বাংলায় নবজাগরণের পথিকৃৎ, অগ্রণী সমাজ সংস্কারক রাজা রামমোহন রায় এক যুগ সন্ধিক্ষণে হিন্দুসমাজের কূপমন্ডুকতা, গোঁড়ামি, মধ্যযুগীয় মানসিকতাকে এক জোরালো নাড়া দিয়েছিলেন এবং তার ফলশ্রুতিতে বাংলায় শুরু হয়েছিল নবজাগরণ।
১৭৭২ সালের ২২ মে হুগলি জেলার রাধানগরে জমিদার পরিবারে রামমোহনের জন্ম। পারিবারিক পদবী বন্দ্যোপাধ্যায় হলেও পরিবারে রায় পদবীর ব্যবহার শুরু হয় প্রপিতামহের সময় থেকে। ফারুখশিয়ারের আমলে প্রপিতামহ কৃষ্ণকান্ত বাংলার সুবেদারের আমিনের কাজ করতেন। ধারণা করা হয় সেই সূত্রে ‘রায়’ পদবীর ব্যবহার। কৃষ্ণকান্তের ছোট ছেলে ব্রজবিনোদ হচ্ছেন রামমোহনের পিতামহ। পিতার নাম রামকান্ত রায়। মায়ের নাম তারিণী দেবী।
তখন শিক্ষার তিনটি ধরণ ছিল। গুরু মহাশয়ের পাঠশালা, ভট্টাচার্য্যদের চতুষ্পাঠি এবং ফারসি ও আরবি শেখার জন্য মৌলবীদের মক্তব। পাঠশালায় মুসলমানরা যেত কিনা, সন্দেহ থাকলেও হিন্দুরা ঠিকই মক্তবে যেত। কারণ মুসলমান শাসকদের রাজকাজে নিয়োগ পেতে হলে আরবি-ফারসি জানা থাকা জরুরী। ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনের ইতিহাস দেখলে বুঝা যায় রাজপ্রশাসনে সেনাপতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে হিন্দুরা অধিষ্ঠিত ছিলেন। যাইহোক, রামমোহনের শিক্ষার শুরু হয় গুরু মহাশয়ের পাঠশালায়। গুরুর নাম নন্দকুমার বিদ্যালঙ্কার। তাঁর কাছে সংস্কৃত ভাষা রপ্ত করেন।
নয় বছর বয়সে রামমোহনের পিতা তাকে পাটনায় পাঠিয়ে দেন আরবি ও ফারসি ভাষায় অধিকতর শিক্ষালাভের জন্য। তবে পাটনা পাঠানোর আগে রামমোহনকে বিবাহ দেন তাঁর পিতা। বালকের উপর নির্যাতন বটে! কিন্তু নির্যাতনের মাত্রা কতটুকু ছিল বুঝতে পারবেন, যখন জানবেন এটি তাঁর দ্বিতীয় বিবাহ ছিল। আরো দুঃখের বিষয় প্রথম স্ত্রীর অকাল মৃত্যু হয়েছিল। দ্বিতীয় বিবাহ দেয়ার বছর কয়েকের মধ্যে ছেলেকে তৃতীয়বার বিয়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে রামমোহন রায় বাল্য বিবাহ এবং বহু বিবাহ দু’টিই করেছেন। যদিও এর জন্য তাঁকে দোষ দেওয়া যায় না। কারণ বিয়ের বয়সে এসে তিনি আর কোন বিয়েই করেননি। বরং সে বয়সে গিয়ে বাল্য বিবাহ এবং বহু বিবাহের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন।
পাটনা থেকে আরবি ফারসি শিখে বাড়ি ফেরার পর এবার ১২ বছর বয়সে রামমোহনকে যেতে হলো কাশীতে। সেখানে গিয়ে আরো ভালোভাবে সংস্কৃত শেখেন তিনি। এমন হুলস্থুল শিক্ষাসফরে রামমোহনের মাথায় যে জিনিস সবচেয়ে বেশি দখল বসিয়েছে, তা হলো ধর্মচিন্তা। আরবি ফারসি শিখতে গিয়ে মৌলবীদের কাছে পেলেন একেশ্বরবাদের চিন্তা, সংস্কৃত শিখতে গিয়ে পেলেন হিন্দুশাস্ত্রের ব্রহ্মজ্ঞান, যা একেশ্বরবাদ ঘনিষ্ঠ। দু’য়ে মিলে তাঁর মাথায় জন্ম নেয় শত শত চিন্তা ও নতুন ধর্মের রূপ রেখা।
