আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস

১ অক্টোবর ।। আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস

প্রতি বছর প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশে কিছু দিবস পালিত হয়। ওই নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। পালনীয় সেই সমস্ত দিবস গুলির মধ্যে একটি হল আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস (International Day of Older Persons)।

প্রতি বছর সারা বিশ্বে ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালন করা হয় সাধারন মানুষকে প্রবীণ ব্যক্তিদের নানান সমস্যা সম্পর্কে ও তার সমাধান সচেতন করার জন্য। বয়স্ক ব্যক্তিরা প্রায়শই নানান দুর্ব্যবহারের সম্মুখীন হন। এছাড়াও তাঁদের বার্ধক্যজনিত অনেক রোগেও আক্রান্ত হতে হয়। এইসব সমস্যার এবং সমাধানের কথা বলার জন্য আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালন করা হয়।

প্রবীণ মানুষেরা সমাজের প্রতি যে অবদান প্রতিদিন রাখেন তা স্মরণ করা এবং সম্মান জানানোর জন্য এই দিনটি পালিত হয়। ১৯৯০ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভা (United Nations General Assembly) সিদ্ধান্ত নেয় ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালন করার। ১৯৯১ থেকে ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালিত হয়ে আসছে। এই দিবসটির সাথে আমেরিকায় এবং কানাডায় পালিত হাওয়া ন্যাশনাল গ্র্যান্ড পেরেন্টস ডে (National Grand Parents Day), চীনে পালিত হওয়া ডাবল নাইন্থ ফেস্টিভাল (Double Ninth Festival) এবং জাপানে পালিত হওয়া রেস্পেক্ট ফর দ্য এজেড ডে’র (Respect for the Aged Day) সাদৃশ্য আছে।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালিত হয় সাধারণ মানুষদের মধ্যে প্রবীনদের দ্বারা সম্মুখিত বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য। অসচেতনতা অনেক সময় গভীর বিপদ ডেকে আনে যার থেকে মুক্তি পাওয়া খুবই শক্ত হয়ে পড়ে। সেই কারণেই বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের দ্বারা মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। বিশ্বের নানান দেশে নানাভাবে এই দিনটি পালিত হয়। কোথাও তরুণ নাগরিকরা বয়স্ক মানুষদের সাথে এই দিনটি কাটায়, কোথাও নাতি নাতনিরা তাদের দাদু, দিদা, ঠাকুরদা, ঠাকুরমার সাথে এই দিনটি উদযাপন করে, কোথাও বা বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে এই দিনটি সেখানকার বয়স্ক আবাসিকদের সাথে কাটানো হয়। অনেক জায়গায় এই দিনটিতে বয়স্কদের জন্য নানা রকম খাবার  এবং উপহার নিয়ে যাওয়া হয়। অনেক  এনজিও (NGO)  এই কাজে সাহায্য করে থাকে। অনেক শিশুদের মধ্যে বয়স্কদের এই দিন গ্রিটিংস কার্ড বানিয়ে উপহার দেওয়ার চলও দেখা যায়।

