বিশ্বের শিশুসাহিত্যের ধারায় যাঁদের নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয় ভিক্টোরিয়ান যুগের বিখ্যাত ইংরেজ লেখক লুই ক্যারল (Lewis Carroll) ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। শিশুদের জগত নিয়ে যে সাহিত্য তিনি রচনা করেছিলেন তাতে শব্দ নিয়ে খেলা করবার তাঁর যে দুর্লভ প্রতিভা, তার আভাস পাওয়া যায় পরতে পরতে। ‘অ্যালিস’ নামক একটি শিশুর অ্যাডভেঞ্চারকে কেন্দ্রীয় বিষয় করে লেখা তাঁর উপন্যাস আজও একইরকমভাবে পাঠকদের সমাদর লাভ করে। রাণী ভিক্টোরিয়া পর্যন্ত সেই বইটি ভীষণ উপভোগ করেছিলেন। শিশুদের ফ্যান্টাসির বা কল্পনার জগতকে অনবদ্য রূপ দেন তিনি। তবে কেবলমাত্র উপন্যাস নয়, বেশ কিছু কবিতাও রচনা করেছিলেন তিনি যেগুলিকে ‘লিটারেরি ননসেন্স’ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। আসলে সেই অর্থহীনতার আড়ালে লুকোনো থাকত অর্থ, কিন্তু তার বাহ্যিক রূপ এলোমেলো, অর্থহীনতা দিয়ে মোড়া ছিল। তবে লুই ক্যারল কেবল একজন সাহিত্যিক ছিলেন না, একাধারে তিনি ছিলেন একজন গণিতবিদ, যুক্তিবাদী এবং ফোটোগ্রাফার। তিনি জ্যামিতি, ম্যাট্রিক্স বীজগণিত, গাণিতিক যুক্তিবিদ্যা প্রভৃতি নিয়ে চর্চা করে বহু গ্রন্থও রচনা করেছিলেন। গণিতের শিক্ষকতাও করেছিলেন তিনি। ক্যারলের আরেকটি শখ ছিল তিনি নিত্য-নতুন খেলা আবিষ্কার করতে ভালবাসতেন তিনি। এমনকি নাটকে অভিনয় করতেও পছন্দ করতেন ভীষণ।
১৮৩২ সালের ২৭ জানুয়ারি ইংল্যান্ডের চেশায়ারের ডারেসবারিতে একটি উচ্চ মধ্যবিত্ত, রক্ষণশীল পরিবারে লুই ক্যারলের জন্ম হয়। তাঁর আসল নাম ছিল চার্লস লুটউইজ ডজসন (Charles Lutwidge Dodgson)। পরবর্তীকালে তিনি ‘লুই ক্যারল’ ছদ্মনামেই বিশ্ববিখ্যাত হয়েছিলেন। তাঁর বাবা রেভারেন্ড চার্লস ডজসন (Rev. Charles Dodgson) চার্চ অফ ইংল্যান্ডের একজন সক্রিয় এবং অত্যন্ত রক্ষণশীল ধর্মগুরু ছিলেন। ক্যারলের মায়ের নাম ছিল ফ্রান্সেস জেন লুটউইজ (Frances Jane Lutwidge)। চার্লস এবং ফ্রান্সেসের সাত কন্যা ও চার পুত্রের মধ্যে ক্যারল ছিলেন তৃতীয় সন্তান এবং জ্যেষ্ঠপুত্র। তাঁর পরিবার ছিল মূলত উত্তর-প্রান্তীয় ইংরেজ এবং তাঁদের আইরিশ সংযোগও ছিল। লুই ক্যারলের প্রপিতামহ গির্জার উচ্চ পদমর্যাদা লাভ করেছিলেন এবং তাঁর ঠাকুরদা সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ছিলেন ও ১৮০৩ সালে নাটকীয় মৃত্যুবরণ করেছিলেন। ক্যারলের যখন ১১ বছর বয়স তখন তাঁর বাবা ইয়র্কশায়ারের ক্রফ্ট-অন-টিস গ্রামে চার্চের অধীনস্থ ধর্মযাজকদের জন্য নির্দিষ্ট একটি প্রশস্ত জমিতে একটি বাসস্থান পেয়েছিলেন। পরবর্তী পঁচিশ বছর এখানেই তাঁরা বাস করেন। ক্যারলের বাবা-মা উভয়েই সন্তানদের প্রভূত স্নেহ করতেন এবং শিক্ষাদানেও সাহায্য করতেন। ছোটবেলা থেকেই ভাই-বোনদের বিনোদনের জন্য ক্যারল নানারকম গেম আবিষ্কার করতেন।