ছেলেকে একাধিক বিয়ে করিয়ে বিপদে না পড়লেও একাধিক ভাষা শেখাতে গিয়ে দারুণ বিপদে পড়লেন রামকান্ত রায়। তাঁর পরিবার অত্যন্ত ধর্মপরায়ন। দিনের অধিকাংশ সময় তিনি ধর্মকর্মে ব্যয় করতেন। রামকান্ত রায়ের স্ত্রীর ধর্ম পালন তখনকার ধর্মঘন সমাজেই ব্যাপকভাবে আলোচিত ছিল। সম্ভবত তিনি যত দেব দেবীর সন্ধান পেয়েছেন, সবার পূজা করতেন। এমন পরিবারে জন্ম নিয়ে রামমোহন এখন ধর্ম নিয়ে কীসব বলে! ধর্ম বিষয়ক আলোচনায় বাবা রামকান্ত যখন নিজে কোন যুক্তি দেন, রামমোহন তার জবাব শুরু করেন ‘কিন্তু’ শব্দটি দিয়ে। ছেলের এমন ঔদ্ধত্যপনা দেখে তিনি ভীষণভাবে রাগ করেন। ছেলেকে তিরস্কার করেন।
এসব রাগ, তিরস্কার, চিন্তা ভাবনার মাঝে মাত্র ষোল বছর বয়সে হিন্দু ধর্মের সমালোচনা করে বই লিখে ফেলেন রামমোহন রায়। বইয়ের নাম ‘হিন্দুদের পৌত্তলিক ধর্মপ্রণালী’। কী সাংঘাতিক ব্যাপার! যদিও এই বইটি ছাপিয়ে প্রকাশ করার সুযোগ তাঁর ছিল না, কিন্তু পরিবারের লোকজনকে ঠিকই পড়িয়েছেন। পড়িয়ে উচিত কাজ করেছেন। এবার ফল ভোগ করার পালা। পিতার সাথে আর সম্পর্কই রইলো না। বিরোধিতার মুখোমুখি সেই তখন থেকেই হতে হয়েছে – সেইসব বিরোধিতার ও বিরোধীপক্ষ নিয়ে বিভিন্ন তথ্য আলাদা করে এখানে পড়ুন। টাকা পয়সা যা ভাগিয়ে নেয়ার তা নিয়ে সেই বছরই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন রাজ্য ভ্রমণ করে নেপালে যান। সেখান থেকে বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করার বাসনায় হিমালয় ডিঙিয়ে তিব্বত যান।
এক সময় তিব্বত থেকে নিজ দেশে ফিরে আসেন। ভারতের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের কোন এক রাজ্যে অবস্থান নেন। খবর পেয়ে লোক পাঠিয়ে ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে আসেন পিতা রামকান্ত রায়। তিনি ভাবলেন প্রায় চার বছর ধরে বনে-বাদাড়ে আর বরফে কষ্ট করে ছেলে নিশ্চয় ‘ভালো’ হয়ে গেছে। এখন ধর্মানুরাগী হবে। ধর্ম নিয়ে উল্টোপাল্টা বলে বিরক্ত করবে না। তার উপর মহাজনের কাজে যোগ দিয়ে অর্থ উপার্জনও শুরু করেছে। এক আরামদায়ক সুবাতাসের লক্ষণ পান রামমোহনের পিতা। কিন্তু যত দিন যেতে থাকে, পিতার প্রিয় ‘রাম’ এর আচরণ তাঁর কাছে ‘রাবণ’ এর মত ঠেকে। ছেলে আগের চেয়ে অধিকমাত্রায় উগ্র ও চরমপন্থী হয়েছে। আগে তবু ভয়ভীতি সহকারে রাখঢাক রেখে মূর্তিপূজা নিয়ে কথা বলত, এখন আর নূন্যতম সম্মানটুকুও দেখায় না। পিতা ভাবলেন ছেলে উচ্ছন্নে গেছে। দেরি না করে এবার নিজ উদ্যোগে বাড়ি থেকে বের করে দেন।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে আগের মতই বিস্তর পড়াশোনা ও চিন্তা ভাবনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন রামমোহন রায়। আসলে শিশুকালে পরিবারে অত্যাধিক ধর্মাচার, পরবর্তীতে হিন্দু, ইসলাম, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্ম নিয়ে লেখাপড়া করার কারণে কিশোর মগজে ধর্ম ছাড়া আর কিছু ছিল না। ফলে নানান প্রশ্ন, যুক্তি, ভাবনা খেলা করে। এই খেলা খুব ভালো খেলা। মজার খেলা। তাই মজায় মজায় দিন পার করতে থাকেন রামমোহন। ১৮০৩ সালে গেলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানিতে, চাকরির উদ্দেশ্যে। ভাবলেন শিক্ষাদীক্ষায় উন্নত হয়েছেন, দেওয়ানী কাজকর্মে পরিবারের ঐতিহ্য আছে, একটা ভালো চাকরি অবশ্যই পাওয়া যাবে। কিন্তু লাভ হয়নি, শুরুতে কেরানীর চাকরি নিতে হয় তাঁকে। এমনিতেই ব্রিটিশ কম্পানি শাসনে দেওয়ানির (কালেক্টরের সেরেস্তাদারি) উপরের কোন পদে স্থানীয়রা চাকরি পেতেন না। রামমোহন এই দেওয়ানি পদটাই আশা করেছিলেন।
