জওহরলাল নেহরু

জওহরলাল নেহরু

স্বাধীন ভারতবর্ষের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু (Jawaharlal Nehru)। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। জওহরলাল নেহেরুর পাশাপাশি তিনি পণ্ডিত নেহরু এবং চাচা নেহরু নামেও তিনি ভারতবাসীর কাছে পরিচিত। কাশ্মীরি পণ্ডিত সম্প্রদায়ের সাথে তাঁর পারিবারিক যোগসূত্র থাকার কারণে তিনি পণ্ডিত নেহেরু নামেও পরিচিত।

১৮৮৯ সালের ১৪ নভেম্বর এলাহাবাদে জওহরলাল নেহরুর জন্ম হয়। তাঁর বাবা ছিলেন বিখ্যাত আইনজীবী এবং কংগ্রেস নেতা মতিলাল নেহরু এবং মা স্বরূপ রানী থুসু। ১৯১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তিনি কমলা কাউরকে বিয়ে করেন। ১৯১৭ সালে তাঁদের একমাত্র সন্তান ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনীর জন্ম হয়।

নেহরুর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় বাড়িতে গৃহশিক্ষক এবং গভর্নেসের কাছে। ১৯০৭ সালে তিনি লন্ডনের ট্রিনিটি কলেজে আইন নিয়ে ভর্তি হন এবং ১৯১০ সালে সেখান থেকে স্নাতক হন। উচ্চ শিক্ষিত পরিবারে বড় হওয়ার সুবাদে তিনি এক প্রগতিশীল আবহাওয়ার মধ্যে বেড়ে উঠেছিলেন। ফলে পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও নানা বিষয় নিয়ে তিনি চর্চা করার সুযোগ পেয়েছিলেন। মাত্র তেরো বছর বয়সেই তিনি অ্যানি বেসান্তের থিওসফিক্যাল সোসাইটির সদস্যপদ লাভ করেন।

বই  প্রকাশ করতে বা কিনতে এই ছবিতে ক্লিক করুন।

১৯১২ সালে দেশে ফেরার পর নেহরু এলাহাবাদ হাইকোর্টে আইনজীবি হিসেবে প্র্যাকটিস শুরু করেন। নেহরু নিজের কৈশোরকাল থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েছিলেন।  ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করাকালীন তিনি গ্যারিবল্ডির রাজনৈতিক দর্শনের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। এই সময়েই তিনি সক্রিয়ভাবে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন এবং বাকিপুর কংগ্রেসে তিনি প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। তিনি এরপর এলাহাবাদ হোমরুল লীগের সম্পাদক পদে নিযুক্ত হন। নেহরু খুব কম সময়ের মধ্যেই তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা হয়ে ওঠেন। ১৯১৫ সালে গান্ধী ভারতবর্ষে ফেরার পর ভারতবর্ষের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বদল ঘটে। গান্ধীর সাথে পরিচিত হওয়ার পর তাঁর আদর্শ নেহরুকে নতুন দিশা দেখায়। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন দেশের বৃহত্তর জনসমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে গেলে কংগ্রেস কখনোই তাঁর অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে না। তাই, তিনি স্থানীয় ইস্যু ভিত্তিক আন্দোলনগুলিকে উৎসাহ দিতে শুরু করেন। উদাহরণ হিসেবে বলা চলে ১৯২০ সালের উত্তর প্রদেশের প্রতাপগড়ে কিষান সভা আন্দোলন গড়ে তোলার পেছনে কংগ্রেসের তরফ থেকে  তিনি বিশেষ ভূমিকা রাখেন। অসহযোগ আন্দোলনেও নেহরু নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। অন্যান্য কংগ্রেস নেতাদের পাশাপাশি তিনিও অসহযোগ আন্দোলনে যোগদানের কারণে গ্রেফতার হন। অসহযোগ পর্বে তাঁকে দুদফায় কারাবরণ করতে হয়। এই আন্দোলন ব্যর্থ হলে মতিলাল নেহেরু এবং চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে বিহ্মুব্ধ কংগ্রেস নেতারা স্বরাজ্য দল গড়ে তোলেন। কিন্তু, গান্ধীর নীতির প্রতি জওহরলাল এতটাই অনুগত ছিলেন যে তিনি যে তিনি এই সংগঠনে যোগ দেননি।

