এ আর রহমান

এ আর রহমান

ভারতীয় সঙ্গীতের ভাণ্ডারকে যারা সমৃদ্ধ করেছেন এবং আজও করে চলেছেন সমান দক্ষতায় তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন এ আর রহমান (A. R. Rahman)। ভারতীয় সঙ্গীতকে অত্যাধুনিক করে তোলায় তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। একাধারে সুরকার, গায়ক, গীতিকার, রেকর্ড প্রযোজক ইত্যাদি নানা ভূমিকায় তিনি নিজের পারদর্শিতা দেখিয়েছেন এবং মুগ্ধ করেছেন আপামর জনসাধারণকে। আজীবন সঙ্গীত নির্মাণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন তিনি। কর্ণাটকী সঙ্গীত, হিন্দুস্থানী শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, পাশ্চাত্য ও কাওয়ালি ঘরানার সঙ্গীতে দক্ষ ছিলেন তিনি এবং এই বিবিধ ঘরানাকে একত্র করে, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সহযোগে যে নতুন সঙ্গীতের ভাষা নির্মাণ করেছিলেন তিনি তা নিঃসন্দেহে এক অভিনব সৃষ্টি। তাঁর এই সমন্বিত শৈলী সঙ্গীতের জগতে এক গুরুত্বপূর্ণ  অবদান। পিয়ানোসহ বিবিধ বাদ্যযন্ত্র রহমান নিজেও অনায়াসে বাজাতে পারেন। প্রধানত তামিল এবং হিন্দি চলচ্চিত্রের জন্য সঙ্গীত তৈরি করেছেন এ আর রহমান। ‘পদ্মভূষণ’ এবং ‘অস্কার’-এর মতো পুরস্কার ছাড়াও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, অ্যাকাডেমি পুরস্কার, গ্র্যামি পুরস্কারের মতো অত্যন্ত সম্মানীয় খেতাবসহ সারাজীবন আরও নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন তিনি। ‘রোজা’ বা ‘বম্বে’র মতো চলচ্চিত্রে তাঁর সঙ্গীত আজও দর্শকের মধ্যে সমান জনপ্রিয়। 

১৯৬৭ সালের ৬ জানুয়ারি তামিলনাড়ুর মাদ্রাজে এক শৈব হিন্দু পরিবারে এ আর রহমানের জন্ম হয়। যদিও জন্মের পর তাঁর নাম রাখা হয়েছিল এ. এস দিলীপকুমার। তাঁর বাবা ছিলেন বিখ্যাত গীতিকার এবং সঙ্গীত পরিচালক আর. কে শেখর (R. K. Shekhar)। মূলত মালয়ালম চলচ্চিত্রের জন্য কাজ করতেন আর. কে শেখর। পরবর্তীকালে আর. কে শেখরের মৃত্যুর পরে ১৯৮৯ সালে যখন রহমানের তেইশ বছর বয়স সেসময় সপরিবারে তাঁরা ধর্ম পরিবর্তন করেছিলেন। ধর্ম পরিবর্তনের পর মায়ের পছন্দ করে দেওয়া আল্লাহ রাখ্‌হা রহমান বা এ আর রহমান নামেই পরিচিত হন তিনি। রহমানের মা-ও নাম পরিবর্তন করে কস্তুরী থেকে হয়েছিলেন কারিমা বেগম (Kareema Begum)। সুফি ধর্ম তাঁদেরকে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করেছিল। রহমানের তিন বোনের নাম যথাক্রমে এ. আর রেইহানা, ফতিমা রফিক এবং ইশরাথ কাদরি। 

মাত্র চার বছর বয়সে রহমান পিয়ানো বাজানো শিখে গিয়েছিলেন। তাঁর বাবা যখন একটি সিন্থেসাইজার কিনেছিলেন, তখন থেকেই সঙ্গীতের প্রতি তাঁর উৎসাহ কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছিল। ১৮৮৯ সালে যখন রহমানের ২৩ বছর বয়স, তাঁদের পুরো পরিবার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল। পরবর্তীকালে ১৯৯৫ সালে এ আর রহমান অভিনেত্রী সায়রা বানুকে (Saira Banu) বিবাহ করেছিলেন। এই দম্পতির দুই কন্যা সন্তানের নাম খাতিজা রহমান ও রহিমা রহমান এবং এক পুত্রের নাম এ. আর আমিন। 