এসময়, অর্থাৎ ১৮০৩ সালে তাঁর পিতৃবিয়োগ হয়। পিতার মৃত্যুর কিছুদিন আগে তিনি রাগ ক্ষোভ ভুলে বাড়ি ফিরে আসেন। মৃত্যুর আগে পিতা রামকান্ত রায় সব সম্পত্তি তিন ছেলের মাঝে ভাগ করে দিলেও রামমোহন দীর্ঘদিন পর্যন্ত পিতার সম্পত্তি গ্রহণ করেননি। পরে গ্রহণ করেও বিপদে পড়েছেন – নিজের মা তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেন।
কর্মজীবনের শুরুর তিন বছর রামগড়ে, মাঝখানে এক বছর ভাগলপুরে এবং শেষ পাঁচ বছর রংপুরে ছিলেন। রংপুরে থাকা অবস্থায় প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে নিজ প্রবর্তিত ব্রাহ্ম ধর্মের প্রচার শুরু করেন। তিনি তাঁর গৃহে লোকজনকে আমন্ত্রণ দিয়ে এনে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতেন। আলোচনা যে বিষয়ে শুরু হোক না কেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই তা পৌত্তলিকতা, একেশ্বরবাদ, ব্রহ্মা, পরমেশ্বর -এসব বিষয়ে গিয়ে ঠেকত, এবং শেষ হত অম্ল মধুর উচ্চবাক্যের মাধ্যমে।
১৮১৪ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে আবার গ্রামে ফিরে আসেন। চাকরীজীবনের পুরোটাতে তাঁর উপরস্থ কর্মকর্তা ছিলেন মিস্টার ডিগবি নামে এক ইংরেজ লোক। শুরুর দিকে রামমোহনের সাথে রুঢ় আচরণ করলেও ধীরে ধীরে মেধা ও পরিশ্রমের গুণে তাঁর কাছ থেকে সম্মান আদায় করে নিতে সক্ষম হন। এবং তাঁর সাথে থেকেই ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন।
গ্রামে ফিরে এসে পারিবারিক ব্যবসার দায়িত্ব বুঝে নেন। পাশাপাশি ধর্ম নিয়ে আরো বেশি পড়াশোনা এবং লেখালেখি করতে থাকেন। ততদিনে বহু ঈশ্বরবাদে বিশ্বাস হারিয়ে পুরোপুরি একেশ্বরবাদে ঝুঁকে পড়েন। তাঁর এই বিশ্বাস পরিবর্তনের ফলে তৎকালীন হিন্দু সমাজে দারুণ এক ঝাঁকুনি লাগে। রামমোহন রায় একে একে সকল ধর্মীয় আচারাদি বর্জন করতে থাকলেন। ১৮১৫ সালে নিজ মতের পক্ষে রচনা করেন ‘বেদান্তভাষ্য’ নামে এক গ্রন্থ। এরপর ১৮১৯ সাল পর্যন্ত সময়ে হিন্দু ধর্মের ময়নাতদন্ত করে আরো ছয়টি গ্রন্থ রচনা করেন। গ্রন্থগুলোর নাম বেদান্তসার, কেনোপনিষদ, ঈশোপনিষদ, কঠোপনিষদ, মাণ্ডূক্যোপনিষদ ও মুণ্ডকোপনিষদ। এসব বইয়ে হিন্দু ধর্মের গ্রন্থগুলোর অংশবিশেষ বাংলায় অনুবাদ করে বিভিন্ন ধর্মীয় কুসংস্কারের অসারতা প্রমানের চেষ্টা করেন।
