সববাংলায়

বৃষসেন

মহাভারতে উল্লেখিত অগণিত মহাবীরদের মধ্যে অন্যতম হলেন বৃষসেন । তিনি ছিলেন কর্ণ এবং তাঁর স্ত্রী পদ্মাবতীর বড় ছেলে। কর্ণের সঙ্গেই বৃষসেন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৌরবপক্ষে যোগদান করেন। 

ভীষ্মের সাথে মনোমালিন্য হওয়ার জন্য কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের প্রথম দশ দিন কর্ণ বা তাঁর ছেলেরা কেউই যুদ্ধে যোগ দেননি। দশম দিনে ভীষ্মের পতন হওয়ার পর দুর্যোধনের অনুরোধে কর্ণ, বৃষসেন এবং তাঁর অন্যান্য ছেলেদের নিয়ে কৌরবপক্ষে যোগ দেন। কর্ণের মতোই বৃষসেনও ছিলেন মহাবীর যোদ্ধা। যুদ্ধের একাদশ দিনের শুরুতে তাঁর সঙ্গে নকুল এবং দ্রৌপদীর ছেলে শতানীকের যুদ্ধ হয়। বহুক্ষণ তুমুল যুদ্ধের পর শতানীক হেরে যান। এরপর বাকি চার উপপান্ডবের সাথেও বৃষসেনের যুদ্ধ হয়। কিন্তু বৃষসেন তাদের হারিয়ে দেন। 

এরপর চৌদ্দতম দিনের যুদ্ধে আবার বৃষসেনকে দেখা যায়। তিনি সেইদিন রাত্রিযুদ্ধের সময় পাঞ্চালরাজ দ্রুপদ ও তাঁর সেনাবাহিনীর সঙ্গে একা যুদ্ধ করেছিলেন। সেই যুদ্ধে দ্রুপদ হেরে গিয়ে পিছু হটে যান। তারপর বৃষসেন পাঞ্চালের সেনাবাহিনীকেও ধ্বংস করেন। সতেরোতম দিনের শুরুতে বৃষসেন ভীষণ বীরত্ব দেখিয়েছিলেন। সেদিন নকুলের সঙ্গে প্রথমে তাঁর যুদ্ধ হয়। কিন্তু দেখতে দেখতে বৃষসেনের বাণে নকুলের ধনুক, রথ, খড়্গ সবই কাটা যায়। নকুল তখন ভীমের রথে উঠে প্রাণ বাঁচান। ভীমের সঙ্গেও বৃষসেনের যুদ্ধ হয়। সেইসময় যুদ্ধ করতে করতে অর্জুন এসে সেখানে পৌঁছালে বৃষসেন তাঁকেও আক্রমণ করেন। তাঁর বাণে ভীম, কৃষ্ণ ও অর্জুন ক্ষতবিক্ষত হয়ে যান।       তখন অর্জুন কর্ণকে ডেকে বলেন, “কর্ণ! আমার অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে তোমরা সবাই মিলে আমার ছেলে অভিমন্যুকে বধ করেছিলে। এখন আমি একাই তোমার সামনেই তোমার ছেলে বৃষসেনকে বধ করব। তোমার যদি ক্ষমতা থাকে, তাহলে নিজের ছেলেকে রক্ষা করো।”   

আরও পড়ুন:  দাঁশাই উৎসব

এই বলে অর্জুন হাসতে হাসতে দশটি ভীষণ বাণ দিয়ে বৃষসেনের শরীরের দশটি প্রধান স্থান বিদ্ধ করলেন। কর্ণ বহু চেষ্টা করেও অর্জুনকে বারণ করতে পারলেন না। এরপর অর্জুন বৃষসেনের রথ, সারথি, ধনুক প্রভৃতি নষ্ট করে চারটি ক্ষুরপ্র বাণ দিয়ে তাঁর দুই হাত ও মাথা কেটে ফেললেন। পর্বত থেকে যেভাবে কোনো বিশাল আকারের পাথর গড়িয়ে মাটিতে পড়ে যায়, সেইভাবে প্রাণহীন বৃষসেন রথ থেকে মাটিতে পড়ে গেলেন। কৌরবসৈন্যদের মধ্যে হাহাকার উঠল। ছেলের মৃত্যু সহ্য করতে না পেরে ভীষণ রেগে গিয়ে কর্ণ অর্জুনকে আক্রমণ করেন। সেই যুদ্ধই ছিল তাঁর শেষ যুদ্ধ। 

তথ্যসূত্র


  1. https://en.m.wikipedia.org/
  2. ছেলেদের মহাভারত, উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, বসাক বুক স্টোর প্রাইভেট লিমিটেড, তৃতীয় মুদ্রণ, কর্ণপর্ব, পৃষ্ঠা ১৭৪-১৭৫
  3. মহাভারত সারানুবাদ, রাজশেখর বসু, কলিকাতা প্রেস, তৃতীয় মুদ্রণ, কর্ণপর্ব, অধ্যায় ২০, পৃষ্ঠা ৪৫৩-৪৫৪

error: লেখা নয়, লিঙ্কটি কপি করে শেয়ার করুন।

Discover more from সববাংলায়

Subscribe now to keep reading and get access to the full archive.

Continue reading

চৈতন্যদেবের অসামান্য জীবনী দেখুন

চৈতন্য জীবনী

ভিডিওটি দেখতে ছবিতে ক্লিক করুন

জয় মঙ্গলবার ব্রত নিয়ে দেখুন এই ভিডিওতে



ছবিতে ক্লিক করুন