বিশ্ব সঞ্চয় দিবস

৩১ অক্টোবর ।। বিশ্ব সঞ্চয় দিবস

প্রতি বছর প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে বিভিন্ন দেশে কিছু দিবস পালিত হয়। ওই নির্দিষ্ট দিনে অতীতের  কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সমস্ত দিবস পালিত হয়। পালনীয় সেই সমস্ত দিবস গুলির মধ্যে একটি হল বিশ্ব সঞ্চয় দিবস (World Thrift Day)।

সারা বিশ্বে প্রতি বছর ৩১অক্টোবর বিশ্ব সঞ্চয় দিবস পালিত হলেও ভারতবর্ষে ৩০ অক্টোবর বিশ্ব সঞ্চয় দিবস পালন করা হয়। সঞ্চয় সম্পর্কে জনসাধারণের শিথিল মনোভাব বদলে এ বিষয়ে তাদের আরও সচেতন করে তোলবার জন্য, অর্থ বাড়িতে রাখার বদলে ব্যাঙ্কে সুরক্ষিত পরিসরে রেখে অপরিমিত ব্যয় না করে সঞ্চয় করবার গুরুত্ব মানুষের সামনে তুলে ধরবার উদ্দেশ্যেই বিশেষ করে এই বিশ্ব সঞ্চয় দিবস উদযাপনের পরিকল্পনা করা হয়।

১৯২৪ সালে ইটালির মিলানে অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক সেভিংস ব্যাঙ্ক কংগ্রেসের (International Savings Bank Congress) শেষদিনে ৩১ অক্টোবর দিনটিকে বিশ্ব সঞ্চয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। ইতালিয়ান অধ্যাপক ফিলিপ্পো রাভিজ্জা (Filippo Ravizza) সম্মেলনের অন্তিম দিনে এই ঘোষণা করেন। যদিও এর আগেই ১৯২১ সালে স্পেন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম জাতীয় সঞ্চয় দিবস পালন করা হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯৫৫ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে জাতীয় সঞ্চয় দিবস সবথেকে বেশি জনপ্রিয়তা এবং সাফল্য অর্জন করেছিল। কিন্তু ১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী  নিহত হওয়ায় ভারতবর্ষে ৩০ অক্টোবরে বিশ্ব সঞ্চয় দিবস উদযাপিত হয়ে আসছে৷

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

অর্থ সঞ্চয় এবং মিতব্যয়িতা একটি সুরক্ষিত জীবনযাপনের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। জীবনে চলার পথে এমন অনেক পরিস্থিতির সম্মুখীন আমাদের হতে হয় যার মোকাবিলার জন্য প্রভূত অর্থের প্রয়োজন হয়। একজন সঞ্চয়ী মানুষ তাই সর্বদাই নিশ্চিন্ত জীবন কাটাতে পারেন। সঞ্চয় উপযুক্ত শিক্ষাগ্রহণে, উন্নত স্বাস্থ্যসেবা লাভ করতে, কখনও নতুন ব্যবসা শুরু করতেও সাহায্য করে। এককথায় জীবনকে সহজ, চিন্তামুক্ত এবং আরও বেশি সুরক্ষিত করে তুলতে সঞ্চয়ী মনোভাবের তুলনা নেই। শুধু তাই নয় বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতেও এর গুরুত্ব অপরিসীম। সেই কারণে সঞ্চয় সম্পর্কে জনসাধারণের শিথিল মনোভাব বদলে এ বিষয়ে তাদের আরও সচেতন করে তোলবার জন্য, অর্থ বাড়িতে রাখার বদলে ব্যাঙ্কে সুরক্ষিত পরিসরে রেখে অপরিমিত ব্যয় না করে সঞ্চয় করবার গুরুত্ব মানুষের সামনে তুলে ধরবার উদ্দেশ্যেই বিশেষ করে এই বিশ্ব সঞ্চয় দিবস উদযাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। বিশ্বব্যাপী সঞ্চয়ের গুরুত্ব প্রচার করা হয় এই দিন। সঞ্চয় যে কেবল ব্যক্তিগত সুরক্ষামাত্রই নিশ্চিত করেনা, তা যে দেশকেও আর্থিক সুরক্ষাদানে সাহায্য করে সেই কথাটিও এই বিশেষ দিনটিকে সামনে রেখে প্রচার করা হয়। সম্পদের গুরুত্ব মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করা হয়ে থাকে।

মানুষের মধ্যে সঞ্চয়ের মানসিকতা আরও বেশি বৃদ্ধি করবার জন্য, জনসাধারণকে আরও সচেতন করে তোলবার জন্য বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে এই দিনটি উদযাপন করা হয়। বিভিন্ন স্কুলে, কলেজে সঞ্চয় সংক্রান্ত অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়ে থাকে। এমনকি এই দিনটি উপলক্ষে বিদ্যালয়ে বিশেষ কোর্সের আয়োজন করে অল্পবয়স থেকেই ছেলেমেয়েদের সঞ্চয় গুণের উপকারিতা সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হয়। এমনকি সঞ্চয় ব্যাঙ্কের পাসবুকও বিতরণ করা হয়। জনগনের মধ্যে সঞ্চয় বিষয়ক লিফলেট এবং ছোট পুস্তিকা বিতরণ করে, কখনও পোস্টারের সাহায্যেও  মানুষকে সচেতন করে তোলার চেষ্টা করা হয়। এমনকি সংবাদপত্রের নিবন্ধ ও নিউজ চ্যানেলের বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজনও এই উদযাপনেরই অংশ। এছাড়াও বিশ্বের কোথাও কোথাও শিক্ষামূলক বিভিন্ন ছায়াছবি প্রদর্শন করা হয়ে থাকে সঞ্চয় বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে। এইভাবে বিশ্বজুড়ে মানুষকে সঞ্চয়ী করে তোলবার সাধু প্রচেষ্টাটির পিছনে রয়েছে যেমন প্রত্যেক ব্যক্তির সুরক্ষিত জীবনের চিন্তা তেমনি রয়েছে বিশ্ব অর্থনীতির শিকড়কে আরও মজবুত করে তোলবার প্রয়াস। 

আপনার মতামত জানান