ফলত ‘পাপিষ্ঠ’ রামমোহনকে বাড়ি ছাড়া হতে হয়। বাড়িছাড়া হয়ে পাশের এলাকার শ্মশানের জমিতে তিনি নিজে বাড়ি নির্মাণ করেন। একই সাথে বাড়ির সামনে একটা মঞ্চও নির্মাণ করেন। এই মঞ্চ ছিল আসলে তার ব্রাহ্মধর্মের উপসনালয়। মঞ্চের চারপাশে খোদাই করে লিখে দেন ‘ওঁ তৎসৎ’ এবং ‘একমেবাদ্বিতীয়ং’। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় এবং বাড়িতে প্রবেশ করার সময় প্রথমে এই মঞ্চের চারপাশে ঘুরপাক খেতেন। এটা ছিল তাঁর নিজস্ব মতে আরাধনার একটা উপায়।
এই উপনাসনালয় ঘিরে তৈরি করলেন ‘আত্মীয় সভা’, যা পরবর্তীতে ‘ব্রাহ্মসভা’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। পরিচিত বন্ধুবান্ধব ও অপেক্ষাকৃত শান্ত প্রকৃতির লোকজনকে সভায় অন্তর্ভুক্ত করে নেন। আত্মীয় সভায় তাঁরা সমাজ ও ধর্ম নিয়ে আলোচনা করতেন। এসব আলোচনায় রামমোহন রায় হিন্দু ধর্মের প্রাচীন রীতিনীতি পরিবর্তন ও সংস্কারের পক্ষে যুক্তি প্রমাণ উপস্থাপন করতেন। আসলে কোন বাধাই আর রামমোহনকে আটকে রাখতে পারল না। কারণ তিনি তার নিয়তি ঠিক করে নিয়েছিলেন।
এই নিয়তি ঠিক করে নেয়ার পেছনে এক ভয়াবহ কারণ আছে। সে কারণ জানতে একটু পেছনে যেতে হবে। কয়েক বছর আগে রামমোহনকে তাঁর জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনার সাক্ষী হতে হয়েছিল। সেটি ছিল সহমরণ বা সতীদাহ। পিতার মৃত্যুর আট বছর পর ১৮১১ সালে রামমোহনের বড় ভাই জগন্মোহনের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সময় জগন্মোহন যুবকই ছিলেন। অর্থাৎ তাঁর স্ত্রী ছিলেন যুবতী। যুবতী স্ত্রী স্বামী ছাড়া থাকবে কিভাবে! তাই স্বামীর সাথে তাঁকেও পুড়িয়ে মারার ব্যবস্থা করা হয়। রামমোহন রায় তাঁর বৌদিকে বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। কোন একজন পুরুষ বা নারী রামমোহনের পক্ষ নেননি, জগন্মোহনের স্ত্রীর পক্ষ নেননি। বৌদির জ্যন্ত দগ্ধ হওয়ার দৃশ্য দেবর রামমোহনের মনে গভীর বেদনার জন্ম দেয়। এই বেদনা থেকেই সতীদাহ প্রথা বন্ধে যুদ্ধ প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন তিনি।
রামমোহনের বৌদিকে জ্যন্ত পুড়িয়ে ফেলার দৃশ্যটি নন্দকিশোর বসু নামের এক ব্যক্তি পরবর্তীতে তাঁর পুত্রের কাছে বর্ণনা করেন। সেই বালকের নাম রাজনারায়ণ বসু। যিনি রামমোহনের মৃত্যুর পর এক স্মরণসভায় পিতার বর্ণিত কথাগুলো সবার সামনে বলেন, “চিতানল ধূধূ করিয়া জ্বলিতেছে, সহগামিনী স্ত্রীর আর্ত্তনাদ যাহাতে কাহারও কর্ণে প্রবিষ্ট না হয়, তজ্জন্য প্রবল উদ্যমে বাদ্যভান্ড বাজিতেছে, সে প্রাণভয়ে চিতা হইতে গাত্রোত্থান করিবার চেষ্টা করিতেছে, কিন্তু স্বজনেরা তাহার বক্ষে বাঁশ দিয়া চাপিয়া রাখিতেছে; এই সকল নির্দ্দয় ও নিষ্ঠুর কাণ্ড দেখিয়া রামমোহন রায়ের চিত্তে দয়া উদ্বেলিত হইয়া উঠিল, এবং তদ্বধি তিনি প্রতিজ্ঞা করিলেন যে, যে পর্যন্ত সতীদাহ প্রথা রহিত হয়, সে পর্যন্ত তাহা নিবারণের চেষ্টা হইতে তিনি কখনোই বিরত হইবেন না।”