প্রাথমিকভাবে তরুণ ক্যারল বাড়িতেই শিক্ষালাভ করেন। সাত বছর বয়সে তিনি জন বুনিয়ানের ‘দ্য পিলগ্রিম’স প্রোগ্রেস’ পড়েন। অল্প বয়স থেকেই তাঁর একটু তোতলামির সমস্যা ছিল, যা তাঁর সামাজিক জীবনে ভীষণভাবে প্রভাব ফেলেছিল। ১৮৫৯ সালে তিনি জেমস হান্টের কাজে স্পীচ থেরাপির পাঠ গ্রহণ করেন। বারো বছর বয়সে তাঁকে উত্তর ইয়র্কশায়ারের রিচমন্ডে অবস্থিত রিচমন্ড গ্রামার স্কুলে পাঠানো হয় পড়াশোনার জন্য। এই স্কুলে পড়ার সময়ে মূলত কবিতা লেখার চর্চা করতে থাকেন তিনি। সেই সময় তিনি এবং তাঁর ভাই-বোনেরা মিলে যে পারিবারিক সাময়িক পত্র ‘রেক্টরি ম্যাগাজিনস’ প্রকাশ করেন, তার জন্য কবিতা লিখেছিলেন ক্যারল। ১৮৪৫ সালে ঐ পত্রিকায় যে কবিতাগুলি লিখেছিলেন ক্যারল তা ‘ইউসফুল অ্যান্ড ইনস্ট্রাক্টিভ পোয়েট্রি’ নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯৫৪ সালে। এছাড়াও ১৮৫৫ থেকে ১৮৬২ সাল পর্যন্ত লুই ক্যারল ‘মিশ্চম্যাশ্চ’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন পরিবারের বিনোদনের জন্য যেখানে তার নিজের আঁকা ছবিরও সন্ধান মিলবে। অনেক পরে ১৯৩২ সালে ‘দ্য রেক্টরি আমব্রেলা অ্যান্ড মিশ্চম্যাশ্চ’ নামক একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল যাতে ক্যারলের সেইসব লেখালেখি একত্রে ছাপা হয়। ১৮৪৪-৪৫ সাল রিচমন্ড গ্রামার স্কুলে কাটিয়ে ১৮৪৬ সালে রাগবি স্কুলে ভর্তি হন লুই ক্যারল। এখানে চার বছর কাটিয়েছিলেন তিনি, কিন্তু এই জায়গা তাঁর পছন্দ ছিল না। ভীষণ অস্বস্তির মধ্যেই এখানে পড়াশোনা করতে হয়েছিল তাঁকে। অনুমান করা হয় এই সময় সম্ভবত যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন ক্যারল। এরপর ১৮৪৯ সালের শেষ দিকে তিনি রাগবি স্কুল ত্যাগ করেন এবং ১৮৫০ সালের মে মাসে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত ক্রাইস্ট চার্চ কলেজে প্রবেশ করেন। এই কলেজ থেকেই স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন লুই ক্যারল। কলেজে ঘরের অভাবের কারণে ১৮৫১ সালের জানুয়ারিতে বাসভবনে চলে যান তিনি। ঐ সময়েই মেনিনজাইটিসের কারণে ক্যারলের মায়ের মৃত্যু হয় মাত্র ৪৭ বছর বয়সে। ১৮৫২ সালে গণিত মডারেশনে প্রথম শ্রেণির সম্মান অর্জন করেন লুই ক্যারল এবং তাঁর বাবার পুরাতন বন্ধু এডওয়ার্ড পুসি তাঁকে স্টুডেন্টশিপের জন্য মনোনীত করেন। ১৮৫৪ সালে অনার্সের ফাইনালে গণিতে প্রথম শ্রেণির সম্মান অর্জন করেছিলেন ক্যারল এবং স্নাতক তালিকায় প্রথম স্থান পেয়ে ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। ১৮৫৬ সালে শিল্পকলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।