বিভিন্ন বছর বিভিন্ন থিমকে কেন্দ্র করে এই দিনটি পালিত হয়ে থাকে। ২০১৮ সালে থিম ছিল সেলিব্রিটিং ওল্ডার হিউম্যান রাইটস চ্যাম্পিয়নস (Celebrating Older Human Rights champions) এবং ২০১৯ সালে এর থিম ছিল দ্য জার্নি টু এজ ইকোয়ালিটি (The Journey to Age Equality)। ২০২০ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের পঁচাত্তরতম প্রতিষ্ঠা বছর এবং আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসের তিরিশ বছর পূর্তি।  ২০২০ তে কোভিড-১৯ এর জন্য সারা বিশ্ব জুড়ে নানান সমস্যা দেখা দেয়। এই অতিমারীর সবথেকে বেশি প্রভাব পড়েছে বয়স্ক মানুষদের উপর। সারা পৃথিবী জুড়ে এই রোগের কারণে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের মধ্যে অধিকাংশই প্রবীণ। সেই কারণেই এই বছরে থিম হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে ” বয়স্ক মানুষের সুস্বাস্থ্যের পেছনে স্বাস্থ্য কর্মীদের ভূমিকা”। এখানেই নার্সদের এবং বিশেষ করে সেইসব মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি বিশেষ সম্মান জানানো হবে যাদের কথা খুব একটা প্রচারে আসেনা। বয়স্ক মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য  স্বাস্থ্যকর্মীদের অবদান কতটা বেশি তা বিশ্ব মহামারী আরো একবার প্রমান করে দিয়েছে। তাই তাদের কাজের প্রতি সাধারণ মানুষের সচেতনতা এবং শ্রদ্ধা জাগিয়ে তোলার জন্যই এমন একটি থিম বেছে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নানান আলোচনা ব্যবস্থা করা হয়েছে যেখানে রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এবং বিভিন্ন দেশের সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীরা একসাথে প্রবীণদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে আলোচনা করবেন।

তাছাড়াও এবছর থেকে একটি নতুন দশকের (২০২০-২০৩০) শুরু হচ্ছে। তাই এই নতুন দশকের জন্য নানান নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। এও দেখা হবে যে এতদিন নানান কর্মকাণ্ড থেকে কি কি সুফল পাওয়া গেছে এবং আরো কি কি সমস্যা এখনো রয়ে গেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের এমন সতেরোটি লক্ষ্য স্থির করেছে। যেমন-  বয়স্ক ব্যক্তিদের সুস্থ জীবন এবং সব বয়সী মানুষের জন্য সুন্দর জীবনের ব্যবস্থা করা,  বয়স্ক ব্যক্তিদের  স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করা, তাঁদের নিজেদের স্বাস্থ্যের দায়িত্ব নিতে শেখানো, স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং কৃতজ্ঞতার মনোভাব তৈরি করা, বয়স্ক ব্যক্তিদের স্বাস্থ্যের ওপর এই মহামারীর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করা ইত্যাদি যার মধ্যে অন্যতম। 

গত তিন দশকে সারাবিশ্বে জনসংখ্যার হার অনেকটাই বদলে গেছে। ১৯৫০ সাল থেকে ২০১০ সাল অবধি মানুষের গড় জীবন সীমা ছেচল্লিশ থেকে বেড়ে আটষট্টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। ২০১৯ সালে  বিশ্বজুড়ে পঁয়ষট্টি বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা ৭০৩ মিলিয়ন ছিল। সমীক্ষা করে দেখা গেছে যে পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সবথেকে বেশি বয়স্ক মানুষে রয়েছে (২৬১ মিলিয়ন), তারপর রয়েছে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা (২০০ মিলিয়নেরও কিছুটা বেশি)। সমীক্ষা অনুযায়ী সামনের দশক গুলিতে এই বয়স্ক মানুষের সংখ্যা দ্বিগুণ হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে যা প্রায় ১.৫ বিলিয়নের কাছাকাছি। বয়স্ক মানুষের জনসংখ্যা বৃদ্ধি সবথেকে বেশি পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে হবে বলে মনে করা হয়, যেখানে ২০১৯ সালে ২৬১ মিলিয়ন বয়স্ক মানুষের সংখ্যাটি ২০৫০ সালে ৫৭৩ মিলিয়নে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া আফ্রিকার বেশ কিছু জায়গায় এই সংখ্যা ২১৮ শতাংশ হারে বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড এই বৃদ্ধির হার অনেকটাই কম হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসের গুরুত্ব খুবই বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।

আগামী দিনে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসের গুরুত্ব এবং প্রসার আরো বিস্তৃত হবে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রবীণ ব্যক্তিদের দ্বারা সম্মুখীন হওয়া সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করতে তারা আরো সফল হবে বলেই মনে করা হয়।

One comment

আপনার মতামত জানান