সতীপীঠ বিরাট ।। সতীপীঠ অম্বিকা

সতীপীঠ বিরাট ।। সতীপীঠ অম্বিকা

বিরাট সতীপীঠটি রাজস্থানের ভরতপুরে বিরাটনগর জেলায় অবস্থিত। এটি একান্ন সতীপীঠের একটি পীঠ। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে সতীপীঠ বিরাট -এ সতীর বাম পায়ের পাতা পড়েছিল। এখানে অধিষ্ঠিত দেবী হলেন অম্বিকা এবং ভৈরব হলেন অমৃতেশ্বর বা অমৃতাক্ষ।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে মাতা সতী নিজের বাপের বাড়িতে বাবার কাছে স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে সেখানেই দেহত্যাগ করেছিলেন। মাতা সতীর দেহত্যাগের খবর মহাদেবের কাছে পৌঁছতেই মহাদেব সেখানে উপস্থিত হন। সতীর মৃতদেহ দেখে ক্রোধে উন্মত্ত মহাদেব সেই দেহ কাঁধে নিয়ে তাণ্ডব নৃত্য চালু করেন। মহাদেবের তাণ্ডব নৃত্যে পৃথিবী ধ্বংসের আশঙ্কায় শ্রীবিষ্ণু তাঁর সুদর্শন চক্র দ্বারা মাতা সতীর দেহ একান্নটি খণ্ডে খণ্ডিত করেন। সেই দেহখন্ডগুলোই যে যে স্থানে পড়েছিল সেখানে একটি করে সতীপীঠ প্রতিষ্ঠা হয়, বলা হয় সতীর বাম পায়ের পাতা পড়ে বিরাট সতীপীঠটি গড়ে উঠেছে।

প্রচলিত জনশ্রুতি অনুসারে এই বিরাটনগরেই ছিল মৎস্যদেশের রাজা বিরাটের রাজধানী। পাশাখেলায় হেরে পান্ডবরা বারো বছর বনবাসে কাটানোর পর এখানেই এক বছর রাজা বিরাটের আশ্রয়ে অজ্ঞাতবাসে কাটিয়েছিলেন। বলা হয় মহারাজ যুধিষ্ঠির এখানেই দেবী অম্বিকার পুজো করেছিলেন এবং দেবীর আশীর্বাদ পেয়েছিলেন।

চারদিকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা টিলার উপর আছে মা অম্বিকার মন্দির। মন্দিরের সামনে আছে একটি প্রাচীন যজ্ঞকুন্ড। একটি লাল পাথরের বেদীর উপর অধিষ্ঠিত আছেন দেবী। মন্দিরের বাইরে দ্বাররক্ষী হিসেবে পূজিত হন ভৈরব অমৃতেশ্বর।

দেবী অম্বিকার মূর্তি অষ্টভুজা এবং সিংহবাহিনী। শ্বেতপাথরে বানানো মূর্তির পরনে লাল শাড়ি। মাথায় মুকুট এবং আরো নানা অলঙ্কারে দেবীকে সাজানো হয়। বেদীর নিচে দুইপাশে দুটি বসে থাকা সিংহের মূর্তি আছে।

প্রত্যেকটি সতীপীঠ বা শক্তিপীঠে দেবী এবং ভৈরব অধিষ্ঠিত আছেন। দেবী হলেন সতীর রূপ। ভৈরব হলেন দেবীর স্বামী। সতীপীঠ বিরাটে দেবী হলেন ‘অম্বিকা এবং ভৈরব হলেন ‘অমৃতেশ্বর’ বা ‘অমৃতাক্ষ’। স্থানীয়রা দেবীকে মনসা রূপেও পুজো করেন।

এই মন্দিরে নিত্যপুজোর ব্যবস্থা আছে। সাধারণ দিনে অন্যান্য শক্তিপীঠের তুলনায় এখানে ভক্তদের ভিড় কিছুটা কমই হয়। কিন্তু বিশেষ বিশেষ পর্বদিনে অনেক ভক্ত এখানে দেবীকে দর্শন করতে ও পুজো দিতে আসেন। চৈত্র ও আশ্বিন মাসের নবরাত্রি এখানে ধুমধাম সহকারে পালিত হয়। ঐসময় বিশেষ পুজো ও যজ্ঞও হয়। এছাড়াও মকর সংক্রান্তি, আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা, মহাশিবরাত্রি, রামনবমী, দীপাবলি প্রভৃতি উৎসবও এখানে পালিত হয়। মার্চ অথবা এপ্রিল মাসে রাজস্থানের স্থানীয় উৎসব ‘গাঙ্গুর’ এবং জুলাই অথবা আগস্ট মাসে ‘তীজ’ও এখানে পালন করা হয়।

আপনার মতামত জানান