১৯২৩ সালের সেপ্টেম্বরে নেহরু নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। এর পরের বছরগুলিতে তিনি ইতালি, সুইজারল্যান্ড, ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম, জার্মানিরাশিয়ার আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলিতে জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিনিধিত্ব করেন। এইসময়ে আন্তর্জাতিক জগতেও তিনি ভারতবর্ষের জাতীয়তাবাদী নেতা হিসাবে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। গান্ধীর নীতির প্রতি অনুগত থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে তিনি  তাঁর সমালোচনাও করেছেন। ব্রিটিশদের প্রতি  রণকৌশলের প্রশ্নে তিনি গান্ধীর বিপরীতে অবস্থান করে চরমপন্থী ভূমিকা পালন করেছিলেন। এমনকী গবেষকদের একাংশ  নেহরু এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে কংগ্রেসের মধ্যে বামপন্থী হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। তবে, নেহরুর রাজনীতি কখনোই শ্রেণীসংগ্রাম ছিল না। উত্তর প্রদেশে কিষাণসভা আন্দোলন চলার সময়েও তাঁর নেতৃত্বে কংগ্রেস জমিদার শ্রেণীর স্বার্থেই তাদের অবস্থান বজায় রেখেছিল। তবে যেখানে কংগ্রেসের অধিকাংশ নেতাই নিজস্ব শ্রেণীর চৌহদ্দি পেরিয়ে উঠতে পারেনি সেখানে নেহরু উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, এই শ্রেণী, ধর্ম ও ভাষাগত বিভাজনের চৌহদ্দি পেরিয়ে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে এক বিরাট অংশের মানুষকে অংশগ্রহণ করানো কতটা জরুরি।

কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা করার আগেই বিভিন্ন সভা এবং অধিবেশনে স্বাধীনতাই যে কংগ্রেসের একমাত্র লক্ষ্য তা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন জওহরলাল নেহরু। ১৯২৮ সালে সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৯২৮ সালের ২৯শে আগস্ট কংগ্রেসের অধিবেশনে তিনি  মতিলাল নেহরুর লেখা নেহরু রিপোর্টে স্বাক্ষর করেন। ঐ বছরেই তাঁর হাত ধরে ‘ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইন্ডিয়া লিগ’ প্রতিষ্ঠিত হয়।  কংগ্রেসের পাশাপাশি, ভারতের সাথে ব্রিটিশদের সবরকম সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি জানিয়ে এই দলটি জোরদার স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু চালিয়েছিল।

ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনে নেহরু কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। ঐ অধিবেশনে ভারতের জন্য পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানানো হয়।  গান্ধী, মৌলানা আজাদ ও নেহরুর নেতৃত্বে লবণ সত্যাগ্রহ সহ বেশ কিছু আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ব্রিটিশ বিরোধী বিহ্মোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। এই সময়ে প্রায় পাঁচ বছর তিনি কারাবরণও করেন। কারাবাসের সময় তিনি ভারতবর্ষের ইতিহাস লেখার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। মেয়ে ইন্দিরাকে লেখা বিভিন্ন চিঠিতে তিনি ভারত ও বিশ্বের ইতিহাসকে সহজবোধ্য ভাষায় তুলে ধরেছিলেন। তাঁর এই চিঠিগুলিই ‘লেটারস ফ্রম এ ফাদার টু হিস ডটার ‘শীর্ষক গ্রন্থে সংকলিত হয়। আলমোড়া জেলে থাকার সময়ে ১৯৩৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি তাঁর আত্মজীবনী লেখার কাজ সমাপ্ত করেন। মুক্তি পাওয়ার পরই তিনি তাঁর অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে সুইজারল্যান্ডে যান। ১৯৩৬ সালের ফেব্রুয়ারি – মার্চে তিনি লন্ডন সফর করে সেখানে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা বিশদভাবে তুলে ধরেন। ১৯৪০ সালের ৩১শে অক্টোবর বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণে ভারতকে বাধ্য করা হলে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে নেহরু এককভাবে সত্যাগ্রহ শুরু করেন। ফলে  তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৪১ সালে অন্যান্য কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে তাঁকেও মুক্তি দেওয়া হয়। ১৯৪২এর ৭ই আগস্ট নেহরু বোম্বাইয়ের কংগ্রেসের অধিবেশনে ঐতিহাসিক ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রস্তাব দেন। পরেরদিনই, অর্থাৎ ৮ই আগস্ট অন্যান্য নেতাদের সাথে তাঁকে গ্রেফতার করে আহমেদনগর দূর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। এই শেষ পর্বের কারাবাস মিলিয়ে তাঁকে জেলে যেতে হয়েছিল মোট নয়বার।