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

মাত্র নয় বছর বয়সে যখন রহমানের বাবার মৃত্যু হয় তখন তিনি পদ্মশেশাদ্রী বালা ভবনে পড়াশোনা করছেন। তখন জীবনধারণের জন্য তাঁর পরিবার আর. কে শেখরের বাদ্যযন্ত্র ভাড়া দিয়ে অর্থ সংগ্রহ করেছিল। সেসময় রহমান নিজেও অর্থ রোজগারের চেষ্টা করতেন, ফলে বিদ্যায়তনিক পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হয়েছিলেন তিনি। ফলে স্কুলের অধ্যক্ষ তাঁকে আর স্কুলে পাঠাতে বারণ করেছিলেন। এই ঘটনার পর এক বছর রহমান এমসিএন এবং মাদ্রাজ খ্রিস্টান কলেজ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। সেখানে সহপাঠীদের সঙ্গে একটি মিউজিকাল ব্যান্ডও বানিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গীতের প্রতি প্রবল আগ্রহের কারণে এবং সঙ্গীতেই নিজের কেরিয়ার গঠনের জন্য মায়ের থেকে অনুমতি নিয়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করেন তিনি। পরে শৈশবের বন্ধুদের নিয়ে ‘রুটস ব্যান্ড’ এবং আরও পরে চেন্নাই-ভিত্তিক রক গানের গ্রুপ ‘নেমেসিস অ্যাভেনিউ’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এ আর রহমান। পরবর্তীকালে লন্ডনের ট্রিনিটি কলেজ থেকে ট্রিনিটি কলেজ অ মিউজিকের স্কলারশিপ লাভ করেন তিনি এবং মাদ্রাজের মিউজিক স্কুল থেকে পশ্চিমি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে ডিপ্লোমাসহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন রহমান।  

নয় বছর বয়সে রেকর্ডিং স্টুডিওতে পিয়ানো বাজানোয় বাবাকে সাহায্য করেছিলেন তিনি। এগারো বছর বয়স থেকেই পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করবার জন্য পেশাদার পিয়ানোবাদক হিসেবে কাজ করা শুরু করেছিলেন এ আর রহমান। মাস্টার ধনরাজের অধীনে তাঁর প্রাথমিক সঙ্গীত শিক্ষা শুরু হয়েছিল এবং এগারো বছর বয়সে বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং মালয়ালম সঙ্গীত সুরকার এম কে অর্জুনানের অর্কেস্ট্রায় বাজানোর সুযোগ হয়েছিল রহমানের। এরপর ক্রমে এম এস বিশ্বনাথন, বিজয়া ভাস্কর, ইলািয়ারাজা, রমেশ নাইডুদের মতো সুরকারদের সঙ্গে কাজ করেছিলেন তিনি। এছাড়াও জাকির হুসেন, কুন্নাকুডি বৈদ্যনাথন, এবং এল. শঙ্করের সঙ্গে বিশ্বের নানা দেশও ভ্রমণ করেছিলেন।