১৮১৬ সালে আত্মীয় সভার এক আড্ডায় উপস্থিত হন বাঙালি হিতৈষি সুইস ঘড়ি ব্যবসায়ী ডেভিড হেয়ার। আড্ডা শেষে মিস্টার হেয়ার ইংরেজি শিক্ষা নিয়ে কথা তোলেন। অনেক আলাপ আলোচনার পর একটি ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তুাব নেয়া হয়। বিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব গড়াতে গড়াতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হাই ইস্ট পর্যন্ত পৌঁছায়। এর সাথে যুক্ত হন আরো অনেকে। শেষে একটি কলেজ স্থাপনের উদ্দেশ্যে কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শহরে খবর ছড়িয়ে পড়ে কলকাতায় ‘হিন্দু কলেজ’ নামে একটি কলেজ স্থাপিত হবে। এই প্রস্তাবের সাথে রামমোহন রায় জড়িত আছেন এবং তিনি এ সংক্রান্ত কমিটিতেও থাকবেন। তখন হিন্দু নেতারা বেঁকে বসেন। তাঁরা বললেন রামমোহন কমিটিতে থাকলে তাঁরা থাকবেন না। বিষয়টা রামমোহনের কানে গেলে তিনি খুশি মনে প্রস্তাব ও কমিটি থেকে সরে যান। এবং বলেন, তাঁর কারণে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ থেমে যাবে, এটা তিনি কোনভাবেই চান না।
এর পরের বছর ১৮১৭ সালের ২০ জানুয়ারি কলকাতার গরাণহাটায় হিন্দু কলেজ এর দ্বার উন্মোচন হয়। কলেজ প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত কমিটিতে না থাকলেও কলেজ স্থাপনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন রামমোহন রায়। এটিই কলকাতায় উচ্চশিক্ষার প্রথম প্রতিষ্ঠান। যদিও কেবল হিন্দু এবং অবশ্যই উঁচু জাতের হিন্দু ছাত্রদের পড়ার সুযোগ ছিলো এই কলেজে। মুসলমান জনগোষ্ঠী তখনো ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।
হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলেও রামমোহন রায় এই কলেজে শিক্ষা নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন। বহু ঈশ্বরবাদ ত্যাগ করলেও ঈশ্বরবাদ ত্যাগ করতে পারেননি তিনি। তাই হিন্দু কলেজে অসাম্প্রদায়িক, ধর্মহীন শিক্ষায় তিনি বিশেষ খুশি হননি। খ্রিস্টান মিশনারিদের শিক্ষা পদ্ধতি ছিল তাঁর বিশেষ পছন্দের। হোক সেটা খ্রিস্ট ধর্ম, কিন্তু ধর্মতো! সঙ্গত কারণে তিনি ধর্মহীন মানুষকে পছন্দ করতেন না। নাস্তিকদের প্রতি তাঁর বিরূপ মনোভাবের প্রমাণ বিভিন্ন বইয়ে পাওয়া যায়।
তিনি ধর্মহীন শিক্ষায় শংকিত ছিলেন, আবার পুরোনো (সংস্কৃত) শিক্ষা পদ্ধতিতেও রাজি ছিলেন না। কলকাতায় ব্যাপকভাবে ইংরেজি ভাষায় বিজ্ঞান, ভুগোল ও দর্শনসহ অন্যান্য শিক্ষা চালুর বিষয়ে তিনি জোর দিতেন। কিন্তু অল্প কিছু আধুনিক স্কুল কলেজ স্থাপিত হলেও, শিক্ষাখাতে সরকারি ব্যয়ের প্রায় পুরোটাই প্রাচীন শিক্ষাপদ্ধতির পেছনে চলে যেতো। তাই ১৮২৩ সালে তিনি এই বিষয়ে গভর্নর জেনারেল লর্ড আমহার্ষ্টকে একটি চিঠি লিখেন।
পূর্বে গঠিত আত্মীয় সভাকে ১৮২৮ সালে ব্রাহ্ম সমাজে রূপান্তর করেন রামহোমন রায়। নিজে প্রধান থেকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তারাচাঁদ চক্রবর্তীকে নিযুক্ত করেন। ফিরিঙ্গি কমল বসুর বাড়ি ভাড়া করে ব্রাহ্ম সমাজের জন্য একটি উপাসনালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এই উপাসনালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ‘ব্রাহ্মধর্ম’ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়।
