাধীনতাকামী বিপ্লবী বন্ধুদের নিয়ে একত্রে আসফাকউল্লা গড়ে তোলেন ‘হিন্দুস্তান সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশন’। ১৯২৫ সালে এই সংগঠন কর্তৃক প্রকাশিত ‘দ্য রিভলিউশনারি’ নামে একটি ইস্তাহারে বলা হয়, স্বাধীন ভারত গড়ার লক্ষ্যে এই সংগঠনের কাজ ছিল বিভিন্ন জায়গায় সশস্ত্র বিপ্লবী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা। বিপ্লবী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র এবং গোলা-বারুদ সংগ্রহ করার প্রয়োজন ছিল আর সেই জন্যে এই সংগঠনের সকলে ১৯২৫ সালের ৮ আগস্ট শাহজাহানপুরে সম্মিলিত হয়। ঐ সভাতেই ঠিক হয় কাকোরিতে ট্রেন লুঠ করে অর্থ সংগ্রহ করা হবে এই অস্ত্র-শস্ত্র কেনার জন্য। এই পরিকল্পনা অনুসারে ১৯২৫ সালের ৯ আগস্ট আসফাকউল্লা খান সহ রামপ্রসাদ বিসমিল, রাজেন্দ্র লাহিড়ী, ঠাকুর রোশান সিং, শচীন্দ্র বক্সী, চন্দ্রশেখর আজাদ, কেশব চক্রবর্তী, বনোয়ারী লাল, মুরারী লাল গুপ্তা, মুকুন্দি লাল এবং মন্মথনাথ গুপ্ত একত্রে লক্ষ্ণৌয়ের কাছে একটি গ্রাম কাকোরিতে ব্রিটিশদের ট্রেন লুঠ করেন। সেই ট্রেনেই বস্তাবন্দি ভারতীয় টাকার সম্ভার ছিল এই সংবাদ আগে থেকেই জানতে পেরেছিলেন তারা। এই ঘটনার পরেই গা ঢাকা দিতে আসফাকউল্লা নেপালে পালিয়ে যান। এই ট্রেন লুঠের পুরো পরিকল্পনাতে সহায়তা করেছিলেন বিসমিল খান, চন্দ্রশেখর আজাদ, শচীন্দ্র বক্সী, কেশব চক্রবর্তী, মন্মথনাথ গুপ্ত, মুকুন্দি লাল, মুরারি লাল গুপ্তা এবং বনোয়ারিলাল। এই ঘটনায় একজন নিরপরাধ ট্রেনযাত্রীকে অনিচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হয়। অভিযুক্তদের বয়ান থেকে পাওয়া ঘটনার অনুপুঙ্খ বিবরণে জানা যায় যে ১৯২৫ সালের ৯ আগস্ট ৮ নং ডাউন ট্রেন শাহজাহানপুর থেকে লক্ষ্ণৌ আসছিল। এর মধ্যেই কাকোরির কাছে ট্রেনে উপস্থিত বিপ্লবী রাজেন্দ্রনাথ লাহিড়ী আপদকালীন চেন টানেন ট্রেন থামানোর জন্য এবং অন্যান্য বিপ্লবীরা তৎক্ষণাৎ প্রহরীদের আটক করে। ট্রেনে উপস্থিত বিপ্লবীরা প্রহরীদের কেবিনে রাখা টাকাভর্তি তিনটি ব্যাগ লুঠ করে যেখানে তৎকালীন ভারতীয় মুদ্রায় মোট চার হাজার ছয়শো টাকা ছিল। তাদের মুল উদ্দেশ্য ছিল দুটি –

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

১. ব্রিটিশ সরকারের থেকে লুঠ করা টাকায় হিন্দুস্তান রিপাবলিকান আর্মির অর্থ সংকুলান করা

২. ভারতীয়দের মনে হিন্দুস্তান রিপাবলিকান আর্মির কার্যকলাপ ও ভাবধারা সম্পর্কে গভীর প্রভাব বিস্তার করা।