১৯৮৭ সালে যখন রহমান দিলীপ নামেই পরিচিত, তখন অলউইন নামক এক কোম্পানির নতুন রেঞ্জের ঘড়ির জিঙ্গেলের জন্য ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর তৈরি করেছিলেন তিনি। টাইটান ঘড়ির বিজ্ঞাপনী জিঙ্গেলও তৈরি করেন তিনি যেখানে মোৎজার্টের পঁচিশ নম্বর সিম্ফনি ব্যবহার করেছিলেন এ আর রহমান। এছাড়াও আরও নানা বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলে এবং অনেক তথ্যচিত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক তৈরি করার কাজ করেছিলেন প্রাথমিকভাবে। ১৯৯২ সালে বাড়ির পশ্চাদভাগের সঙ্গে সংযুক্ত একটি সঙ্গীত রেকর্ড ও মিক্সিং স্টুডিও তৈরি করেছিলেন তিনি যার নাম দিয়েছিলেন ‘পঞ্চথান রেকর্ড ইন’। ১৯৯২ সালেই বিখ্যাত তামিল চিত্র পরিচালক মণিরত্নম তাঁর ‘রোজা’ ছবির সঙ্গীতের জন্য রহমানকে প্রস্তাব দেন। এই ছবিতে তাঁর নির্মিত আবহ ও সঙ্গীত বিপুল জনপ্রিয়তা এবং প্রশংসা লাভ করেছিল। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি রহমানকে। তাঁর এই কাজ যে ভারতীয় সঙ্গীতের জগতেও এক অভিনবত্বের আমদানি করেছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পরে মালয়ালম চিত্রগ্রাহক সন্তোষ সিভানের সঙ্গে ‘যোদ্ধা’ ছবির জন্য চুক্তিবদ্ধ হন এ আর রহমান। পরের বছর রহমান ‘রোজা’ ছবির জন্য সেরা সঙ্গীত পরিচালক বিভাগে তাঁর প্রথম জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন। এরপর বহু তামিল ছবির মিউজিক করে তিনি বহুল জনপ্রিয়তা এবং প্রশংসা অর্জন করেন। পরিচালক মণিরত্নমের রাজনৈতিক সিনেমা ‘বম্বে’তেও এ আর রহমান অনবদ্য কাজ সঙ্গীত তৈরি করেছিলেন। ‘বম্বে’ ছবির সাউন্ডট্র্যাক ১৫ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছিল সেই সময়। পরিচালক ভারতীরাজের সঙ্গে তামিল গ্রামীণ লোকসংস্কৃতি দ্বারা অনুপ্রাণিত চলচ্চিত্রের জন্য সঙ্গীত নির্মাণের কাজ করেছিলেন রহমান। তামিল চলচ্চিত্র ‘মুথু’র সঙ্গীত জাপানী দর্শকদের ভীষণই আকৃষ্ট করেছিল এবং তাঁদের কাছে রহমান ক্রমেই পরিচিত হয়ে ওঠেন। বালাচন্দরের তামিল ভাষার ছবি ‘ডুয়েট’-এর জন্য যে সঙ্গীত নির্মাণ করেছিলেন তিনি, তাতে স্যাক্সোফোনের অসাধারণ ব্যবহার করেছিলেন রহমান। এছাড়াও ১৯৯৫ সালের ‘ইন্দিরা’ এবং ‘মিস্টার রোমিও’ ও ‘লাভ বার্ডস’ ছবিতেও উল্লেখযোগ্য কাজ করেছিলেন এ আর রহমান। 