১৮৫৫ সালে নিজেরই কলেজ ক্রাইস্ট চার্চে লুই ক্যারল গণিতের অধ্যাপক হিসেবে অধ্যাপনা করতে শুরু করেন। পরবর্তী ২৬ বছর এই অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। প্রাথমিক ভাবে অখুশি হলেও আজীবন ক্রাইস্ট চার্চের লাইব্রেরির সাব-লাইব্রেরিয়ানের দায়িত্ব ভার বহন করেছিলেন লুই ক্যারল।
অল্প বয়স থেকেই ক্যারল কবিতা এবং ছোটগল্প লিখতে শুরু করেছিলেন। ১৮৫৪ থেকে ১৮৫৬ সালের মধ্যে নিজের লেখাগুলি জাতীয় স্তরের এবং পাশাপাশি স্থানীয় ছোট পত্রিকাতেও প্রকাশ করতে শুরু করেন তিনি। ‘দ্য কমিক টাইমস’ এবং ‘দ্য ট্রেন’-এর মতো জাতীয় স্তরের পত্রিকাতে যেমন প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর কাজ, তেমনি ‘হুইটবি গেজেট’ এবং ‘অক্সফোর্ড ক্রিটিক’-এর মতো ছোটখাটো সাময়িকীতেও তাঁর লেখা ছাপা হয়েছিল। সেসব লেখার মধ্যে প্রধানত হাস্যরসাত্মক এবং ব্যঙ্গাত্মক লেখাই ছিল। ‘দ্য ট্রেন’-এ প্রকাশিত লেখার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘দ্য থ্রী ভয়েস’, ‘দ্য সেলরস ওয়াইফ’, ‘নভেল্টি অ্যান্ড রোম্যান্সমেট’ প্রভৃতি। তিনি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের কবিতা ‘রেজোলিউশন অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্স’-এর প্যারোডি করে রচনা করেছিলেন ‘অন দ্য লোনলি মুর’ নামে একটি কবিতা। তবে ১৮৫৫ সালে তাঁর লেখা বয়ান থেকে জানা যায়, তিনি মনে করতেন তখনও পর্যন্ত এমন কোনও সাহিত্য সৃষ্টি করেননি তিনি যা কিনা ছাপার যোগ্য। তবে হতাশ ছিলেন না ক্যারল, বরং একদিন তেমন কিছু সৃষ্টি করতে পারবেন ভেবেই আশাবাদী ছিলেন। ১৮৫৬ সালে ‘দ্য ট্রেন’-এ প্রকাশিত একটি রোম্যান্টিক কবিতা ‘সলিচিউড’ তাঁকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। এই রচনাটির জন্যই প্রথম তিনি চার্লস লুটউইজ ডজসন নামের পরিবর্তে ‘লুই ক্যারল’ ছদ্মনাম ব্যবহার করেন। এই নামেই পরবর্তীকালে বিশ্ববিখ্যাত হয়েছিলেন তিনি। ১৮৫০ সালের পরে ক্যারল তাঁর ভাই-বোনদের জন্য পুতুল নাট্য রচনা করেছিলেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘লা গুইদা ডি ব্রাগিয়া’।
