আধুনিক কল্পবিজ্ঞান কাহিনীর একজন অন্যতম পথপ্রদর্শক ফরাসি লেখক জুল ভার্ন (Jules Verne)। তাঁকে অনেকে ‘কল্পবিজ্ঞানের জনক’ও বলে থাকেন। প্রযুক্তিগত অগ্রগতি বিষয়ে তাঁর ভবিষ্যৎবাণীর ক্ষমতার প্রমাণ যেমন তাঁর সাহিত্যে লক্ষ্য করা গিয়েছিল, পরবর্তীকালে তেমনি এক কাল্পনিক সমাজের কল্পনাও করেছিলেন জুল ভার্ন। তাঁর রচনা প্রভাব বিস্তার করেছিল পরাবাস্তববাদের উপরেও। মূলত উপন্যাসের জন্য বিখ্যাত হলেও তিনি অসংখ্য নাটক, কবিতা, ছোটগল্প এবং আত্মজীবনীমূলক বিবরণও লিখেছিলেন। তাঁকে শিশুসাহিত্যের একজন জনপ্রিয় লেখক হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বিভিন্ন ভাষায় সবথেকে বেশি অনূদিত হয়েছিল তাঁর লেখা। তাঁর রচনা অবলম্বনে নানা সময়ে বহু থিয়েটার, অপেরা, কমিক বুকস ইত্যাদি তৈরি হয়েছে। জুল ভার্নের লেখা ‘অ্যারাউণ্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইট্টি ডেজ’, ‘টোয়েন্টি থাউজ্যাণ্ড লীগস আণ্ডার দ্য সী’, ‘ফাইভ উইকস ইন এ বেলুন’, ‘অ্যারাউণ্ড দ্য মুন’, ‘অন এ কমেট’, ‘দ্য লাইটহাউস অ্যাট দ্য এণ্ড অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’ ইত্যাদি আজও সমগ্র বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাঁর লেখাতেই প্রথম বিমান, সাবমেরিন, মহাকাশযান কিংবা রকেটের কথা পড়ে বিশ্বের আপামর শিশু-কিশোর ভবিষ্যতের বিজ্ঞানকে চিনতে শিখেছিল।
১৮২৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ফ্রান্সের নান্টেস শহরের লোয়ার নদীতে অবস্থিত একটি ছোট কৃত্রিম দ্বীপ ইলে ফেইডোতে দাদুর বাড়িতে জুল ভার্নের জন্ম হয়। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই ছিলেন জ্যেষ্ঠপুত্র। তাঁর বাবা পিয়েরে ভার্ন (Pierre Verne) ছিলেন একজন নামজাদা অ্যাটর্নি এবং জুল ভার্নের মা সোফি অ্যালোটে দে লা ফুয়ে (Sophie Allotte de La Fuÿe) একজন স্কটিশ বংশোদ্ভূত স্থানীয় নাবিক পরিবারের মেয়ে। ১৮২৯ সালে ভার্ন পরিবার ২ নং কোয়াই জিন-বার্টে গিয়ে ওঠেন, ঐ বছরই সেখানে ভার্নের এক ভাই পলের জন্ম হয়। এরপর আনে অ্যানা (১৮৩৬), ম্যাথিল্ডে (১৮৩৯) এবং মারি (১৮৪২) নামের তাঁর আরো তিন বোনের জন্ম হয়েছিল। পরবর্তীকালে ১৮৫৭ সালের ১০ জানুয়ারি ভার্ন অনারিন ডি ভায়ানে মোরেল (Honorine de Viane Morel) নামে এক বিধবা মহিলাকে বিবাহ করেন। ১৮৬১ সালে তাঁদের সন্তান মিশেল জুল ভার্নের জন্ম হয়।