আন্তর্জাতিক স্তরেও তাঁর তৈরি আবহ এবং সঙ্গীত প্রভূত জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল কারণ সেগুলি কর্ণাটকী, তামিল ঐতিহ্যবাহী লোক সঙ্গীত, পশ্চিমী শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, জ্যাজ, রক ইত্যাদি বিভিন্ন ঘরানার সংমিশ্রণ ছিল। বিখ্যাত পরিচালক রাম গোপাল ভার্মার ‘রঙ্গিলা’ ছবির সঙ্গীত নির্মাণ দিয়ে রহমানের বলিউডে পদার্পণ। এরপর শাহরুখ খান অভিনীত হিন্দি ছবি ‘দিল সে’ এবং আরেকটি জনপ্রিয় ছবি ‘তাল’-এর জন্য অনবদ্য আবহ সঙ্গীত নির্মাণ করেন তিনি। ১৯৯৭ সালে চেন্নাইয়ের প্রযোজনা ‘মিনসারা কানাভুরে’র সাউন্ডট্র্যাক অ্যালবাম তাঁকে সেরা সঙ্গীত পরিচালনার জন্য দ্বিতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র  পুরস্কার এবং একটি তামিল চলচ্চিত্রে সেরা সঙ্গীত পরিচালনার জন্য দক্ষিণ ফিল্মফেয়ার পুরস্কার দেওয়া হয়। বলিউডে এ আর রহমান যেসব বিখ্যাত ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আশুতোষ গোয়ারিকরের ‘লগান’, ‘স্বদেশ’, ‘যোধা আকবর’, রাকেশ ওমপ্রকাশ মেহরার ‘রং দে বসন্তী’, আব্বাস টায়ারওয়ালার ‘জানে তু ইয়া জানে না’ ইত্যাদি। ‘যোধা আকবর’-এর মিউজিকাল স্কোরের জন্য হংকং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এশিয়ান চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য শ্রেষ্ঠ সুরকার বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছিলেন এ আর রহমান এবং ২০০৮ সালে সেরা সঙ্গীত পরিচালনা এবং স্কোরের জন্য আইআইএফএ (IIFA) পুরস্কারও জেতেন তিনি। এছাড়াও তিনি যশ চোপড়ার সঙ্গে ‘জব তক হ্যায় জান’ ছবিতে, ইমতিয়াজ আলীর ‘হাইওয়ে’, ‘রকস্টার’ ছবিতে, রজনীকান্ত অভিনীত অ্যানিমেশন ছবি ‘কোচাদাইয়ান’-এর মতো ছবিতেও সঙ্গীত সংযোজন করেছিলেন। ২০১৮ সালে ‘মম’ ছবির আবহের জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন এ আর রহমান। জাভেদ আখতার, গুলজার, ভাইরামুথু-র মতো ভারতীয় কবি এবং গীতিকারদের সঙ্গেও কাজ করেছিলেন তিনি। ২০০৩ সালে চিনা ও জাপানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত নিয়ে গবেষণামূলক একটি মিউজিকাল স্কোর নির্মাণ করেছিলেন ম্যান্ডারিন ভাষার চলচ্চিত্র ‘ওয়ারিয়র্স অফ হেভেন অ্যান্ড আর্থ’-এর জন্য। ২০০৫ সালে চেন্নাইয়ের কোডাম্বাক্কামে নিজের তৈরি ‘পঞ্চথান রেকর্ড স্টুডিও’কে সম্প্রসারিত করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন এ এম স্টুডিও। এশিয়ার সবচেয়ে আধুনিক স্টুডিওগুলির মধ্যে এটি অন্যতম।

কেবলমাত্র ভারতবর্ষের ছবিতেই নয়, হলিউডেও নিজের প্রতিভা প্রদর্শন করেছিলেন রহমান। ২০০৯ সালে হলিউডের কমেডি ঘরানার ছবি ‘কাপলস রিট্রিট’-এর সঙ্গীত নির্মাণ করে লন্ডনের বিএমআই পুরস্কার লাভ করেন তিনি। এরপর ব্রিটিশ চলচ্চিত্র ‘স্লামডগ মিলিওনেয়ার’ ছবির কাজ তাঁকে প্রভূত সাফল্য এনে দেয়। এই ছবির সঙ্গীতের জন্য তিনি ‘গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার’ এবং দুটি অ্যাকাডেমি পুরস্কার পেয়েছিলেন। এই ছবির ‘জয় হো’ গানটি আন্তর্জাতিক স্তরে সাফল্য পেয়েছিল। এছাড়াও আরও দুটি হলিউডি ছবি ‘মিলিয়ন ডলার আর্ম’ এবং ‘দ্য হান্ড্রেড ফুট জার্নি’র মিউজিক স্কোর অস্কারের জন্যও মনোনয়ন পেয়েছিল। ২০০৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত শেখর কাপুরের ইংরেজি ভাষার চলচ্চিত্র ‘এলিজাবেথ : দ্য গোল্ডেন এজ’-এর সঙ্গীত নির্মাণ করেছিলেন এ আর রহমান। ২০১২ সালে আমেরিকান নাটকীয় ছবি ‘পিপল্ লাইক আস’-এর মিউজিক করেছিলেন রহমান। রহমানের নিজের কম্পোজ করা একটি জনপ্রিয় সাউন্ডট্র্যাক অ্যালবাম ‘এক দিওয়ানা থা’ ২০১১ সালে মুক্তি পেয়েছিল।