সে বছর মার্চ মাসে গভর্নর জেনারেল লর্ড আমহার্ষ্ট তাঁর দায়িত্ব শেষে ভারতবর্ষ ত্যাগ করেন। আমহার্ষ্টের স্থলাভিষিক্ত হন উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক। তিনি জুলাই মাসে ভারতে আসেন, দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বেন্টিঙ্ক ছিলেন অপেক্ষাকৃত উদার এবং আধুনিকতা মনস্ক ব্যক্তি। তাই রামমোহনের কাজকর্মে নতুন গতি আসে। কিন্তু এই গতি তাঁকে নতুন কিছু সমস্যার মুখোমুখি করে। রামমোহনের ইংরেজ বন্ধু উইলিয়াম অ্যাডাম খ্রিস্টধর্ম ত্যাগ করে রামমোহন প্রবর্তিত ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন। ফলে খ্রিস্টান মিশনারিরা রামমোহনের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উইলিয়াম অ্যাডামকে খ্রিস্টসমাজচ্যুত করে। এসময় ব্রাহ্মসমাজ ও খ্রিস্টসমাজ তুমুল তর্কযুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই যুদ্ধে জেতার জন্য খ্রিস্টধর্মের সমালোচনা ও নিজ ধর্মের গুণগান গেয়ে প্রায় হাফডজন বই লেখেন রামমোহন রায়।
রামমোহন ছিলেন রাজনৈতিক জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ। তিনি তাঁর ঝুঁকি এবং বিপদসমূহ সম্পর্কে সম্যক অবগত ছিলেন। তাই নিজের দল ভারী করার কাজে মনোনিবেশ করলেন। অল্পদিনেই পেয়ে গেলেন এমন কিছু বন্ধু, যারা তৎকালীণ সমাজের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। এদের মধ্যে দ্বারকানাথ ঠাকুর ও প্রসন্নকুমার ঠাকুর অন্যতম। শুধু ভারতীয় নয়, বরং কিছু ইউরোপীয় বন্ধুবান্ধবকেও পাশে পান, যাদের সাথে বাণিজ্যিক কারণে পূর্বসম্পর্ক বিদ্যমান ছিলো।
কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ব্রাহ্মসমাজে ভাঙ্গন শুরু হয়। যখন রামমোহন রায় সহমরণ রীতি বা সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেন, তখন কেউ কেউ ব্রাহ্মসমাজ ত্যাগ করেন। তাতে সতীদাহ প্রথা নিয়ে রামমোহনের মুখ বন্ধ করা যায়নি। আসলে শুধু কথা বলা নয়, এই হত্যাপ্রথা বন্ধে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন তিনি। সমাজনেতা রাধাকান্ত দেবসহ কট্টর হিন্দুজোটের তীব্র বাধা সত্ত্বেও তিনি ব্রিটিশ সরকারকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হন। ১৮২৯ সালের ৪ ডিসেম্বর বৃটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সীতে সতিদাহ প্রথাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল ঘোষণা করা হয়।
“It is hereby declared, that after the promulgation of this regulation, all persons convicted of aiding and abetting in the sacrifice of a Hindu widow by burning or burying her alive, whether the sacrifice be voluntary on her part or not, shall be doomed guilty of culpable homicide and shall be liable to punishment by fine or imprisonment or both by fine and imprisonment.” — Regulation of 4th December, 1829.