নেহরু সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেননি। বরং, আদর্শগতভাবে সশস্ত্র সংগ্রামের বিরোধীতাই করেছিলেন। কিন্তু এই মতাপার্থক্য সত্ত্বেও তিনি বিপ্লবী রাজবন্দীদের স্বার্থে একাধিকবার আইনি সহায়তা করেছিলেন। ১৯৪৫ সালে আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনাপতিরা দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ব্রিটিশ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। বিচারে এই বাহিনীর সেনাপতিদের মধ্যে বহুজনকে ফাঁসির শাস্তি শোনানো হয়। এই সময়ে আই. এন. এ. র অফিসারদের শাস্তি লাঘব করে দেওয়ার জন্য নেহরু তাঁদের হয়ে মামলা লড়েন।

১৯৪৬ সালের ক্রিপস মিশনে ভারতবর্ষকে একটি যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণার কথা বলা হয়। ১৯৪৬ সালের ২রা সেপ্টেম্বর নেহরুর নেতৃত্বে একটি অস্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৭সালের ১৫ই আগস্ট ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লাভের পর জওহরলাল নেহরু দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। এইসময়ে নেহরুকে অভ্যন্তরীণ হ্মেত্রে বেশ কিছু অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। ১৯৫১-৫২সালে ভারতে সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ভারতে গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য না থাকায় অনেকেই চিন্তিত ছিলেন, সংসদীয় গণতন্ত্র ভারতে কতটা সফলকাম হবে। কিন্তু নেহরুর আমলে যে পরপর তিনটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাতে এক বিপুল সংখ্যক জনসাধারণের উপস্থিতির মধ্যে দিয়ে সংসদীয় শাসন কাঠামো দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। নেহরুর হাত ধরে ভোট ব্যবস্থা পরিচালনা করার জন্য পার্লামেন্ট ও শাসনতন্ত্র থেকে পৃথকভাবে একটি নির্বাচন কমিশন গড়ে ওঠে। নির্বাচন ব্যবস্থাতে সাধারণ মানুষ ব্যপকভাবে অংশ নিয়েছিল। তাঁর আমলে নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে অন্য কোন রাজনৈতিক সংগঠন দুর্নীতির অভিযোগও করেনি। প্রথম নির্বাচনে জওহরলাল নেহরু ব্যাপক নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণ করেন। প্রায় চল্লিশ হাজার মাইল এলাকা তিনি তাঁর নির্বাচনী প্রচারের আওতায় আনেন। ১৯৫১সালের নির্বাচন এবং তৎপরবর্তী সাধারণ নির্বাচনগুলিতে  কংগ্রেস ব্যাপক ভাবে জয়লাভ করে এবং নেহরু তিনটি দফায় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হন। নেহরুর সময়েই  যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো বাস্তববায়িত হয়। রাজ্যের স্বশাসনের বিষয়টিকে গুরুত্ব প্রদান করার জন্য তিনি রাজ্যের সিদ্ধান্তের উপর সিদ্ধান্ত আরোপ করতেন না। প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদেরও তিনি যথেষ্ট স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। তাঁর হাত ধরে নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য একজন মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের নেতৃত্বে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল। জওহরলাল নেহরু ভারতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। পার্লামেন্টের প্রতি নেহরু সম্মান ও মর্যাদা দেখিয়েছিলেন। স্বাধীন ভারতবর্ষের প্রথম তিনটি সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল তবুও তিনি বিরোধী দলগুলির মতামতকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতেন। তাঁর আমলে বিরোধী দলগুলি সংখ্যার দিক থেকে শক্তিশালী না হলেও তারা সরকারি সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার সুযোগ পেয়েছিল। নেহরু সুপ্রিম কোর্টের স্বাধীনতা রক্ষায়  সচেষ্ট ছিলেন।উদাহরণ হিসেবে বলা যায় পার্লামেন্টে পাস হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ কৃষি আইন আদালত বাতিল করে দিলেও নেহরু আদালতের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করেননি।ভারতবর্ষের তীব্র গণআন্দোলনের প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটিশ সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল।