১৮৩৪ সালে ছয় বছর বয়সে ভার্নকে নান্টেসের ৫ নং প্লেস ডু বোফেতে বোর্ডিং স্কুলে পাঠানো হয়। সেই স্কুলের শিক্ষিকা ম্যাডাম সাম্বিন বিশ্বাস করতেন এবং তাঁর ছাত্রদেরও বলতেন যে তাঁর স্বামী একদিন রবিনসন ক্রুশোর মতো ফিরে আসবেন। এই ঘটনা এবং রবিনসন ক্রুশোর প্রসঙ্গ সারাজীবনই জুল ভার্নের সঙ্গী ছিল। ১৮৩৬ সালে বাবার ধর্মীয় রুচির সঙ্গে মানানসই ইকোলে সেন্ট-স্ট্যানিসলাস নামক একটি ক্যাথলিক স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন জুল ভার্ন। সেখানে তিনি খুব দ্রুত মেমোয়ার, ভূগোল, গ্রিক ভাষা ইত্যাদি শিখতে শুরু করেন। সেবছরই অর্থাৎ ১৮৩৬ সালে তাঁর বাবা পিয়েরে ভার্ন লোয়ারের চ্যান্টেনে গ্রামে ২৯ নং রুয়ে দেস রিফর্মেসে একটি বাড়ি কেনেন। সেখানে থাকাকালীন লোয়ার নদীর সৌন্দর্য তাঁকে মুগ্ধ করেছিল। নদীবক্ষে চলাচলকারী বহু নৌযান তাঁকে আকৃষ্ট করত এবং পরবর্তীকালে তাঁর কল্পনার খোরাক জুগিয়েছিল এইসব দৃশ্যই। সেসময় একবার ছুটি কাটাতে ভার্ন ব্রেইনে তাঁর কাকা প্রুডেন্ট অ্যালোটের বাড়ি গিয়েছিলেন, তিনি ছিলেন একজন অবসরপ্রাপ্ত জাহাজমালিক।
ভার্নের ফরাসি জীবনীকার মার্গুয়েরিট অ্যালোটে দে লা ফুয়ে’র লেখা থেকে জানা যায় যে, ১৮৩৯ সালে ইণ্ডিজ ভ্রমণ এবং কাকাতো বোন ক্যারোলিনের জন্য একটি প্রবালের নেকলেস আনবার উদ্দেশ্যে তিনি থ্রি-মাস্ট জাহাজ ‘কোরালি’তে কেবিন বয় হিসেবে জায়গা করে নেন। যদিও সেবার তিনি ইণ্ডিজ ভ্রমণ করতে পারেননি বলেই জানা যায়। এই ঘটনার সত্যতা নিয়ে যদিও সন্দেহ আছে। ১৮৪০ সালে ভার্ন পরিবার পুনরায় জায়গা বদল করেন এবং ৬ নম্বর রুয়ে-জাঁ-জ্যাক রুশোর একটি বড় অ্যাপার্টমেন্টে চলে আসেন। ১৮৪২ সালে তিনি পেটিট সেমিনেয়ার দে সেইন্ট-ডোনাটিয়েন নামক এক ধর্মীয় স্কুলে সাধারণ ছাত্র হিসেবে ভর্তি হন। সেখানে তিনি খুব মনোযোগ সহকারে ল্যাটিন ভাষা শিখেছিলেন। পরবর্তীতে ভার্ন এবং তাঁর ভাই নান্টেসের লাইসি রয়েলে অধ্যয়নের জন্য ভর্তি হন এবং অলঙ্কারশাস্ত্র, দর্শন ইত্যাদি নিয়ে পড়াশোনা করে ১৮৪৬ সালের ২৯ জুলাই স্নাতক উত্তীর্ণ হন।
জুল ভার্নের বাবা চেয়েছিলেন ছেলে তাঁর মতোই আইন পেশার সঙ্গে যুক্ত হোক। বোর্ডিং স্কুলে পড়াশোনা করবার সময় ছোটগল্প এবং কবিতা লেখা শুরু করেন তিনি। বাবার ইচ্ছানুসারে ১৮৪৭ সালে ভার্ন আইন অধ্যয়নের জন্য ফ্রান্সের প্যারিসে যান। কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত ইচ্ছে ছিল সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করা। নান্টেসে এক হারমিনি আরনাউড গ্রোসেটিয়ের নামে এক মহিলার প্রেমে পড়ে তাঁকে উদ্দেশ্য করে প্রায় তিরিশটি কবিতা রচনা করেছিলেন ভার্ন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি কবিতা হল ‘দ্য ডটার অফ এয়ার’। হারমিনি আরনাউড ভার্নের থেকে বয়সে খানিক বড়োই ছিলেন। ১৯৪৭ সাল থেকে ভিক্টর হুগোর রচনাশৈলি অনুসরণ করে ভার্ন দীর্ঘ লেখা লিখতে শুরু করেন। আইন অধ্যয়নকালে প্যারিসের থিয়েটার তাঁকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করেছিল এবং তিনি নিজে নাটক লেখার প্রতি ঝুঁকে পড়েন। ১৮৪৮ সালের দিকে মিশেল ক্যারের সঙ্গে একত্রিত হয়ে তিনি অপারেটাসের জন্য ‘লিব্রেটো বা অপেরা’ লিখতে শুরু করেন। সেখানে ১৮৪৯ সালে আলেকজাণ্ডার দ্যুমার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। দ্যুমার পুত্র আলেকজাণ্ডার ডুমাস ফিলসের সঙ্গে ভার্নের বন্ধুত্ব হয় এবং ভার্ন তাঁকে নিজের লেখা একটি কমেডি নাটকের পাণ্ডুলিপি দেখান। ১৮৫০ সালের ১২ জুন ভার্নের লেখা সেই একাঙ্ক কমেডি ‘ব্রোকেন স্ট্রজ’ মঞ্চস্থ হয়েছিল এবং কিঞ্চিৎ সমালোচনা ও সাফল্যও পেয়েছিল। ১৮৫১ সালে আইনের পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়ে ভার্ন ‘লাইসেন্স এন ড্রয়েট’ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৮৫১ সালেই ভার্ন ‘মুসি দেস ফ্যামিলেস’ পত্রিকার প্রধান সম্পাদকের সঙ্গে দেখা করেন এবং সেই পত্রিকায় জুলাই মাসে ভার্নের লেখা একটি ঐতিহাসিক ও দুঃসাহসিক অভিযানের গল্প ‘দ্য ফার্স্ট শিপস অব দ্য মেক্সিকান নেভি’ প্রকাশিত হয়। সেবছরই আগস্ট মাসে ভার্নের আরেকটি গল্প ‘আ ভয়েজ ইন আ বেলুন’ প্রকাশিত হয়েছিল ঐ পত্রিকাতেই। এছাড়াও সেই সাময়িকীতে বিজ্ঞান, ভূগোল, ইতিহাস বিষয়ক নানা প্রবন্ধও লিখেছিলেন ভার্ন। প্রবন্ধ এবং গল্প লেখার প্লট খুঁজতে, গবেষণার বিষয় নির্বাচন করতে ‘বিবলিওথেক ন্যাশনাল ডি ফ্রান্স’ গ্রন্থাগারে অনেকটা সময় কাটাতেন জুল ভার্ন।
ডুমাস ফিলস ভার্নকে মঞ্চ পরিচালক জুলস সেভেস্টের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। ‘থিয়েটার হিস্টোরিক’-এর পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন জুলস সেভেস্ট এবং জুলস এই প্রেক্ষাগৃহের নামকরণ করেন ‘থিয়েটার লিরিক’। ১৮৫২ থেকে ১৮৫৫ সাল পর্যন্ত প্যারিসের এই অপেরা কোম্পানি ‘থিয়েটার লিরিক’-এর সেক্রেটারি হিসেবে কাজ করেছিলেন ভার্ন। পাশাপাশি ‘মুসি দেস’ পত্রিকায় লিখেছেন ‘মাস্টার জাকারিয়াস’ (১৮৫৪)-এর মতো ছোটগল্প, ‘আ উইন্টার আমিড দে আইসে’র (১৮৫৫) মতো দুঃসাহসিক অভিযানের কাহিনীও লিখতে থাকেন জুল ভার্ন। ভার্নের বাবা যখন আবিষ্কার করলেন যে তার ছেলে আইন অধ্যয়নের পরিবর্তে লেখালেখি করছে, তখন তিনি অবিলম্বে তাঁকে আর্থিক সাহায্য করা বন্ধ করে দেন। ফলস্বরূপ ভার্ন স্টক ব্রোকার হিসেবে জীবিকা অর্জন করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
‘মুসি দেস’ পত্রিকায় গল্প, প্রবন্ধ লেখার সময় একটি নতুন ধরনের উপন্যাস উদ্ভাবনের ধারণা তৈরি করতে শুরু করেছিলেন ভার্ন এবং সেই ধরনের উপন্যাসকে ‘রোমান দে লা সায়েন্স’ অর্থাৎ নভেল অফ সায়েন্স নামে চিহ্নিত করতে চেয়েছিলেন। বিবলিওথেক গ্রন্থাগারে তিনি অনেক গবেষণাও করেছিলেন এই বিষয়ে। আলেকজাণ্ডার দ্যুমার সঙ্গে এই প্রকল্প নিয়ে তিনি বহু আলোচনাও করেছিলেন।