১৮৫৬ সালে ডিন হিসেবে হেনরি লিডেল ক্রাইস্ট চার্চ কলেজে এসেছিলেন। তাঁর পরিবারের সঙ্গে ক্যারলের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় পরবর্তীকালে এবং এই পরিবার তাঁর কর্মজীবন মূলত লেখক জীবনে প্রভূত প্রভাব বিস্তার করেছিল। ক্যারল হেনরি লিডেলের স্ত্রী এবং তাঁর তিন সন্তান লরিনা, এডিথ এবং অ্যালিস লিডেলের সঙ্গে পরিচিত হন। এই অ্যালিস লিডেল নামক শিশুটিই পরবর্তীতে তাঁর বিখ্যাত উপন্যাসের ‘অ্যালিস’ চরিত্র হয়ে উঠেছিল। এসময় ১৮৫৬ সালে শিক্ষকতার পাশাপাশি সমানতালে ফটোগ্রাফিও চর্চা করতে শুরু করেন তিনি। অ্যালিস নামক শিশুকন্যাটির একটি ছবিও তুলেছিলেন ক্যারল। তাঁর ফটোগ্রাফির বিষয় হয়ে উঠেছিল মূলত শিশুরা এবং বিখ্যাত মানুষেরা। এই বিখ্যাত মানুষদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অ্যালফ্রেড লর্ড টেনিসন, ইতালীয় চিত্রশিল্পী এবং কবি ডি.জি রোসেত্তি, এবং ইংরেজ চিত্রশিল্পী জন মিলেইস। ১৮৮০ সাল পর্যন্ত ফটোগ্রাফি চর্চাতে প্রচুর সময় ব্যয় করেছিলেন ক্যারল এবং প্রায় ৩ হাজার ছবি তুলেছিলেন তিনি।
১৮৫৮ সালে গণিতবিদ্যার ওপর তাঁর বই ‘দ্য ফিফথ্ বুক অফ ইউক্লিড’ প্রকাশিত হয়। এছাড়াও তাঁর দৃঢ় যুক্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত যে গণিতের বইগুলি প্রকাশিত হয়েছিল পরবর্তীকালে, সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘আ সিলেবাস অফ প্ল্যানড অ্যালজেব্রাইকাল জিওমেট্রি’ (১৮৬০), ‘দ্য ফর্মুল্যা অফ প্ল্যান ট্রিগোনোমেট্রি’ (১৮৬১) এবং ‘আ গাইড টু দ্য ম্যাথেমেটিক্যাল স্টুডেন্ট’ (১৮৬৪)।
১৮৬১ সালে লুই ক্যারল চার্চ অফ ইংল্যান্ডের ডিকেন বা পাদ্রী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। আজীবন অবিবাহিত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের সঙ্গেই তাঁর বনিবনা হত সবচেয়ে ভালো। শিশুদের মধ্যে থাকা, তাদের সঙ্গে ভাববিনিময় করাই সবচেয়ে তৃপ্তির ছিল তাঁর কাছে। লিডেল পরিবারের শিশুদের সঙ্গেও অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়ে গিয়েছিল স্বাভাবিকভাবেই। নদীতে নৌকায় ভ্রমণের সময় ক্যারল সেই শিশুকন্যাদের নানারকম গল্প শোনাতেন। অ্যালিস ভীষণই প্রিয় হয়ে ওঠে ক্যারলের। ১৮৬২ সালের এক শান্ত রৌদ্রকরোজ্জ্বল দুপুরে অ্যালিস নামক শিশুটিকে একটি গল্প শুনিয়েছিলেন ক্যারল নৌকায় ভ্রমণের সময়। অ্যালিস সেই গল্পটিই লিখতে বললে ক্যারল প্রথমে ১৮৬৪ সালের নভেম্বরে ‘অ্যালিসেস অ্যাডভেঞ্চারস আন্ডারগ্রাউন্ড’ নামে একটি হাতে লেখা চিত্রিত পান্ডুলিপি তৈরি করেন। অবশেষে ১৮৬৫ সালে ‘অ্যালিসে’স অ্যাডভেঞ্চারস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’ নামে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। এই বইয়ের ছবিগুলি এঁকেছিলেন স্যার জন টেনিয়েল। সারা বিশ্বে এই বইয়ের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল দ্রুত। রাণী ভিক্টোরিয়াও এই বইটি এতই উপভোগ করেছিলেন যে তিনি ক্যারলকে অনুরোধ করেছিলেন পরবর্তী বইটি তাঁকে উৎসর্গ করবার জন্য। ফলে ক্যারল ‘অ্যান এলিমেন্টারি ট্রিটিজ অন ডিটারমিন্যান্টস’ নামক গণিতের বইটি উৎসর্গ করেছিলেন রাণীকে। ১৮৭১ সালে তাঁর লেখা ‘থ্রু দ্য লুকিং-গ্লাস অ্যান্ড হোয়াট অ্যালিস ফাউন্ড দেয়ার’ নামে অ্যালিসের পরবর্তী কাহিনী বা সিক্যুয়েল প্রকাশিত হয়েছিল। ১৮৭৬ সালে ক্যারলের অন্যতম বিখ্যাত কাজ ‘দ্য হান্টিং অফ দ্য স্নার্ক’ প্রকাশিত হয় যেটি মূলত একটি কবিতার সংকলন এবং লিটারেরি ননসেন্সের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ১৮৮৯ সালে লুই ক্যারলের শেষ উপন্যাস ‘সিলভি অ্যান্ড ব্রুনো’র প্রথম খন্ড এবং ১৮৯৩ সালে তাঁর জীবদ্দশাতেই দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশিত হয়েছিল। সিলভি এবং ব্রুনো নামক দুই বোনকে কেন্দ্র করে রূপকথা এবং ফ্যান্টাসির জগত তৈরি করেছিলেন ক্যারল।
চিঠি লেখার প্রচারের জন্য ক্যারল ১৮৮৯ সালে ‘দ্য ওয়ান্ডারল্যান্ড পোস্টেজ-স্ট্যাম্প কেস’ উদ্ভাবন করেছিলেন। এছাড়াও তাঁর আরেকটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হল নিক্টোগ্রাফ। এটির সাহায্যে কোনো মানুষ অন্ধকারেও বিছানা ছেড়ে না উঠে নিজের চিন্তাকে লিপিবদ্ধ করে রাখতে সক্ষম হয়। প্রখর যুক্তিবাদী লুই ক্যারল বেশ কয়েকটি খেলা আবিষ্কার করেছিলেন যেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘স্ক্র্যাবল’। সংসদীয় প্রতিনিধিত্বের বিকল্প ব্যবস্থার প্রস্তাব করেছিলেন ক্যারল। তিনি নির্বাচনের ক্ষেত্রে কনডরসেট পদ্ধতি ব্যবহারের কথা বলেন। ১৮৮৪ সালে বহু সদস্যের জেলাগুলির উপর ভিত্তি করে একটি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার প্রস্তাব করেন তিনি। ১৮৬৭ সালে হেনরি লিডেলের সঙ্গে ধর্মযাজক হিসেবে রাশিয়া ভ্রমণের অভিজ্ঞতা লুই ক্যারল লিখেছিলেন তাঁর ‘রাশিয়ান জার্নাল’-এ।রাশিয়ায় যাওয়ার পথে এবং ফেরার পথে, তিনি বেলজিয়াম, জার্মানি, বিভক্ত পোল্যান্ড এবং ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরও দেখেছিলেন।
১৮৯৮ সালের ১৪ জানুয়ারি সারে কাউন্টির গিল্ডফোর্ডে অবস্থিত তাঁর বোনেদের বাড়ি ‘দ্য চেস্টনাটস’-এ ইনফ্লুয়েঞ্জার কারণে ৬৫ বছর বয়সে লুই ক্যারলের মৃত্যু হয়।