নেহরুর সময় সামরিক ব্যবস্থার উপর বেসামরিক ব্যবস্থার গুরুত্ব আরোপ করা হয়। রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের সম্ভাবনার বিষয়ে নেহরু ওয়াকিবহাল ছিলেন। এই সম্ভাবনা দূর করার জন্য নেহরু কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ১৯৫৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানকে ব্যাপক সামরিক সাহায্য দেওয়া সত্ত্বেও নেহরু সামরিক বাহিনী সম্প্রসারিত করার পক্ষপাতী ছিলেন না। যেহেতু ভারত বিভাজনের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতার সূচনা হয়েছিল, তাই তাঁকে বেশ কিছু বাহ্যিক চাপের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। হায়দ্রাবাদ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সেখান অচলাবস্থা শুরু হয়। ১৯৪৮ সালে সেখানে সামরিক বাহিনী প্রেরণ করেন তিনি। ১৯৫১সালের ২৬শে জানুয়ারি হায়দ্রাবাদ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। তবে, দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার সূত্রপাত হয় কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে। ১৯৪৭সালে পাকিস্তান কাশ্মীরে সামরিক সম্প্রসারণ করে। ২০শে অক্টোবর এই আন্দোলন বৃহদাকার ধারণ করলে রাজা হরি সিং নেহরুর সাহায্য প্রার্থনা করেন। হরি সিংকে নেহেরু সামরিক সাহায্যের বিনিময়ে কাশ্মীর ভারতের অন্তর্ভুক্ত হবে এই দলিলে স্বাক্ষর করান। ১৯৪৭সালের শেষের দিকে ভারতীয় বাহিনী পাক হানাদারদের কাশ্মীর থেকে হটিয়ে দিতে সক্ষম হয়। এর ফলে কাশ্মীর ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৫১ সালে কংগ্রেসের জয়লাভের পরেই কংগ্রেস পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করে। প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ছিল-কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, গ্রামীণ শিল্পের প্রসার ইত্যাদি। দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এই পরিকল্পনাগুলি বহাল রেখে  সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি গড়ে তোলার কথা বলা হয়। এই পরিকল্পনাগুলির ফলে জাতীয় আয় বৃদ্ধি পেয়েছিল, বহুসংখ্যক নতুন রেলপথ এবং সেতু গড়ে উঠেছিল এবং বৃহৎ শিল্পের প্রসার ঘটেছিল। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে জওহরলাল নেহরুর  একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান হল জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন গড়ে তোলা। ১৯৬১সালে ২৫টি রাষ্ট্রের উপস্থিতিতে যুগোস্লাভিয়ার বেলগ্রেড সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও আমেরিকাকে কেন্দ্র করে পৃথিবী যখন ঠান্ডা লড়াইয়ের আবর্তে জড়িয়ে পড়েছিল তথন নেহরুর নেতৃত্বে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি একটি পৃথক রাষ্ট্রজোট গড়ে তুলেছিল। জোটনিরপেক্ষ দেশগুলির লক্ষ ছিল, সমস্ত রকম সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন এবং সংঘাতের পরিবেশের অবসান করে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ঘটানো। নেহরুর নেতৃত্বে জোটনিরপেক্ষ দেশগুলি যে কোন আগ্রাসনের বিরোধিতা করেছিল এবং এবং চলমান স্বাধীনতা সংগ্রামগুলিকে সমর্থন করেছিল।

জওহরলাল নেহেরু ১৯৫৫সালে ভারতরত্ন উপাধি লাভ করেন।

১৯৬৪ সালের ২৭ মে নয়াদিল্লিতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জওহরলাল নেহরুর মৃত্যু হয়। তাঁর অবদানকে স্মরণ করার  জন্য আজও তাঁর জন্মদিনটিকে শিশু দিবস হিসাবে পালন করা হয়।

18 comments

আপনার মতামত জানান