বিবাহের পর থিয়েটার লিরিকের কাজ ছেড়ে দিয়ে পূর্ণ সময়ের জন্য স্টক ব্রোকারের কাজ করতে থাকেন জুল ভার্ন। অবসর সময়ে বৈজ্ঞানিক ও ঐতিহাসিক গবেষণার জন্য বিবলিওথেকে যেতেন তিনি। ১৮৫৮ সালে বিনামূল্যে বোর্দে থেকে লিভারপুল এবং স্কটল্যান্ড পর্যন্ত একটি সমুদ্রযাত্রার সুযোগ আসে। এই প্রথম ফ্রান্সের বাইরে যান ভার্ন। প্যারিসে ফেরার পরে ১৮৫৯-৬০ সময়কালের মধ্যে একটি আত্মজৈবনিক উপন্যাস ‘ব্যাকওয়ার্ডস টু ব্রিটেন’ রচনা করেন তিনি যা ১৮৮৯ সাল পর্যন্ত অপ্রকাশিতই ছিল।
১৮৬২ সাল জুল ভার্নের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় কারণ সেবছরই প্রকাশক পিয়েরে-জুল হেটজেলের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। হেটজেল তখন এমন এক পারিবারিক পত্রিকা প্রকাশের কথা চিন্তা করছিলেন যেখানে বিনোদনমূলক কাহিনীর সঙ্গে বৈজ্ঞানিক শিক্ষার উপাদানও মিশ্রিত থাকবে। তখন ভার্নের বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণা এবং দুঃসাহসিক কাহিনী লেখার প্রতি ঝোঁক হেটজেলকে আকৃষ্ট করে। ১৮৬৩ সালের ৩১ জানুয়ারি ভার্নের নভেল অফ সায়েন্স ঘরানার প্রথম পরীক্ষামূলক উপন্যাস ‘ফাইভ উইকস ইন আ বেলুন’ গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন হেটজেল। এই গ্রন্থে মধ্য আফ্রিকার উপর দিয়ে আকাশপথে ভ্রমণের একটি অসাধারণ বিবরণ পাওয়া যায়। এই বইটি প্রভূত সাফল্য লাভ করলে স্টক ব্রোকিং-এর কাজ থেকে অবসর নিয়ে ভার্ন লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন এবং সাহিত্যচর্চায় সম্পূর্ণভাবে মনোনিবেশ করেন। এরপর ১৮৬৪ সালে প্রকাশিত হয় ভার্নের দ্বিতীয় উপন্যাস ‘আ জার্নি টু দ্য সেন্টার অব দ্য আর্থ’। এই গ্রন্থটিতে অভিযাত্রী এবং বিজ্ঞানীদের একটি দলের এক রোমাঞ্চকর অভিযানের বর্ণনা করা হয়েছে যারা আইসল্যাণ্ডের একটি আগ্নেয়গিরির গর্তে নেমে একটি ভূগর্ভস্থ পৃথিবী আবিষ্কার করে। এরপর উত্তর মেরুতে একটি অভিযানকে কেন্দ্র করে রচিত ভার্নের উপন্যাস ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চারস অফ ক্যাপ্টেন হ্যাটেরাস’ প্রকাশিত হয় ১৮৬৬ সালে। এই গ্রন্থ প্রকাশের পর হেটজেল ঘোষণা করেন ভার্নের উপন্যাসগুলি নিয়ে একটি সেট তৈরি করা হবে যার নামকরণ করা হয়েছিল ‘এক্সট্রাঅর্ডিনারি ভয়েজেস’। ১৮৬৫ সালে প্রকাশ পায় ‘ফ্রম দ্য আর্থ টু দ্য মুন’ এবং ১৮৭০ সালেই এই উপন্যাসের সিক্যুয়েল ‘অল অ্যারাউণ্ড দ্য মুন’ প্রকাশিত হয়। ভার্নের অধিকাংশ উপন্যাস গ্রন্থাকারে প্রকাশের আগে হেটজেলের পত্রিকায় ‘ডি’এডুকেশন এট ডি