এই সময় ট্রেনের মধ্যে আহমেদ আলি নামের একজন উকিল মহিলা কামরায় থাকা তাঁর স্ত্রীকে দেখতে যাওয়ার উদ্দেশে ট্রেন থেকে নেমে এগোতে গেলে অনিচ্ছাকৃতভাবে মন্মথনাথ গুপ্তের হাতে তার মৃত্যু হয়। আর এই হত্যার ঘটনাই এই ঘটনাটিকে হত্যার মামলায় পর্যবসিত করার জন্য উপযুক্ত প্রমাণ সরবরাহ করে। এরপরেই ব্রিটিশ সরকার কাকোরি ট্রেন ডাকাতির ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে শুরু করে। ১৯২৫ সালের ২৬ অক্টোবরে শাহজাহানপুর থেকে গ্রেপ্তার হন বিসমিল খান এবং ১৯২৬ সালের ১৭ জুলাই দিল্লি থেকে গ্রেপাত্র হন আসফাকউল্লা খান। সমগ্র ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মোট চল্লিশ জন বিপ্লবীকে গ্রেপ্তার করে ব্রিটিশ পুলিশ। আগ্রা থেকে চন্দ্রধর জোহরি, চন্দ্রভাল জোহোরি, এলাহাবাদ থেকে গ্রেপ্তার হন শীতলা সাহাই, জ্যোতি শঙ্কর দীক্ষিত, ভূপেন্দ্রনাথ সান্যাল, বেনারস থেকে ব্রিটিশ পুলিশ গ্রেপ্তার করে মন্মথনাথ গুপ্ত, দামোদর স্বরূপ শেঠ, রামনাথ পাণ্ডে, দেবদত্ত ভট্টাচার্য, ইন্দ্র বিক্রম সিং এবং মুকুন্দি লালকে। বাংলা থেকে শচীন্দ্রনাথ সান্যাল, যোগেশচন্দ্র চ্যাটার্জি, রাজেন্দ্রনাথ লাহিড়ি, শরৎচন্দ্র গুহ, কালিদাস বসু গ্রেপ্তার হন, তাছাড়া ইটা থেকে বাবু রাম ভার্মা, হরদই থেকে ভাইরোন সিং, জব্বলপুর থেকে প্রণবেশ চ্যাটার্জি, কানপুর থেকে রাম দুলারি ত্রিবেদী, গোপী মোহন, রাজকুমার সিন্‌হা, সুরেশ চরণ ভট্টাচার্য্য, লাহোর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মোহন লাল গৌতমকে, লখিমপুর থেকে হরনাম সুন্দরলাল, লক্ষ্ণৌ থেকে গোবিন্দ চরণ কর, শচীন্দ্রনাথ বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করে ব্রিটিশ পুলিশ, মীরাট থেকে বিষ্ণুচরণ দুব্লিশ, ওরাই থেকে বীরভদ্র তেওয়ারি, পুনে থেকে রামকৃষ্ণ ক্ষত্রী, রায়বেরিলি জেলা থেকে বনোয়ারিলাল এবং সবশেষে শাহজাহানপুর থেকে গ্রেপ্তার হন বানারসিলাল, লালা হরগোবিন্দ, প্রেমকৃষ্ণ খান্না, ইন্দুভূষণ মিত্র, ঠাকুর রোশান সিং, রাম দত্ত শুক্লা, মদনলাল, রাম রতন শুক্লা। ১৯২৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রতাপগড় থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শচীন্দ্রনাথ বক্সীকে। এদের মধ্যে শচীন্দ্রনাথ সান্যাল, রাজেন্দ্রনাথ লাহিড়ী এবং যোগেশচন্দ্র চ্যাটার্জি এই তিনজন আগেও বাংলায় বোমা মামলার জন্য গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