আইন পাশ হওয়ার পর কট্টর হিন্দুরা থেমে থাকেনি। রামমোহনের যাত্রাভঙ্গ করার জন্য ১৮৩০ সালের ১৭ জুন প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ধর্মসভা’ নামে হিন্দু ধর্মের বর্বরতা রক্ষার এক সমিতি। রাজা রাধাকান্ত দেব, রামকমল সেন, ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়সহ বেশ কিছু গোঁড়া হিন্দু একত্রিত হয়ে সংস্কৃত কলেজে এক সভায় হিন্দুধর্ম রক্ষার জন্য এই সংগঠনের পত্তন করেন। তাঁদের উদ্যোগে লন্ডনের প্রিভি কাউন্সিলে সতীদাহ প্রথা রদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ১৮৩২ সালে প্রিভি কাউন্সিল বাংলার গভর্ণর লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের ১৮২৯ সালের আদেশ বহাল রাখেন। খুব অল্পসময়ের মধ্যে ভারতের অন্যান্য কোম্পানি অঞ্চলেও সতীদাহ প্রথাকে বাতিল ঘোষণা করা হয়।
ততদিনে রামমোহন রায়ের চিন্তা চেতনা ছড়িয়ে পড়ে ব্যাপকভাবে। তাঁর সংস্কার যুগের স্বর্ণসময়ে শহরে নানান প্রগতিশীল সংগঠন জন্ম নেয়। যাদের মধ্যে ইয়ং বেঙ্গল তথা অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন অন্যতম।
এমনকি বর্তমান সময়ে এসেও রামমোহন রায় আমাদের সামনে প্রেরণার উৎস হয়ে টিকে আছেন, থাকবেন। তিনি যদি তৎকালীন হিন্দু ধর্ম ও সমাজ সংস্কারে আগ্রাসী ভূমিকা পালন না করতেন, তাহলে বর্তমানে ধর্মের শিকল ভেঙে বেরিয়ে আসার প্রয়াস এত অগ্রগামী হতো না। তিনি তাঁর সময়ে ধর্ম বিশ্বাসের জঞ্জালে সংস্কারের কাঁচি চালিয়েছেন বলেই আজ আমরা এ অঞ্চলে মুক্তচিন্তার ফসল ফলাতে পারছি
রামমোহনের কলম ও কণ্ঠ কেবল ধর্ম ও সমাজ সংস্কারে নিহিত ছিলো না। ব্রিটিশ সরকারের অনুগত হয়েও বিভিন্ন অন্যায় উদ্যোগে তার প্রতিবাদী ভূমিকা বিশেষভাবে স্মরণীয়। ভারতীয় জনগণের প্রতি ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন বৈষম্যমূলক আচরণে রামমোন রায় ও তাঁর বন্ধুরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। ১৮২৩ সালে গভর্নর জেনারেল জন অ্যাডাম ভারতীয় প্রেসের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেন। এই বিধিনিষেধ আরোপের পর রামমোহন ও তাঁর বন্ধুগণ প্রিভি কাউন্সিলে স্মারকলিপি পেশ করে বলিষ্ঠভাবে এর প্রতিবাদ করেন। কিন্তু প্রথম চেষ্টায় স্মারকলিপিটি প্রত্যাখ্যাত হয়। প্রত্যাখ্যান করার সময় বলা হয়, যে দেশ রাজনৈতিক স্বাধীনতা ভোগ করে না সেখানে প্রেসের স্বাধীনতা থাকতে পারে না। রামমোহন ও তাঁর বন্ধু দ্বারকানাথ ঠাকুর আবার উদ্যোগী হন। ১৮২৬ সালে হিন্দু ও মুসলমান নাগরিকদের পক্ষে একটি আবেদনপত্র ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রেরণ করেন। যার প্রতিপাদ্য ছিলো ভারতীয় জুরি আইনের নির্দিষ্টসংখ্যক বৈষম্যমূলক ধারার প্রতিবাদ।
এছাড়াও বিভিন্ন সময় তিনি ব্রিটিশ সরকারের উপর মহলে নানান বিষয়ে তাঁর অসম্মতি এবং অস্বীকার জানিয়ে পত্র প্রেরণ করেন। যেসব অসম্মতি ও অস্বীকারের সাথে ভারতবর্ষের জনস্বার্থ সরাসরি জড়িত ছিলো।
