বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস

২ এপ্রিল ।। বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস

প্রতিবছর প্রতিমাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশেই কিছু দিবস পালিত হয় ।ওই নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়।ভারতবর্ষও এর ব্যতিক্রম নয়।ভারতবর্ষের পালনীয় সেই সমস্ত দিবসগুলোর মধ্যে একটি হলো বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস (World Autism Awareness Day) ।

প্রতিবছর ২ এপ্রিল বিশ্বের সমস্ত দেশে পালিত হয় এই দিবস।

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস প্রস্তাবটি ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে পাস হয়েছিল এবং ১৮ ডিসেম্বর সেটি গৃহীত হয়েছিল। এই প্রস্তাবটি পেশ করেছিলেন জাতিসংঘে কাতারের প্রতিনিধি হিসেবে প্রিন্সেস শিখা মোজাহের বিনতে নাসের আল মিসনদ এবং তাঁর স্বামী শেখ হামাদ বিন খালিফা আল জানি। সকল সদস্য রাষ্ট্র তাঁদের এ প্রস্তাবকে সমর্থন করে।

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালনের প্রস্তাবনায় যে চারটি প্রধান উপাদান ছিল সেগুলি হল:-

  • ২ এপ্রিল বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা এবং ২০০৮ সাল থেকেই এর সূচনা করা।
  • অটিজম সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে সমস্ত দেশ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান, তথা জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।
  • জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেলকে অনুরোধ করা যাতে এই বার্তাটি সদস্য দেশ এবং জাতির সঙ্গে অন্যান্য সংগঠনগুলোতে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
  • দিবসটিতে জাতিসংঘ বিশ্বজুড়ে তার সদস্য দেশগুলোকে অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার আক্রান্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণে উৎসাহিত করবে।

অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (autism spectrum disorder) একটি জটিল সার্বিক বিকাশ সংক্রান্ত রোগ। সামাজিক বিকলতা, কথা বলার প্রতিবন্ধকতা এবং সীমাবদ্ধতা, বারবার পুনরাবৃত্তি মূলক আচরণ এই রোগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এই রোগের এখনো পর্যন্ত সঠিক কোনো কারণ নির্ণয় করা যায়নি।

অটিস্টিক শিশুরা প্রতিবন্ধী না হলেও তাদের আচরণ আর দশজনের মতো স্বাভাবিক হয় না। এই শিশুরা অনেকেই কথা বলতে পারেনা, কিন্তু বোঝে সবই। এই ধরনের লক্ষ্মণকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় অটিজম বলে। মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশের একটি প্রতিবন্ধকতাই হলো অটিজম। সাধারণত শিশুদের আচরণ এবং বৃদ্ধির ওপর ভিত্তি করেই রোগ নির্ণয় করা যায়। এর জন্য একটি বিশেষ পরীক্ষা রয়েছে। এই রোগের কোন স্থায়ী নিরাময় নেই। নিয়মিত ঔষধ ও বিশেষ শিক্ষার সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। সঠিক টেস্ট, চিকিৎসা, থেরাপি এবং কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে একটি শিশুকে অনেকটাই সাধারণ জীবনযাপনের গণ্ডির মধ্যে নিয়ে আসা সম্ভব। বর্তমানে অনেক দেশের অনেক শিশু অটিস্টিক হওয়া সত্ত্বেও স্বাভাবিক জীবনের সাথে মানিয়ে চলতে সক্ষম হচ্ছে।এই ধরনের শিশুদের জন্য বিশেষ স্কুল আছে সেখানে তাদের বিশেষভাবে পাঠদান করা হয়। এছাড়া গর্ভাবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্য ও শারীরিক ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

এই বিশেষ দিনটিতে অটিজম সংস্থাগুলি ঐক্যবদ্ধ হয়ে সারা বিশ্বজুড়ে এই ব্যধিতে আক্রান্তদের সম্পর্কে গবেষণা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা প্রদান ইত্যাদি বিষয়ে কাজ করে।

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস প্রতি বছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয়কে কেন্দ্র করে পালন করা হয়। ২০১২ সালের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে অটিজম সম্পর্কে সচেতনতার জন্য ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়। ২০১৫ সালে প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অটিজম আক্রান্তদের অগ্রাধিকার দেওয়া। এই বছর আমেরিকার রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা এক ঘোষণায় অটিজম আক্রান্তদের অধিকার সংরক্ষণ এবং এই ব্যাধি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা তুলে ধরেন। স্বাস্থ্য বীমা সংস্থাগুলিকে এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা নিতে বলা হয়। এছাড়া অটিজম কেয়ার অ্যাক্টের কথাও উল্লেখ করেছিলেন তিনি। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে অটিজমে আক্রান্ত নারী ও যুবতীদের ক্ষমতায়ন এবং তাদের সাহায্যকারী প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কিত প্রস্তাব গৃহীত হয়। ২০১৯ সালের প্রতিপাদ্য ছিল – সহযোগী প্রযুক্তি, সক্রিয় অংশগ্রহণ (Assistive Technologies, Active Participation)। ২০২০ সালের প্রতিপাদ্য ছিল প্রাপ্তবয়স্কতার পথে (The Transition to Adulthood)। ২০২১ সালের প্রতিপাদ্য ছিল – কর্মক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তি: মহামারী পরবর্তী বিশ্বে চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ (Inclusion in the Workplace: Challenges and Opportunities in a Post-Pandemic World’)। ২০২২ সালের প্রতিপাদ্য ছিল -সকলের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক মানসম্পন্ন শিক্ষা (Inclusive Quality Education for All)। ২০২৩ সালের প্রতিপাদ্য – রং (colour)। এভাবে প্রায় প্রতি বছরই রাষ্ট্রসঙ্ঘের পক্ষ থেকে এই দিনটিতে কিছু বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

আ্যলবার্ট আইনস্টাইন , মোৎজার্ট, বিল গেটস এর মত বিখ্যাত মানুষরাও অটিজমে আক্রান্ত হয়ে আজ সফল। অটিজম নিয়ে তাই আশার আলোর সম্ভাবনা রয়েছে -এ কথা বলাই যেতে পারে।

One comment

আপনার মতামত জানান