পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি জেলার মধ্যে কোচবিহার অন্যতম৷ জলপাইগুড়ি বিভাগের একটি জেলা হল কোচবিহার। এই জেলার উত্তরে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা; দক্ষিণে বাংলাদেশের রংপুর বিভাগ; পূর্বে অসমের ধুবড়ী জেলা এবং পশ্চিমে জলপাইগুড়ি জেলা ও বাংলাদেশের রংপুর বিভাগ অবস্থিত। আজকের কোচবিহার জেলা অতীতে বৃহত্তর কামরূপ রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। পরবর্তীকালে কামরূপের রাজধানী দুইভাগে ভাগ হলে কোচবিহার ‘কামতা’-র অন্তর্গত হয়ে পড়ে। সপ্তদশ শতাব্দীতে রচিত ‘বাদশাহনামা’ এবং ‘শাহজাহানামায়’ এই দেশের পশ্চিমাংশে ‘কামতা’ স্থলের নাম কোচবিহার বলে উল্লেখিত আছে। এখন এই কোচবিহার নাম হল কীভাবে আমরা সেটাই জানব।
১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট যখন ভারত ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীন হয় তখন কোচবিহার ছিল করদ মিত্র রাজ্য৷ মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্রনারায়ণ ছিলেন সেই সময়ে কোচবিহারের মহারাজা। স্বাধীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরু এবং বল্লভভাই প্যাটেলের প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিন আলোচনার পর ১৯৪৮ সালের ২৮শে আগস্ট চুক্তি সাক্ষর হয়। সেই চুক্তি অনুসারে ১৯৪৯ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর কোচবিহার ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে গণ্য হয়৷ ১৯৫০ সালের ১লা জানুয়ারি ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে কোচবিহার পশ্চিমবঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়৷
কোচবিহার নাম হল কীভাবে সে নিয়ে বেশ কিছু মতামত আছে৷ ১৫৮৬ সালে ইংরেজ বণিক রালফ ফিচ্ এই অঞ্চলের নাম ‘কোচ’ বলে উল্লেখ করেছেন। ‘তারিখে ফেরিস্তা’, ‘আকবরনামা’ এবং ‘তুজুক-এ- জাহাঙ্গিরি’ গ্রন্থতেও এই অঞ্চলকেকে ‘কোচ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে৷ পর্তুগীজ পর্যটক স্টিফেন ক্যাসিলা এই অঞ্চলকে ‘কোচ’ এবং এর রাজধানীকে ‘বিহার’ বলে উল্লেখ করেছেন। সপ্তদশ শতাব্দীতে রচিত ‘বাদশাহনামা’ এবং ‘শাহজাহানামায়’ এই দেশের পশ্চিমাংশে ‘কামতা’ স্থলের নাম কোচবিহার বলে উল্লেখিত আছে। আবার ভনভ্যান ব্রুকের আঁকা মানচিত্রেও এই অঞ্চলের নাম ‘Ragiawerra Cosbhear’ লেখা হয়েছে।
আবার আরেকটি মত বলে ১৭৭৩ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে রাজ্যটি ‘কোচ বিহার’ নামে পরিচিত হয় এবং এর রাজধানীর নাম হয় “বিহার ফোর্ট”। উল্লেখযোগ্য যে ‘কোচবিহার’ শব্দটির অর্থ ‘কোচ জাতির বাসস্থান’। কোচবিহার গেজেট অনুযায়ী, মহারাজার আদেশ অনুযায়ী রাজ্যের সর্বশেষ নামকরণ হয় ‘কোচবিহার’।
কোচবিহারের নামকরণ বিষয়ে জনশ্রুতি অবশ্য অন্য কথা বলে। জনশ্রুতি অনুসারে কোচ জাতির বাসস্থানের উপর নির্ভর করে এই কোচবিহারের নামকরণ হয়েছে। পুরাণের প্রসঙ্গ টেনে এনে বলা যায় পরশুরামের ভয়ে ভীত ক্ষত্রিয়রা ভগবতীর ‘কোচে’ (ক্রোড়ে) আশ্রয় নিলে সেই থেকে এই নামকরণ। আবার বিশ্বকোষে ‘কোচ’ শব্দটির অর্থ ‘সঙ্কোচ’ লেখা আছে। কোচবিহার সঙ্কোশ নদের তীরে অবস্থিত হওয়ায় সেখান থেকেও এই নামকরণ হয়ে থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। অন্য একটি মতানুসারে কোচ জাতির বাসস্থান যা ‘বিহারক্ষেত্র’ নামে সে সময়ে পরিচিত ছিল সম্ভবত সেখান থেকেই ‘কোচবিহার’ নামের উৎপত্তি হয়ে থাকতে পারে।