কেবলমাত্র চলচ্চিত্রই নয়, তার বাইরেও তাঁর সঙ্গীত সফর নজর কাড়ার মতো। ১৯৯৭ সালে ভারতবর্ষের পঞ্চাশতম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রহমানের ‘বন্দে মাতরম’ অ্যালবামটি প্রভূত জনপ্রিয়তা লাভ করে। এটি ভারতের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত নন-ফিল্ম অ্যালবামগুলির মধ্যে অন্যতম একটি। এরপর ভারত বালা এবং রহমান একসঙ্গে সংবিধানের ৫০তম বছরে ২০০০ সালের প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন ‘জন গণ মন’ নামে একটি মিউজিক ভিডিও প্রকাশ করেন। ১৯৯৯ সালে রহমান-সহ কোরিওগ্রাফার শোবানা এবং প্রভুদেবা ও তামিল চলচ্চিত্র-নৃত্য দল মিউনিখে মাইকেল জ্যাকসনের সঙ্গে পারফর্মেন্সের সুযোগ পেয়েছিলেন। ২০০২ সালে মাইকেল জ্যাকসনের প্রথম মঞ্চ প্রযোজনা ‘বম্বে ড্রিমস’-এর জন্য সঙ্গীত নির্মাণ করেছিলেন তিনি। ২০০৪ সাল থেকে রহমান তিনটি সফল বিশ্ব সফর করেছিলেন এবং সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, দুবাই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ভারতের মতো দেশের দর্শকদের সামনে পারফর্ম করেছিলেন তিনি। কারেন ডেভিডকে তাঁর আসন্ন মিউজিক অ্যালবামেও সাহায্য করেছিলেন তিনি। ২০০৮ সালে তাঁর নন-ফিল্ম অ্যালবাম ‘কানেকশনস’ প্রকাশিত হয়। মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা হোয়াইট হাউসে যে রাষ্ট্রীয় নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন, সেখানেও পারফর্ম করেছিলেন এ আর রহমান। এছাড়াও ২০১০ সালের কমনওয়েলথ গেমসের থিম গান যেমন তৈরি করেছিলেন তিনি, তেমনই ২০১০ সালে গুজরাট রাজ্য গঠনের পঞ্চাশতম বার্ষিক সম্মানে ‘জয় জয় গারভি গুজরাট’ গানটি রচনা ও নির্মাণ করেন রহমান। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য একটি পাঞ্জাবি গানও রচনা করেন তিনি।

সমাজকল্যাণমূলক কাজেও তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। ২০১০ সালে হাইতি ভূমিকম্পের জন্য ত্রাণ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠিত ‘উই আর দ্য ওয়ার্ল্ড ২৫ ফর হাইতি’-তে সত্তর জন শিল্পীর মধ্যে এ আর রহমান ছিলেন অন্যতম একজন। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে দীর্ঘ বিরতির পর রহমান চেন্নাইতে এবং প্রথমবারের মতো কোয়েম্বাটোর ও মাদুরাইতে একটি সম্পূর্ণ তামিল প্লে-লিস্ট সহ লাইভ পারফর্ম করেছিলেন তিনি। এখান থেকে সংগৃহীত অর্থ তামিলনাড়ুর বন্যাত্রাণ তহবিলে দান করা হয় এবং ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরিতে ব্যয় করা হয়েছিল। 

আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় রহমানকে সম্মানীয় ডক্টরেট উপাধি প্রদান করে। রোটারি ক্লাব অফ মাদ্রাজ থেকে ‘লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ পান তিনি। ২০১০ সালে ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মভূষণ’ সম্মানে ভূষিত করে। 

ইংরেজি ভাষায় ‘লে মাস্ক’ নামক একটি চলচ্চিত্র রচনা ও পরিচালনাও করেছিলেন রহমান। সঙ্গীতে তাঁর অবদানের জন্য তাঁকে ‘মোৎজার্ট অফ মাদ্রাজ’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি কানাডার একটি শহরের একটি রাস্তার নাম তাঁর নামে রাখা হয়েছে ।

আপনার মতামত জানান