রেক্রেয়েশনে’ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। ১৮৬৯ সালের মার্চ থেকে ১৮৭০ সালের জুন পর্যন্ত এই পত্রিকায় ভার্নের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘টুয়েন্টি থাউজ্যাণ্ড লীগস আণ্ডার দ্য সী’ প্রকাশিত হয়েছিল। এই উপন্যাসের নায়ক ক্যাপ্টেন নিমোর রাশিয়ানদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক কাজকে কেন্দ্র করে প্রকাশক-লেখকের মধ্যে একটা মনোমালিন্য হয়, কারণ প্রকাশক রাশিয়ার বাজার হারাতে চাননি। ১৮৭৩ সালে প্রকাশিত তাঁর আরেকটি জনপ্রিয় গ্রন্থ হল ‘অ্যারাউণ্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইট্টি ডে’জ’। তাঁর নৌ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা এবং দুঃসাহসিক কাজগুলি আরও অনেক সাহিত্যকর্মের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। যেমন – ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চারস অফ এ স্পেশাল করেসপণ্ডেন্ট’ (১৮৭২), ‘দ্য মিস্ট্রিয়াস আইল্যাণ্ড’ (১৮৭৫), ‘দ্য সারভাইভারস অফ দ্য চ্যান্সেলর’ (১৮৭৫), ‘মাইকেল স্ট্রোগফ’ (১৮৭৬) ইত্যাদি। ১৮৮৯ সালে প্রকাশিত ‘দ্য পারচেজ অফ দ্য নর্থ পোল’ উপন্যাসে লক্ষ্য করা যায় বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির প্রতি তাঁর আগ্রহ দৃঢ় ধর্মীয় বিশ্বাসের দ্বারা প্রশমিত হয়ে পড়েছে। পোপ ত্রয়োদশ লিওর ব্যক্তিগত অভিনন্দন অর্জন করেছিলেন তিনি।
পরবর্তীকালে ভার্ন রাজনীতিতে যোগদান করেন এবং ১৮৮৮ সালে আইমেন্সের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ভ্রমণ এবং লেখালেখি অব্যাহত রেখে পনেরো বছর এই পদের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ভার্নকে ১৮৭০ সালে একজন ‘শেভালিয়ার দে লা লেজিওন ডি’অননিউর’ হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছিল। ১৮৯২ সালে তিনি ‘দে লা লেজিওন ডি’অননিউর’ পদে উন্নীত হন। এই সময়ের কিছু উল্লেখযোগ্য প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে ‘অ্যাট হান্ড্রেড লীগস অন আমাজন’ (১৮৮১), ‘রবার দ্য কনকারর’ (১৮৮৬), ‘টিকিট নং ৯৬৭২’ (১৮৮৬), ‘ফেসিং দ্য ফ্ল্যাগ’ (১৮৯৬), এবং ‘মাস্টার অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’ (১৯০৪)।
১৮৮৬ সালে মানসিকভাবে অসুস্থ এক ভাইপো গ্যাস্টনের গুলিতে ভার্নের বাম পা জখম হয়েছিল যার ফলে আজীবন সেই পা খোঁড়া অবস্থাতেই ছিল৷ দীর্ঘকাল ডায়াবেটিসে এবং স্ট্রোক সংক্রান্ত জটিলতায় অসুস্থ থাকার পর তাঁর শরীরের ডানদিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
অবশেষে ১৯০৫ সালের ২৪ মার্চ অ্যামিয়েন্সে নিজের বাড়িতেই জুল ভার্নের মৃত্যু হয়।