স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়

স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়

স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় (Sir Ashutosh Mukhopadhyay) একজন সুবিখ্যাত বাঙালি শিক্ষাবিদ যিনি একাধারে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় উপাচার্য ও কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন। ইতিহাসে তিনি ‘বাংলার বাঘ’ নামে বিখ্যাত। আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ছিলেন প্রথম ছাত্র যিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯১১ সালে তাঁকে নাইটহুড সম্মানে ভূষিত করা হয়।             

১৮৬৪ সালের ২৯ জুন কলকাতার ভবানীপুরে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম। তাঁর বাবা ছিলেন সেসময়ের বিখ্যাত চিকিৎসক গঙ্গাপ্রসাদ মুখার্জী। তাঁর মা ছিলেন জগৎতারীনী দেবী। পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার জিরাট গ্রামে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের পৈর্তৃক বাস। তাঁর দাদু পারিবারিক কারণে হুগলী জেলার এক ব্রাহ্মণ অধ্যুষিত গ্রাম দিগসুই থেকে জিরাটে এসে বসতি গড়েন৷ গঙ্গাপ্রসাদ জিরাটের বিত্তশালীদের সাহায্যে কলকাতায় ডাক্তারি পড়তে আসেন এবং পরে জিরাট গ্রাম ছেড়ে কলকাতার ভবানীপুরে বসতি স্থাপন করেন৷       

আশুতোষের প্রাথমিক পড়াশোনা শুরু হয় ভবানীপুরের চক্রবেড়িয়ার শিশু বিদ্যালয়ে। বিজ্ঞান ও সাহিত্যের আবহে আশুতোষ ছোটোবেলা থেকে বড় হয়েছেন। অংকের প্রতি তাঁর টান ছিল ছোটোবেলা থেকেই। ছোটোবেলায় ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের সাথে তাঁর সাক্ষাৎ তাঁকে গভীর ভাবে প্রভাবিত করে। ১৮৭৯ সালে ১৫ বছর বয়সে আশুতোষ মুখোপাধ্যায় প্রবেশিকা পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন এবং প্রথম শ্রেণীর বৃত্তি পান। ১৮৮০ সালে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন যেখানে সহপাঠী হিসেবে তিনি প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ও নরেন্দ্রনাথ দত্ত (স্বামী বিবেকানন্দ পরবর্তীকালে)কে পান। ১৮৮৩ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। ১৮৮৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে প্রথম শ্রেণীতে এম.এ ডিগ্রি অর্জন করার পর তিনি প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ স্কলারশিপ পান। ১৮৮৬ সালে আবার তিনি পদার্থ বিজ্ঞানে এম.এ ডিগ্রি ‌অর্জন করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে একসাথে দুটি ডিগ্রি অর্জনকারী প্রথম ছাত্র হন।        

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের কর্মজীবন শুরু হয় একজন‌ আইনজীবী হিসাবে। তিনি ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা মানুষ। ১৮৮৮ সালে তিনি বি.এল ডিগ্রি লাভ করেন এবং তখন থেকেই আইনজীবী হিসাবে তাঁর পথ চলা শুরু। আইনজীবী হওয়ার পাশাপাশি তিনি তাঁর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৮৮০ থেকে ১৮৯০ সালের মধ্যে বিভিন্ন জার্নালে তিনি উচ্চতর গণিতের ওপর প্রায় কুড়িটা মতো প্রবন্ধ প্রকাশ করেন । ইন্ডিয়ান অ্যাসোশিয়েসন ফর দি কালটিভেশন অব সায়েন্স( Indian Association for the Cultivation of Science ) এর সাথে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন এবং ১৮৮৭ থেকে ১৮৯১ সালের মধ্যে তিনি গণিতের ওপর একাধিক বক্তৃতা দেন। তাঁর দুটি অসাধারণ অবদান হলো ১৮৯৩ সালে প্রকাশিত জিওমেট্টি অব কনিক্স ( Geometry of Conics ) এবং ১৮৯৮ সালে প্রকাশিত ল অব পারপিচুইটিস ( Law of Perpetuities )। ১৯০৮ সালে তিনি ক্যালকাটা ম্যাথেমেটিক্যাল সোসাইটি ( Calcutta Mathematical Society ) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৯৪ সালে তিনি আইনের উপর ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন এবং ১৮৯৮ সালে টেগর ল প্রফেসর হন। ১৯০৪ সালে তিনি কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতির পদে অধিষ্ঠিত হন। মাত্র ২৪ বছর বয়সে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ফেলো হয়েছিলেন ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কে ভারতীয় উপমহাদেশে শিক্ষা ও গবেষণার একটি মুখ্য কেন্দ্রে পরিনত করেন। ১৯০২ সালে লর্ড কার্জন তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের সদস্য হিসেবে নিযুক্ত করেন। ১৯০৬ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর পদে অধিষ্ঠিত হন এবং ১৯১৪ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ১৯২৩ সালে কলকাতা হাইকোর্ট ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

তাঁর সমগ্র কর্মজীবনে তিনি অনেক শিক্ষামুলক প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়েছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অবদানের জন্য ভারত সরকার ১৯৬৪ সালে তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি পোষ্ট স্ট্যাম্প চালু করেন। পালি, ফার্সি ও রুশ ভাষার মত বিভিন্ন ভাষায় দক্ষ হওয়ার জন্য বাঙালি পন্ডিতেরা তাঁকে ‘সরস্বতী’ ও ‘শাস্ত্রবাচস্পতি’ উপাধি তে ভূষিত করেন।            

১৯২৪ সালের ২৫ মে পাটনায় আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয়।

8 comments

আপনার মতামত জানান