তিনি ছিলেন জনগণের স্বাধীনতার পক্ষে এবং স্বৈরতন্ত্রের বিপক্ষে। তাঁর মতে স্বাধীনতার শত্রুরা এবং স্বৈরতন্ত্রের দোসররা কখনও সাফল্যমন্ডিত হয়নি এবং কখনও হবেও না। ১৮২২ সালের ১১ আগস্ট তারিখে জেমস সিল্ক বাকিংহামের নিকট লেখা চিঠিতে তিনি একথা উল্লেখ করেন। ১৮৩০ সালে ইংল্যান্ড ভ্রমণে যাওয়ার আগে কিছুদিন ধরে সরকারের উচ্চপদে স্থানীয় ভারতীয়দের নিয়োগ দেয়া নিয়ে ব্রিটিশ রাজের সাথে দরকষাকষি করেন। তিনি দেশের শাসনব্যবস্থায় স্বদেশীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। ফলে ১৮৩৩ সালে ভারতীয়দের সরকারের উচ্চপদে নিয়োগের সুবিধা দিয়ে নতুন আইন প্রয়োগ করা হয়।
হিন্দু ধর্ম ও সমাজ সংস্কারের বাইরে সাধারণ মানুষের চিন্তায় পরিবর্তন আনতে তিনি আরো কিছু কাজ করেছেন। সংবাদ মাধ্যমের উন্নতি সাধন যার মধ্যে অন্যতম। তিনি মোট তিনটি পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নেন। দ্বিভাষিক ব্রাহ্মনিক্যাল ম্যাগাজিন ‘ব্রাহ্মণ সেবদি’, বাংলায় ‘সংবাদ কৌমুদি’, ও ফার্সি ভাষায় ‘মীরাৎ-উল-আকবর’।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বাংলা গদ্যের জনক বলা হলেও অনেকেই মনে করেন রামমোহন রায় হচ্ছেন বাংলা গদ্যের জনক। বাংলা গদ্য সাহিত্য সমৃদ্ধিলাভ করে তাঁর হাত ধরে। বাংলা ভাষায় তিনি প্রায় ৩০টি গ্রন্থ রচনা করেন। ইংরেজদেরকে বাংলা ভাষা শেখানোর জন্য তিনি ইংরেজিতে বাংলা ব্যাকরণগ্রন্থ রচনা করেন। ওই সময়ের বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ কালীমির্জার কাছে সঙ্গীত শিক্ষা লাভ করে বাংলায় ধ্রুপদী রচনা করেছিলেন রামমোহন রায়। এক জীবনে এত এত সৃজনশীল কাজ ও প্রতিবাদের সম্মিলন বিরল।
১৮৩০ সালে পুতুল সম্রাট দ্বিতীয় আকবর রামমোহন রায়কে ‘রাজা’ উপাধিতে ভূষিত করেন। এরপর তিনি ইংল্যান্ড যান। ইংল্যান্ডে ব্রিটিশ সমাজের নেতৃবৃন্দ রামমোহনকে আন্তরিক সংবর্ধনা জানান। ইংল্যান্ডে যাওয়ার কারণ ও নিজের সংক্ষিপ্ত জীবনী চিঠির আকারে লেখেন যা এখানে পড়ে নিতে পারেন। ১৮৩২ সালে ফ্রান্স সফর করেন। ১৮৩৩ সালে আবার ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন এবং অ্যাভন (Avon) নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক ব্রিস্টল শহরে বেড়াতে যান। সেখানে তিনি হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন। আট দিনের জ্বর ভোগের পরে ব্রিস্টলে ১৮৩৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রাজা রামমোহন রায়ের মৃত্যু হয়েছিল মাত্র ৬২ বছর বয়সে। তবে তাঁর মৃত্যুর কারণ আজও পরিষ্কার নয়। মৃত্যুর দশ বছর পরে দ্বারকানাথ ঠাকুর তাঁর সমাধির উপর একটি সুদৃশ্য স্মৃতি সৌধ তৈরি করিয়ে দিয়েছিলেন।
রাজা রামমোহন রায়ের জবানীতে নিজের জীবনী লিখেছিলেন একটি চিঠিতে। সেই চিঠির বয়ান শুনুন এখানে
তথ্যসূত্র
- রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ – শিবনাথ শাস্ত্রী।
- রামমোহন রায় -জাহান ইমরান, বণিক বার্তা।
- বাংলার রেনেসাঁ —অসীমকুমার চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত।
- মহাত্মা রাজা রামমোহন রায় এবং ধর্ম, সমাজ, রাজনীতি প্রভৃতি বিষয়ে তাঁহার উপদেশ ও মতামত —নগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় প্রণীত।
- আনন্দবাজার পত্রিকা, ২১শে জুন ২০১৫ সাল।
- https://obisshash.com/raja-rammohan-bio/
- https://www.bongodorshon.com/home/story_detail/rammohon-also-won-a-lawsuit-against-his-mother
- https://www.bongodorshon.com/home/story_detail/raimohan-roy-himself-wrote-this-biography-himself
4 comments