এই চল্লিশজন অভিযুক্তের মধ্য থেকে ১৪ জনকে উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে ছেড়ে দেওয়া হয়। গোপীমোহন রাজসাক্ষী হয়। তাছাড়া বানারসিলাল এবং ইন্দুভূষণ মিত্র রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেয়। এই তিনজন ছাড়াও বীরভদ্র তেওয়ারি এবং জ্যোতিশঙ্কর দীক্ষিত ব্রিটিশ সরকারের কাছে গোপন খবর জানান দিয়েছিলেন বলে জানা যায়। দামোদর স্বরূপ শেঠকে শারীরিক অসুস্থতার কারণে মুক্তি দেওয়া হয়। এরা বাদে বাকি মোট ২১ জনের বিরুদ্ধে ১৯২৬ সালের ১ মে স্পেশাল সেশন আদালতে বিচারপতি অ্যাণ্ড্রু হ্যামিলটনের অধীনে শুরু হয় কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা। মূলত বনোয়ারিলালের বয়ানের ভিত্তিতেই হিন্দুস্তান রিপাবলিকান আর্মির সদস্যদের অভিযুক্ত করা হয় এবং তার বয়ান থেকেই জানতে পারা যায় যে আগামীতে বিচপুর, বামরাউলি এবং দ্বারিকাপুরে একইভাবে ট্রেন লুঠের পরিকল্পনা করেছিলেন বিপ্লবীরা। ১৯২৭ সালের ৬ এপ্রিল চূড়ান্ত রায়ে রামপ্রসাদ বিসমিল, রোশান সিং এবং রাজেন্দ্রনাথ লাহিড়ীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, শচীন্দ্রনাথ সান্যালকে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা দেওয়া হয়। মন্মথনাথ গুপ্তকে ১৪ বছরের জন্য, যোগেশচন্দ্র চ্যাটার্জি, গোবিন্দচরণ কর, রাজকুমার সিন্‌হা, রামকৃষ্ণ ক্ষত্রী এবং মুকুন্দি লালকে ১০ বছরের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। এছাড়া সুরেশচন্দ্র ভট্টচার্য এবং বিষ্ণুচরণ দুবলিশকে ৭ বছর এবং বাকিদের ৫ বছরের জন্য সশ্রম কারাদণ্ড ঘোষিত হয়। রামনাথ পাণ্ডে ও বনোয়ারিলালকে সবথেকে কম মাত্র তিন বছরের কারাবাসের সাজা দেওয়া হয়। পরে আসফাকউল্লা খান এবং শচীন্দ্রনাথ বক্সীর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত প্রমাণ সংগ্রহ হওয়ায় আবার নতুন করে মামলা দায়ের হয় পৃথকভাবে এবং সেই মামলায় স্পেশাল সেশন বিচারপতি স্যার জন রেজিনাল্ড উইলিয়াম বেনেট শচীন্দ্রনাথ সান্যাল, গোবিন্দচরণ কর, যোগেশচন্দ্র চ্যাটার্জি, মুকুন্দি লাল এবং শচীন্দ্রনাথ বক্সীকে আন্দামান সেলুলার জেলে নির্বাসনে পাঠায়। আসফাকউল্লা খানের ফাঁসির ঘোষণা করা হয়। বাকি অনেক বিপ্লবীর কারাবাসের মেয়াদে হেরফের ঘটে। একমাত্র মন্মথনাথ গুপ্তকে ১৪ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।

কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলা -র রায় ঘোষণার পরে বিপ্লবীদের বিভিন্ন জেলে পাঠানো হয় এবং তাদের জন্য অন্যান্য কয়েদিদের মতোই এক পোশাক পরতে বলা হয় তখন রাজনৈতিক বন্দি হিসেবে বিশেষ সুবিধে পাওয়ার দাবিতে সমস্ত জেলে ক্রমান্বয়ে অনশনে বসেন বিপ্লবীরা। গোরক্ষপুর সেন্ট্রাল জেলে রামপ্রসাদ বিসমিল ৪ দিনের জন্য, এলাহাবাদ জেলে রোশান সিং ৬ দিন, রায়বেরিলি জেলে রামনাথ পাণ্ডে ১১ দিন, দেরাদুন ডিস্ট্রিক্ট জেলে প্রেমকৃষ্ণ খান্না ১৬ দিন, আগ্রা সেন্ট্রাল জেলে সুরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য ১৯ দিন এবং রামকৃষ্ণ ক্ষত্রী ৩২ দিন, বেরিলি সেন্ট্রাল জেলে মুকুন্দি লাল ৩২ দিন, রাজকুমার সিন্‌হা ৩৮ দিন যাবৎ অনশন করেছিলেন। এছাড়াও ফতেহগড় জেলে যোগেশচন্দ্র চ্যাটার্জি, রাম দুলারি ত্রিবেদী, গোবিন্দ চরণ কর ৪১ দিন টানা অনশনে ছিলেন। সবশেষ নৈনি এলাহাবাদ জেলে বন্দি মন্মথনাথ গুপ্ত এবং বিষ্ণুচরণ দুবলিশ দীর্ঘ ৪৫ দিন যাবৎ অনশন করেছিলেন। দেশজুড়ে কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলার বিপ্লবীদের সমর্থন করেছিলেন মতিলাল নেহেরু, মদনমোহন মালব্য, মহম্মদ আলি জিন্নাহ, লালা লাজপত রায়, জওহরলাল নেহেরু, গণেশ শঙ্কর বিদ্যার্থী, আচার্য নরেন্দ্র দেব প্রমুখ বিখ্যাত সব রাজনৈতিক নেতা। পুরো দেশ জুড়ে এই সময় আন্দোলন দানা বাঁধে এই বিপ্লবীদের ফাঁসির আদেশের বিরোধিতা করে। ভারতের ভাইসরয় এবং মুখ্য বিচারপতির কাছে আবেদন করা হয় কিন্তু কেউই এই আবেদন স্বীকার করেননি।

One comment

আপনার মতামত জানান